#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১২
#তানিশা সুলতানা
কোমরে হাত দিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদি। ছোঁয়া বের হবে ঠাস ঠাস দুই গালে দুইটা চর মারবে দেন এখান থেকে নরবে। বড্ড সাহস বেরে গেছে পুঁচকে মেয়েটার। সাহস কতবড় সাদিকে সাদা বিলাই বলে ডাকে। আজকে দেখাবে সাদা বিলাই কেমন হয়।
আধ ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো বের হচ্ছে না। ওয়াশরুমেই কি থাকার ব্যবস্থা করেছে না কি?
সাদি এবার বিরক্ত হয়ে পায়চারি করতে থাকে। দরজা ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
“ভাইয়া তুই ওইখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
তনু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। তনুকে দেখে সাদি একটু হকচকিয়ে যায়। একটু নরেচরে দাঁড়ায়।
” আমি কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবো সেটাও তোকে বলতে হবে?
কর্কশ গলায় বলে সাদি।
“সেটা কখন বললাম?
এনিওয়ে খাবো কি? খাবার মতো কিছুই দেখছি না কয়েকটা করলা ছাড়া।
বিরক্ত হয়ে বলে তনু।
” কিছু নেই।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় সাদি।
“তো বাজারে যা। খাবার নিয়ে আয়। খাবো তো। আমি খিধে সয্য করতে পারি না।
” পারবো না আমি। তোদের আসতে কে বলেছে?
বিছানায় বসে বলে সাদি।
“যা না ভাইয়া। মরেই যাবো এবার আমি।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তনু।
” শান্তিতে একটু থাকতে দিবি না আমায়। ডিসগ্রাসটিং
ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি। তনু মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায়।
ছোঁয়া দরজায় কান লাগিয়ে শুনছিলো। সাদির চলে যাওয়ার শব্দে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
“যাক বাবা এযাএায় বেঁচে গেছি।
সিফাত পরির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। কি করবে বুঝতে পারছে না। যে অন্যায় সিমির সাথে করেছে তারপর আর ওর সামনে যাওয়ার মুখ নেই সিফাতের। আর সিমির আত্নসম্মান প্রখর। ও কিছুতেই সবটা ঠিক করবে না। বরং যদি জানতে পারে পরি ওর মেয়ে তাহলে যে করেই হোক পরিকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে।
এটা ভাবতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরিকে। মুখটা ভয়ে চুপসে গেছে। কিছুতেই পরিকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না
পরিকে হারাতে পারবে না। কিন্তু কি করবে এখন?
সিমির খোঁজ পেয়েও লুকিয়ে থাকবে? না কি সিমির পা জড়িয়ে হ্মমা চাইবে? আরও একটা সুযোগ চাইবে?
চোখ দুটো টলটল করে ওঠে সিফাতের। জীবনটা এতো জটিল কেনো? কেনো আল্লাহ সুখ দিয়ে আবার ছিনিয়ে নেয়? কেনো মানুষকে এতো পরিহ্মার মধ্যে ফেলে?
” বাবা
পরি সিফাতের দুই গালে হাত দিয়ে আদুরী গলায় বলে।
“হ্যাঁ সোনা বল।
সিফাত একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।
” মাম্মার কাছে যাবো।
অধো অধো গলায় বলে।
সিফাত ছেড়ে দেয় পরিকে। এক গাল হাসে পরি।
“লাভ ইউ বাবা
বলেই এক দৌড়ে চলে যায়। সিফাত মুচকি হাসে। এই মেয়েটাই ওর একমাত্র অবলম্বন। ভালোবাসা ধরে রাখতে পারে নি। তবে মেয়েটাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে প্রাণপণ দিয়ে।
ছোঁয়া সাদির রুমটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। নতুন নিয়েছে রুমটা। তবুও গোছালো। কয়েকঘন্টায় নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। মুখ বাঁ কায় ছোঁয়া।
” এই মেয়ে
সাদি ডাকে চমকে ওঠে ছোঁয়া। পেছনে তাকায় না।
“তোমার সাথে কথা আছে আমার।
সাদি বিছানায় বসে বলে। ছোঁয়া বুক ভরে শ্বাস টানে।
” আগে আমি কিছু বলবো।
সাদির পাশে গিয়ে বসে পড়ে। লম্বা শ্বাস টেনে বলতে শুরু করে।
“দেখুন আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। প্রচুর পড়ালেখা করতে হবে আমাকে। অনেক বড় স্বপ্ন আমার। মস্ত বড় ডাক্তার হবো। বাবার ঘাম ঝড়ানো টাকায় পড়ালেখা করে আসছি। বরাবরই খুব ভালো স্টুডেন্ট আমি।
বিয়ে হয়েছে সাত দিন হয়ে গেলো। এই সাত দিয়ে এক ঘন্টাও পড়তে পারি নি। শাশুড়ীর টর্চার। আপনার ধমক সব মিলিয়ে আমার ক্যারিয়ারের ভীষণ হ্মতি হচ্ছে।
আপনার মা বলেছে স্বামীকে ধরে রাখতে পারলে পড়ালেখা পরেও করা যাবে।
তাই আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এবার আমি কি করবো বলেন? একটা সাজেশন দিন আমায়। এভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আমি ক্লান্ত।
সাদির দিকে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া।
” তো বিয়ে করাটা আগে ক্যারিয়ারের কথা মনে ছিলো না?
সাদি কপাল কুচকে বলে।
ছোঁয়া দাঁতে দাঁত চেপে ধরে।
“আমার সাজেশন একটাই। বাড়ি চলে যাও। আর বলে দাও সম্পর্কটা তুমি রাখতে পারবে না।
সাদি এরকম সাজেশন শুনে ছোঁয়া তাচ্ছিল্য হাসে।
” এই যে মিস্টার আপনার ওপর আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। মন তো একটাই। আর সেটা অনেক আগেই নেইমারকে দিয়ে ফেলেছি।
এবার বিরপুরুষের মতো নিজে গিয়ে কথা গুলো বলবেন আপনার বাবা মাকে।
মুখ বাঁকিয়ে বলে ছোঁয়া।
“পবলেম তোমার তো তুমি বলবে।
আমার তো কেনো পবলেম নেই।
ছোঁয়ার এবার কান্না পাচ্ছে। এতো ত্যাড়া কেনো লোকটা? আস্ত একটা বদমাইশ। ইচ্ছে করছে এক ঘুসিতে নাকটা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা করলে তো নিজের নাকটাও থাকবে না।
উঠে যায় সাদি। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
” এখানে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে দেবো।
দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ঘুরে বলে সাদি। ছোঁয়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। অতোটাও খারাপ না লোকটা। একটু একটু ভালো।
বিরিয়ানি এনেছে সাদি। তনু তো খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। ও ভেবেছিলো করলা ভাজি না নিয়ে আসে।
প্লেটে প্লেটে বিরিয়ানি সার্ভ করে ছোঁয়া আর সিফাতকে ডাকে তনু।
শাশুড়ী লাগেজ গুছিয়েছে। সেখানে শুধু শাড়ি আর শাড়ি। আর প্রত্যেকটা শাড়ির ওপর চিরকুট দিয়ে লেখা কখন কোন শাড়িটা পড়বে। এটা দেখে ছোঁয়া হেসে ফেলে।
তনু আর ছোঁয়া আয়েশ করে খাচ্ছে। ছোঁয়া পরিকে খাওয়াচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। সিফাত খাবার নরাচরা করছে। গলা দিয়ে খাবার নামছে না।
সাদি করলা ভর্তা দিয়ে সাদা ভাত খাচ্ছে। বিরিয়ানি খায় না সাদি।
“ভাইয়া খাচ্ছেন না কেনো?
ছোঁয়া জিজ্ঞেস করে সিফাতকে।
সিফাত চমকে ওঠে।
” খাচ্ছি তো।
মেকি হেসে বলে। তনু ছোটছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে। বিরিয়ানি হলে যে একটাই পুরোটা সাবার করে দেয়। সেই ছেলেটা এখন খেতে বসে ঝিমাচ্ছে। নিশ্চয় কিছু হয়েছে।
খাওয়ার মাঝেই ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে আপি নামটা লেখা। ভিডিও কল করেছে। ছোঁয়া মুচকি হেসে কলটা রিসিভ করে।
“ছোঁয়া আমি বিয়ে করছি।
চিল্লিয়ে বলে ওঠে সিমি। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায়। সিফাতের খাবার গলায় আটকে যায়। সাদি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।
” কেনো বিয়ে করছো?
ছোঁয়া বোকার মতো প্রশ্ন করে বসে।
“ইডিয়েট একটা
সাদি বিরবির করে বলে।
” মন চাইছে বিয়ে করতে। সামনে সপ্তাহেই কিন্তু বিয়ে। তুই কিন্তু কয়েকদিন আগেই আসবি।
সিমির ঠোঁটের কোনায় ঝুলে আছে এক চিমটি হাসি।
সিফাতের অবস্থা খুব বাজে। চোখ মুখ দেখলে যে কেউ বলে দেবে এখনই ও কেঁদে ফেলবে।
“রাখছি হ্যাঁ। হিমু এখনে যায় নি। ওকে একটু সময় দিতে হবে।
বলেই খট করে ফোন কেটে দেয় সিমি। ছোঁয়া বোকার মতো তাকিয়ে আছে। হলোটা কি?
চলবে