অন্যরকম তুমি #পর্বঃ৩৩

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৩
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া কিছুতেই সাদিকে ড্রাইভ করতে দেবে না। সাদির হাত ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। বাচ্চা মেয়েটার পাগলামি দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে সাদি। এতোটা প্রসেসিভ এটা কখনোই ভাবেই নি সাদি।

“আমি ঠিক আছি।

ছোঁয়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে সাদি। সাদির এই টুকু আশকারা পেয়ে ছোঁয়া সাদির বুকে মাথা ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে ওঠে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মিশিয়ে নেয় ছোঁয়াকে নিজের সাথে।

” কাঁদছো কেনো? কিছুই হয় নি আমার। জাস্ট পেসারটা কমে গেছে। তাই এমনটা হয়েছে।

ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সাদি।
পেসার কমে যাওয়ার কথা শুনে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় ছোঁয়া। ওদের গ্রামে একজন পেসার কমে যাওয়াতে মরে গেছিলো।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।

“এ কি পাগলামি শুরু করলে বলো তো?
মরে গেছি আমি?

ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়ার অভিমান হয়। ছেড়ে দেয় সাদিকে। জানালার সাথে ঘেসে বসে চোখের পানি মুছতে থাকে।
বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়। এই টুকুনি একটা মেয়ে এতোটা ভালোবাসে সাদিকে?

সাদি নিজেই ডাইভ করা শুরু করে। সৈকতের চেম্বারের সামনে ইভা আর মেঘাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়।

ছোঁয়া একটা কথাও বলছে না৷ মাঝেমধ্যে শুধু নাক টানছে।
তিন রাস্তার মোড়ে প্রভাকে নামিয়ে কাছের একটা ডাক্তারের চেম্বারে যায় সাদি। একা হলে কখনোই যেতো না। ছোঁয়ার গাল ফুলানো দেখেই গেলো। এতে যদি মেয়েটা খুশি হয় হ্মতি কি?

ডাক্তারের চেম্বারে গাড়ি থামার সাথে সাথে ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে। সাদির দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসে। সাদি গম্ভীর চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

তারাহুরো করে নেমে যায় ছোঁয়া। তারপর সাদির এক হাত জড়িয়ে ঢুকে পড়ে ভেতরে। তেমন ভিড় নেই। সোজা গিয়ে ডাক্তারের সামনে বসে পড়ে ছোঁয়া। সাদির হাত ধরে টান দিয়ে ওকেও বসিয়ে দেয়। বেশ বিরক্ত হয় সাদি।

” ডাক্তার আংকেল
উনি আমার বর সাদমান চৌধুরী। আজকে ড্রাইভ করার সময় উনি মাথা ধরে বসেছিলো। ওনার সারা শরীর অসম্ভব ঘেমে গেছিলে। কি হয়েছে ওনার?

খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে কাচুমাচু হয়ে বসে বলে ছোঁয়া। ডাক্তার সাদির দিকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

“মামানি ওনার পবলেম তো ওনাকে বলতে হবে। নাহলে তো আমি বুঝতে পারবো না।

মুচকি হেসে বলে ডাক্তার। ছোঁয়া তাকায় সাদির দিকে। সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়।

” রাতে প্রচুর জ্বর আসছিলো।

সাদি বলে। ডাক্তার জ্বর পেসার মেপে ঔষধ লিখে দেয়।
ছোঁয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। সাদির জ্বর হলো আর ও জানতেই পারলো না?

ছোঁয়ার জোরাজুরিতে ঔষধ কিনতে বাধ্য হয় সাদি। সাদির মতো এই সাধারণ অসুখ এমনিতেই সেরে যাবে।

সারা রাস্তা কেউ আর কোনো কথা বলে না।

সিমি রান্না করছে। সিফাত এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। এতে বিরক্ত হচ্ছে সিমি।

“এই আপনার পবলেম কি? এভাবে গায়ে পড়ছেন কেনো?

পেঁয়াজ কাটছিলো সিমি। সিফাত একটা পেঁয়াজ এগিয়ে দিতেই সিমি ছুড়ি সিফাতের দিকে তাক করিয়ে বলে।
সিফাত শুকনো ঢোক গিলে। সিমির এরকম রাগি রাগি ফেসটা বেশ লাগছে সিফাতের।

” ততোমাকে হেল্প করছি।

ছুড়িটা আলতো করে সিমির হাত থেকে নিয়ে বলে সিফাত।

“বলেছি আপনাকে?

” না মানে তোমার রান্না তো আমিও খাবো। তাই ভাবছিলাম আর কি?

মেকি হেসে বলে সিফাত।

“আপনাকে দেবো ভাবলেন কি করে?

সিমি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলে।
সিফাত ভরকে যায়।

” আমি খাবো কি তাহলে?

“আমার মাথা খাবেন ইডিয়েট।

মুখ ঘুরিয়ে আবার পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে সিমি। পরি ঘুমচ্ছে।
সিফাত বেহায়ার মতো দাঁড়িয়েই থাকে। সিমির সামনে মোড়া টেনে বসে পড়ে সিফাত। সিমি একবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।

” সিমি

চমকে ওঠে সিমি। হাতটা থেমে যায়। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। কি ছিলোএই ডাকে? এই ডাকটা কেনো হৃদপিণ্ডে আঘাত করলে সিমির?

সিফাতের দিকে তাকানোর সাহস নেই।

“আমি বাবা মাকে বলেছি সব। আজকেই এখানে আসছেন তারা। এবার একটা বিহিত হয়ে যাবে বলো?
আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করেছি। কেনো অন্যায় করেছি জিজ্ঞেস করো না। আমি বলতে পারবো না। হয়ত লজ্জায় নয়ত তোমার কাছে দ্বিতীয় বার ছোট হতে চাই না তাই।
তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাই মেনে নেবো। ছোট থেকে পরিকে দুহাতে মানুষ করেছি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না সিমি।

সিফাতের গলা ধরে আসছে। কথা বলতে পারছে না। সিমির চোখেও পানি চিকচিক করছে।

“সাদি স্যার আমায় কথা দিয়েছে সবটা ঠিক করে দেবে। দেখি উনি কি করে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে সিমি।
সিফাত উঠে পরির কাছে চলে যায়। সিমি তাচ্ছিল্য হাসে। ভাগ্য খুব কাজে একটা খেলা খেললো সিমির সাথে। কপালটা এতোটা খারাপ না হলেও পারতো।

বাসায় ফিরে আগে আগে ছোঁয়া সাদির রুমে ঢুকে পড়ে। এক প্রকার তারাহুরো করে। সাদির শরীরটা আবারও খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে।

সাদি রুমে ঢোকার সাথে সাথে ছোঁয়া সাদির থেকে ব্যাগ কেঁড়ে নেয়। অবাক হয় সাদি।

” কি করছে?

জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া উওর দেয় না। সাদির হাত ধরে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে সাদির ঘড়ি খুলতে যায়। সাদি বাঁধ দেয়।

“পাগল হয়ে গেছো?

চোখ পাকিয়ে বলে সাদি।

” বেশি কথা বললে মুখ সেলাই করে দেবো।

ছোঁয়া উল্টে চোখ রাঙিয়ে বলে। সাদি অবাক হয়ে যাচ্ছে ছোঁয়ার ব্যবহারে।

সাদি ঘড়ি খুলে শার্টের বোতাম খুলে দেয়।

“এবার বাকিটা আমি পারবো।

সাদি বলে। ছোঁয়া ভেংচি কাটে
কাবাড থেকে সাদির টাওজার আর টিশার্ট এনে সাদির হাতে ধরিয়ে দেয়।

” শুনেন সাদু
শাশুড়ী আসছে একটু পরে। উনি যদি জিজ্ঞেস করে রান্না কে করে কি বলবেন?

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ছোঁয়া।

“আমি?

” নাহহহ বলবেন ছোঁয়া রান্না করে।

“মিথ্যে কেনো বলবো?

” না বললে আমিও বলে দিবো।

ছোঁয়া মিষ্টি করে হেসে বলে। ভরকে যায় সাদি।

“কি বলবে?

” বলবে আপনি আমার সাথে রোমাঞ্চ করেছেন?

দুই হাতে মুখ ঢেকে বলে ছোঁয়া। কেশে ওঠে সাদি। আস্ত ইডিয়েট এই মেয়ে।

“আর শুনেন। বলবেন আপনাকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব কিছু আমি করে দেই। ওকে

সাদি সরু চোখে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে কিছু বলে না।

” দুই মিনিটে সাওয়ার নিয়ে চলে আসবেন। নাহলে ওয়াশরুমেই লক করে রাখবো।

চোখ রাঙিয়ে গটগট পা ফেলে চলে যায় ছোঁয়া।

“আস্ত ইডিয়েট একটা

সাদি বিরবির করে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here