#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৪
#তানিশা সুলতানা
“আচ্ছা জ্বালাই পড়লাম তো।
সাদি বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে বলে। ছোঁয়া সাদির বিরক্তিতে পাত্তা না দিয়ে তারাহুরো করে মাথা মুছছে সাদির।
সাদি ওয়াশরুমে ঢোকার পরে ছোঁয়া তোয়ালে হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ছোঁয়া খেয়াল করেছে সাদি কখনোই ভালো করে মাথা মোছো না।
সাদি বের হতেই হাত ধরে টেনে খাটে বসিয়ে দিয়ে মাথা মোছা শুরু করে।
” এই মেয়ে পবলেম কি তোমার?
সাদি ছোঁয়ার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে ধমক দিয়ে বলে। ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।
“ধমকান কেন? আপনার গা গরম হয়ে যাচ্ছে। তারাতাড়ি মাথা মুছে দিলে জ্বর আসবে না আর।
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” আমি ঠিক আছি। এই টুকুনি জ্বরে আমার কিচ্ছু হয় না। এতো কেয়ার করার মতো কিছু হয় নি।
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। চোখের কোনে জমা হয় এক চিলতে জল। খুব করে কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ছোঁয়া। সেটা খেয়াল করে সাদি ভ্রু কুচকে ফেলে।
“আজিব
কান্না করার মতো কি বললাম?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সাদি। এবার আর ছোঁয়া কান্না আটকাতে পারে না। ফুঁপিয়ে ওঠে। ঘাবড়ে যায় সাদি। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেলে।
” শোনো মেয়ে কান্না থামাও
কথায় কথায় প্যাঁচ প্যাঁচ করে কাঁদা আমার পছন্দ না। আর বরের যেটা পছন্দ না সেটা বউদের করতে নেয়।
ঠান্ডা গলায় বলে সাদি। ছোঁয়া ফুঁপানো কমিয়ে ফেলে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়। কিন্তু মোছার সাথে সাথে আবার গড়ানো শুরু করে।
সাদি বুঝতে পারে এই কান্না সহজে থামবার নয়।
“শরীরটা কেমন ম্যাচ ম্যাচ করে। আবারও জ্বর এসে গেলো। তাড়াতাড়ি যাও খাবার রেডি করো। খেয়ো ঔষধ খেতে হবে তো।
ফট করে কান্না থেমে যায় ছোঁয়ার। সাদির কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে। তারপর তারাহুরো করো বেরিয়ে যায়। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” এই আস্ত ইডিয়েটটা হঠাৎ অভিমানী মেঘকন্যা কেনো হয়ে গেলো?
তবে মন্দ না।
মুচকি হাসে সাদি। তোয়ালে রোখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করতে থাকে।
ছোঁয়া তারাহুরো করে করলা ভাজি দিয়ে ভাত নিয়ে হাজির। আর সিমিকে বলেছে একটু মাংসের তরকারি নিয়ে আসতে। নিজেও নিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু মাংশ বারতে বারতে একটু দেরি হয়ে যাবে তো। আর এই মুহুর্তে এতটুকুও দেরি করতে চায় না ছোঁয়া।
খাটের ওপর প্লেট রেখে হাঁপাচ্ছে ছোঁয়া। বুকে হাত দিয়ে অনবরত শ্বাস টেনে যাচ্ছে।
“এতে তারাহুরো করার কি আছে?
ভ্রু কুচকে বলে সাদি। ছোঁয়া উওর দেয় না। সাদি খাটে গোল হয়ে বসে পড়ে। তখনই সিমি আসে মাংশের বাটি আর পানির জগতে নিয়ে।
হাত জোড়া থাকাতে আর পারমিশন নেয় না। সাদির এনে রাখে। প্রতিউওরে সিমির দিকে একটু তাকায় সাদি।
” আর কিছু লাগলে ডাকবেন স্যার
মুচকি হেসে বলে সিমি।
“স্যার বইলো না। সেই অনেক আগে স্যার ছিলাম। ভাইয়া বলেই ডেকো।
সাদি বলে।
” জ্বী
“মা আসছে। আমি মা কে বলেছি সব। আমার মা কখনো অন্যায়কে পশ্রয় দেয় না। মা যা সিদ্ধান্ত নেবে মেনে নিও। তোমার অসম্মান হবে এরকম সিদ্ধান্ত চাপাবে না আমার না। এই টুকু বিশ্বাস রাখতে পারে।
সিমি কিছু না বলে। মাথা নিচু করে ফেলে।
“আসছি
বলেই সিমি চলে যায়। ছোঁয়া সিমির দিকে তাকিয়ে থাকে। সাদি ভাত মেখে মুখে নেবে তখনই মনে পড়ে ছোঁয়াও তো খায় নি। বিরক্ত হয় সাদি। কেনো খায় নি?
” এই মেয়ে বসো।
ছোঁয়া সিমির কথা ভাবছিলো সাদির কথায় চমকে দেখে। তা দেখে সরু চোখে তাকায় সাদি।
“কি হলো বসো?
ছোঁয়া গুটিশুটি মেরে বসে পড়ে। সাদি ছোঁয়ার মুখের সামনে খাবার ধরে। মুখে এল চিলতে হাসি ফুটে ছোঁয়ার। ওনার হাতে খেতে দারুণ লাগে। ইচ্ছে করে প্রতিদিন খেতে। কিন্তু ওনাকে বলার সাহস হয়ে ওঠে না।
ছোঁয়া খাবার মুখে নেয়। সাদি একবার নিজে খাচ্ছে আরেকবার ছোঁয়াকে খাওয়াচ্ছে।
সিমি পরিকে খাওয়ানোর জন্য ভাত মাখছে। আর সিফাত পরির কানে কানে বুদ্ধি আটছে।
সিমি আড়চোখে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে ওদের দিকে।
” মা হা করো
পরির মুখের সামনে খাবার তুলে দিয়ে বলে সিমি।
“খাবো না।
পরি বুকে হাত গুঁজে গাল ফুলিয়ে বসে বলে।
” কেনো? তুমিই তো বললাম মাংশ খাবে? কপাল রাগ দেখিয়ে বলে সিমি।
“আমি ভাত খাবো কিন্তু তোমার হাতে খাবো না।
” তো কার হাতে খাবে?
“বাবার হাতে।
সিমি প্লেট নামিয়ে নেয়।
” খাও
সিমি খাট থেকে নামতে নিলে পরি ওড়না টেনে ধরে
ভ্রু কুচকে তাকায় সিমি।
“সমস্যা কি?
রেগে বলে।
” আজকে বাবা তোমাকে আর আমাকে খাইয়ে দেবে।
মুচকি হেসে বলে পরি।
“কোন দুঃখে?
সিফাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” ও মা খাও না। বাবা খুব টেস্টি করে ভাত মাখে। খাবে তো বলো? তুমি না খেলে আমিও কিন্তু খাবো না
শুরু হয়ে গেলো মেয়ের আবদার। সিফাত মুচকি হাসে। মেয়ের আবদার কখনোই যে সিমি ফেলবে না এটা খুব ভালো করেই জানা ওর।
সিফাত বড় প্লেটে করে ভাত নিয়ে আসে। সিমি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। পরি সিমির কোলে বসে গল্প জুড়ে দিছে।
সিফাত ভাত মেখে সিমির মুখের সামনে ধরে। সিমি তাকায় এল পলক সিফাতের দিকে। বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
“মা খাও না।
খাবার মুখে নেয় সিমি। পরি খুশিতে মাকে চুমু খায়। তারপর নিজেও মুখে নেয়। সিফাত মা আর মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর তারা ব্লক খেলনা দিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে। মেয়ের সাথে যেনো সিমিও আজকে বাচ্চা হয়ে গেছে। মেয়ের সাথে মিলে হাসছে আবার কখনো রাগছে কখনো পরির গাল টেনে দিচ্ছে।
সিফাত মুদ্ধ নয়নে দেখছে। ইসস কত সুখী সে। এই চেয়ে সুখ পৃথিবীতে আছে না কি?
বিকেলে সাদি ঘুমচ্ছে। আর ছোঁয়া পড়ছিলে তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। খুশিতে লাফিয়ে ওঠে ছোঁয়া। শশুড় শাশুড়ী চলে এসেছে। ইসসস কতদিন শাশুড়ীর বকা খাওয়া হয় না।
এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে ছোঁয়া। সাবিনা বেগম মুখ ভার করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর শশুড় মশাইয়ের মুখে হাসি।
” বাবা কেমন আছেন? শাশুড়ী কেমন আছেন?
“আলহামদুলিল্লাহ মা। তোমার কেমন চলছে?
শশুড় মশাই ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন।
” খুব ভালো।
ভেতরে আসুন।
ওনারা ভেতরে আসে। শশুড় মশাই চলে যায় সাদিকে দেখতে। ছোঁয়া দাঁত কেলিয়ে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে।
“এতে দাঁত কেলানো কিছু হয়নি। এখুনি তুমি যাবে আমার সাথে পার্লারে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলেন সাবিনা বেগম।
” ও মা এখন সাজুগুজু করবো কেনো? ধরে বেঁধে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দেবেন না কি?
ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া।
“ইহহহহ বুদ্ধির কি বহর
নাক ফুটো করবো তোমার। নাক ফুল সাথে এনেছি।
ছোঁয়া মুচকি হাসে। নিজেও চাই ছিলো নাক ফুটো করতে। একবার মা বলেছিলো বিবাহিত নারীদের নাক ফুল না থাকা স্বামীর জন্য অমঙ্গল। যদি ছোঁয়া এসব বিশ্বাস করে না। তবুও শাশুড়ি তো বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাসের জন্যই পড়বে।
” নাক তে ফুটো করবোই। আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর বড়ছেলের বউকে দেখুন। তারপর যাবে নাক ফুটো করতে।
শাশুড়ীকে এক প্রকার টেনে রুমে নিয়ে যায়। লাগেজ খুলে শাশুড়ীর শাড়ি বের করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর চলে যায় শরবত বানাতে।
চলবে