অপূর্ব প্রাপ্তি পর্ব-৩৯

0
715

অপূর্ব প্রাপ্তি
পর্ব-ঊনচল্লিশ (প্রথম অংশ)
নাফিসা নীলয়া!

মালিহা শিহাবের যত্নের কোনো ত্রুটি রাখছেন না। নিজের ছেলে নেই এজন্য শিহাবকে আরো বেশি আপন করে নিয়েছেন। শিহাবও মায়ের ভালোবাসা কখনো পায়নি। সেজন্য সে ও মালিহার স্নেহ যত্নটুকু উপভোগ করছে। সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় মালিহার নজর শুধু শিহাবের দিকেই ছিলো। মিলা আর নূরজাহান বেগমও শিহাবকে নিয়েই আছে। ভাইয়া এটা খাও ভাইয়া ওটা খাও বলে বলে পাগল করে দিচ্ছে। রেজাউলও শিহাবের সাথে কথা বলছেন। এদিকে নীরাকে কেউ পাওা দিচ্ছে না। সবার এটেনশন শিহাবের দিকে। এতে নীরা মনে মনে খুশি হলেও একটু খারাপ লাগলো তাকে কেউ পাওা দিচ্ছে না বলে। সে তিতলিকে ডেকে বললো।

-তিতলি এখানে আমাকে কেউই পাওা দিচ্ছে না। তুমিও কি এখন সবার দলে চলে যাবে? নাকি আমাকে সঙ্গ দিবে।

নীরার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। শিহাব হাসতে হাসতে মিলাকে বললো।

-কোথাও কোনো কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছো মিলা?

মিলাও শিহাবের সাথে তাল মিলিয়ে বললো।

-অবশ্যই ভাইয়া। পোড়া পোড়া গন্ধটা কিন্তু বেড়েই যাচ্ছে।

এমন কথা শুনে নীরা ফুঁসে উঠলো। তিতলিকে বললো।

-তিতলি ওদের বলে দাও আমি এসব ফালতু বিষয়ে জ্বলি না।

নীরার কথা শুনে মিলা শিহাবকে বললো।

-দেখলে ভাইয়া কথা হচ্ছে সবার মাঝে যার কথা ঠিক তারই গায়ে লাগছে।

মিলার কথা শুনে সবাই আরেক দফা হাসাহাসি করলো। নীরার মুখ চুপসে গেল। তিতলি এবার বললো।

-শোনো মিলা আপু আর ভাই তুইও শুনে রাখ। আমার ভাবি মনিকে নিয়ে একদম এসব বলা যাবে না। ভাবি মনি বেস্ট। তোমরা আরেকবার লেগপুলিং করলে আমি ছোট ভাই আর বাবাকে নিয়ে আসবো। তখন আমাদের দল আরো ভারী হয়ে যাবে।

তিতলির কথা শুনে মিলা বললো।

-তাতে কি আমাদের দলের চেয়ে বেশি মানুষ তোমাদের দলে নেই।

তিতলি আবার বলে উঠলো।

-হাহ্ সাইফ ভাই আর রুমা আপাও আছে।

নীরা এসব দেখে বলে উঠলো।

-থাক আর দুই দলে বিভক্ত হতে হবে না। সবাই এক দলেই থাকো।

মালিহাও হাসতে হাসতে বললেন।

-আচ্ছা এবার থামো সবাই।

বলেই তিনি শিহাবের প্লেটে পিঠা দিলের। শিহাব হতাশ কন্ঠে বললো।

-এতো কিছু কি করে খাবো মা?

মালিহা হেসে বললেন।

-মা ছেলেকে দিলে খেতে হয়।

শিহাব আবারও বললো।

-তাই বলে এতোকিছু? আমি তো একদিনে এতো কিছু খেলে একদম শেষ হয়ে যাবো।

শিহাবের অবস্থা দেখে তিতলি ফিঁক করে হেসে ফেললো। শিহাব তিতলির দিকে চোখ গরম করে তাকালে তিতলি নীরার পেছনে লুকালো।

জায়মা এখন বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরেই থাকেন। ঘর থেকে বের হন না। বাইরের পৃথিবীটা এখন তার ভালো লাগে না। অনুশোচনায় দগ্ধ হৃদয় নিয়ে তিনি তিলে তিলে শেষ হচ্ছেন। এসব না বলতে পারছেন সোহেলকে। আর না বলতে পারছেন রিশাদকে। জীবনে তিনি যেই অন্যায়গুলো করেছেন তার সত্যিই কোনো ক্ষমা হয় না। তিনি বিছানায় এসব ভাবতে ভাবতেই রিশাদ তার ঘরে আসলো। তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো।

-কোনো সমস্যা মামনি? আমি এসেছি চারদিন হলো। তোমাকে এমনই মনমরা দেখছি। তোমার কি হয়েছে বলো তো?

জায়মা রিশাদের দিকে তাকালেন। আর ভাবলেন এই ছেলেটাও কি তাকে ঘৃণা করে! ঘৃণা করবে না ই বা কেন। তিনি তো এই ছেলেটাকেও অন্তর দিয়ে ভালোবাসেননি। শুধু দায়িত্বই পালন করে গেছেন। রিশাদের দিকে তাকিয়ে তিনি হঠাৎ কেঁদে ফেললেন। রিশাদ জায়মাকে হুট করে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে গেল। কাছে গিয়ে জায়মাকে ধরে জিজ্ঞেস করলো।

-কি হয়েছে তোমার মামনি? আমাকে বলো আমি সল্ভ করার চেষ্টা করবো।

জায়মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন।

-আচ্ছা তুমিও কি শিহাব,রেহান,তিতলির মতো আমাকে ঘৃণা করো? অনেক ঘৃণা করো তাই না? আমি সত্যিই কারো মা হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। নিজে সুখে থাকতে গিয়ে সবাইকে কষ্ট দিলাম। আমি সত্যিই কারো মা হওয়ার যোগ্যতা রাখি না।

কথাগুলো বলতে বলতেই জায়মা আরো কান্নায় ভেঙে পরলেন। রিশাদ তাকে জড়িয়ে ধরলো। সে সবই জানে। এটাও জানে জায়মা তাকে কখনোই নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেনি। আবার অবহেলাও করেনি। নিজের দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করেছে। যা হয়তো অন্যকেউ থাকলে করতো না। অন্য কেউ তার বাবার বউ হলে হয়তো তার জীবনটা দূর্বিষহ হতো। এজন্যই সে জায়মাকে ঘৃণা করতে পারেনি। রিশাদ জায়মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো।

-শান্ত হও মামনি। আমি তোমাকে ঘৃণা করি না। সবাই করলেও না। আমি জানি তুমি যেই ভুলগুলো করেছো সেগুলো একটাও উচিত হয়নি। কিন্তু তুমি নিজের করা ভুলের জন্য অনুতপ্ত ও হয়েছো। এখন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো। নিজের ভুল বুঝতে পারে এমন কজন আছে বলো তো!

রিশাদের শান্তনা শুনে জায়মা কিছুটা শান্ত হয়ে সোজা হয়ে বসলেন। রিশাদ জায়মাকে বললো।

-আমি কি শিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলবো?

জায়মা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললো।

-ও আমাকে কখনো মাফ করবে না বাবা। আমি ওকে আজীবন কষ্টই দিয়ে গেছি। শেষমেষ ওর থেকে ওর ভালোবাসার মানুষকেও দূরে সরানোর চেষ্টা করেছি। এখন আর কখনোই সম্ভব না ওর পক্ষে আমাকে ক্ষমআ করা। আমি এসবেরই প্রাপ্য। আমাকে এই কষ্ট পেতে দাও। শুধু তুমি আমাকে ঘৃণা করো না।

রিশাদ আর কিছু বলতে পারলো না। পলক না ফেলে তাকিয়ে রইলো এক অনুতাপে দগ্ধ হয়ে যাওয়া অসহায় নারীর দিকে। আর মনে মনে ভাবলো সে একবার চেষ্টা করে দেখবে। যদি ঘৃণার পরিমাণটা কমানো যায়।

-তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমাকে নীরার পেছন পেছন ঘুরতে হবে?

আসাদের প্রশ্ন শুনে তিশা হাসলো। বললো।

-আমার জন্য নাকি সব করতে পারো। তাহলে এটাও করে দেখাও।

আসাদও হাসতে হাসতে বললো।

-তিশা ব্যপারটা খুব সিলি হয়ে গেল না? আই মিন হিন্দি সিরিয়ালের ভিলেন করে দিচ্ছো তুমি আমাকে। আর তোমার কি মনে হয় আমি ওর পেছনে পরে থাকলেই ওদের মধ্যে ঝামেলা হবে?

-অফ কোর্স হবে। এখন তো এক্সট্রা ম্যারিটিয়াল আ্যাফেয়ার অহরহ হচ্ছে। তুমি গুডলুকিং আছো ওয়েল সেটেল্ড আছো।

আসাদ একটুখানি হেসে বললো।

-কিন্তু শিহাবের থেকে কম। সবদিক থেকেই কম। আর এজন্যই হয়তো তুমি আমার সাথে থাকতে পারোনি। মাথায় সারাক্ষণ শিহাব ঘুরতো। আর এখনো ঘোরে।

আসাদের কথা শুনে তিশা রেগে গেল। থমথমে মুখে বললো।

-আমাদের মিউচুয়াল ব্রেকআপ হয়েছিলো। বারবার ভুলে যাচ্ছো কেন কথাটা?

-মিউচুয়াল? ও হ্যা তুমি আমার সাথে থাকতে চাওনি। আমিও বাধা দেইনি। তবে আমি থাকতে চেয়েছিলাম।

তিশা এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো।

-তুমি বলেছিলে পারবে। কি পারবে না?

আসাদ মিটিমিটি হেসে বললো।

-তোমার কি মনে হয় শিহাব নীরার ডিভোর্স হয়ে গেলেই ও তোমাকে বিয়ে করবে?

তিশা এক মুহূর্ত ভাবলো। তারপর বললো।

-হয়তো করবে হয়তো করবে না। আমাকে অপমান করেছিলো না? সেই অপমানের মাশুল তো দিতেই হবে। এখন সেটা যে করেই হোক।

-আমার মনে হয় না এই সিলি ব্যপারটা কাজে দিবে।

তিশা রাগে কটমট করে বললো।

-কাজে না দিলেও এর প্রভাব তো অল্পবিস্তর পরবেই। একবার বিশ্বাসে ভাঙন ধরাতে পারলেই হলো। ওদের দুজন দুজনের ওপব খুব বিশ্বাস তাই না? শুধু শিহাবের কেন! নীরার বিশ্বাসের ভীতও নাড়িয়ে দিবো।

আসাদ এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো।

-তোমার জন্য আমি এই চিপ থার্ড ক্লাস কাজটা কেন করবো?

তিশাও সিরিয়াস হয়ে বললো।

-আমি জানতাম তুমি এমনি এমনি আমার জন্য কিছু করবে না। তাহলে শুধু শুধু ডায়লগবাজি করো কেন? যে আমার জন্য সব করতে পারবে।

আসাদ হাসলো শুধু। তিশাও হাসতে হাসতে বললো।

-যা চাও তাই পাবে। আর আমি জানি তুমি আমার প্রপার্টি চেয়ে বসবে না।

আসাদ পুনরায় হাসতে হাসতে বললো।

-ইউ নো হোয়াট তিশা? মেয়েরাই মেয়েদের চরম শত্রু মেয়েরাই মেয়েদের সংসার ভাঙে। কথাটা আমি শুনেছিলাম। কিন্তু আজ সচোক্ষে দেখেও নিলাম।

তিশা গম্ভীর মুখে বললো।

-বাজে কথা না বলে প্ল্যানিং করো।

আসাদ আর কিছু না বলে শুধুই হাসলো।

–চলবে!

(ভাবিমা সম্বোধন করা ইসলাম সমর্থন করে না। বিষয়টা আমার একদমই খেয়াল ছিলো না। একজন পাঠক ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন। এজন্য ভাবি মনি এড করে দিয়েছি। আগের ওই অংশের তিতলি আর নীরার কথোপকথনে কিছু ইডিট করে সংশোধন করা হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here