অপেক্ষা পর্ব-৪৩+৪৪
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ
৪৩।
দিয়া বাসায় আসার পর থেকেই ঘরে ঘরে পায়চারী করছে। একবার রুমে যায়, আরেকবার বারান্দায়, আবার হঠাৎ বিছানায় বসে মোবাইলের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। দুপুরে ভালো মতো খাওয়া হয় নি তার। কারণ সে রাতেই অফলাইন হয়েছে তার ফেইক আইডির প্রেমিক, এখনো একবারো আসে নি অনলাইনে।
একটি মাসের মধ্যে অপরিচিত মানুষটির মায়ায় পড়ে গেছে দিয়া। ছবি তো বহুদূর, সে জানেও না ফেইক আইডিটি কি আদৌ কোনো ছেলের, নাকি কোনো মেয়ের। ছেলে হলে ছেলেটা বুড়ো নাকি যুবক। যুবক হলেও কোনো বিবাহিত পুরুষ নয়তো! এসব মাথায় ঘুরছে দিয়ার। শেষমেশ দিয়ার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তার প্রেমিক অনলাইনে এলো সন্ধ্যায়। নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলে উঠার সাথে সাথেই হাসির রেখা ফুটে উঠল দিয়ার ঠোঁটে। চোখ মুখের আলোকিত ভাব দেখে মনে হচ্ছে, দিয়ার মনে সন্ধ্যার মৃদু অন্ধকারেও নতুন সূর্য উঠেছে।
দিয়া: তুমি কি রাগ করে আছো?
-তোমার সাথে কি রাগ করে থাকা যায়?
দিয়া: আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
-হ্যাঁ। করো।
দিয়া: একমাস হয়ে গেলো তুমি তোমার নামও এখনো বলো নি। তোমার নাম কি বলবে আজ?
-নায়ক।
দিয়া: মানে?
-তোমার মনের নায়ক আমি।
দিয়া: এসব ফাজলামো আর করবে না। অসহ্য।
-কি হয়েছে? এমন করছো কেন?
দিয়া: এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবে না আমার সাথে। আমি আর তোমার সাথে কখনো কথা বলবো না। গুড বাই।
দিয়া আর কোনো সুযোগ না দিয়ে আইডিটি ব্লক করে দিলো। দিয়ার এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। আইডিটার মালিকের প্রেমে পড়েছে দিয়া। এখন যদি মায়া বাড়িয়ে ফেলে তখন অনেক কষ্ট হবে। সে রিধিকে ভালোবাসায় কষ্ট পেতে দেখেছে। তাই সে কাউকে ভালোবাসতেও চায় না, কষ্টও পেতে চায় না।
এক যন্ত্রণাদায়ক রাত কাটিয়েছে দিয়া। ইচ্ছে করছে ব্লক খুলে মেসেজ দিয়ে মনটাকে শান্ত করবে, আবার মনকে বারণ করছে এই বলে, যদি ফেইক আইডির মালিক একজন প্রতারক হয়? বলা তো যায় না হয়তো দিয়ার সাথে প্রেমের অভিনয় করছে!
কয়েকদিন পর।
রিধি আর দিয়া ভার্সিটি থেকে মেলায় এসেছে ঘুরতে। মেলায় প্রচুর ভীড়। ভীড়ের মাঝে কেউ একজন হাত ধরে ছেড়ে দেয় দিয়ার। দিয়া চমকে উঠে। কিন্তু এতোগুলো মানুষের মাঝে কে তার হাত ধরেছিলো সে বুঝতে পারছে না।
রিধি আর দিয়া হাত ভর্তি কেনাকাটা করেছে আজ। মেলায় ঘুরা শেষে রিধি অনিককে ফোন দেয়।
দিয়া: কেউ আসবে?
রিধি: হ্যাঁ, ভাইয়া আসবে নিতে। ভাইয়া বলেছে এখানে দাঁড়াতে।
অনিক কিছুক্ষণ পর তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। দিয়া আর অনিকের চোখাচোখি হয়। দিয়া সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। দিয়ার মনে হয়েছে অনিকের চোখের মাঝে এক অদ্ভুত রহস্য ছিলো। রিধি দিয়াকে নিয়ে আসে তার বাসায়। আদিবা সিদ্দিকা দিয়াকে দেখে খুশি হলেন। দিয়ার সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলেন।
আদিবা সিদ্দিকা খুব সাদা মনের মানুষ। যেকোনো বয়সের মানুষের সাথে তিনি খুব ভালোভাবে মিশে যান, যেন বহু পরিচিত। অনেকক্ষণ গল্প করার পর তিনি উঠলেন।
আদিবা: তুমি বসো মা, আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি।
দিয়া: না আন্টি, আমি বাসায় যাবো।
অনিক: তোমার ভাইয়া আসবে, তখন চলে যেও।
রিধি: হুম। রোহান ভাইয়া আসবে, আমাকে গান শেখাবে। আজকে তুইও ফ্রি ক্লাস করিস আমার সাথে।
দিয়া রিধির হাত ধরে বলল,
দিয়া: আমার খুব লজ্জা লাগছে রিধি।
রিধি একটু জোরেই বলল,
রিধি: ওমা, ছেলে দেখতে এসেছে নাকি? এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে?
দিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে রিধির দিকে তাকায়। এরপর অনিকের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে। অনিক মুচকি হেসে তার রুমে চলে যায়।
এরপর রোহান রিধির ক্লাস নেওয়ার পর দিয়াকে নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে আবার অনিকের মুখোমুখি হয় দিয়া। অনিক অদ্ভুত চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়া এবার আর চোখ নামায় নি, সেও অনিককে ভালোভাবে দেখছে। মনে মনে ভাবছে, অনিক হবে না তো সেই ফেইক আইডির মালিক?
বাসায় এসে দিয়া ফেইক আইডি থেকে আসা সব মেসেজ আবার পড়ে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই কয়েকদিনে দিয়া এভাবে আগের মেসেজগুলো অনেকবার পড়েছিলো কোনো কারণ ছাড়া। কিছু কিছু মেসেজ মুখস্থ হয়ে গেছে পড়তে পড়তে। এখন তার মনে হচ্ছে, হয়তো অনিক হতে পারে। এছাড়া আর কাউকে তার সন্দেহ হয় নি কখনো। অনিকের কথা তো মাথায়ও ছিলো না। আর কলেজের গেইটের সামনে দিয়া অনিককে দেখেছিলো কয়েকবার। অনিক দিয়াদের বাসায় আসতো যেহেতু দিয়ার অনেক পছন্দ অপছন্দের কথাও জানতো। আর দিব্য যেদিন প্রপোজ করেছিলো ইশাকে, সেদিন অনিক অনেক ঘুরঘুর করেছিলো দিয়ার পেছনে।
হঠাৎ দিয়ার মুখে প্রশান্তির আমেজ ফুটে উঠে। সে দেরী না করে মোবাইল হাতে নেয়, আর ফেইক আইডিটা আনব্লক করে মেসেজ দেয়,
দিয়া: তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
দিয়া সারারাত উত্তরের অপেক্ষায় থাকে, কিন্তু কোনো সাড়া পায় নি।
আজকে রিধি ভার্সিটি যায় নি। তার কারণ একটাই, আজ সে গোয়েন্দাগিরি করবে তার রাক্ষসের।
ক্লাসে তার একটা মেয়ের সাথে খুব ভাব জমে, মেয়েটির নাম বর্ণালি। বর্ণালি রিধিকে খুব পছন্দ করে। বর্ণালি খুব আবেগী। অল্পতেই কেঁদে দেয়। আর রিধির সাথে একদিন কথা না বললে সে মন খারাপ করে বসে থাকে। দিয়া আর রিধি যখন বাঁধ ভাঙা কথা বলে বর্ণালির খুব খারাপ লাগে। কারণ সে ছোটবেলা থেকেই তেমন কারো সাথেই ক্লোজ হতে পারে নি। খুব শান্ত স্বভাবের ছিলো তাই বন্ধুও তেমন হয় নি। যারা হয়েছিলো তারাও মাঝে মাঝে কষ্ট দিতো তাকে। বর্ণালি মেয়েটি দেখতে খুব মায়াবী, কিন্তু একটু নাদুসনুদুস ছিলো। সবাই তাকে বিভিন্ন নামে ডাকতো আর ব্যঙ্গ করতো। তার পাশে কেউ বসতেও চাইতো না। কিছু ছেলে তো বাঁকা চোখে তাকাতো। কিন্তু একমাত্র রিধির কাছে সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রিধি তাকে বর্ণ বলে ডাকে। রিধি ক্লাসে না গেলে বর্ণও যায় না। তাই আজও যায় নি।
নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে রিধি। বর্ণকে নিয়ে চলে যায় রক্তিমের অফিসের সামনে। একটিমাস তার ভালোবাসার মানুষকে দেখে নি। আর কতোদিন না দেখে থাকবে? তাই চলে আসে রক্তিমকে একনজর দেখার জন্য। মাথায় উড়না, মুখে মাস্ক আর চোখে কালো সানগ্লাস দিয়েছে রিধি, যাতে রক্তিম কোনোভাবে তাকে চিনতে না পারে।
বর্ণ: রিধি, তোর রাক্ষসকে এই বিদঘুটে জায়গায় থাকে?
রিধি চোখ ছোট করে বর্ণের দিকে তাকায়।
বর্ণ: কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? খারাপ কি বলেছি? এইখানে তুই বিয়ে করে কিভাবে থাকবি? দেখতে মনে হচ্ছে ফ্যাক্টরি।
রিধি: জি, এইটা আসলেই ফ্যাক্টরি। রক্তিমের অফিস এইটা। আর রাক্ষস শুধু আমি বলবো। তুই ওকে বড়ো ভাইয়া ডাকবি। কি ডাকবি?
বর্ণ: বড়ো ভাইয়া।
রিধি: হ্যাঁ, মনে থাকে জেনো। রক্তিম শুধু আমার রাক্ষস, আর কারো না। হুহ।
বর্ণ: আচ্ছা, এখন আমরা কি করবো? দাঁড়িয়ে থাকবো?
রিধি: না ভেতরে যাবো।
বর্ণ: ভয় লাগছে, ধরা খেলে আমাদের যদি পুলিশে দিয়ে দেয়?
রিধি: আমি কে? হ্যাঁ?
বর্ণ: রিধি।
রিধি: জি না, তোর বড়ো ভাইয়ার জান প্রাণ। কেউ আমাদের গায়ে হাত দিলে চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে, মুখের মাস্ক টেনে খুলে ফেলে দিয়ে যদি একবার নায়িকার মতো চিৎকার করে বলি, বাঁ……চা…….ও র..ক্তি…ম। দেখবি আলোর বেগে কিভাবে ছুটে আসে আমাকে বাঁচাতে। হুহ, তখন পুলিশও উড়ে যাবে রক্তিমের ছুটে আসার বাতাসে।
বর্ণ: বড়ো ভাইয়ার কাছে কি সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে?
রিধি: না, ভালোবাসার পাওয়ার আছে।
বর্ণ: ওমাগো, টুরু লাভ।
বর্ণালিকে হাসতে দেখে রিধি মুখ ভেংচি দিয়ে ঢুকে যায় অফিসে। বর্ণও তার পেছনে ছুটে যায়।
বর্ণ: রিধি, এইগুলো কি সব বড়ো ভাইয়ার?
রিধি: আরে না, এইগুলো ওদের কোম্পানির প্রোডাক্ট।
হঠাৎ কোম্পানির একজন কর্মচারী তাদের পথ আটকে দেয়।
কর্মচারী: কোথায় যাচ্ছেন?
রিধি: আপনাদের বস নাদিম হোসেইন রক্তিমের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
কর্মচারী: স্যার উনার কেবিনে আছেন। আপনাদের পরিচয়?
বর্ণ: আমরা ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছি।
বর্ণ কর্মচারীর মুখের উপর একটা ফেইক নোটিশ আর আইডি দেখায়। বর্ণের বাবা ইনকাম ট্যাক্সের একজন অফিসার। তাই তার কিছু আইডিয়া আছে এই ব্যাপারে।
বর্ণ আর রিধিকে কর্মচারীটি রক্তিমের কেবিনের সামনে নিয়ে যায়।
রিধি গলা উঁচু করে কর্মচারীটিকে বলল,
রিধি: আপনি এখন যেতে পারেন।
কর্মচারীটি চলে যাওয়ার পর, বর্ণ রিধির মাথায় টোকা দিয়া বলল,
বর্ণ: এতোসহজে ঢুকতে দেবে ভাবি নি। নিশ্চয় নতুন জয়েন করেছে অফিসে।
রিধি: ভাগ্য ভালো ছিলো। এই সময় সিকিউরিটি গার্ড শিফট বদলায়। তাই আমাদের আটকায় নি কেউ।
বর্ণ: বড়ো ভাইয়ার সামনে গেলে তো ধরা খাবো।
রিধি: তার সাথে তো অন্য নাটক চলবে।
রিধি আর বর্ণ ঢুকে পড়ে কেবিনে।
রক্তিম খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। মাথায় এক গাদা চুল, মুখ ভর্তি দাঁড়ি, পুরো দেবদাসের মতো লাগছে। রিধি এখন এই দেবদাসের উপর নতুন করে ক্রাশ খেয়েছে। রিধি ঘোরের মাঝে চলে যায়। রক্তিম চোখ তুলে তাদের দেখে জিজ্ঞেস করলো,
রক্তিম: আপনারা কারা? এভাবে পারমিশন ছাড়া কেন ঢুকেছেন?
রিধি তো আর নিজের মাঝে নেই। মনে হচ্ছে এক যুগ পর দেখছে। তার মনের মাঝে ভালোবাসার ঋতু চলে এসেছে। আশেপাশে ফুলের বাগান, আকাশ থেকে ফুল ঝরছে আর সে রক্তিমের হাত ধরে নাচছে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
গতকাল রাতে এমন একটা মুভি দেখেছিলো, তাই হয়তো এখন ফ্যান্টাসির জগতে আছে রিধি।
বর্ণ খুব জোরে গুঁতো দেওয়ায় ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো রিধি।
বর্ণ রক্তিমের দিকে তেড়ে গেলো।
বর্ণ: এই ব্যাটা, তুই আমার বোনটার জীবন নরক বানিয়ে দিলি রে। কয়েকমাস প্রেম করেই ছেড়ে দিয়েছিস? আমার বোনটার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছিস।
রক্তিম: এক মিনিট। কে আপনার বোন? কার কথা বলছেন? আর কোন সাহসে আমার নামে আজেবাজে কথা বলছেন?
বর্ণ: এই তো। আমার বোন আপনার সামনে।
রক্তিম রিধির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো।
রক্তিম: আরে, এভাবে মুখ ডেকে রাখলে কিভাবে চিনবো? কে এই মেয়ে?
বর্ণ: কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করিস? আমার বোনকে চিনছিস না।
রক্তিম: খবরদার। আমি কিন্তু পুলিশ ডাকবো, উল্টোপাল্টা কথা বললে।
রিধির প্ল্যান ছিলো রক্তিমকে মেয়ে সম্পর্কিত ব্যাপার নিয়ে হ্যারাস করার। কারণ রিধির সাথে অনেকদিন রক্তিম কথা বলে নি। রিধির ধারণা রক্তিম এখন অন্য মেয়ের সাথে সময় কাটায়।
এদিকে বর্ণের চেঁচামেচিতে অফিসে লোক জড়ো হয়ে যায়।
বর্ণ: আমার বোনটাকে বিয়ে করেছিস, এখন বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে, মুখটা ঘুরিয়ে ফেলছে! আমার বোনটা কাউকে এই মুখ দেখাতে পারবে না।
বর্ণ রিধির কাছে এসে বলল,
বর্ণ: এই জীবন আর রেখে লাভ নেই। এই অফিসের ছাদ থেকে পড়ে তুই আজ মরে যাবি। আর আমাদেরকেও উদ্ধার করবি।
আশেপাশে সবাই কানাঘুষা করছে।
আর রিধি মনে মনে হাসছে আর বলছে,
রিধি: আমার পঁচা মাছ, এখন মজা বুঝো। এতোদিন আমার থেকে দূরে থাকার শাস্তি, আমাকে একটিমাস ফোন না দেওয়ার শাস্তি, আমাকে অপেক্ষায় রাখা, আমার সাথে দেখা না করা আর অনেক বেশি কষ্ট দেওয়ার শাস্তি। তোমার ফালুদা না বানিয়ে আমি কিভাবে শান্তিতে থাকবো বলো? হুম হুম!
রক্তিম: আমি আপনাদের চিনি না। দেখুন খুব বড়ো সমস্যা সৃষ্টি করছেন আপনারা।
বর্ণ: আমার বোনটার কি হবে? আমার বোনটাকে ভালোবাসেন না আপনি?
রক্তিম: আমার জীবনে শুধু একজনই আছে। আমি কারো সাথে প্রেমের নাটক করি নি কখনো, আর বিয়ে তো বহুদূর। আমার রিধিকে ছাড়া, আমি আর কাউকে নিয়ে কখনো ভাবিও নি। এসব বাজে কথা বলে সমস্যা করবেন না।
রিধির তো খুশিতে নাচতে আর গাইতে মন চাচ্ছে। আহা এতোদিন পর সে শুনেছে রক্তিমের মুখে আমার রিধি। কতো ভালোবাসা ছিলো এই দুটি শব্দে।
হঠাৎ একটি মেয়ে ঢুকলো রক্তিমের কেবিনে।
-স্যার, আপনি বললে, পুলিশকে ফোন দিতে পারি।
রক্তিম: হ্যাঁ দাও। উল্টোপাল্টা কথা বলছে।
মেয়েটি রক্তিমের পাশে এসে দাঁড়ায়। রিধির বিরক্ত লাগছে এখন। কতোবড়ো সাহস মেয়েটির, আমার রক্তিমকে বলছে আমাকে পুলিশে দিতে?
রিধি: এই, তুমি আমার রাক্ষসের পাশে দাঁড়াবে না। সরো, সরো বলছি।
রক্তিম আর বর্ণ হাঁ হয়ে যায়।
বর্ণ মনে মনে বলছে,
বর্ণ: এইটাতো প্ল্যানিং-এ ছিলো না। প্ল্যান ছিলো রক্তিমকে ফাঁসিয়ে তারা পালিয়ে যাবে। রক্তিম জানতে পারবে না মেয়েটি রিধি। কিন্তু এখন রিধি নিজেই ফাঁস করে দেয়।
রক্তিম: রিধি।
রিধি সানগ্লাস নামিয়ে, মাস্ক খুলে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে।
রিধি: অনেক পঁচা তুমি। তোমার এতোবড়ো সাহস আমাকে পুলিশে দেবে? আমাকে একটুও ভালোবাসো না। আই হেইট ইউ। আর মেয়েটি কে? হ্যাঁ?
এই মেয়ে তুমি আমার রক্তিমের পাশে দাঁড়াবে না। যাও।
রক্তিম: রিধি। কি ছিলো এসব? তুমি কি এখনো বাচ্চা? এসব নাটক কেনো করেছো?
রিধি: একমাস দেখি নি তোমাকে। তোমার তো আমার কথা মনেই পড়ে না। আজ একমাস পর দেখা করছি। এভাবে হালকা ভাবে দেখা করলে চলে? ঘটা করে দেখা করবো না? তোমার এখন এই দিনটা মনে থাকবে সবসময়। আর কখনো ভুলেও আমার সাথে এতোদিন কথা না বলে থাকবে না। এমন করলে এভাবেই একদম ফালুদা বানিয়ে দেবো সবার সামনে। মনে থাকবে?
রক্তিম মুচকি হেসে বলল,
রক্তিম: হ্যাঁ। মনে থাকবে।
আজ একটিমাস পর রক্তিম তার রিধির দেখা পেয়েছে। আজকের দিনটা সে কোনোদিন ভুলবে না। কারণ তার একমাস রিধিকে কাছে না পাওয়ার, রিধিকে না দেখার, রিধির মিষ্টি সুর না শুনার শূন্যতা কেটে গেছে। তার অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
৪৪:
ছয়মাস পর-
আজ রোহানের এংগেইজমেন্ট সামিরা হকের সাথে। সামিরা হক ফয়সাল আহমেদের বন্ধুর একমাত্র মেয়ে। সামিরা খুবই ভালো গায়িকা, পাশাপাশি ভার্সিটির প্রফেসর। রোহান আর সামিরার পরিচয় হয় চার মাস আগে একটি ফ্যামিলি প্রোগ্রামে। রোহানের পারসোনালিটি সামিরার খুব পছন্দ হয়। কিন্তু রোহানের প্রেমে পড়ে নি।
ভালোবাসা, প্রেম এসব শব্দগুলো অহেতুক মনে হয় সামিরার কাছে। জীবনের প্রতি কোনো ঘৃণাও নেই, কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার জন্যও না। আসলে সামিরা ছোটবেলা থেকেই এমন। বাবা- শফিউল হক ডক্টর আর মা রোকেয়া জাহান পুলিশ কমিশনার। দুইজনেই ব্যস্ত থাকতো। আর সামিরাও নিজেকে ব্যস্ত রাখতো সবসময়। তেমন একটা কথা বলতে পছন্দ করে না সে। চুপচাপ থাকে। বেশিরভাগ সময় বইয়ের মাঝেই ডুবে থাকে। আর সামাজিকতা বলতে কিছুই তার মাঝে নেই। মনের দিক থেকে খারাপ না, কিন্তু কোথায় কি বলতে হয় তা সে জানে না। তাই যারা তাকে চেনে তারা সামিরাকে তেমন একটা পছন্দ করে না।
রোহান আর সামিরা দুজনেই বিয়ের ব্যাপারে উদাসীন ছিলো। দুইজনের মধ্যে এই চার মাসে কোনো বন্ধুত্বও হয় নি, মতের কোনো মিলও ছিলো না। রোহান সামিরার সাথে কথা বলার কোনো বিষয় খুঁজে পায় নি এখনো। সামিরা নিজ থেকেই রোহানের সাথে কথা বলতো তাও খুবই যুক্তিসংগত ব্যাপারে। মাঝে মাঝে সামিরার যুক্তি রোহানের অপছন্দ হলেও তেমন কিছু বলতো না সে। কারণ মেয়েটি হারতে পছন্দ করে না। যেকোনো মূল্যেই তাকে, যেকোনো তর্কে জয়ী হতে হবে। এতো অমিল থাকার পরও আজ তাদের এংগেইজমেন্ট। কারন সম্পর্কটি পারিবারিক ভাবেই হচ্ছে। আর রোহান আশা ছেড়ে দিয়েছে যে তার জীবনে কোনো রস, ভালোবাসা, রঙিন মুহূর্ত আসতে পারে। এখন শুধু কোনো আমেজ ছাড়া জীবন পার করতে পারলেই চলবে। রোহান বর্তমানে ক্যারিয়ার নিয়েই খুব ব্যস্ত আছে।
এদিকে ইশার সামিরাকে একদমই পছন্দ হয় নি। কারণ সামিরার পাশে বসলে কোনো কথায় খুঁজে পায় না সে। ইশা কোনো কথা বললেই সেটি অযৌক্তিক বলে কাটিয়ে দেয় সামিরা। আর অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে কথা বলে যেগুলো শুনার ইচ্ছে না থাকলেও ইশাকে বাধ্য হয়ে শুনতে হয়। আর ইশা কিছু বললে এমন একটি ভাব দেখায় যে তার শুনার ইচ্ছে নেই বা শুনছে না। ইশার পড়াশুনা এখনো শেষ হয় নি, তাই সামিরার ধারণা ইশা এখনো খুব কম জানে। সে মনে করে ইশার জ্ঞান কম। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা ইশার নেই। সামিরার এসব ধারণা রোহান একদমই পছন্দ করে না। দিব্যও তেমন একটা কথা বলে না সামিরার সাথে। আর দিয়া তো প্রথম থেকেই তাকে অপছন্দ করে। আর দুই মাস ধরে মনে মনে সামিরাকে গালি দিয়ে আসছে। কারণ আজ সামিরার জন্য তার এক মাসের পরিচয়ের পর চার মাসের প্রেমের সম্পর্কে পড়েছে ভাটা। কারণ সামিরা তাকে হাতেনাতে ধরেছিলো ফোনে কথা বলার সময়। আর ছেলেটি ছিলো তার ফেইক আইডির সেই প্রেমিক।
চার মাস আগে-
দিয়ার সেই দিনের মেসেজের রিপ্লাই এসেছিলো একসপ্তাহ পর। এই এক সপ্তাহ অনেক কষ্টে কাটিয়েছে দিয়া। কিন্তু ফেইক আইডির প্রেমিকের দেখা এখনো পায় নি সে। পরে ছেলেটি দিয়ার ফোন নম্বর চেয়েছিলো। দিয়াও দিয়ে দেয় কোনো কিছু না ভেবে। এরপর থেকেই দিয়ার সাথে প্রতিদিন কথা হতো। কিন্তু দেখা করার কথা উঠলেই ছেলেটি দিয়াকে না করে দিতো। কারণ সে চায় না তার পরিচয় দিয়া জানুক। একেবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পর দিয়ার সাথে দেখা করতে চায় সে। দিয়াও সেই অজানা প্রেমিকের মায়ায় পড়ে যায়। নাম এখনো জানতে পারে নি। তাই দিয়া নিজেই নাম রেখেছে তার নামহীন প্রেমিকের, কবিমশাই। দিয়ার মুখে কবিমশাই নামটি শুনতে ছেলেটি খুব পছন্দ করে। কবিমশাইয়ের কন্ঠের স্বর, ছন্দময় কবিতা আর হাসির শব্দের মায়ায় পড়ে যায় দিয়া। যেহেতু এটি দিয়ার প্রথম প্রেম ছিলো, তাই সে সবসময় ভয়ে থাকতো। কারণ দিব্য আর রোহানকে সে খুব ভয় পায়। যদি জানতে পারে তারা, আর কথা বলতে পারবে না সে তার কবিমশাইয়ের সাথে। যেমন ভয় পেয়েছিলো শেষমেশ তেমনি হলো। সামিরাই তার প্রেমের রহস্য রোহান আর দিব্যের সামনে আনে। ফয়সাল আর রাজিয়াকে জানায় নি এই বিষয়ে। দিব্য দিয়াকে নতুন সিম কিনে দেয় আর রোহান জানিয়ে দেয় যদি কোনোভাবে আবার ছেলেটার সাথে কথা বলে তবে বাবা-মাকে জানিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
রোহান দিয়ার কবিমশাইকে ফোনও দিয়েছিলো সাবধান করার জন্য যাতে দিয়াকে আর বিরক্ত না করে। কিন্তু কবিমশাইয়ের নম্বরটি আর সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয় নি। দিয়া নিজেও বান্ধবীদের নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিলো তার কবিমশাইকে, কিন্তু আর খুঁজে পায় নি।
দিয়ার প্রেমঘটিত কারণে দিব্য আর ইশার মধ্যে ঝামেলাও হয়েছিলো।
কারণ সামিরা বলেছিলো,
সামিরা: দিব্য ভাইয়া, আপনি বুঝতে পারছেন কিছু? দিয়া এতো সাহস কোথা থেকে পায়? ইশা তো সারাদিন দিয়ার সাথে থাকে। আপনি আর রোহান থাকেন অফিসে। আংকেল আন্টি থাকেন ডিউটিতে। ইশার দায়িত্ব ছিলো দিয়ার দিকে নজর রাখার। কিন্তু সারাদিন তো নিজের মাঝেই থাকে সে। রান্নাঘর আর নিজের ঘরে বসে থাকা ছাড়া যে আরো কাজ আছে তা হয়তো জানে না সে। আমার তো মনে হয় ইশাও জানে এসব।
দিয়া বলেছিলো,
দিয়া: ভাইয়া, ইশা ভাবি এসব কিছু জানে না। ভাবি তো অসুস্থ, তুমি তো জানো। আর তুমি নিজেই বলেছো ভাবিকে বিশ্রাম করতে। এই সময় তো বিশ্রাম নেওয়া উচিত তাই না!
দিব্য আর কিছুই বলে নি সামিরার সামনে। বিয়ের পর ওইদিন প্রথম ইশার সাথে গরম গলায় কথা বলেছিলো।
শুধু বলেছিলো,
দিব্য: তুমি বাসায় ছিলে দিয়ার সাথে তাও জানতে পারো নি? কিন্তু সামিরা একদিনেই বুঝে ফেলেছে। তোমার মন কোথায় থাকে? যার সাথে দিয়া এতোদিন কথা বলেছিলো সে কেমন হতে পারে আমরা জানি? ওই মুহিব টাইপ ছেলে হলে? দিয়ার কি হবে বুঝতে পারছো?
এইটুকু কথায় ইশা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। সারারাত কেঁদেছিলো সে। কারণ দিব্য ইশার অতীত, মুহিবকে টেনে এনেছিলো তাদের বর্তমানে। যদিও দিব্য রাগের মাথায় বলেছিলো।
দিব্য একঘণ্টা পর এসে ইশার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলো। রাগ ভাঙানোর জন্য অনেক সুন্দর করে কথাও বলেছিলো। কিন্তু লাভ হয় নি। পরের দিন দিব্য অফিসে গেলে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাবার বাসায় চলে যায় ইশা।
দিব্য আর ইশার জীবনে নতুন অতিথি আসতে যাচ্ছে। ইশার চারমাস চলছিলো তখন। এই চারমাসে দিব্য ইশাকে আগের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছে। কিন্তু একটু মনোমালিন্য হওয়ায় ইশা এভাবে বাবার বাসায় চলে যাবে দিব্য ভাবতেও পারে নি। ইফতি ফোন করে বলেছিলো ইশা বাসায় এসেছে। কথাটি শুনেই দিব্য অফিসের কাজ ফেলে ইশাদের বাসায় ছুটে যায় তার অপ্সরীকে আনতে।
প্রিয় মানুষগুলোকে আমরা নিজেদের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করি। তাদের একটু কড়া কথায় যেন খুব কষ্ট লাগে। যারা প্রিয় মানুষগুলো থেকে কষ্ট পেতে অভ্যস্ত তাদের জন্য হয়তো স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু যারা ভালোবাসার মাঝে ডুবে থাকে তাদের জন্য একটু গরম চোখের চাহনীও যেন মারাত্মক মনঃকষ্টের জন্ম দেয়।
দিব্যও সেদিন ছুটে গিয়েছিলো তার অপ্সরীর মনঃকষ্ট দূর করতে।
দিব্য: এই অপ্সরী! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না, জানো না তুমি? আমার ছোট্ট বাবুটাকে নিয়ে তুমি কিভাবে চলে আসলে? বাবুটা কতো কষ্ট পাবে জানো? বলবে আমার বাবা আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে। এখন আমাকে পঁচা বলবে। তুমি চাও, আমাদের বাবু তার বাবাকে পঁচা বলুক? ক্ষমা চেয়েছি তো, ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না, কখনো হবে না। তুমি যেমন শাস্তি দিতে চাও, প্লিজ দাও। কিন্তু বাসায় চলো। সবাই কি ভাববে, বলো? ছোটখাটো ব্যাপারে এভাবে বাবার বাসায় আসে না ইশা। এইটা আমাদের মধ্যে ছিলো, তুমি এমন কিছু করলে তখন সবাই বুঝে যাবে।
ইশাও সেদিন রাতে দিব্যের সাথে আবার ফিরে আসে শ্বশুরবাড়ি। এরপর থেকে দিব্য আরো বেশি ভালোবাসা দিয়েছে ইশাকে, যাতে ইশা ভুলে যায় সব পুরোনো কষ্ট। কারণ দিব্য ইশার দূরে যাওয়া সহ্য করতে পারবে না।
বর্তমানে-
রোহান আর সামিরার এংগেইজমেন্ট হয় খুব ধুমধাম করে। রিধির ফ্যামিলিও এসেছে আজ।
দিয়া: আমার জীবনটা আর সুখের হবে না।
রিধি: কেন?
দিয়া: ভাইয়া বিয়ে করছে নাকি বাসাকে থানা বানানোর পরিকল্পনা করছে বুঝতে পারছি না।
রিধি: আমার তো মনে হচ্ছে লাইব্রেরী বানানোর পরিকল্পনায় আছে। তোর এই হবু ভাবীর সামনে তো আমি আর কখনো যাবো না। এতো প্রশ্ন কোথা থেকে পায়? আমার তো মনে হয় রোহান ভাইয়াকে আর গুগল সার্চ করতে হবে না। কিছু জানতে চাইলে সামিরা.লাইব্রেরি.জ্ঞানীগুনি.কম এ জিজ্ঞেস করলে একটা না হাজারটা উত্তর বলে দেবে। শুধু লাইব্রেরী না উনি একটা রোবট। কি হয়েছে জানিস?
দিয়া: কি হয়েছে?
রিধি: আমাকে আর রক্তিমকে একসাথে রাস্তায় হাত ধরে হাটতে দেখেছিলো। আর এটিও রোহান ভাইয়াকে বলে দিয়েছে।
দিয়া: বাঁচিয়েছে আংকেল আন্টিকে চেনে না। শুধু তোকে চিনতো।
রিধি: রোহান ভাইয়াতো জানেই আমি আর রক্তিম কোনো সাধারণ প্রেমিক-প্রেমিকা না। আমরা তো নোবেল বিজয়ী প্রেমিকা-প্রেমিকা। সব প্রতিকূলতা কাটিয়েও যারা এখনো একসাথে। ঘটা করে এওয়ার্ড দেওয়া লাগবে না আর। ভালোবাসায় কি কোনো দাম ধরা যায় বল? দাম ধরলে তো নোবেল প্রাইজকে হার মানিয়ে দিতো আমাদের ভালোবাসা, তাই না? কিন্তু তোর আইনস্টাইন ভাবি কি বলে জানিস?
দিয়া: জানি। বলবে, প্রেম, ভালোবাসা এসব শুধুই সময় নষ্ট। নিজের চেয়ে কাউকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত না। শুধু ভালোবাসবে তো নিজেকে। নিজেকে, নিজেকে, নিজেকে।
রিধি: হ্যাঁ, রে এই কথাটায় বলেছিলো। রক্তিমও সামনে ছিলো। কতো বড়ো সাহস আমার রক্তিমকে ভুলভাল শেখায়। তোর রোবট ভাবীর মাঝে তো কোনো আবেগ অনুভূতি নেই, তাই বলে কি আমার রাক্ষসকেও সত্যি সত্যি রাক্ষস হওয়ার পরামর্শ দেবে? আমার রাক্ষসটা যদি আমাকে একটুও কম ভালোবাসা শুরু করে, আমি তোর রোবাট ভাবীর সব প্রোগ্রাম ডিলিট করে দেবো।
দিয়া: আসলেই অসহ্য। উনি শুধু শুধু আমার ভাইয়াটার জীবন অন্ধকার করতে আসছে।
রিধি: হ্যাঁ। রোহান ভাইয়ার মনে এমনিতেও অনেক কষ্ট। আমার না খুব খারাপ লাগে তার জন্য। উনার চোখ দেখলে বুঝা যায়, খুব ভালোবাসা দরকার তার। এমন একটি মেয়ের প্রয়োজন যাকে দেখলেই প্রশান্তি আসবে মন থেকে। জানিস দিয়া, রোহান ভাইয়াকে আমি যতোটুকু জেনেছি, তিনি মনের মাঝে অনেক ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দেওয়ার মতো কেউ নেই। সামিরা আপুর সাথে তো কখনো ভালো থাকবে না। কেউ কি একবারো তার ভেতরটা দেখতে পায় নি?
দিয়া: ভাইয়া কাউকে ভালোবাসে?
রিধি: এখনো বুঝিস নি। আমার সাথে তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর যেদিন দেখা করেছিলাম তখন তার কথায় বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি তো আমার চেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। আমার ভালোবাসার মানুষটিতো আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু রোহান ভাইয়ার ভালোবাসার মানুষটি হয়তো জানেও না কতো ভালোবাসা জমিয়েছে তার জন্য। হয়তো মেয়েটি অন্যের হয়ে গিয়েছিলো।
দিয়া: দিব্য ভাইয়া চিনবে মেয়েটিকে?
রিধি: হয়তো। দিব্য আর রোহান ভাইয়া কতো ক্লোজ, চিনতেও পারে। কিন্তু মেয়েটির উপর এখন তো অন্যের অধিকার। এসব কথা তুলে আর লাভ নেই। শুধু শুধু অন্যের সুখে বাধা আসবে। এখন শুধু একটাই চাওয়া এই রোবট আপুটার মাঝে কিছু আবেগ অনুভূতির প্রোগ্রাম যাতে আল্লাহর ইচ্ছায় সেট হয়ে যায়। তাদের বিবাহিত জীবন যাতে সুখের হয়। আমিন।
দিয়া: আমিন। আর আমার জীবন থেকে যাতে বিদায় হয় এই ভাবীর প্যারা, আমিন।
রিধি মুখ বাঁকা করে তাকায় দিয়ার দিকে।
দিয়া: তুই চাস উনি আমার জীবন তেজপাতা করে দিক?
রিধি: কেন চাইবো?
দিয়া: তাহলে বলিস নি কেন আমিন?
রিধি: আচ্ছা, আমিন। হে, আল্লাহ তুমি দিয়ার সব ইচ্ছে পূর্ণ করে দাও। আমার বান্ধবীকে অপেক্ষায় রেখো না আর। খুব ভালো একটা বর নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।
দিয়া খুশি হয়ে বলল,
দিয়া: আমিন। ইনশাল্লাহ তোর দোয়া কবুল হবে। আমারও বিয়ে হবে। আমি অপেক্ষায় আছি আমার কবিমশাইয়ের। আমাকে কথা দিয়েছে সে, বিয়ে করবে আমায়।
দিয়ার চোখের মাঝে ফুটে উঠেছে তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য অপেক্ষায় থাকার উচ্ছ্বাস। আর একজোড়া চোখ মনোযোগ দিয়ে দেখছে এক উচ্ছ্বাসিত প্রেমিকাকে। তার ঠোঁটের কোণে ছিলো মুচকি হাসি, মনের মাঝে ছিলো গভীর ভালোবাসা। কারণ সে শুনতে পেয়েছে অপেক্ষায় থাকা একটি মেয়ের ইচ্ছা। প্রিয় মানুষকে পাওয়ার তীব্র বাসনা।
চলবে-
আগের পর্ব👇
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/375056914216087/