অপেক্ষা পর্ব-(৪৫+৪৬): (কবিমশায় স্পেশাল)

অপেক্ষা পর্ব-(৪৫+৪৬): (কবিমশায় স্পেশাল)
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ

৪৫।
আজ দিয়াকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। তাই সে নীল রঙের শাড়ি পড়েছে। তার কবিমশাই বলেছিলো তাকে নীল রঙে খুব মানায়। দিয়া জানে না তার কবিমশাই কোথায় আছে, কেমন আছে। কিন্তু তার মন বলছে সে শুধু তার কবিমশাইয়ের গল্পের নায়িকা হবে। আর কারো গল্পের চরিত্রে সে জায়গা পাবে না। দিয়ার একটুও ভয় লাগছে না। কারণ বাবা বলেছিলো ছেলে পছন্দ না হলে, না করে দিতে পারবে। কোনো জোরাজুরি নেই। তাই দিয়াকে শান্ত মনে হচ্ছে অনেকটা। সে মনে মনে প্ল্যান করে ফেলেছে ছেলের সাথে কথা বলার সুযোগ আসলেই সে জিজ্ঞেস করবে ছেলেটি তার কবিমশাই কিনা। প্রশ্ন কিভাবে করবে তার অনেক রিহার্সাল করে নেয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

রাজিয়া রহমান মেয়েকে আনলেন পাত্র পক্ষের সামনে। দিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। একটিবারের জন্যও মাথা তুলে নি। লজ্জা আর ভয় একসাথে চেপে বসেছে মনে।
কিছুক্ষণ পর পাত্রের সাথে কথা বলার জন্য তাদের দুইজনকে বারান্দায় পাঠানোর হয়। দিয়া বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। ছেলেটিও কোনো কথা বলছে না।

পাত্রপক্ষ চলে যায়।

দিয়ার চোখের কোণে পানি জমে আছে। কারণ ছেলেটি তার কবিমশাই ছিলো না। সেই পরিচিত স্বর যেটি শুনলে মনের মাঝে এক প্রশান্তি আসতো, তা এই ছেলেটির কন্ঠের মাঝে খুঁজে পায় নি দিয়া। আর তার কবিমশাই তো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতো। আর এই ছেলেটির কথাগুলো তার কাছে বিরক্তিকর ভাষণ মনে হয়েছিলো। এতোক্ষণ শুধু কবে আপদ বিদায় নেবে এই অপেক্ষায় ছিলো দিয়া। পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর দিয়া বলে দেয় সে এই বিয়ে করবে না। কারণ দেখায়, ছেলেটির মাথার তার ছিঁড়া। তাকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করেছে।

দিয়ার এখন খুব রাগ হচ্ছে। তার কবিমশাই বলেছিলো সেই প্রথম বিয়ের প্রস্তাব আনবে। আর কারো সামনেই দিয়াকে নীল শাড়ি পড়ে যেতে হবে না। তাই আজ কবিমশাইয়ের জন্যই সে নীল শাড়ি পড়েছিলো। সে ধরেই নিয়েছিলো এই বিয়ের প্রস্তাব তার কবিমশাইয়ের পক্ষ থেকে ছিলো।

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় দিয়া। সে কি বেশি বিশ্বাস করে ফেলছে নামহীন মানুষটিকে? এই যুগে কি এসব পাগলামো কেউ করে? নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে তার। এভাবে একটি অপরিচিত মানুষ, যে তার নামটিও জানায় নি, কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে তাকে? তবুও সে বিশ্বাস করেছে।
যদিও কবিমশাইকে সে কখনো দেখে নি। তবুও সে নিজের মনে তার কবিমশাইয়ের চিত্র এঁকেছে অনিককে কল্পনা করে। হ্যাঁ, দিয়ার বিশ্বাসের জায়গায় তার কবিমশাইয়ের স্থান হয়েছে অনিকের জন্যই। কারণ তার কবিমশাইয়ের কন্ঠের স্বর অনেকটা অনিকের সাথে মিলে যায়। ছয়মাস আগে যেদিন রিধিদের বাসায় গিয়েছিলো, সেইদিন অনিকের রহস্যময় হাসি আর কথা, দিয়াকে বাধ্য করেছিলো ব্লকটি খুলে দেওয়ার জন্য। কারণ একমাত্র অনিককেই সে সন্দেহ করেছে। আর অনিকের চোখে নিজের প্রতি ভালোলাগাটা সে বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই। কারণ মেয়েদের চোখ আর মনের গভীরতা অনেক বেশি। সহজেই অদেখা অনুভূতিও দৃশ্যমান হয়ে যায়। তাছাড়া এই ছয়মাসে অনিকের সাথে যতোবার দেখা হয়েছিলো, অনিকের ব্যবহারে মনে হয়েছে, অনিক ছাড়া তার কবিমশাই হওয়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নই।

পরেরদিন ভার্সিটি গেলো। রিধি আর বর্ণ বসে আছে পাশাপাশি। বর্ণের মন খারাপ। আর রিধি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

দিয়া: কি হয়েছে?

রিধি দিয়াকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল।

কিছুক্ষণ পর বর্ণ নিরবতা ভেঙে বলল,
বর্ণ: আমার খুব কষ্ট হয় জানিস। সবাই আমাকে মুটকি বলে ক্ষেপায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি এই ওজন কমাতে। কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। সবাই মনে করে আমি অনেক খাই। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি খাই না তেমন একটা। খাওয়ার প্রতি আমার আগ্রহ নেই। তবুও কেন আমি তোদের মতো হতে পারি না? আমার তো ছেলে ফ্রেন্ড হয় নি একটাও। যাকে ভালো লাগতো সেও কখনো ফিরে তাকায় নি আমার দিকে। বান্ধবীরা অপমান করতো। সবাই বলতো বর পালিয়ে যাবে আমাকে দেখলে। রিক্সায় উঠলে বলতো চাকার হাওয়া নাকি আমার ভরে বের হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে তো ওদের ছেলে বন্ধুদের সামনে অপমান করতো। বলতো এই হচ্ছে আমাদের মুটকি। খুব লজ্জা লাগতো জানিস। মরে যেতে ইচ্ছে হয় অনেক। আমি তো খাই না। তবুও যা খেতাম তাও কমিয়ে দিয়েছি এখন। বুকে ব্যথা হয় অনেক। এসিডিটি বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে মাথাও ঘুরায়। কিন্তু কেউ বুঝে না। জানিস তাই কোনো প্রোগ্রামেও যেতে মন চাই না। বাড়ির লোকেরা বলে আমাকে দেখলে তিন বাচ্চার মা মনে হয়। আর সহ্য হয় না। যারা এমন করে বলে তাদের আমি কিছুই বলি না। হেসে উড়িয়ে দেই। কিন্তু সত্যি বলি, তাদের কথাগুলোতে খুব কষ্ট পাই। ক্ষমা করবো না কাউকে।

দিয়া: এসব কথা কানে নিবি না। যারা এসব কথা বলে তাদের থেকে দূরে থাকিস। ভালো থাকবি অনেক।

রিধি: এইটা হরমোন জনিত সমস্যা। তার মানে আল্লাহর ইচ্ছাতেই। আর সৃষ্টিকর্তা কখনো বান্দার খারাপ চাইবে না। বিশ্বাস কর, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ যারা তোর দুর্বলতায় আঘাত করছে। একদিন তারাই তাদের কোনো দুর্বলতার জন্য আঘাত পাবে। এইটাকে বলে ন্যাচারাল রিভিঞ্জ।

বর্ণ হেসে বলল,
বর্ণ: আমার না কিছু লাগবে না। শুধু ভালো একটা বর লাগবে। একটাও প্রেম করি নি এই জীবনে, শুধুমাত্র বরের সাথে প্রেম করার জন্যে। আমার বর আমাকে ভালোবাসলেই আমি খুশি।

দিয়া: তুই যার কপালে জুটবি বড়ো ভাগ্যবান হবে সে।

বর্ণ: সত্যি?

রিধি: হ্যাঁ, কচু। কানের কাছে সারাদিন বসে প্যানপ্যান করবে। বাইরে গেলে কিছুক্ষণ পর পর ফোন দিয়ে বলবে, ওগো শুনছো, খেয়েছো, বসেছো, কি করছো, কবে আসবে, অপেক্ষায় আছি তো।

বর্ণ: অবশ্যই, আমার এসব ভালোবাসাযুক্ত অত্যাচার সহ্য করতে না পারলে এ কেমন বর? রোবট হবে নাকি? আমি বিয়ে করবো কেন তাহলে? বাবার বাড়িতেও তো থাকতে পারি। বিয়ে করবো শুধু এমন একটা পারসোনাল শ্রোতা পাওয়ার জন্য যাকে আমি পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব কথা শেয়ার করতে পারবো। সে আমার শুধু বন্ধু না আমার অভিভাবক হবে। এখন তো আব্বু আম্মুকে এমন কথা বলা যায় না, যা বান্ধবীদের বলা যায়। আর বান্ধবীদের অনেক কিছু বলা যায় না যা শুধু বাবা-মা জানে। আর আমার বরতো সব জানবে। এতো ইম্পরটেন্স দিচ্ছি কেন? শুধুমাত্র তার জন্য রান্না করা, তার ঘরের কাজ করা, আর তার বাচ্চার মা হওয়ার জন্য? কখনো না। আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। আমার সাথে ঘুরবে, হাসবে তখনই সে হবে আমার বর। নয়তো সে থাকবে তখনো পর।

বাসায় আসার পথে দিয়া রিধিকে তার বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে আসা, কবিমশাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা সব কিছুই প্রকাশ করে।
রিধি বাসায় এসে এসব অনিককে শুনায়। দিয়াকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে শুনেই অনিকের বুকটা কেঁপে উঠে।

অনিক আর দেরী না করে আদিবা সিদ্দিকা আর কামাল সিদ্দিককে জানিয়ে দেয় সে দিয়াকে বিয়ে করতে চায়। ছেলের পছন্দে তাদের কোনো আপত্তি ছিলো না। পরের দিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আদিবা সিদ্দিকা আর কামাল সিদ্দিক যান দিয়াদের বাসায়। ফয়সাল আর রাজিয়ার অনিককে খুব পছন্দ ছিলো। আর যেহেতু দিব্য আর রোহানের খুব ভালো বন্ধু তাই আপত্তিও দেখায় নি। দিব্য আর রোহানকে জানানোর পর তারাও খুব খুশি হয়।

রিধিতো মহাখুশি, তার একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড তার ভাবী হতে যাচ্ছে।
দিয়া যখন জানতে পারে অনিক বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তারপর থেকে সে অনেক খুশি। কারণ তার মনের মাঝে কবিমশাইয়ের জন্য শুধু অনিকই উপযুক্ত।
দিয়া আর অনিককে পাশাপাশি বসানো হয়। লজ্জায় আর খুশিতে যেন মরেই যাবে দিয়া। একটু কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলো। কিন্তু আশ্চর্য তাদের একা কথা বলার কেউ সুযোগ দিচ্ছে না।

একসপ্তাহ পর-
আজ অনিক আর দিয়ার বিয়ে। বিয়েতে রক্তিমের পরিবারকেও দাওয়াত করা হয়। জুনাইয়েত আর নবনী রিধিকে আজ কতো মাস পর দেখছেন।

জুনাইয়েত: রিধি, মা আমার। কেমন আছিস?

রিধি: আমি অনেক ভালো আছি। তুমি কেমন আছো বাবা?

জুনাইয়েত: তোকে ছাড়া ভালো থাকা যায়? কিছু ভালো লাগে না। তুই ছাড়া ঘরটা যে বড্ড শূণ্য মনে হয়। বাবার কথা কি একবারো মনে পড়ে নি?

রিধি: হ্যাঁ। রোজ মনে পড়তো। অনেক মিস করি তোমাকে।

নবনী: রিধি।

রিধি: ভালো আছো মা?

নবনী: না। ভালো নেই। আমরা কেউ ভালো নেই। রিধি, আমাকে ক্ষমা করে দিস, মা। অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি এতো নির্দয় হয়ে পড়েছিলাম যে তোর মায়া ভরা চেহারাটাও আমার চোখে পড়ে নি।

রিধি: আমি তোমার সাথে রাগ করে নেই মা। কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব ভুলে গিয়েছি। তোমরা আমার জন্য যা করেছিলে এতোটা বছর, তা কখনো ভুলা যায় না। সামান্য কষ্ট আমি কিভাবে মনে রাখতে পারি, বলো? আর বাবা-মা সন্তানদের ভালো চাই। তুমি তো রক্তিমের ভালো চেয়েছিলে।

নবনী: আমি রক্তিমের ভালো চাই নি। রক্তিমের ভালো থাকা তো তোর সাথে ছিলো। আমি চেয়েছিলাম সমাজের সামনে ভালো থাকা। আমি অনেক খারাপ মা। আমাকে ক্ষমা করে দিস।

রিধি: আমি কতো ভুল করেছিলাম, তুমি কি রাগ করে ছিলে? আমিও ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে। আর এসব কথা কখনো তুলবে না মা।

নবনী: আমার ছেলেটা ভালো নেই রিধি। তুই ছাড়া রক্তিম কারো সাথেই সুখী হবে না। আমার ছেলেটির পাশে থাকবি সারাজীবন?

রিধি মাথা নিচু করে আছে। সে নিজেও রক্তিমকে ছাড়া ভালো থাকবে না। কিন্তু এখন কি তার পরিবার মেনে নেবে এতো কিছু হওয়ার পর?

এদিকে তিন কবুল বলার পর দিয়া আর অনিক একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অনিক দিয়াকে ভালোবাসে অনেক আগে থেকেই। আজ অনিকের ভালোবাসার নতুন সূচনা হলো।

রাতে বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছে দিয়া। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে লজ্জায়। এক ভিন্ন অনুভূতি আসছে মনে। রিধি আছে আশেপাশে কোথাও হয়তো। পরিচিত কেউ আছে তাই কিছুটা হাল্কা লাগছে দিয়ার। নয়তো বসে বসে কান্না করতো। দিয়া বিয়ের আগের দিন রাতে বসে বসে কিছু ভিডিও দেখেছিলো। বিয়ের দিন বিদায়ের সময় মেয়েরা কি করে তা দেখার জন্য। রিধি তাকে এই বুদ্ধি দেয়। বিভিন্ন ভাবে মেয়েরা কাঁদে সেইদিন। কেউ চিৎকার করে কাঁদে, যা দিয়া কখনো করবে না। কেউ বাবা-মাকে ধরে রাখে, আর বলে ‘আমি যাবো না, আমি যাবো না’, কিন্তু দিয়াতো শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। তাই এই ধরণের কান্নাকাটি বাদ। কেউ কেউ ফুঁপিয়ে কাঁদে। কিন্তু এভাবে ফুঁপানোর অভ্যাস দিয়ার নেই। অনেকে নাচতে নাচতে চলে যায়, অনেকে হাসে দাঁত বের করে। একটাও দিয়ার মানসম্মত মনে হয় নি। এখন সমস্যা হচ্ছে দিয়ার খুব সহজে কান্না পায় না। দিয়ার ধারণা তার অশ্রুগ্রন্থিতে পানির পরিমাণ কম। অথবা তার মস্তিষ্ক এই ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয় না। তাই সে এসব ভিডিও দেখেছিলো কিভাবে কান্না শুরু করবে তা চর্চা করার জন্য। কারণ বিদায়ের সময় না কাঁদলে লোকে কি বলবে?
তাও দিয়ার কান্না পায় নি। তাই রিধির বুদ্ধিতে সে অভিনয় করেছিলো। কারণ ছাড়া নাক টেনেছিলো যাতে মনে হয় সে কাঁদছে। আর টিস্যু দিয়ে চোখটা আড়াল করার চেষ্টা করেছে। বাবা-মার থেকে বিদায় নেওয়ার চেয়েও তার কাছে এখন চোখ ঢেকে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকক্ষণ হলো দিয়া বসে আছে। বিরক্ত লাগছে, এতো সাজগোজ নিয়ে বসে থাকতে।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে পরিচিত নম্বর দেখে ভয় পেয়ে গেলো। এইটা তো তার কবিমশাইয়ের নম্বর। এতো চিন্তা করার সময় ছিলো না দিয়ার, সে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো।

-প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তোমায়,
পড়েছি তোমার হাসির মায়ায়।
যতোবার দেখেছি তোমার আঁখি,
বাধিয়াছ তুমি হিয়ায় রাখী।
তোমার মাঝে কী আছে ওগো মায়াবিনী,
আমি তোমারে ছাড়িয়ে যেতে পারিনি।
আজ সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন বন্ধন,
ললাটে তোমার আঁকা হলুদ চন্দন।
মায়াবতী এখন থাকবো তুমি আর আমি,
তুমি আমার বউ, আমি তোমার স্বামী।

দিয়া চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো এতোক্ষণ। অনিক দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। দিয়া চোখ খুলে অনিককে সামনে দেখলো। দিয়ার সামনে এসেই কলটা কাটলো অনিক।

দিয়া: কবিমশায়। না, না অনিকমশায়।

অনিক: হ্যাঁ, মিস দিয়া। না না, মিসেস অনিক।

দিয়া আর অনিকের মুখে হাসির আমেজ। দিয়া ধারণা করেছিলো অনিক তার কবিমশাই। তবুও সম্পূর্ণ প্রমাণ না পেলে কিভাবে শান্ত করবে মনকে? আজ মনও শান্ত, অপেক্ষারও হলো সমাপ্ত।

ভালো থাকুক দিয়া আর অনিক। তাদের জীবনের নতুন যাত্রা সুখের হোক।

৪৬।

বর্ণ দাঁড়িয়ে আছে ক্যান্টিনের সামনে। ক্যান্টিনের পাশেই আছে বিরাট আকারের বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষের শাখা-প্রশাখা অনেক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বটবৃক্ষের নিচে বসার জন্য বাঁশের তৈরি বেঞ্চ আছে। জায়গাটি খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
বৃক্ষটির শাখায় বিভিন্ন রঙের বাতি ঝুলছে। সন্ধ্যার পর এই জায়গাটি খুবই আকর্ষণীয় দেখায়। আর রিধির এই জায়গাটা খুব পছন্দের। সে মনে মনে ভেবে রেখেছে বিয়ের পর রক্তিমের সাথে আসবে এইখানে।
আর রিধির পছন্দের একটি বসার জায়গাও আছে। সে সবসময় সেখানেই বসবে যেকোনো মূল্যে। যদি কেউ আগে এসে বসে যায়, সে দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ না বেঞ্চ খালি হবে। তাই বর্ণ প্রতিদিন আগে এসে বেঞ্চটা ধরে রাখে রিধির জন্য।

রিধি আর দিয়া একসাথেই ভার্সিটি আসলো আজ।

বর্ণ: আজ এতো দেরী করেছিস কেন? কবে থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম জানিস?

রিধি: আমি তো তাড়াতাড়ি আসতাম, কিন্তু এই নতুন বউটি সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার বরের জন্য রুটি বেলেছে, ডিম ভাজি করেছে, সাথে চা বানিয়েছে। তারপর শাড়ি পড়ে বরের সামনে কিছুক্ষণ ঢং করেছে। তারপর বর যখন হাসি দিয়েছিলো তখন একেবারে খুশিতে দৌঁড়ে আমার কাছে এসে বলেছে, ‘জানিস রিধি, তোর ভাইয়ার ভালো লেগেছে হয়তো আমি নাস্তা বানিয়েছি তাই৷ আমার না কেমন কেমন লাগছে। দেখ দেখ হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে। কি লজ্জা লেগেছে!’ তারপর কি হয়েছে জানিস? শাড়ি টা পালটে আবার নতুন জামা পড়েছে ভার্সিটি আসার জন্য। শাড়ি পাল্টানোর এতোই শখ থাকলে ঘুম থেকে উঠে ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়ার কি দরকার ছিলো? বল তো?

বর্ণ: হ্যাঁ রে দিয়া, শাড়িটা না হয় পড়েই আসতি। আমরাও দেখতাম।

দিয়া: অনিকমশাই বলেছে, শাড়ি শুধু তার সামনে পড়তে। শাড়ি পড়লে নাকি আমাকে খুব সুন্দর লাগে! দেখেছিস, কতো চিন্তা তার আমার জন্যে? আমার উপর যদি কেউ ক্রাশ খেয়ে বসে থাকে, তখন অনিকমশাইয়ের কি হবে! তাই।

বর্ণ: ইশ, কি ভালোবাসা! আমারও না এমন একটা বর লাগবে। আমাকে খুঁজে দিবি, প্লিজ।

রিধি: ইশ, এতো প্যারা কেন নিস? ভালোই তো শান্তিতে আছিস, খাবি, ঘুমাবি, আর চিল করবি। এসব বিয়ে, বর, শ্বশুরঘর বড়োই যন্ত্রণা।

বর্ণ: কে বলেছে যন্ত্রণা? ভালোবাসা দিলে কোনো যন্ত্রণা থাকে না। আর তুই তো বড়ো ভাইয়াকে বিয়ে করার অপেক্ষায় আছিস, যন্ত্রণার কথা কি মাথায় আসে না তখন?

রিধি: রক্তিম তো মিষ্টি যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত পাশে থাকলেই তো আমার আত্মার শান্তি।

রিধি, দিয়া আর বর্ণ বটের নিচে বসে কথা বলছিলো। এমন সময় শাহেদ আর আদি আসলো তাদের সামনে।

শাহেদ: হাই রিধি, হাই দিয়া।

রিধি: তোরা এইখানে? তোরা আমাদের ভার্সিটিতে?

শাহেদ: আমি না। আমি তো ঢাকায় ভর্তি হয়েছি। আদির সাথে ঘুরতে আসলাম।

দিয়া: আদি তুই এইখানে? কোন সাবজেক্ট?

আদি: ইংরেজি সাহিত্য।

রিধি: বস না। অনেকদিন পর দেখা হলো। কেমন আছিস?

শাহেদ: ভালো।

শাহেদ বর্ণের দিকে আড় চোখে দেখে ইশারায় রিধিকে জিজ্ঞেস করলো, কে?

রিধি: আমার নতুন বেষ্ট ফ্রেন্ড।

আদি: বর্ণালি নাম, রাইট?

বর্ণ: হ্যাঁ, কিভাবে জানলে?

আদি: তুমি তো সেলেব্রিটি। তোমাকে কিভাবে চিনবো না।

বর্ণ: বুঝলাম না ঠিক।

আদি: তোমার হাতে আঁকা ছবি ভার্সিটির গ্যালারিতে ঝুলছে। তোমার ছবিসহ নাম ছিলো পাশে। তাই চিনেছি। তুমি দারুণ ছবি আঁকো।

বর্ণ: ধন্যবাদ।

অনেকক্ষণ তারা আড্ডা দিলো। তারপর দিয়া, রিধি ও বর্ণ তাদের ক্লাসে চলে গেলো। আর আদি শাহেদকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

শাহেদ: বর্ণ মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।

আদি: হ্যাঁ, প্রেমে পড়িস নি তো আবার।

শাহেদ: আরে না, আমার তো মন অন্য জায়গায় আটকে আছে। তোর জন্য বলছিলাম।

আদি মুচকি হাসলো।
আদি: আমারটা না ভাবলেও চলবে। আমার এসব প্রেমের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। বিয়েই করছি না আমি।

শাহেদ: সারাজীবন সিঙ্গেল থাকবি?

আদি: যেসব সম্পর্ক কষ্ট দেয়, অশান্তি সৃষ্টি করে সেসব সম্পর্কে না জড়ানো উত্তম। এই বিষয়ে কথা বলবি না আমার সাথে আর।

ভার্সিটি থেকে এসে দিয়া ফ্রেশ হয়ে আবার শাড়ি পড়া শুরু করে দিলো। অনিক বাসায় এসেছে, দিয়া তা জানতো না। অনিক রুমে ঢুকে দিয়াকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলো। দিয়া মাথা ঘুরিয়ে অনিককে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। এসবের কোনো অভিজ্ঞতা নেই দিয়ার।

অনিক দিয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
অনিক: আমি তো তোমার বর, এমন করছো কেন?
অপরিচিত নারীর মতো, নিজেকে লুকাচ্ছো কেন?
শাড়ি পড়তে জানো না, আমাকে বলো নি কেন?
আমায় কিভাবে চিনলে না ভালোমতো এখনো?
আমি কি বিরক্ত করতে পারি তোমায় কখনো?
কি হয়েছে, চুপ করে আছো। কিছু বলছো না কেন?

দিয়া: কবিমশাই এমন মুহূর্তেও কবিতা বানাতে পারে?

অনিক: তোমার কবিমশাই আরো অনেক কিছু পারে, জানতে চাও।

অনিকের বাঁকা হাসি আর চাহনি দেখে দিয়া বুঝতে পেরেছে অনিক কি বুঝাতে চাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোথায় পালাবে?

দিয়া নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করে বলল,
দিয়া: আমি বরং রিধির কাছে যায়। ও শাড়ি পড়িয়ে দেবে।

অনিক: আমি আছি না? এতো পথ পাড়ি দিয়ে রিধির কাছে যাওয়ার কী দরকার?

দিয়া: এতো পথ কোথায়? পাশের রুমেই তো।

অনিক: ইশ, দিয়া। তুমি না দিব্যের মতো হও নি। রোহানের মতো হয়েছো। একদম ভাই-বোন দুইটাই নিরামিষ।

দিয়া চোখ বড়ো করে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
দিয়া: কি বললে? আমি নিরামিষ? আমি কি করেছি, হ্যাঁ?

অনিক: ওমা, তুমি যেভাবে পালাচ্ছো, মনে তো হচ্ছে তোমার এই লজ্জা ভাঙানোর জন্য আমাকে কোর্স করতে হবে।

দিয়া: কেমন কোর্স এটি?

অনিক: উমম, বেশি না দুই তিনটা মেয়ের সাথে একটু আধটু ঘোরাঘুরি করবো। তারপর আর কি! শেখা হয়ে যাবে মেয়েদের লজ্জা কিভাবে ভাঙায়। আমার তো কোনো মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো না, তাই অভিজ্ঞতাও নেই। কি বলো, ভালো না আইডিয়া?

দিয়ার কখনো কান্না পায় নি, কিন্তু অনিকের এই কথা শুনার পর চোখের কোণে পানি জমেছে।

অনিকের হাতে শাড়ি দিয়ে অনিকের খুব কাছে এসে দাঁড়ালো দিয়া। তারপর অভিমানী কন্ঠে বলল,

দিয়া: দেখি, পড়িয়ে দাও। আজ থেকে তুমি পড়িয়ে দেবে শাড়ি। বুঝেছো? আর কোনো কোর্স করতে হবে না।

অনিক: অউ, তাই?
আমার বউটার খুব জ্বলছে,
আমার ভারী মজা লাগছে,
তার কন্ঠ আমায় ডাকছে,
আর আমার ভালোবাসা দিন দিন বাড়ছে।
তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না, ওহে মোর জীবিকা,
তুমি তো আমার গল্পের একমাত্র সুন্দরীশ্রেষ্ঠা নায়িকা।

কয়েকদিন পর,
জুনাইয়েত হোসেইন আর নবনী হোসেইন রিধিদের বাসায় আসে। রক্তিমের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয় রিধির বাবা-মার কাছে।

কিন্তু কামাল সিদ্দিক না করে দেন। তাই শুকনো মুখে ঘরে ফিরলেন তারা। রক্তিম জানার পর অনেক কষ্ট পায়। সে আর পারবে না রিধিকে ছাড়া থাকতে। রিধিও ইদানীং বিয়ের কথা এড়িয়ে যায়। সে এতোবছর পর তার বাপ্পি, আম্মি, আর অনু ভাইয়াকে পেয়েছে। বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে আবার দূরে চলে যাবে।

রক্তিম রিধিকে বুঝিয়ে বলে, বিয়ে করার পর তুমি রোজ দেখা করতে পারবে বাবা-মার সাথে। আমি আটকাবো না। কিন্তু রিধি বলে দিয়েছে, এখন সে বিয়ে করবে না।
রিধি হয়তো বুঝতে পারছে না, রক্তিমেরও বিয়ের বয়স হয়েছে। রক্তিমের কোনো আপত্তি নেই এই অপেক্ষায়। রিধির অপেক্ষায় থেকে যদি সে বুড়োও হয়ে যায়, তাতেও চলবে। কিন্তু রিধি ছাড়া চলবে না তার। কিন্তু অপেক্ষাটায় যে যন্ত্রণাদায়ক।

রাত বারোটা। রোহান দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের কেবিনের বাইরে। কিছুক্ষণ আগে ইশাকে নিয়ে এসেছিলো সে। ইশার হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। দিব্য ঢাকায় গিয়েছিলো অফিসের কাজে। রোহানের হাত কাঁপছে। ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে বারবার।
রাজিয়া আর ফয়সাল চলে আসেন দশমিনিটের মধ্যে। তারা নাইট ডিউটিতে ছিলেন।

ডক্টর বের হওয়ার পর রোহান খুব উদ্বিগ্ন কন্ঠে এগিয়ে গেলো ইশার খবর নিতে।

ডক্টর: চিন্তা করবেন না, ভয়ের কিছুই নেই। আপনার ওয়াইফ আর বাচ্চা সুস্থ আছে।

ডক্টরের মুখে ওয়াইফ নাম শুনে বুকটায় কেঁপে উঠে রোহানের।

রোহান ধরা কন্ঠে বলল,
রোহান: ইশা আমার ভাইয়ের ওয়াইফ। আমি ওর…. কেউ না।

পরের কথাটি চাপা স্বরে বলল। রোহান ছাড়া কেউ শুনতে পায় নি এই কথা।

ডক্টর: ওহ, আই এম সরি। বুঝতে পারি নি। বাই দা ওয়ে, আপনারা উনাকে নিয়ে যেতে পারবেন। সমস্যা হবে না।

রাজিয়া: ধন্যবাদ। রোহান, দিব্যকে একটা ফোন দিয়ে বল চলে আসতে।

ফয়সাল: না, থাক। টেনশনে থাকবে। দুইদিন পরই তো আসছে।

দুইদিন ইশা খুব কষ্টে কাটিয়েছে। দিব্য আসার পর অনেক অভিমান দেখিয়েছিলো। কিন্তু দিব্য ছেলেটি অদ্ভুত এক মায়ায় ঘেরা, বেশিক্ষণ রাগ করে যার সাথে থাকা যায় না।

আগামী মাসের শেষে সামিরা আর রোহানের বিয়ে। আর আগামী মাসেই ইশার ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে দিব্যের কেন জানি মন খারাপ। চুপচাপ বসে আছে।

ইশা দিব্যের গালে হাত রেখে বলল,
ইশা: কি হয়েছে?

দিব্য: অপ্সরী, আমার তোলা একটা ছবি সিলেক্ট হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে। এখন ওরা আমাকে ওদের প্রজেক্টে নিতে চায়।

ইশা: অনেক ভালো খবর। মন খারাপ করে আছো কেন তাহলে?

দিব্য: আমাকে জাপান যেতে হবে।

ইশা: কখন?

দিব্য: বিশদিন পর।

ইশা: আমাদের বাবু আসবে। তুমি আমার পাশে থাকবে না?

দিব্য: আমি চলে আসবো, বেশিদিন লাগবে না। একসপ্তাহ শুধু। দেখবে, আমি এসেই বাবুকে প্রথম কোলে নেবো। আর রোহান আর সামিরার বিয়েতে আমরা তিনজন একসাথে ফ্যামিলি ফটো তুলবো। আর ছবিটা ঠিক এইখানে লাগিয়ে দেবো। সকালে চোখ খুললেই চোখে পড়বে দিব্য আর ইশার সুখী পরিবার ফটো।

ইশা: আমি তোমাকে ছাড়া একসপ্তাহ কিভাবে কাটাবো?

দিব্য: আমি থাকবো না তো কি হয়েছে? আমার বাবুটা তো আছে। বাবুটা যতোদিন থাকবে তোমার দিব্য তোমার সাথেই থাকবে। অনেক ভালোবাসি তোমায় অপ্সরী।

ইশা: আমিও অনেক ভালোবাসি।

বিশদিন দেখতে দেখতেই কেটে যায়। দিব্য সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় এয়ারপোর্টে। রোহান এগিয়ে দিতে যায় দিব্যকে।

দিব্য: রোহান, ইশাকে একটু দেখে রাখিস। আই হোপ বাবু হওয়ার আগেই চলে আসবো। কিন্তু ওর মনটা ভালো না। আমি ঠিক সময়ে আসতে পারবো তো?

রোহান: আরে, কেন পারবি না? ডেলিভারিতে আরো সময় আছে।

দিব্য: আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।

রোহান: ফি আমানিল্লাহ।

ইশার কান্না এখনো বন্ধ হচ্ছে না। দিয়া আর রাজিয়া ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে, আর বলছে একসপ্তাহ মাত্র। কিন্তু ইশা কিভাবে বোঝাবে, দিব্যকে ভালোবাসার পর, দিব্যের বউ হওয়ার পর দিব্যকে একদিনের বেশি না দেখে কাটাতে পারে নি ইশা। এখন একটা সপ্তাহ কিভাবে কাটাবে? তাও কতোদূর যাচ্ছে দিব্য!

দিব্য যাওয়ার পর থেকেই ইশা চুপচাপ বসে ছিলো। দিব্য বলেছে পৌঁছে ফোন দেবে। তাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে, দিব্যের ফোনের অপেক্ষায়।

দিব্য জাপান পৌঁছে ইশাকে ফোন দেয়। ইশা দিব্যের কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পায়। এই একসপ্তাহ দিব্য ব্যস্ত থাকায় তেমন কথা বলতে পারে নি ইশার সাথে। তাই খুব চিন্তিত ছিলো ইশা।

একসপ্তাহ পর,
দিব্য: অপ্সরী, আমি আসছি। কয়েকঘন্টা পর ফ্লাইট।

ইশা: তাড়াতাড়ি আসো। তুমি বলেছো, বাবুকে তুমি প্রথম কোলে নেবে।

দিব্য: আচ্ছা আমার লক্ষী বউ। কয়েকঘন্টা অপেক্ষায় থাকো। এরপর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। তুমিসহ যাবো কোথাও গেলে।

ইশা: হুম। আসো আগে। অনেকবার বলেছো আমায় ফেলে কোথাও যাবে না। কিন্তু আমায় ফেলেই চলে গেছো সবসময়।

দিব্য: কারণ, আমার বাবুটাতো ছিলো তোমার সাথে। আচ্ছা, সরি এখন। আসছি আমি। আল্লাহ হাফেজ।

ইশা: আচ্ছা। তাড়াতাড়ি কিন্তু। তোমার অপেক্ষায় আছি আমি।

গভীর রাতে ইশার খুব পেইন উঠে। রোহান আজকেও ইশাকে নিয়ে আসে হাস্পাতালে। ইশা শুধু দিব্যকে খুঁজছে। রোহান ইশার হাত শক্ত করে ধরে আছে।

ইশা কান্নামাখা কন্ঠে রোহানকে বলল,
ইশা: দিব্য বলেছে আমার পাশে থাকবে। কিন্তু আপনাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কেন? প্লিজ আমার দিব্যকে আসতে বলেন।

রোহান: ফ্লাইটে এখন। চলে আসবে। তুমি টেনশন নিও না।

ইশাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়। কয়েকঘন্টা পর অপারেশন শেষ হয়।

নার্স এসে বলল, ছেলে হয়েছে। মা একদম সুস্থ।

বাচ্চাটা রোহানের কোলে দিলো। রোহান প্রথম ইশা আর দিব্যের বাচ্চা কোলে নিয়েছে। এই অধিকারটি সৃষ্টিকর্তা থাকেই দিয়েছে হয়তো। তাই আজ দিব্যের জায়গায় সে দাঁড়িয়ে আছে।

ইশার জ্ঞান ফেরার পর দিব্যকেই খুঁজছে। ইশাকে সবাই শান্ত করার চেষ্টায় আছে। এতোক্ষণে তো দিব্যের ল্যান্ড করার কথা। রোহান গাড়ি পাঠিয়েছিলো দিব্যকে আনার জন্য। হয়তো এতোক্ষণে গাড়িতে উঠেছে।

রোহান হাস্পাতালের করিডোরে পায়চারী করছে, কেন জানি অস্বস্তি লাগছে খুব। ফয়সাল আর রাজিয়াকে পাঠিয়ে দেয় বাসায়। হাঁটতে হাঁটতে ওয়েটিংরুমের সামনে এসে দাঁড়ায় রোহান।

রোহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কান গরম হয়ে যাচ্ছে। হাত পা যেন অবশ হয়ে পড়ছে। এমন কিছু সে দেখবে আশায় করে নি।

চলবে—

আগের পর্ব👇
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/375097934211985/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here