অপেক্ষা পর্ব-৪৯+৫০: (স্পেশাল পর্ব)

অপেক্ষা পর্ব-৪৯+৫০: (স্পেশাল পর্ব)
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ

৪৯।
নিরবতা বিরাজ করছে পুরো ঘর জুড়ে। নিরবতায় এখন এই মৃত ঘরটির বৈশিষ্ট্য। মাঝে মাঝে দিহানের কান্নার শব্দে প্রাণ ফিরে আসে। কিন্তু আবার কয়েকমিনিটের ব্যবধানে শান্ত হয়ে পড়ে পরিবেশ।

মুখোমুখি বসে আছেন দুই দম্পতি। কারো মুখে কথা নেই। ফয়সাল আহমেদ সামিরার বাবা-মাকে বিয়ের তারিখ দুই মাস পেছানোর কথা বলায় এই নিরবতা বিরাজ করছে।

সামিরার বাবা শফিউল হক বিয়ে পেছাতে চান না। একটিমাত্র মেয়ের বিয়ে, তারা বিয়ের আয়োজনও করে ফেলেছেন। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে বিয়ে দুইমাস পেছানো যুক্তিহীন মনে করছেন তারা।

রাজিয়া: আপনারা বুঝতে পারছেন না। আমরা একটা ছেলে হারিয়েছি। এভাবে ঘটা করে বিয়ে দেওয়াটা কি উচিত হবে?

রোকেয়া: আমাদের তো একটিমাত্র মেয়ে। আর মেয়ের তো বিয়ের বয়স হয়েছে। আরো দুইমাস পেছানো সম্ভব না।

ফয়সাল: দুইমাস যদি পেছানো না যায় তবে শুধু ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়ে যাক।

রোকেয়া: ঘরোয়া ভাবে কীভাবে সম্ভব? একটি মাত্র মেয়ে আমাদের। আর আমরা বুঝতে পারছি, আপনাদের অবস্থা। একটা ছেলে হারিয়েছেন, কিন্তু আরো একটা ছেলে আছে তো! তার কথা ভেবে দেখেন নি।

রাজিয়া: রোহান এই ঘটা করে বিয়েতে কখনো সম্মতি দেবে না। আর একটি ছেলে হারিয়েছে, আরো একটা আছে বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন? আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনি কী বলছেন?

রাজিয়া রহমানকে উত্তেজিত হতে দেখে শফিউল হক কথা কাটিয়ে দিলেন।

শফিউল: কিছু মনে করবেন না। বলছি কি, দুইমাস না, দুই বছর পর বিয়ে হলেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের ভয়টা অন্য জায়গায়।

ফয়সাল: কীসের ভয়?

শফিউল হক রোকেয়া জাহানকে ইশারা করলেন।

রোকেয়া জাহান আমতা আমতা করছেন।

রাজিয়া: যা বলার স্পষ্ট বলুন। আমরা কিছু মনে করবো না।

রোকেয়া: ইশার কথা বলছি। ইশা কী বাবার বাড়ি যাবে না?

রাজিয়া: বাবার বাড়ি কেন যাবে ইশা?

রোকেয়া: দিব্য তো আর নেই। এ বাসায় কেন পড়ে থাকবে?

রাজিয়া আর ফয়সাল দুজনেই খুব অবাক হলেন।

ফয়সাল: দিব্য নেই তাই বলে ইশার উপর আমাদের দায়িত্ব শেষ? ইশা আমাদের মেয়ের মতো। দিব্যের সন্তানের মা, ইশা। ইশা এখানেই থাকবে, আমাদের সাথে।

রাজিয়া: দিহানকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না। আর ইশার মতো লক্ষ্মী একটি মেয়ে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়েছি। ভাগ্য ভালো ছিলো আমাদের। ইশার মতো মেয়ে হয় না। অনেক ভালো মেয়েটি। এই অবস্থায় আমরা তাকে একা ছাড়তে পারি না।

রোকেয়া: আমাদের মেয়ে কি কোনো অংশে কম?

রাজিয়া: আমি সামিরাকে নিয়ে কিছু বলছি না। সামিরা অনেক বুদ্ধিমতী আর ভালো মেয়ে। কিন্তু ইশাকে আমরা একা ছাড়তে পারি না।

রোকেয়া: কিন্তু কতোদিন একা থাকবে? আর একা কার সংসারে থাকবে? রোহান আর সামিরার সংসারে? আমরা কথা জটিল না করে সহজে বলছি। ইশা এ বাসায় থাকলে লোকে বাজে কথা রটিয়ে বেড়াবে। রোহান আর ইশা এভাবে এক ছাদের নিচে থাকতে পারবে না। আর আমাদের মেয়ে সুখেও থাকবে না। দিব্য বেঁচে থাকলে একটা কথা ছিলো। আর এভাবে অন্যের সংসারে থাকতে ইশারও ভালো লাগবে না।

ইশা পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাগুলো হজম করছিলো। নিজেকে বড়ো অসহায় লাগছে এখন। রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। দিব্যের শার্ট আঁকড়ে ধরে মাটিতে বসে পড়লো ইশা।

ইশা: এই দিব্য, দেখছো সবাই আমাকে বোঝা ভাবছে? আমাদের কোথাও জায়গা নেই আর। আমাদের সাথে নিয়ে যেতে পারো নি? আমরা একসাথে থাকতাম। আমাদের তিনজনের একটা ছোট্ট সংসার হতো। অনেক সুখে থাকতাম আমরা। দিব্য, এই দিব্য, একটা কবিতা বানিয়েছি তোমার জন্য। শুনবে?

‘এক বিরহিণী বসিয়া আছে দুবাহু মেলিয়া,
কবে আসিবে তাহার প্রেমী সব বাঁধা পেরিয়া,
অপেক্ষায় রাখিয়া সে গিয়াছে চলিয়া,
আসেনা কেহ যাহা হইতে কখনো ফিরিয়া,
পারিবো না থাকিতে প্রেমী তোমারে ছাড়িয়া,
রাত্রি-দিন যার কাটে তোমায় স্মরণ করিয়া,
বহু ভালোবাসা রাখিয়াছি হিয়ায় বাঁধিয়া,
জমাইয়াছি শুধু তোমারে বিলাইবো বলিয়া,
ভালোবাসি কাব্য তোমায়, বাসিয়া যাইব,
বিধবা তোমার আমি, তোমারি রইব।’

ইশা: তুমি শুনলে না আমার কবিতা? এই দিব্য একটু কথা বলবে আমার সাথে? অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি। আমার খুব কষ্ট হয়। খুব কষ্ট হয়।

ইশা কান্নার শব্দ চার দেয়ালের মাঝেই আটকে আছে। কেউ দেখল না এই অশ্রুজল। এই পৃথিবীটা যে বড়োই স্বার্থপর! ইশার মনের যন্ত্রণা বোঝার ক্ষমতা হয়তো আছে, কিন্তু অনুভব করার ক্ষমতা নেই কারো।

রোহান সন্ধ্যায় বাসায় আসে। ফ্রেশ হয়ে রাজিয়া আর ফয়সালের ঘরে যায়। এই সময় দিহান তাদের সাথে থাকে। কিন্তু আজ নেই।

রাজিয়া রোহানকে দেখে বলল,
রাজিয়া: ছোট দিব্যকে খুঁজছিস?

রোহান: হ্যাঁ।

রাজিয়া: ইশা ঘর বন্ধ করে বসে আছে। দুপুরেও কিছু খায় নি। দিহান হয়তো ঘুমাচ্ছে।

রোহান: দুপুরে খায় নি কেন? তুমি ডাকলে না?

রাজিয়া: ডেকেছি তো। বলল খাবে না। মেয়েটিকে এভাবে আর দেখতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে।

ফয়সাল: রোহান এখানে এসে বস। কথা আছে।

রোহান চেয়ার টেনে বসলো বাবা-মার সামনে। ফয়সাল সামিরার বাবা-মার শর্তগুলো বললেন। ইশার এই বাসায় থাকা তাদের পছন্দ না।

রোহান ফয়সাল আহমেদের কথা আটকে বলল,
রোহান: তোমরা কী বলেছ?

ফয়সাল: ইশা আমাদের সাথে থাকবে। দিহানকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না।

রাজিয়া: কিন্তু রোহান তাদের কথায়ও যুক্তি আছে। তাই ভাবছি, তোর আর সামিরার বিয়ের পর আমি ইশাকে নিয়ে আমার বাবার বাসায় চলে যাবো। বাসাটা ইশার নামে করে দেবো। মাঝে মাঝে তোদের দেখতে আসবো।

রোহান: তুমি বাবাকে ছেড়ে চলে যাবে আবার?

ফয়সাল: ইশার এই মুহূর্তে একা থাকা সম্ভব না।

রোহান: ইশা এখানেই থাকবে। আর দিহানও আমার সাথে থাকবে। সামিরার বাবা-মাকে খুশি করা, সমাজের মানুষকে খুশি করা আমার দায়িত্ব না। আমার দায়িত্ব আমার ভাইয়ের দায়িত্বগুলো পালন করা। আর এতোকিছুর পর তোমাদের ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখার কোনো দরকার নেই। তোমাদের জন্য ছেলে, ছেলের বউ-বাচ্চা ইম্পরট্যান্ট নাকি যাদের সাথে এখনো কোনো আত্মীয়তা হয় নি, তাদের মন রক্ষা করা ইম্পরট্যান্ট?

রাজিয়া: রোহান সামিরা তোর হবু স্ত্রী।

রোহান: হবু কিন্তু হয় নি। যে মেয়ে এখনো বিয়ে করেই আসে নি, আর এখনি আমাদের শর্তের উপর শর্ত দিয়ে যাচ্ছে, তুমি কী ভাবতে পারছো এই মেয়ের সাথে এট লিস্ট আমি কখনো ভালো থাকতে পারবো না। সামিরা ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার মনে কোনো জায়গা করতে পারে নি। মেয়েটি ভালো, কিন্তু আমার জন্য ভালো না। আমি পারবো না এতো শর্ত মেনে নিয়ে বিয়ে করতে। ইশা আর দিহান এখানেই থাকবে। যার ইচ্ছে হয় সে বিয়ে করবে। আমার এসবে মাথা ঘামানোর কোনো ইচ্ছে নেই।

রাজিয়া: নিজের কথাও ভেবে দেখ।

রোহান: আমি কি চায় জানতে চাও? কখনো জানতে চেয়েছো কেউ?

রাজিয়া: হ্যাঁ, বল।

রোহান: ইশার দায়িত্ব নিতে চায়। ইশাকে বিয়ে করতে চায়। দিহানের বাবা হতে চায়।

ফয়সাল: তুই কি ভেবে কথা বলছিস রোহান?

রোহান: তোমরা বুঝবে না। বাদ দাও।

রাজিয়া আর ফয়সাল চুপ হয়ে গেলেন। আর রোহান উঠে চলে গেলো।

রুম আটকে বসে পড়ল ফ্লোরে।
রোহানের মনে যা এসেছিলো বলে দিয়েছে। সে ইশাকে পায় নি, কিন্তু ভালোবাসার মায়া ছাড়তেও পারে নি। একাকী থাকলে তার খুব ইচ্ছে করতো ইশার সাথে কথা বলতে। দিব্যের সাথে ইশা যখন হেসে হেসে কথা বলতো, তখন নিজেকে দিব্যের জায়গায় কল্পনা করতে ভালো লাগতো। তার এসব কল্পনার কারণেই হয়তো নজর লেগে গিয়েছে দিব্য আর ইশার ভালোবাসায়।

রোহান মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,
রোহান: আমি খুন করেছি আমার ভাইটাকে। আমি আটকাতে পারি নি আমার আবেগ। নজর লাগিয়ে দিয়েছি। আমায় মাফ করে দিস ভাই। এমনটা জানলে অনেক দূরে চলে যেতাম। কিন্তু ইশাকে অনেক ভালোবাসি আমি। আই ট্রুলি লাভ হার। আই লাভ ইউ টু দিব্য। বাট আই ওয়াজ হেল্পলেস। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।

রোহানের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কয়েকমিনিট পর নিজেকে স্বাভাবিক করে রুম থেকে বের হয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।

ইশা দুপুরে খায় নি। তার উপর এখন ইশাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব। খাবার নিয়ে ইশার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় ঠুকা দেয় রোহান।

ইশা ভেতর থেকেই বলল,
ইশা: কে?

রোহান: আমি।

ইশা: দিহান ঘুম।

রোহান: দরজা খুলো।

ইশা: না, কি দরকার?

রোহান: খাবার নিয়ে এসেছি, খেয়ে নাও।

ইশা: খাবো না।

রোহান: ইশা দরজা ভেঙে দেবো বলছি। মাথা খারাপ করবে না।

ইশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কতো বড়ো সাহস দরজা ভাঙার কথা বলছে।

ইশা: দরজা ভাঙলে দিহান ভয় পাবে। ঘুম ভেঙে যাবে।

রোহান: আস্ত একটা বেয়াদব দেখছি তুমি। আমি খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ইশা।
খুব গরম গলায় রোহান কথাটি বলল।

ইশা এখন মনে মনে খুব ভয় পেয়ে যায়। দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে দেয়। এতোটা বোঝা হয়ে গেছে সে, যে নিজের রুমেও শান্তিতে থাকতে পারছে না।

রাজিয়া আর ফয়সাল আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। রোহানের রাগ সম্পর্কে ফয়সাল আহমেদের ধারণা আছে। রাজিয়া রহমান কিছু বলতে গেলে ফয়সাল আহমেদ তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলেন।

ফয়সাল: ইশা মা, দরজাটা খোলো। আমি বলছি তো! তুমি না খেয়ে থাকলে দিহানের কী হবে ভেবে দেখেছো? তখন আমার ছেলেটা আরো কষ্ট পাবে। তুমি দিব্যকে কষ্ট দিও না, মা।

ইশা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার সাথে সাথে রোহান দরজাটা খুব জোরে ধাক্কা দেয়। ইশা ভয়ে দূরে সরে যায়।
রাজিয়া রোহানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

রাজিয়া: রোহান, কার উপর রাগ দেখাচ্ছিস?

রোহান: এভাবে দরজা বেঁধে বসে থাকা, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী? আর আমার সামনে এসব ন্যাকামো না করলে ভালো হয়। এখন তার জন্য আমার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়বে।

ইশা: আমার বাচ্চা, আপনার না।

রোহান: তুমি চুপ কর। মা, ওকে থামাও। আমার মেজাজ খারাপ করতে মানা করো।

তাদের আওয়াজে দিহানের ঘুম ভেঙে যায়। রোহান খাবারের প্লেট টেবিলের উপর রেখে দিহানকে নিয়ে চলে যায়।

আর যাওয়ার সময় বলে যায়,
রোহান: খাওয়া শেষ না করলে দিহানকে পাবে না। আজকে আমার সাথেই থাকবে দিহান।

রোহান যাওয়ার পর ইশা শব্দ করে কেঁদে দেয়। রাজিয়া হাত ধুয়ে এসে ইশাকে ভাত খাইয়ে দেয়। ইশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, আর সে পানি দিয়ে ভাতগুলো গিলছে। ফয়সাল আহমেদ ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

খাওয়া শেষে ইশা রাজিয়ার হাত ধরে বলল,
ইশা: আমি দিব্যকে ফেলে কোথাও যাবো না। এইখানে আমার দিব্য আছে। ওর স্মৃতি আছে সব জায়গায়। আমি দরজা আটকে বসে থাকবো। কারো সামনে আসবো না। সামিরা আপু আর রোহান ভাইয়ার সামনেও আসবো না। তবুও এই ঘর ছেড়ে যাবো না। শেষ রাতে আমার দিব্য এই ঘরেই ছিলো। মা, আমার দিব্য এখানেই ছিলো। এখনো আছে হয়তো। মা, বাবা, আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না।

ফয়সাল: কারো সাহস নেই, আমার মেয়েকে তাড়িয়ে দেওয়ার। আমার মেয়ে তার বাবা-মার সাথেই থাকবে। আর আমাদের ছোট্ট দিব্য থাকবে তার দাদা-দাদীর সাথে।

রাজিয়া রহমান ইশার কাপড় পালটে দিলেন। তারপর ইশাকে শুইয়ে দিলেন।

ইশা: দিহান।

রাজিয়া: বাবার সাথে খেলছে হয়তো। ঘুমিয়ে পড়ো।

ইশা: রোহান ভাইয়া দিহানের বাবা না।

রাজিয়া: ইশা, দিহানের বাবা দরকার। বাবা ছাড়া একটা সন্তান বড়ো করা খুব কষ্টের। আমি জানি কষ্টটা কেমন!

ইশা: কিন্তু, দিব্যতো চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।

রাজিয়া: হ্যাঁ, দিব্যের জায়গাটা তুমি কাউকে দিতে পারবে না হয়তো। কিন্তু দিহানকে বাবা এনে দিতে পারবে তুমি।

ইশা: মানে?

রাজিয়া: রোহানকে বিয়ে করে। রোহান দিব্যের বাবা হতে চায়। তোমাকে বিয়ে করতে চায়।

ইশা নির্বাক তাকিয়ে আছে রাজিয়ার দিকে। চোখ দুটি ঘোলা হয়ে আসছে। আবার অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। এই অশ্রুগুলোও না বড্ড বেহায়া। যখন তখন চলে আসে।

ইশা: কী বলছেন মা, আমার দিব্য আমার সাথে আছে এখনো। আমি ওর বিধবা হয়ে থাকবো। দিব্য আমার অপেক্ষায় আছে। আমি অন্য কাউকে জায়গা দিলে দিব্য কষ্ট পাবে। আমাদের মাঝে আর কেউ আসবে না।

রাজিয়া: জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।

ইশা: এতোটা নির্দয় হতে পারি না আমি। দিব্য ভালো থাকবে না কখনো। মা, প্লিজ। আমাকে বলবেন না এসব কথা।

রাজিয়া আর কিছু বললেন না। ইশাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন ইশার ঘর থেকে। ইশাও ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো অল্প সময়ের মধ্যে। অনেক ক্লান্তি ছিলো তার শরীরে। আর কতো রাত জেগে ছিলো, হিসেবও নেই।

রাজিয়া বের হয়ে রোহানকে দেখলেন। বিষণ্ণ মনে দাঁড়িয়ে আছে রোহান। রাজিয়া ছেলের কাঁধে হাত বুলিয়ে দিলেন।

রোহান মায়ের হাত ধরে বলল,
রোহান: আমি ইশার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। দিব্যকে হারিয়েছি। ইশাকেও হারাতে পারবো না আমি। আমি মেয়েটাকে ভালোবাসি, মা। অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। দিব্য কষ্ট পেতো জানলে, তাই কাউকে বলি নি কখনো। নিজের মাঝে রেখেছি। আর কতো সহ্য করবো এসব?

রাজিয়া: ইশা কী তোকে মেনে নেবে?

রোহান: আমি ইশার অপেক্ষায় থাকবো।

৫০।
অফিসে আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। রোহান যথেষ্ট ফর্মাল ভাবে নিজেকে তৈরি করেছে। দাঁড়িগুলো বেড়ে যাওয়ায় নিজেকে কিছুটা দেবদাস মনে হচ্ছিলো তার। তাই হালকা ছাটানোর ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু অমনোযোগী হওয়ায় ছাটানোর জায়গায় পুরো কেটে যায়। তাই বাধ্য হয়ে ক্লিন শেইভ করতে হয়। নিজেকে দেখেই এলিয়েনের মতো লাগছে এখন। রোহান কখনো ক্লিন শেইভ করে নি। তার ভালোও লাগে না ক্লিন শেইভ করা। প্রচুর বিরক্ত নিয়ে রোহান নিজের রুম থেকে বের হলো।

এদিকে ইশার আজ ঘুম ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি। ফ্রেশ হয়ে আজ দিব্যের পছন্দের হলুদ শাড়িটি বের করে পড়লো। দিব্যের পছন্দের জিনিসগুলো নিজের মাঝে ধরে রেখেই যেন দিব্যকে খুঁজে পায় ইশা। ইশার চুল খোলা ছিলো। কিছুক্ষণ আগেই গোসল করে বের হয়েছে। ঠিকমতো মাথাটাও মুছে নি। এতো সময় কোথায় তার? দিহানের ঘুম ভাঙার আগে বাসার কাজগুলো সারতে হবে। আর সামনে ইশার অনার্স ফাইনাল এক্সাম। পড়াশুনাও তো হয় না অনেকদিন। তাই আজ বাবার বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। কয়েকদিন সেখানে থাকলে পড়াশুনা করতে পারবে। এই ঘরে থাকলে শুধু মনটা দিব্যকে খুঁজতে থাকে।

নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং-এ সাজিয়ে রাখছিলো ইশা। টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে চুল বেয়ে। ইশাকে দেখতে এখন খুব স্নিগ্ধা লাগছে, কোনো কৃত্রিমতা নেই যেখানে। রোহান রুম থেকে বের হয়ে ইশাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।

রোহান মনে মনে ভাবছে,
ইশা আজ শাড়ি পড়েছে? আজ কি কোনো স্পেশাল দিন? ভালো লাগছে দেখতে খুব। প্রতিদিন এভাবে গুছিয়ে রাখতে পারে না নিজেকে? সবসময় এলোমেলো থাকার কী দরকার?

কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ইশা মুখ ঘুরিয়ে দেখলো। আর রোহানকে দেখার সাথে সাথেই ইশার বুকটা ধক করে উঠল।
ইশার মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসল একটি নাম, ‘দিব্য!’
প্রথম দেখায় রোহানকে সে দিব্য ভেবে ফেলেছিলো।

রোহান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইশার কাছে আসতে যাবে, তখনই ইশা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,
ইশা: আপনি আমার দিব্য হওয়ার চেষ্টা করছেন কেন? আপনি কি ভেবেছেন, আপনি দিব্যের মতো চলাফেরা করলে আমি আপনাকে দিব্যের জায়গা দিয়ে দেবো? কখনো না।

রোহান কিছু বলার আগেই ইশা চলে গেলো নিজের ঘরে। রুম বন্ধ করে অনেকক্ষণ কান্না করলো। এরপর নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলো, বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য।
এদিকে রোহান ইশার কথা শুনে মনে মনে অনেক কষ্ট পেলো। নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে। দিহানকে দেখে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু ইশার রাগ দেখে আর সাহস হয় নি।

সন্ধ্যায় অনিকের সাথে দেখা হয় রোহানের।

অনিক রোহানকে দেখে বলল,
অনিক: দিব্যের লুক!

রোহান: ভুলে কাটা পড়ে যায়। তাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই লুক হয়ে পড়ে। ইশা ভাবছে আমি দিব্য হওয়ার চেষ্টা করছি।

অনিক: ভাববে না কেন? তুই বিয়ে করবি বললি আর সে ভাবলেই দোষ?

রোহান: তুই কিভাবে জানলি?

অনিক: তোর বোন আমার বউ, ভুলে গিয়েছিস?

রোহান: মা, দিয়াকে কথাটি বলে দিয়েছে?

অনিক: হুম, যাইহোক। ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। আই সাপোর্ট ইউ। ইশার এখন এমন কাউকে দরকার যে ইশাকে অনেক ভালোবাসবে। একমাত্র তুই ছাড়া ইশাকে আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না।

রোহান: রাজি হবে না ইশা।

অনিক: এতো সহজে রাজি হবে ভাবলি কীভাবে? দিব্যের জায়গা নেওয়া যাবে না ভাই। দিব্য একটা ভালোবাসা।

রোহান: স্কিপ অনিক। নিতে পারি না এসব। ভাবতেও কষ্ট হয় দিব্য আর নেই। সহ্য হয় না আর। মেনে নিতে পারি না এই সত্যটা। স্কিপ, স্কিপ।

অনিক: আমিও পারি না আর ভালো থাকতে। ওকে, ফরগেট ইট। সামিরার ফ্যামিলিকে কীভাবে হ্যান্ডেল করবি?

রোহান: জানি না। সামিরাকে আমি কখনো বুঝে উঠতে পারি নি। বিয়ে করা দরকার, একদিন করতে হবে তাই না করি নি। কিন্তু ইশাকে নিয়ে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে সামিরা আর তার পরিবারকে?

অনিক: আচ্ছা, ইশাকে বিয়ে করার জন্য এই বিয়ে ভাঙার কথা বলছিস না তো?

রোহান: ইশাকে ভুলার জন্য, দিব্য আর ইশার জীবনে না আসার জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আর এখন আমার প্রয়োজন আছে ইশার জীবনে। এই মুহূর্তে ইশাকে একা ফেলে আমি সরে যেতে পারি না। আর আমি মিথ্যে বলাও পছন্দ করি না। আসলে, আমার নিজেরই খুব দরকার ইশাকে। আমি ভালো থাকতে পারবো না ইশাকে ছাড়া।

অনিক: দিব্য বেঁচে থাকলে, তখন হয়তো সামিরাকে বিয়ে করতি! আর যদি তোর আর সামিরার বিয়ের পর এই এক্সিডেন্ট হতো? তখন?

রোহান: কাউকে এতোটা নিঃস্ব সৃষ্টিকর্তা করেন না! হয়তো আমার অপূর্ণতাগুলো পূর্ণ করার সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। আর তোর এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।

অনিক: তবুও জানার ইচ্ছে ছিলো খুব।

রোহান: দায়িত্ব কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আর তোর এই সব প্রশ্ন খুবই উদ্ভট! দিব্য তোকে কীভাবে সহ্য করতো!

অনিক: দিব্যের জায়গা নিতেও পারবি না তুই!

রোহান: ঝগড়া করিস না। আমার বোন কিন্তু তোর বউ।

অনিক: কী করবি তুই? দিয়াকে আমি ছাড়ছি না, ওকে? খবরদার, রেষারেষি করতে আসবি না।

রোহান বাঁকা চোখে অনিকের দিকে তাকায়। অনিক রোহানের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

অনিক: কুল কুল। এখন শুধুই আমি তোর একমাত্র বন্ধু। আমি ছাড়া আর কোনো গতি নেই।

রোহান মুচকি হেসে বলল,
রোহান: ভয় পেয়েছিস?

অনিক চোখ ছোট করে বলল,
অনিক: না। ভয় পাবো কেন?

রোহান: দিয়ার ভাই বলে কথা।

অনিক: হয়েছে এখন, বাসায় যা। আমার বউ আমার অপেক্ষায় আছে। এন্ড ডোন্ট ওয়ারী। আমি তোর পক্ষে আছি। ইশাকে আর হারিয়ে ফেলিস না। সমাপ্তি টেনে দে তোর ভালোবাসার জন্য এতোদিনের অপেক্ষার।

রোহান মুচকি হাসলো। সে হারাতে চায় না ইশাকে আর।

রোহান বাসায় এসে, ফ্রেশ হয়ে আজকেও দিহানকে খুঁজতে গেলো। রাজিয়া আর ফয়সাল রোহানকে দেখে বলল, ছোট্ট দিব্য মায়ের সাথে নানার বাড়ি গিয়েছে আজ সকালে।

রোহান কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে আসলো। ভালো লাগছে না এখন আর। দিহান আর ইশাকে ছাড়া এই ঘরটি আরো বেশি মৃত মনে হচ্ছে।

একসপ্তাহ দেখতে দেখতেই কেটে গেলো। আর এদিকে ইশাকে দেখার তীব্র বাসনা নিয়ে রোহানের রাত দিন কেটে যাচ্ছে।

আজ ফয়সাল আহমেদ আর রাজিয়া রহমান সামিরার বাবা-মার সাথে শেষ দেখা করলেন। বিয়েটা তারা ভেঙে দেন। অনেকটা তর্কের পর্যায়ে চলে যাওয়ার পরও ফয়সাল আর শফিউলের বন্ধুত্ব থাকায় বিষয়টির সুষ্ঠু মীমাংসা তারা করে ফেলেন।

ফয়সাল আহমেদ যখন জানতে পারেন রোহান ইশাকে ভালোবাসে তখন তার কাছে রোহানের ভালো থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। আর দ্বিতীয়ত, দিহান বাবা ছাড়া কীভাবে থাকবে? সেই চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেন।

একটি সন্তানের জন্য বাবা-মা দুজনই প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্ব। মা সন্তানকে জীবনে চলার পথ দেখিয়ে দেয়, আর বাবা সেই পথ অন্ধকারাবৃত হলে তাতে আলো জ্বালিয়ে দেয়। মা সন্তানকে জীবন যুদ্ধের জন্য সাহস দিয়ে যায়, আর সেই সাহস হারিয়ে ফেললে বাবা সন্তানকে আগলে রাখে সব ধারালো অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য। মা ভেঙে পড়লে আশ্রয়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়, আর বাবা শাসন করে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখায় তার সন্তানকে।

রোহান ছাড়া দিহানের বাবা আর কেউ হতে পারবে না। আর কারো পক্ষে একা পুরো জীবন পার করা সম্ভব না। তাই ইশা আর রোহানের বিয়ের ব্যাপারে রাজিয়া আর ফয়সাল মত দেন।

পরের দিন তারা কামাল সাহেব আর ইশিতা পারভীনের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেন। তাদের বিয়েতে আপত্তি থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ তারা নিজেরাই ইশার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। রোহান যেহেতু স্বেচ্ছায় রাজী হয়েছে, তখন তারা আর কোনো প্রশ্ন তুললেন না।

ইশা জানার পর অনেক কান্নাকাটি করেছে। ইশার ইচ্ছে, সে দিব্যের বিধবা হয়ে বাঁচবে। আর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেকে মানুষ করবে।
মৃত্যুর পর দিব্যের সাথে দেখা হলে ইশা তাকে মুখ দেখাবে কীভাবে যদি অন্য কাউকে সেই জায়গায় বসায়? এমন সব কথা বলে সে বিয়ের বিপক্ষে চলে যায়। কিন্তু ইশার বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, আর তার নিকট আত্মীয়দের যুক্তির কাছে ইশার যুক্তি দাঁড়াতে পারে নি। আর এই বিয়ের একমাত্র কারণ দিহানের ভবিষ্যৎ।

শেষমেশ, একসপ্তাহ পর ইশা আর রোহানের বিয়ে হয়ে যায় আড়ম্বরহীন ভাবে। বাসায় আক্দ পড়ানো হয়। বিয়ের পরও রোহান ইশাকে দেখতে পায় নি। ইশা জেদ ধরে ছিলো, সে যাবে না কোনোভাবে। তাই অগত্যা, ইশাকে ছাড়া রোহানকে বাসায় ফিরতে হয়।

আজ দুইসপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে সে ইশাকে দেখে নি। আর এমন দুর্ভাগা সে, বিয়ে করেও বউকে দেখতে পারলো না। সেই অধিকারটিও ইশা দেয় নি তাকে। তবুও মনে প্রশান্তি এসেছে আজ। এতোটা বছর পর যেন একটু আশ্রয় পেয়েছে ভালোবাসা পাওয়ার।

নিজেকে দেখে হাসি আসছে রোহানের, আর মনে মনে বলছে,
রোহান: হয়তো তুই প্রথম পুরুষ যে কিনা বিয়ে করে একাই বাসর করছে ছাদের পিলারে হেলান দিয়ে, আর বউ হয়তো তার প্রথম স্বামীর বিরোহে এখনো অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে তাদের ভালোবাসার অংশকে কোলে নিয়ে। না, না, শুধু দিব্য আর ইশার ভালোবাসার অংশ না, তিনটি জীবনের যোগসূত্র দিহান। শুধু দিব্যের একার অধিকার নেই, আমারও আছে। আমিও দিহানের বাবা।

ফোনের ওয়ালপেপারে দিব্যের ছবি লাগিয়েছে রোহান। সেই ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলল,
রোহান: তুই সত্যি আর ফিরে আসবি না ভাই, এই কথাটি বিশ্বাস হয় না এখনো। মাত্র একটি সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলি আর আজ লম্বা ছুটিতে চলে গিয়েছিস। কোনো খারাপ আভাস যদি পেতাম, আমি কখনো তোকে যেতে দিতাম না। তুই কি ভাবছিস আমি তোর ইশাকে তোর থেকে কেঁড়ে নিয়েছি? আমি কখনো চায় নি তোকে ইশার থেকে আলাদা রাখতে। আমার সাথে রাগ করে থাকিস না।

রোহানের মনের মাঝে জড়তা এসে ভীড় করছে, দিব্য কি জানতে পেরেছে ইশা এখন শুধুমাত্র তার অপ্সরী নই, রোহানেরও জীবিকা। ইশা শুধু দিব্যের বাচ্চার মা নই, রোহানও এখন ইশার বাচ্চার বাবা। ওপারের মানুষগুলো কি এপারের মানুষগুলোকে দেখতে পায়? কাছাকাছি থাকার অধিকার পায়? রোহানের জানা নেই এসব। যদি দেখতে পায়, কাছাকাছি থাকার অধিকার পায় খুব কষ্ট পাবে হয়তো দিব্য। ভালোবাসার মানুষকে ছুঁয়ে দেখতে না পারার কষ্ট, কথা বলতে না পারার কষ্ট, কাছে আসতে না পারার কষ্ট। রোহান জানে এই কষ্টটা কতো ভয়ংকর। সে চায় না দিব্য সেই কষ্ট পাক। রোহান চায় দিব্য এমন কোথাও থাকুক যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি। কোনো মায়া, কোনো বন্ধন যেখানে নেই। ঘুমিয়ে থাকুক দিব্য। একদিন তাকেও তো ঘুমিয়ে যেতে হবে। সবাই তো এভাবেই ঘুমিয়ে পড়বে, যেভাবে আজ দিব্য ঘুমিয়ে আছে। রোহান চায় এখন দিব্য যাতে শান্তিতে ঘুমাক, একদিন হয়তো রোহান এসে দিব্যকে জাগিয়ে দেবে সেই ঘুম থেকে। তখন একসাথে আবার তারা হাসবে, কথা বলবে, পাশাপাশি হাঁটবে।

এগুলো সব রোহানের কল্পনামাত্র। কারণ একমাত্র সৃষ্টিকর্তায় জানেন সবার ঠিকানা।

গভীর রাত। আকাশ পরিষ্কার, খুব সুন্দর একটা চাঁদ আকাশটিতে স্থান পেয়েছে। রোহান আর ইশার জীবনের সাথে এই আকাশ আর চাঁদের খুব মিল। অন্ধকারাবৃত এই আকাশের মতো রোহানের জীবনটাও খুব অন্ধকারময়। সেই অন্ধকারকে কিছুটা আলোকিত করার জন্য ইশার খুব প্রয়োজন, যেভাবে এই চাঁদটি আকাশের অন্ধকারচ্ছন্নতা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। চাঁদের গায়ে যেমন দাগ লেগে আছে, ইশার জীবনও কষ্টের দাগে ভরে আছে। চাঁদের দাগ কখনো মুছে দেওয়া যাবে না, সেও হয়তো দিব্যের স্মৃতি কখনো মুছে দিতে পারবে না। বরং এই চাঁদটিকে দাগের কারণেই অনন্য লাগছে, ঠিক তেমনি ইশাকেও দিব্যের ভালোবাসা আর দিহানের মা হওয়ার জন্য রোহানের কাছে আরো বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হয়। আকাশ আর চাঁদ একসাথে তবুও তাদের দূরত্ব অনেক বেশি। আজ ইশা আর রোহান একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও অনেক দূর তাদের কাছে আসার পথ।

কিন্তু রোহানের বিশ্বাস এই আকাশের মতো সে হেরে যাবে না। তার জীবনের চাঁদ একদিন তার কাছে আসবেই।

আজ রোহানের ভালোবাসার শেষ সমাপ্তি হয়েছে। তার এতোদিনের অপেক্ষার অবসান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একদিন ইশাকে কাছে পাওয়ার অপেক্ষারও সমাপ্তি হবে। আজ নয়তো কাল ইশাও তাকে ভালোবাসবে। রোহান দিব্যের পুরো জায়গা নিতে চায় না। শুধু অল্প একটু জায়গা করে দিলেই হবে। এতেও নিজেকে সার্থক ভাববে রোহান।

চলবে–

আগের পর্ব 👇
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/375188167536295/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here