অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া শেষ পর্ব

0
8483

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_পঁচিশ
#লেখিকা_তারা_ইসলাম

‘পনেরো দিন পর’
“এই পনেরো দিনের মধ্যে প্রায় পাঁচদিন ছিলাম রুদ্রর বাসায়।আর বাকি দশদিন আছি আমার বর্তমান বাবা লেয়ান জামানের বাসায় আছি।উনি আমাকে এখানে এনেছেন রুদ্রর বাসায় গিয়ে।আমার প্রতি থাকা উনার সব অভিমান অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে।কিন্তু আম্মু যেমন ছিলেন তেমনই আছেন।তবে এখন আর সেদিকে আমি বিশেষ পাত্তা দি’না।আগে সত্য জানতাম না তাই খারাপ লাগতো এখন আর লাগে না।আমার নিজ মায়ের সাথে দুইবার দেখা করার সুযোগ হয়েছিলো।আর দেখা করতে দেন’নি রুদ্র।আম্মুর কি শাস্তি দেওয়া হবে তা জানা নেই আমার।কিন্তু এত ল’ড়া’ই এত ঝ’ড়ের পরও যে আমি নিজের আসল আম্মুকে দেখতে পেয়েছি,ছুঁতে পেরেছি এটাই অনেক।

“কিন্তু এখানে আসার পর থেকে রুদ্র এক’বারো আমায় কল ও করেন’নি,খবর ও নেন’নি।কারণ আমি আব্বুর সাথে চলে এসেছিলাম তাই।উনি চান’নি আমি আব্বুর সাথে আসি।তাই তো এখনো রাগ করে একটা কল ও দেন’নি।আমি দিয়েছিলাম অনেকবার কিন্তু উনি রিসিভ করেন’নি।উনার এমন ইগো দেখে আমি ও রেগে আর উনাকে কল করি’নি।শাশুড়ি মার থেকে জানতে পেরেছিলাম রুদ্র সেখানে নেই তখন আমি বুঝে গিয়েছিলাম উনি হয়তো সে ফ্লার্টেই আছেন।উনি যে একজন পুলিশ সেটা এখনো কেউ জানেন’না।উনি জানতে দেন’নি।

“কিন্তু আব্বুর সাথে বাসায় আসার কয়েক-দিন পর আমার অবস্থা প্রচুর খারাপ হয়ে যায়।বমি করা মাথা ঘুরানো+খেতে না পারা সে-সব দেখে আম্মু বলেছিলেন আমি প্রেগন্যান্ট।আম্মুর কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ হা করে উনার দিকে তাকিয়েছিলাম।

“তবে একদিন আম্মুই আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন টেস্ট করানোর জন্য।তারপর যখন রিপোর্ট হাতে আসলো তখন সিউর হলাম সত্যিই আমি প্রেগন্যান্ট।তখন আমার অনুভূতি কি হওয়া দরকার তা জানা ছিলো না।

“আম্মু আর আব্বু অনেক খুশি হয়েছিলেন।আম্মু অনেক বছর পর আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেছিলেন।নতুন মেহমান আসছে এখন থেকে সামধানে চলা-ফেরা করবি লাফালাফি একদম বন্ধ।তখন আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই না করেছিলাম।আমার সে খবর’টা শশুড় বাড়ির কাউকে জানানো হয়’নি।আমি আগে রুদ্রকেই জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু উনার ফোন বন্ধ।তখন রাগে আমার সারা-শরীর কাপঁছিলো।উনি যদি খবর’টা অন্যে কারোর থেকে শুনেন তখন নিশ্চিত আমাকে ঠু*কে দিবেন।

“মারিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর জেনে নিলাম রুদ্র বাসায় আছে কিনা।কিন্তু না উনি এখনো শশুড়-বাবার বাসায় আসেন’নি।তাই মনে মনে ভাবলাম উনাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।যে ভাবা সে কাজ।

“আম্মু আর আব্বুর থেকে পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে পরলাম রুদ্রর সে ফ্লার্টের উদ্দেশ্য।অবশ্য উনাদের বলেছিলাম আমি শশুড় বাবার বাসায় যাচ্ছি না-হলে তারা এত দূর আমাকে এই অবস্থায় একা ছাড়তেন না।আর ওই ফ্লার্টের একটা চাবি অলরেডি আমার কাছে আছেই।আমি সেসব ভেবেই রওনা দিলাম।
————————–
রুদ্র এখন নানান কে’সে বিজি।একটার পর একটা কেস সমাধান করতেই সে হিমশিম খাচ্ছে।শায়লা খাতুনকে ধরতে পারলেও রাসেল কে এখনো ধরতে পারে’নি তারা।শায়লা খাতুনের ধরা পরে যাওয়ার খবর পেয়ে সে কোথায় পালিয়েছে তা কেউ জানে না।কিন্তু তারা তবুও চেষ্টা করছে তাকে খুঁজার।

“রুদ্র তার ফোন দেখেনিলো নূর অনেক বার কল করেছে সে ব্যস্ত+অভিমানের কারণেই কল রিসিভ করে’নি।নূর কে সে বার বার মানা করেছিলো তার বাবার সাথে না যাওয়ার জন্য কিন্তু সে তার কথা অমান্য করেই চলে গিয়েছিলো যার কারণে রুদ্র না তাকে কল দিয়েছিলো।না কল রিসিভ করেছিলো।রুদ্র দিন-রাত পরিশ্রম করে আজ বেশ ক্লান্ত তাই ভাবলো সে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবে।যে ভাবা সে কাজ।
————————–
নূর রুদ্রর ফ্লার্টে এসে যা যা ছিলো তা দিয়েই লান্স তৈরি করে নিলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে সেখানে থাকা তার একটা শাড়ি পরে অল্প সেজে নিলো।কারণ আজ সে রুদ্রকে সারপ্রাইজ দিবে।তাই অপেক্ষা করে আছে রুদ্র কখন আসবে।

“আমি সোফায় বসে বসে টিভি দেখছিলাম।তখনই দরজা দিয়ে কাউকে ডুকতে দেখে আমি তাড়াতাড়ি টিভি বন্ধ করে লুকিয়ে পরলাম পর্দার আড়ালে।আমি পর্দার আড়াল থেকে দেখতে পেলাম রুদ্র এসেছেন! তা দেখে আমি মুচকি হেসে নিজেকে আরও আড়াল করে নিলাম।

“উনি রুমে ডুকতেই আমি ও উনার পিছন পিছন গেলাম উনি না দেখেন মতো।

“উনি ওয়াশ-রুমে ডুকতেই আমি সে রুমে বিছানায় বসে পরলাম উনি আসার অপেক্ষায়।

“দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালাম আমি উনি বের হচ্ছেন।উনি শুধু একটা শর্ট পেন্ট পরে আছেন আর টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হচ্ছেন।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দৌড়ে গিয়ে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

“নূরের এমন আচমকা জড়িয়ে ধরায় রুদ্র চমকে উঠলো।তবে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি’টা যখন নূর বুঝতে পারলো তখন সে আরও অবাক হয়।তবে আগের কথা গুলা মনে পরতেই সে নূরকে জড়িয়ে না ধরেই বললো- এখানে আসার মানে কি?

“উনার এমন কথায় আমি উনাকে ছেড়ে উনার দিকে তাকিয়ে অভিমানি গলায় বললাম- আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম।

“উনি টাওয়াল বিছানায় রেখে নিজেও বিছানায় শুয়ে বললেন- আমি প্রচুর ক্লান্ত!তুমি আসতে পারো।

“উনার কথায় রেগে বললাম- তো আমিও তো ক্লান্ত তবুও আপনার জন্য লান্স রেডি করেছি।আসুন আগে খেয়ে নিবেন।আর দেখুন আপনার পছন্দের শাড়িটাও পরেছি।

“উনি আমার কথায় আমাকে স্কেন করে শান্ত গলায় বললেন- না আমি তোমাকে এখানে আসতে বলেছি,না লান্স রেডি করতে বলেছি,আর না আমার পছন্দের শাড়ি পরতে বলেছি।সো আমি ঘুমাবো তুমি অন্য রুমে যাও।আর এখন আমার খাওয়ার মুড+খিদা কোনোটাই নেই।

“উনার এমন কথায় আমার কষ্টে অপমানে চোখের পানি চলে আসলো।উনি সব-সময় এমন করেন”উনার থেকে আমি কখনোই সম্মানটা পাই’নি অপমান ছাড়া।এমন ভাবে কথা বলেন মাঝে মাঝে আমার থাকা না থাকাতে যেন উনার কিছু যায় আসে’না।তবুও আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম- আমি আপনাকে কিছু বলতে এসেছিলাম।

“উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন- তোমার আজাইরা কথা শুনার ইচ্ছা কিংবা সময় কোনোটাই নেই আমার।

“আমি এবার তেজী গলায় বললাম- আমি কথা’টা বলেই চলে যাবো তখন না-হয় আপনি শান্তিমত ঘুমাবেন।

“উনি এবার শুয়া থেকে উঠে বসে চিল্লিয়ে রেগে একটা ধমক দিলেন আর বললেন- সব-সময় তোমার ফা*লতু কথা শুনার টাইম আমার নেই।আগেও বলছি এখনো বলছি আমি ক্লান্ত ঘুমানো প্রয়োজন।কিন্তু তুমি সে থেকেই বকবক করেই যাচ্ছো।এখন তুমি রুম থেকে বের হবে নাকি আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো।

“উনার এমন ধমকে আমি হালকা কেঁপে উঠলাম।যে মন ভালো নিয়ে এখানে এসেছিলাম-সে মন এখন ভেঙ্গে-চুড়-মার হয়ে গেছে।তাই মনে মনে ঠিক করলাম আর যায় হোক উনার বাবা হওয়ার খবরটা উনাকে আর আমি আর বলবো না।সেটা জানার যোগ্যও উনি ন’ন।অনেক হয়েছে উনার এমন ব্যবহার আর মেনে নিতে পারছি না আমি।আর না মেনে নিবো!উনাকে উনার জীবন মোবারক।

“তাই আমিও রেগে রুম থেকে বের হতে হতে বললাম- জীবনেও আর আপনি আমার সামনে আসবেন না। আপনার আর আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ।বলেই আমি কাঁদতে কাঁদতে সে বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।

“নূরের কথায় রুদ্র হতভম্ব হয়ে যায় কি থেকে কি হয়ে গেলো সে’ আসলেই ক্লান্ত তাই’তো নূরের সাথে এমন বিহেভ করে ফেলেছে।রুদ্র দ্রুত শি-শার্ট হাতে নিয়ে নূরের পিছন পিছন দৌড় লাগালো।

“আমি মাত্রই একটা অটো’তে উঠতে যাবো তার আগেই রুদ্র আমার হাত ধরে আটকালেন আর অটো’-ওয়ালাকে বিদায় করে দিলেন।

“উনার এমন কাজে আমি উনার দিকে অ’গ্নি চোখে তাকিয়ে বললাম- আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?আপনার এখন ঘুমানো প্রয়োজন আমাকে ছাড়ুন।

“উনি কিছু না বলে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।উনার এমন কাজে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।উনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারি’না এই আমার সাথে বাজে বিহেভ করবেন।আবার এই দরদ দেখাবেন।মানে উনি কি চান হয়তো উনি নিজেও জানেন’না।

“আমার ভাবনার মাঝেই উনি আমাকে উনার রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়ে বললেন- বউ রাগ করে বাসা ছাড়বে আর আমি রুদ্র মির্জা ঘুমাবো তা কি করে হয়।

“আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম- বউ মাই ফু’ট।

“উনি আমার কথায় মুচকি হেসে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের গভীর ছুঁয়া দিয়ে আদুরে গলায় বললেন- আমি সত্যিই অনেক ক্লান্ত নূর না-হলে এমন মিস-বিহেভ করতাম না।আচ্ছা এই দেখো কানে ধরছি আর স্যরি।

“উনার এমন আদুরে কথায় আমি ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠে বললাম- আমি আপনার ব্যবহারে বার বার কষ্ট পায়।আর যায় হোক আপনার সাথে আমি আর থাকছি না।

“আমার কথা শুনে উনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন তারপর আমার পাশে শুয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন- আমিই খারাপ ব্যবহার করবো আবার আমিই ভালোবাসবো।সে অধিকার আমার আছে মিসেস নূর জামান।আর রুদ্রর সীমানা থেকে বের হওয়া পসিবল না।

“আমি আর কিছু বললাম না তবে উনি হুট করেই আমার গলায় উনার ঠোঁটের ছুঁয়া দিতে লাগলেন।যখন উনার ছুঁয়া গুলা গভীর হতে শুরু করলো তখন উনাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম- আপনাকে আমার কিছু বলার আছে বলেই মুখ কালো করে ফে’ললাম।

“উনি আমার নাকে নিজে নাক ঘষে বললেন- রোমেন্টিকের বারো’টা তো বাজিয়ে দিলে এখন বলো মহারানী কি বলবে।

“আমি উনার চোখের দিলে তাকালাম।কথা’টা কিভাবে বলবো তাই ভাবছিলাম।

“তবে নিজেকে সামলিয়ে উনার হাত নিজের পেটে রেখে বললাম- আপনি বাবা হচ্ছেন।

“আমার কথা’টা হয়তো উনি প্রথমে বুঝেন’নি কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন তখন উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।উনার এমন রিয়েকশন দেখে আমি লজ্জায় উনার থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।

~ আমাদের মাঝে কিছুক্ষণ নিরবতা চললো।তবে উনি আমার পেটে হাত রেখে বললেন- নূর?

“আমি উনার দিকে তাকালাম আর তাকাতেই থমকে গেলাম কারণ প্রথম বার উনার ছলছল চোখ দেখলাম।

“উনি আমাকে সে অবস্থায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন- একটা বাজে পরিস্থিতিতে আমাদের বিয়ে’টা হয়েছিলো।কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা একে-অপরকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।তারপরও আমাদের হাজার বার বিচ্ছেদ হয়েছিলো কিন্তু#অবশেষে তোমাকে পাওয়া।তোমাকে পেয়েও যেন পুরোপুরি ভাবে পাই’নি আমি।বার বার হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে ঝেঁকে ধরতো বার বার আমি তোমাকে নিজের করে রাখার জন্য ডেস্পারেট হয়ে উঠতাম।আমার ভালোবাসা ছিলো কঠিন।আমি বাকিদের মতো ভালোবাসতে জানি না” ভালোবাসি ভালোবাসি বলে চিল্লাতেও জানি না।তবুও আমি তোমাকে ভালোবাসি নূর।সবার মতো করে নয় বরং নিজের মতো করে।আজকে যে আমি কত খুশি তা তুমি ভাবতেও পারবে’না নূর।

“উনার কথায় আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম তারপর উনাকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম- আপনি আমার সাথে যেমনই বিহেভ করেন না কেন-তবুও আমার আপনাকেই চাই মির্জা সাহেব।সারাজীবন না-হয় আপনার কঠিন ভালোবাসা নিয়েই থাকবো।আমিও আপনাকে ভালোবাসি রুদ্র।

_______সমাপ্ত_______

গল্প সম্পর্কিত যেকোনো অনুভূতি,আলোচনা,সমালোচনা করতে পারবেন আমাদের গ্রুপে.!! এবং আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলো।

গ্রুপ লিংক..👇 [পাবলিক গ্রুপ]
https://www.facebook.com/groups/436837677927305/?ref=share_group_link

গল্পটি শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here