অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-১১

0
861

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :১১
🍂
——
ভালোবাসা অনেকটা অতিথির মতো,যেমন কিছু অতিথি দীর্ঘস্থায়ী হয়,আবার কিছু হয় ক্ষণস্থায়ী।ভালোবাসাও ঠিক তেমনই, কখনো দীর্ঘস্থায়ী তো কখনো ক্ষণস্থায়ী।অতিথি এলে যেমন খুশিতে ভরে যায় সবকিছু,নব্য প্রেম ও ঠিক তেমনি।কিন্তু অতিথি কখনো চিরস্থায়ী হয়না। অতিথিদের ফিরে যেতেই হয়।তারা চলে গিয়েও রেখে যায় কিছু মধুর স্মৃতি।ভালোবাসাও ঠিক তেমনি অতিথিদের মতো চলে যায়,কিন্তু রেখে যায় কিছু মধুর আর বিরহের স্মৃতি।মায়ান ও মেহবিনের জীবনে ক্ষণস্থায়ী অতিথি ছিল যে কিনা অতিথির মতোই ছেড়ে চলে গিয়েছে।রেখে গিয়েছে কিছু প্রেমময় মধুর স্মৃতি।মেহবিন মাইজাদের বাসা থেকে তখন কোনোমতে তার নিষ্প্রাণ শরীরটাকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।তার শরীর চলছিল না।সবাই মাইজা আর মায়ানের বিয়েতে সআনন্দে রাজি হয়েছে।সবাই এই সিদ্ধান্তে খুশি।শুধু নির্বিকার ছিল মায়ান আর রাফিজ।তাদের যে এই সিদ্ধান্তে ঠিক কি রূপ অনুভূতি কাজ করছিল তা প্রকাশ্যমান ছিলো না।মেহবিন নিজের ভারাক্রান্ত দেহটাকে ঠেলে ঠুলে কোনোমতে ঘরে নিয়ে যায়।গিয়েই বেলকনিতে চলে যায়। আকাশের অবস্থা খারাপ।আজ আবারো হয়তো বৃষ্টি নেমে পৃথিবীর সব ধুলো নিঃশেষ করে দিয়ে তৈরি করবে এক স্নিগ্ধময়ী পরিবেশ।কিন্তু বরাবরের মতো এই বৃষ্টি মেহবিনের মনের ভিতরের কষ্টগুলো নিঃশেষ করতে অক্ষম।সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মেহবিন বর্তমানে কাদছেনা।তার চেহারা ও থমথমে।মেহবিন কেন কাঁদছে না। সে কি তবে মেনে নিয়েছে তার নিয়তির নির্মম পরিহাস। হবে হয়তো।মেহবিন আকাশ থেকে চোখ সরাল।চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল খাটের কাছ ঘেঁষে দাড়ানো বুকশেলফের দিকে।নিজের মনকে কি যেন বুঝিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে দাড়াল বুকশেলফের সামনে। শেলফে বেশিরভাগ হুমায়ুন আহমেদের বই। মেহবিন খানিক সময় তাকিয়ে বুকশেলফের দ্বিতীয় তাক থেকে ”আমরা কেউ বাসায় নেই” বইটি বের করল।বইর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগল মেহবিন।মূলত সে কিছু একটা খুজছে।কয়েক পাতা উল্টাতেই কাঙ্খিত জিনিসটা পেয়ে ও গেল সে।শুভ্র কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে দশ বারো লাইনের কিছু লিখা।মেহবিন কাগজটা নিয়ে ধীর পায়ে বেডে গিয়ে বসে পরে।কাগজ টা বুকে জড়িয়ে নিয়ে বেডের এককোনে শুয়ে পরে মেহবিন।মেহবিন চোখ বন্ধ করতেই চলে গেল স্মৃতির পাতায় সেই দুই বছর আগের মাত্র পাঁচ মাসের খনিকের সুখময় দিনগুলোতে-

অতীত
——
🍁
ঠক ঠক ঠক

-”’মেহু হয় তুই বেরুবি,নাহয় আমি দরজা ভাঙবো। এখন তুই ভাব কি করবি।

মেহবিন বিরক্তি নিয়ে খাটে গিয়ে বসে পরল। প্রতিদিনের এই ধিরিম রিরিম দরজা ধাক্কানো তে রীতিমতো বিরক্ত সে।ওর ইচ্ছে তো করছে গিয়ে মাজার মাজাটা ভেঙে দিয়ে আসতে।কিন্তু তার জন্য ওকে দরজা খুলতে হবে।কিন্তু কোনোমতেই সে দরজা খুলবে না।দরজা খুললেই মাইজা ওকে টেনে হিচরে ওর বাসায় নিয়ে যাবে। যেটা ওর কাছে অতি ভীতিকর ব্যাপার স্যাপার।সে কোনোভাবেই ঐ বাসায় যাবেনা।ঐ বাসায় যে মায়ান নামক একটা খবিশ আছে। ঐ খবিশের চেহারা পর্যন্ত দেখতে চায় না মেহবিন।কিন্তু সেটা রাগে না,ভয়ে।ওর ধারণা মায়ান ওর আম্মু কে সব বলে দিবে।আর ওর আম্মু শুনে লাগিয়ে দিবেন পাঁচ ছয়েক ঘা।এমনটা আগেও হয়েছে ওর সাথে।মেহবিনের যখন দশ বছর বয়স তখন একটা বিয়েবাড়িতে খেলার ছলে একটা বাচ্চাকে আইসক্রিম লাগিয়ে দিয়েছিল।পরে ছেলেটির সে কি কান্না।তখন ছেলেটার কান্না দেখে ওর আম্মু এক থাপ্পরে দিনে দুপুরে চাদ,তারা দেখিয়ে দিয়েছে।কিন্তু কথা সেটা না,কথা হলো তখন ওর আম্মু ওকে ঐ বিয়ে বাড়িতে সবার সামনেই চড় থাবড়া লাগিয়েছিল। তখন নাহয় ছোট ছিল কিন্তু এখন খবিশ টা সব বলার পর যদি ওর আম্মু ঐ খবিশের সামনেই মারে তখন ব্যাপারটা মানসম্মান অবধি চলে যাবে।

-”’মেহু আল্লাহর ওয়াস্তে দরজাটা খুলে দে। তুই একসপ্তাহ যাবত আমার বাসার ছায়াও মারছিস না।

মেহবিন বিরক্ত হয়ে বলল-

-”’মাজা সোজা উল্টো পথে ঘুরে বাসায় যা।নাহয় থাপ্পর একটাও ফ্লোরে পরবে না।আমি যাব না তোর বাসায়।

মাইজা গলার স্বর বারিয়ে বলল-

-”ঠিক আছে যাইসনা কিন্ত দরজা খুল।তোর চাঁদমুখ খানা একটু দেখি।

মেহবিন সন্দিহান গলায় বলল-

-”’ জ্বি না। আমি দরজা খুললেই তুমি ভিতরে ঢুকে কানের কাছে এসে ব্যাঙের মতো ঘ্যানর ঘ্যানর করবা।

মাইজা আশ্বস্ত করে বলল-

-”’না বইন সত্যি,আমি শুধু ঘরে ঢুকে তোর সাথে একটু কথা বলব।

মেহবিন সামান্য আশ্বস্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।মাইজা ভিতরে ঢুকেই গিয়ে খাটে সটান শুয়ে পরল।মেহবিন ওর পাশে বসতেই সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল-

-”’সমস্যা কি তোর ঐদিন ঐ অনুষ্ঠানের পর আজ একসপ্তাহ হয়ে গেল আমার বাসায় যাস না। আগে তো ঠেলেও আমার বাসা থেকে বের করা যেত না।

মেহবিন আড়চোখে মাইজার দিকে তাকিয়ে বলল-

-”’তোর বাড়িতে ঐ খবি-না মানে মায়ান ভাইয়ের জন্য যাই না।

মাইজা উঠে বসে বলল-

-”মায়ান ভাই আছেন তো তোর কি?তুই গেলে কি তোকে খেয়ে ফেলবে নাকি।

মেহবিন গলা খাকারি দিয়ে বলল-

-”আমার ভালো লাগে না তোর মায়ান ভাইকে।

মাইজা অবাক হয়ে বলল-

-”’ভালো লাগে না,তাও মায়ান ভাইকে। তুই কি মেয়ে?

মেহবিন চোখ বড় করে বলল-

-”’আমি কি মেয়ে নাকি এর মানে কি?

মাইজা বলে-

-”তো মায়ান ভাইয়েরমতো হ্যান্ডসাম,ডেশিং একটা ছেলেকে তোর ভালো লাগেনা?জানিস এই এপার্টমেন্টের প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটের মেয়েরা মায়ান ভাই কে দেখার জন্য কতো কিছু বানিয়ে নিয়ে আসে। মায়ান ভাই তো ওগুলো ছুঁয়ে ও দেখেনা।কি এটিটিউড ভাব। আর ওনার টাকা পয়সা তো যেন বট গাছে ধরে।

মেহবিন মুখ ভেঙালো। ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল-

-”তুই কি ঐ লোকের গুণগান গাইতে এসেছিস?

মাইজা আবার সটান শুয়ে বলল –

-”’না। আজকে মায়ান ভাইয়ের তরফ থেকে একটা ছোটোখাটো ট্রিট দেওয়া হবে। বিকালে সবাই একসাথে ছাদে গিয়ে একটা ছোটোখাটো ট্রিট পার্টি করব আরকি। তুই ও যাবি সেটাই বলতে এলাম।

মেহবিন বিচলিত হয়ে বলে –

-”না কখনোই না, কোনো দিন না। অসম্ভব।

মাইজা বড়সর হাই তুলে বলল-

-”’সেটা তোর ব্যপার।আমি গিয়ে আন্টি কে বলব যে তুই মায়ান ভাই কে দেখতে পারিস না বলে মায়ান ভাই এত ডাকার পরে ও যাসনি। এখন ভাব তুই কি করবি।

মেহবিন ঢোক গিলল। এই মুখপুড়ি গিয়ে যদি সত্যি এসব বলে তো ওর আম্মু ওকে বেয়াদবের উপাধি দিয়ে মাইর লাগাবে।

মেহবিন মাইজার দিকে অসহায়ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল-

-”ব্লাকমেইল।

মাইজা বত্রিশ পাটি দাত সামনে বের করে বলে-

-”’তোমসেহি শিখে হে বনু।
——-
বিকেল চারটা। মেহবিন মাইজার সাথে ছাদে দোলনায় বসে আছে।সামনেই রাফিজ আর ওর কিছু ফ্রেন্ড মিলে কি সব পেকেট টেকেট টেবিলে এনে রাখছে। মেহবিন বারবার ছাদের দরজায় তাকাচ্ছে। কখন জানি খবিশটা এসে ওকে দেখে ফেলে। মাইজা ও মরিয়া হয়ে উঠেছে মায়ানকে দেখার জন্য। কিন্তু মায়ানের ছিটেফোঁটা ও এখানে নেই।মেহবিন উসখুস করে বলল-

-”মাজা তোর মায়ান ভাইকি সত্যি ই ট্রিট দিবেন। দেখতে পাচ্ছি না যে।

মাইজা ও এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে বলল-

-”বুঝতে পারছি না।আসছে না কেন।হয়-

কথা শেষ হবার আগেই রাফিজ চেঁচিয়ে ডাকল-

-”’মাইজা আমার সাথে একটু নিচে আয়।

মাইজা আসছি বলে দৌড়ে রাফিজের সাথে নিচে নেমে গেল। মেহবিন একটু ভাবল হয়ত আসবে না মায়ান। আর আসলেও ও শরীর খারাপের বাহানায় নিচে চলে যাবে। মেহবিন দোলনা থেকে উঠে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে পিছনে না ঘুরেই বলল-

-”মাজা এসেছিস। শোন আমার ভালো লাগছে না।আমি বরং বাসায় যাই।

পিছন থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে মেহবিন ভ্রু কুঁচকে পিছনে তাকাতেই দেখল …..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here