#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:১২
🍁
মেহবিন পিছনে ঘুরে থতমত খেয়ে গেল। মায়ান দাড়িয়ে আছে। ঠোঁটে সেই গা জ্বালানো বাকা হাসি। মেহবিন সচেতন চোখে আশেপাশে তাকাল।নাহ,মাইজা কোথাও নেই। দরকারের সময় মুখপুরি কে খুঁজে পাওয়া যাবে না।মেহবিন নিজের মনে মনে বিরবিরাতে লাগল।মায়ান হাসি আরো প্রসারিত করে মেহবিনের দিকে এগিয়ে গেল। মেহবিন শুকনো ঢোক গিলল।মায়ান কাছাকাছি দাড়াতেই মেহবিন শ্বাস আটকে দাড়িয়ে রইল। মেহবিন নিজেকে শান্ত করে কিছুই হয়নি এমন ভাব ধরে মায়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে মায়ান রেলিং এ মেহবিনের দুই পাশে হাত রাখল। এবার মেহবিনের মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।মেহবিন পালানোর রাস্তা খুজতে লাগল। মায়ান হাসি পেটে চেপে রেখে যথাসম্ভব চেহারায় গাম্ভীর্য ভাব এনে বলল-
-”’পালাতে চাইছ?
মেহবিন হাত মোচড়ানো শুরু করল। সত্যিই তো ও পালাতে চাইছে। এখন কি সে বলবে নাকি হ্যা হ্যা পালাতে চাইছি। যত্তুসব।মায়ান মেহবিন কে চুপ থাকতে দেখে বলে –
-”পালাতে চাইলেও তেমন একটা লাভ হবে না। এই মায়ান আভিয়াজের ব্লেজারে মলম লাগানোর শাস্তি তো পেতেই হবে।
মেহবিন ঢোক গিলল। আশ্চর্য,সামান্য মলম ই তো এইজন্য কি এখন ফাসিতে চরিয়ে দিবে নাকি!মেহবিনের মাথায় চোট করেই ঢুকে গেল। এই লোক এখন ওর আম্মু কে সব বলে দিবে নাতো। হায় হায়!তাহলে তো সব শেষ। মেহবিন খুব কষ্টে মায়ানের দিকে একবার তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বলল-
-”’দেখুন,প্লিজ।আম্মু কে কিছু বলবেন না। আম্মু জানলে অনেক রাগারাগি করবে। প্লিজ।
মায়ান স্বাভাবিক ভাবেই বলল-
-”’ভয় পাচ্ছো নাকি আমাকে?
মেহবিনের এবার রাগ চেপে গেল। কি শুরু করেছে এই খবিশ টা। ভয় তো সে পাচ্ছে। বুঝতেই যখন পারছে তখন এত প্রশ্ন করছে কেন। তবে মেহবিন ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ না করে অবাক হওয়ার ভান করে বলল-
-”’ভয় কেন পাব?আপনি বাঘ না ভল্লুক?আমি শুধু আপনাকে অনুরোধ করছি যে এসব কিছু আম্মু কে বলবেন না।
মায়ান ভ্রু কুঁচকালো। এইটুকু মেয়ের এত ভাব?ভয় পাচ্ছে অথচ স্বীকার করছে না। মায়ান মেহবিন কে আরেকটু বাজিয়ে দেখতে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল-
-”’যদি ছাদ থেকে ফেলে দেই?
মেহবিন আকাশ থেকে পড়ল। সামান্য মলম লাগিয়েছে বলে কি এখন তাকে অকালে মরতে হবে। মেহবিন ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে নিচে তাকাল। তেরোতলা থেকে নিচে পড়ে গেলে তার অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন হয়ে যাবে। মেহবিন নিচ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাল। মায়ানের তীক্ষ্ণ নজরে এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহবিন তবুও নিজের মানসম্মানের কথা ভেবে ভয় চেপে রেখে আমতা আমতা করে বলল-
-”’ভ-ভয় কেন পাব?
মায়ান মেহবিনের দুপাশ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। তারপর মেহবিনের আরেকটু কাছে গিয়ে মেহবিনের দু বাহু ধরে বলল-
-”’ভয় যখন পাচ্ছো না,তখন এই সুযোগে মিস করা ঠিক হবে না। ফেলেই দেই কি বলো। দেখি একটু হালকা হোও তো।
মেহবিন চোখ বড় বড় করে তাকাল।মায়ান বাহু ধরে সামান্য উচু করতেই মেহবিন চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল।মেহবিন আর চুপ করে থাকতে পারল না। চোখ মুখ খিচেই উত্তেজিত হয়ে বলল-
-”’না না ফেলবেন না প্লিজ।
মায়ান আরেকটু শক্ত করে বাহু ধরে বলল-
-”’তাহলে বলো ভয় পাচ্ছ।
মেহবিন দ্রুত বলে দিল-
-”’হ্যা অনেক ভয় পাচ্ছি। প্লিজ ফেলবেন না। প্লিজ।
মায়ান বিজয়ের হাসি হেসে মেহবিনকে ছেড়ে দিল। যাক অবশেষে এই মেয়ের ভাব বের করা গিয়েছে। মায়ান এবার একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল-
-”’ওকে। এখন বলো কি শাস্তি দেয়া উচিত তোমাকে?
মেহবিন জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল। মায়ানের মুখে শাস্তির কথা শুনে ওর শ্বাস বন্ধ করে ফেলল। আরে ও তো বলল যে ভয় পাচ্ছে। নিজের মানসম্মানের বিসর্জন দিয়ে তো স্বীকার করল সে। এখনও কি শাস্তি দেওয়া মানায়। মেহবিন আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই মাইজার গলা পাওয়া গেল।মেহবিন যেন জোর বাচা বেচে গেল। মেহবিন মায়ানের সামনে থেকে দৌড় দিবে তার আগেই মায়ান ওর হাত ধরে ফেলল। মেহবিন হাতের দিকে না তাকিয়েই হাত মোচড়াতে লাগল। মায়ান পিছনে থেকে মেহবিনের কানের কাছে মুখ এনে বলল-
-”’শাস্তি টা তোলা রইলো। সঠিক সময়ে সুদে আসলে শাস্তি বুঝিয়ে দেয়া হবে।
এইটুকু বলেই মায়ান হাত ছেড়ে দিল। তারপর বাকা হেসে অন্যদিকে চলে গেল। মেহবিন এখনো ওখানেই দাড়িয়ে আছে। সে নিজের মনে মনে মেনে নিল যে এই খবিশ টা তাকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বে।
————-
🍂
রাত এগারোটা। চারিপাশে নিস্তব্ধতা। আশপাশ থেকে দু একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনা যাচ্ছে। এছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই। সবাই এই সময়ে ঘুমে বিভোর। শুধু ঘুম নেই মেহবিনের চোখে। তার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। এই সামান্য একটা বিষয়ের জন্য যে কিনা ওকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার মতো চিন্তা করতে পারে সে না জানি কেমন শাস্তি দিবে। ভাবতেই মেহবিনের শরীরে কাপুনি ওঠে যাচ্ছে। বিকেলে ছাদে ঐ সময়ে সবাই এসে পরেছিল বলে বেচে গিয়েছিল। নাহয় যে কি হতো কে জানে। পুরোটা বিকেলে মেহবিন এক ফোঁটা শান্তি পায়নি।মায়ান বারবার ওর দিকে তাকিয়ে ডেভিল মার্কা হাসি দিচ্ছিল। যা ওর দম বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট। শেষে আর না পেরে মাইজা কে কোনোরকম শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে চলে এসেছিল।এই মায়ান নামক খবিশ টার সাথে কেন যে তার দেখা হলো। নাহ আর ভয় পেলে হবেনা। তাকে শক্ত হতে হবে। এখন থেকে সে আর চুপ থাকবেনা। হ্যা আর চুপ থাকবেনা।এসব হাবিজাবি ভেবেই মেহবিন ঘুমিয়ে গেল।
পরেরদিন সকালে যথারীতি মেহবিন মাইজার বাসায় গিয়ে কলিং বেল প্রেস করল। তবে সবসময়ের মতো চোখেমুখে উৎফুল্লতা ভাব নেই।সে চোর চোর ভাব করছে।একবার পা বারাচ্ছে বাসায় ফিরে যাবে। পরে আবার একটা দম নিয়ে ভাব দেখিয়ে বলল যাবে না সে।হুহ কোনোমতেই ভয় পাওয়া যাবেনা। তার এসব ভাবনার মাঝেই মিসেস রুনা দরজা খুলে দিল। মেহবিন কে দেখেই উচ্চস্বরে হেসে হেসে বলল-
-”’মেহু আসছিস।আয় আয় ভিতরে আয়।
মেহবিন মিসেস রুনার মুখ চেপে বলল-
-”’আল্লাহ!কি করো আন্টি।আস্তে আস্তে।আমি মাইজার ঘরে গেলাম তুমি আস্তে ধীরে দরজা লাগাও।আর আমি যে আসছি এটা যেন কেউ টের না পায়।
বলেই মেহবিন অতি সাবধানে মাইজার রুমে গিয়ে। মিসেস রুনা হতবাক হয়ে গেল।তারপর অতি আফসোস নিয়ে বলল-
-”মাইজার সাথে থাকতে থাকতে মেয়েটার এই দশা আজকে।
(আপনারা হয়তো আরেকটু বড় চাইছেন। কিন্তু আমি লিখালিখির জগতে একদম নতুন। তাছাড়া আমি বাংলা টাইপিং তেমন একটা পারদর্শী না। তবুও আমি চেষ্টা করছি।আশা করি আপনারা বুঝবেন। আমি সামনে আরো বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব❤)