#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :২৬
🍁
মায়ান চমকালো।মেহবিনের কাছ থেকে এই মুহূর্তে এমন কথা শুনবে আশা করেনি।মেহবিন ইদানিং প্রায়ই বিরল কথা বলছে।ঐ দিনো বলল যে মায়ানকে দেখলে নাকি ওর প্রেম প্রেম পায়।মায়ান বুঝতে পেরেছে মেহবিন এখন ঘোরে আছে।ঘোরের মাঝেই এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করছে।মায়ান মেহবিনের ঘোর কাটানোর জন্য এক ভ্রু উচিয়ে বললো-
-”তুমি চাইলে জড়িয়ে ধরতেই পারো।আই ডোন্ট মাইন্ড।বাট ইন ফিউচার,এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে আমিও যদি এমন আবদার করি তখন কিন্তু তোমাকেও আমার আবদার রাখতে হবে।রাজি?
মেহবিন মায়ানের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারল কি না কে জানে।সে এখনও ঘোরের মাঝেই আছে।মেহবিন এক কদম এগিয়ে গেলো মায়ানের দিকে।মায়ান আবারো চমকে গেলো।এই মেয়ের ঘোর কি এখনো কাটেনি।এখন যদি সত্যি সত্যিই জড়িয়ে ধরে আর যদি কেউ এই অবস্থায় ওদের দেখে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।মেহবিন মায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়াবে তার আগেই মাইজা কোথা থেকে যেন এসে মেহবিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরল।মেহবিনের ঘোর কাটল এবার।মাইজা মেহবিনের জড়িয়ে রেখেই মন খারাপ করে বললো-
-”কাদছিলি মেহু?আমি জানতাম তুই এখন কাদবি।তোকে কতবার বলবো এসব নিয়ে মন খারাপ করবি না।আর তুই ঐ বুড়ির কথায় কাদছিস।
মেহবিন মাইজাকে ছাড়িয়ে বললো-
-”কাদছি না আমি।
-”জানা আছে আমার।
তারপর মায়ানের দিকে তাকিয়ে মাইজা হেসে বললো-
-”আপনাকে রাফিজ ভাইয়া ডাকছে।
মায়ান মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বারাল।তারপর থেমে একপলক মেহবিনের দিকে তাকাল।মেহবিন মুখটা শুকনো করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।মায়ান কিঞ্চিত হাসল।মেহবিনের মন ভালো করার জন্য একটা চিন্তাও করে ফেললো।তারপর চলে গেলো বাড়ির ভিতরে।মাইজা মেহবিনের হাত ধরে বললো-
-”কাদিস না মেহু,তুই আমার দেখা সবচেয়ে মায়াবি মেয়ে।
মেহবিন মলিন হাসল।মাইজা সবসময়ই তাকে এই কথাটা বলে।তবে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলে নাকি মন থেকে বলে সেটা আজো বুঝতে পারেনি মেহবিন।কিন্তু যে কারণেই বলুক ওর মন ভালো করার জন্যই বলে।মাইজা আর মেহবিন ভিতরে চলে গেলো।মাইজা একপলক তাকাল মেহবিনের দিকে।মেহবিন ঐ সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার পরই বুঝেছিলো যে কাদতেই চলে গেছে এখান থেকে তাই মাইজাও এক ফাঁকে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।বাইরে গিয়ে মেহবিন আর মায়ানকে আবারো একসাথে পেলো মাইজা।মাইজা এই প্রথম মেহবিনকে হিংসা করল।মায়ানকে বারবার মেহবিনের কাছে দেখলেই ওর মেহবিনের উপর বেশ রাগ হয়।তখন মেহবিনকে এভাবে মায়ানের দিকে এগুতে দেখে মাইজা গিয়ে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরে।
মাইজা মেহবিনের থেকে চোখ সরাল।তবে কি মেহবিন ই ওর ফেইরিটেলের রাজপুত্র কে ওর কাছ থেকে নিয়ে যাবে।নাহ কখনোই না।মায়ান শুধু মাইজার।মাইজা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল।
———-
বিকেলে সবাই উঠোনে বসে আড্ডা দিচ্ছে।মেহবিন, মাইজা,ইলফা,ইরিনা সবাই গল্প করছে।আর বাড়ির মহিলারা সবাই পিঠা বানাচ্ছেন।মেহবিন আর ইলফার পছন্দ পাটিসাপটা পিঠা আর ইরিনার পছন্দ ভাপা পিঠা আর মাইজার পছন্দ ভাপা পিঠা।ওরা শুধু শীতের সময়ে না।সিলেটে যখনই আসে তখনই ওদের পছন্দের পিঠা বানানো হয়।মাইজা,ইলফা,ইরিনা সবাই হাসাহাসি করলেও,মেহবিন এখনো মুখ ভার করে বসে আছে।মাইজা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে ওর কাধ ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-
-”এখনো এভাবে আছিস কেনো?
মেহবিন কিছু না বলে আবার চুপ করে থাকে।মেহবিনের মামী একটা পাটিসাপটা পিঠার বাটি এনে মেহবিনকে দিয়ে বলে –
-”এই নে খেয়ে দেখতো মেহু,কেমন হয়েছে?
মেহবিন হেসে বলে-
-”তোমার হাতের পিঠা কি কখনো খারাপ হতে পারে?
-”তবুও খেয়ে বল কেমন হয়েছে।কতদিন তো বানাইনি,আগের মতো নাও হতে পারে।
মিসেস ইশিতা আবারো রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল।মেহবিন পিঠা একটা নিয়ে মুখে নিবে তখনই মায়ান এসে মেহবিনের হাত থেকে পিঠাটা নিয়ে নিল।তারপর ওদের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।রাফিজও এসে বসে মায়ানের পাশে।মেহবিন সরু চোখে মায়ানের দিকে তাকাল।মায়ান পিঠা একটু মুখে দিয়ে গলা উঁচিয়ে মিসেস ইশিতার উদ্দেশ্য বলে-
-”মামী,আপনার হাতের পিঠা সত্যিই অসাধারণ।
মিসেস ইশিতা হেসে বলেন-
-”বসো বাবা তোমার জন্য আনছি।
ইলফা মায়ানের দিকে তাকিয়ে কানের দুল ঠিক করতে করতে বলে-
-”জানেন মায়ান ভাই আমিও আম্মুর মতো অনেক মজার মজার পিঠা বানাতে পারি।ভালোই হয়েছে আমি পিঠা বানানো টা শিখে নিয়েছি।আপনার পছন্দের পিঠা বলে কথা।
মেহবিনের মন আগের থেকেই খারাপ ছিলো।এখন ওর কান্না পাচ্ছে।এই মেয়ের এমন ঢং ওর বিরক্ত লাগছে।মায়ান পিঠার শেষটুক মুখে দিয়ে হাত ঝেড়ে বলে-
-”নাহ ইলফা আসলে আমার পিঠা তেমন পছন্দ না।আজকে একটু ট্রাই করলাম আরকি।সমস্যা নেই তোমার জন্য এমন ছেলে খুজে বিয়ে দিব যে কিনা পিঠা খেতে পছন্দ করবে।তোমার পিঠা বানাতে পারাও সার্থক হবে।
ইলফার মনক্ষুন্ন হলো।সে তো মায়ানকে খাওয়াবে ভেবেছে।এখানে অন্য ছেলে আসল কোথা থেকে।মেহবিনের মন খারাপ একটু হলেও কমেছে।মাইজা ঠোঁট টিপে হাসল।রাফিজ এতক্ষন দর্শক হয়ে বসে থাকলেও এখন গলা খাকারি দিয়ে বলে-
-”শোন তোদের জন্য একটা গুড নিউজ আছে।মামার সাথে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো সিলেট ঘুরব আমরা।তাছাড়া কায়ার বিয়েও এখনো দেরি আছে।
মেহবিন ফট করে তাকাল রাফিজের দিকে।ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না রাফিজের বলা কথাটা।ও সেই কবে থেকে চাইত সিলেট ঘুরে দেখবে।কিন্তু কখনোই সেটা হয়ে উঠে নি।মেহবিনের মন খারাপ নিমিষেই শেষ হলো।ইলফা আর ইরিনাও খুশি হয়েছে।মাইজা একটু সন্দিহান গলায় রাফিজকে জিজ্ঞেস করল-
-”তুই তো এসব ঘোরাঘুরি পছন্দ করতি না।তাহলে তুই যে হঠাৎ ঘুরতে যেতে মামুর সাথে কথা বললি?
রাফিজ বিরক্তি নিয়ে বললো-
-”আমি এখনো পছন্দ করিনা ঘুরতে।সে তো মায়ান বললো বলে রাজি হলাম।
মেহবিন মায়ানের দিকে তাকালো।মায়ানো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।দুইজনের চোখাচোখি হলো।মায়ান ঠোট প্রসারিত করে হাসল।মেহবিন বুঝে নিল সেই হাসির মানে ।বুঝতে পেরেছে মায়ান তার মন ভালো করার জন্যই ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছে।মেহবিনো হাসল।যার অর্থ ওর মন ভালো হয়েছে।মায়ান তৃপ্তির হাসি হাসল।দুইজনই দুইজনের চোখের ভাষা বুঝে নিলো।ব্যাক্ত করতে হলো না তাদের মনের কথাগুলো।এ যেন তাদের #অব্যক্ত ভালোবাসা 💜।
*(বিঃদ্রঃ পর্বটা ভীষণ অগোছালো হয়ে গিয়েছে।কি লিখতে কি লিখেছি নিজেও জানি না।আজকে রাতে কি আরেকটা পর্ব দিবো?আপনারা চাইলে দিব😊)
চলবে…….