#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :৭
আজ আকাশ পরিষ্কার। বৈশাখ মাসে সাধারণত বৃষ্টি আর ঝড় থাকলেও আজ আকাশ একদম স্বচ্ছ। আকাশে আজ মেঘেদের খেলা চলছে।শুভ্র মেঘেরা আজ মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটা মাতোয়ারা পরিবেশ বিরাজ করছে। চারতলা ফ্ল্যাটে আজ ঈদের দিনের থেকেও খুশির দিন।মায়ান, রাফিজ, মায়ানের মা মিসেস তনয়া বেগম আধ ঘণ্টা আগেই এসেছে। মিসেস রুনা আর মিসেস রুকাইয়া মায়ানের মায়ের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ভিতরে নিয়ে গিয়েছে। মিসেস রুনা তো এতদিন পরে ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। মিসেস রুকাইয়ার চোখেও পানি চকচক করছে। রাফিজ মাকে জড়িয়ে ধরে হেসে বলল-
-”মা আমি তো এসেছি। তুণি তো যেভাবে কাদছ যেন আমি এখন ব্যাগপত্র গুছিয়ে বিদেশে যাচ্ছি।
মিসেস রুনা ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে মায়ান কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মায়ান ও পরমযত্নে মিসেস রুনা কে জড়িয়ে ধরে। মিসেস রুনা হালকা অভিমান দেখিয়ে বলে-
-”’একবারও এই আন্টির কথা মনে পড়ে নি তোর।বিদেশ গিয়ে তো ভুলেও একটা কল করিস নি।
মায়ান দুষ্ট হেসে বলে –
-”মিস তো করেছি আন্টি। তোমার বানানো সেই গোলাপজামোন, উফ আন্টি এত যে টেস্ট ছিল, লন্ডনে গিয়ে অনেক মিস করেছি।
মিসেস রুনা হালকা হাতে মায়ানের পিঠে থাপ্পর লাগাল।কুশলাদি পর্ব শেষ হলে সবাই গিয়ে সোফায় বসে। মিসেস রুনা আর রুকাইয়া টেবিলে নাস্তার আয়োজন করছে। মিসেস তনয়া সাহায্য করতে চাইলেও তাকে জোর করে বসিয়ে দিয়েছে। সব খাবার টেবিলে এনে মিসেস রুনা এদিক সেদিক তাকিয়ে মিসেস রুকাইয়া কে জিজ্ঞেস করে-
-”হ্যা রে রুকাইয়া মেহু কোথায়, ওকে তো দেখছি না?
মিসেস রুকাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল-
-”আর বলিশ না ওর নাকি শরীর খারাপ। ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছে। বললাম যে রাফিজ রা এসেছে একবার এসে দেখা করে যা, কিছুতেই এলো না। কাহিনী বুঝি না এই মেয়ের।
মিসেস রুনা অবাক হয়ে বলল –
-”সেকিরে মেহুর ও শরীর খারাপ। আমাদের মাইজার ও তো শরীর ভালো না বলে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
মিসেস রুনা আর রুকাইয়া বিরক্তি নিয়ে কথা গুলো বলছেন আর মিস্টির বাটিগুলো টেবিলে রাখছেন। তাদের চোখেমুখে মেয়ের এমন কাজে প্রচুর বিরক্তি স্পষ্ট। অথচ মায়ান আর রাফিজের চেহারা একদম স্বাভাবিক। যেন এমনটাই তাদের কাম্য ছিল। এদিকে মিসেস তনয়া গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছেন ড্রয়িং রুমের শুভ্র দেয়ালে টাঙানো এক সুন্দরী মানবীর স্থির অবয়বের দিকে।
—-
আকাশ অস্বচ্ছ । বিকেলের শুভ্র রঙের মেঘগুলো এখন কালো রঙ ধারন করেছে। চারিপাশে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।একটু পরেই আকাশ ভেদ করে ঝর্ণার ন্যায় বৃষ্টি হবে। এলোমেলো হাওয়া বাইরে বিরাজমান। সেই সাথে মাইজার মনের আকাশেও আজ এলোমেলো হাওয়া বইছে। ঘরের এককোনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে মাইজা। ঘরে কারো পদধ্বনি শুনতে পেরে চোখ মেলে পেছন ফিরে তাকাল। রাফিজ এসেছে। মাইজা উঠে বসে পরল। ভাইয়ের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। দৃষ্টি তার ফ্লোরে। রাফিজ ও বোনের পাশে বসে শূন্যে তাকিয়ে আছে। কারো মুখেই কোনও কথা নেই। নিরবতা ভেঙে রাফিজ ই মুখ খুলল-
-”’কথা বলবি না আমার সাথে?
বলেই তাকাল নিজের বোনের দিকে। কি করুণ সেই চাহনি।মাইজা তাকাল নিজের ভাইয়ের দিকে। এতদিনের জমিয়ে রাখা অভিমান গুলো নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে গেল। আবেগআপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের ভাইকে। স্বশব্দে কেদে উঠে মাইজা। রাফিজ নির্বিকার। সে হয়ত এমটাই আশা করেছিল।
(গল্পটা কি ভালো লাগছে না? প্লিজ রেসপন্স করুন। ভালো লাগলে ও জানাবেন আর খারাপ লাগলেও জানাবেন।ধন্যবাদ❤)