#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব:৯
মেহবিন হাসফাস করছে। দৃষ্টি তার অগোছালো। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে তাকে সেটা তার ভাবনার বাইরে ছিল। হঠাৎ করেই মেহবিনের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এদিকে মায়ান অস্থির হয়ে গেল। মেয়েটা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।মায়ান উত্তেজিত হয়ে বলল-
-”’মেহু প্লিজ তাকাও আমার দিকে। কিছু একটা তো বল।
মেহবিনের এবার কান্নার সাথে সাথে রাগ উঠে গেল।ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে ছিল না। এখন বারবার তাকাতে কেন বলছে। এখন তাকিয়ে কী হবে।মেহবিন মায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত গলায় বলে-
-”আমি তাকাব না মায়ান ভাই। দেখবনা আপনাকে।বুঝতে পারছেন না, দেখতে চাই না আমি আপনাকে।
শেষের কথাটা একটু চিৎকার করেই বলে মেহবিন। মেহবিনের গলা কাপছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।ও কখনোই ভাবতে পারেনি যে মায়ানের সাথে এভাবে কথা বলতে হবে।মায়ানের প্রতি তার একসময়ে ভয় কাজ করত। তারপর বিরক্ত আর তারপর ভালোলাগা। কিন্তু কখনোই এতটা রাগ হয়নি তার মায়ানের প্রতি। মেহবিনের চেঁচিয়ে হাউমাউ করে কাদতে ইচ্ছে করছে। অথচ আজ সে এতই নিরুপায় যে সে কাদতে পর্যন্ত পারছে না। মায়ান আবারো মেহবিনের বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে এনে বলল-
-”’মেহু তুমি তো জানো যে আমি কেন সেদিন ঐ ডিসিশন নিয়ে ছিলাম। আমি ভেবেছিলা-
মেহবিন মায়ান কে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। তারপর চিল্লিয়ে বলল-
-”’কি ভেবেছিলেন না ভেবেছিলেন এসব শুনার সময় ফুরিয়ে গেছে মায়ান ভাই। ওসব এক্সকিউজ এখন আর কোনো কাজে আসবে না। আমি এখন আর চাই না আপনাকে। আমার থেকে দূরে থাকবেন প্লিজ।
মায়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহবিনের দিকে। তার মেহু এখন আর তাকে চায় না। সত্যি ই সে এতটা পর হয়ে গেল। মায়ান দু পা এগিয়ে এসে মেহবিনের হাত শক্ত করে ধরে শান্ত অথচ রাগ মিশ্রিত গলায় বলল-
-”’তোমাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো বুঝবে। কিন্তু তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তুমি ঠিক আগের মতোই একরোখা রয়ে গেছ। তবে আমি কিন্তু আর আগের মতো ভালোমানুষ নেই। মায়ান আভিয়াজ কে ইগনোর করার ফল তুমি পাবে। অবশ্যই পাবে।
মায়ান কথাটা বলে ঝারা মেরে মেহবিনের হাত ছেড়ে দিয়ে হনহনিয়ে নিচে নেমে গেল।মেহবিন হতবাক হয়ে গেল। মায়ান কি তাকে হুমকি দিয়ে গেল। তবে যাই করুক না কেন,সে তাকাবেনা মায়ানের দিকে। চায়না সে আর কাউকে।মায়ান কেও না।
—–
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে মাইজা। দৃষ্টি তার আকাশপানে।মায়ান এসেছে পর থেকে তাকে পুরো দমে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু মাইজা পারেনা তার ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা না বলে থাকতে। তার মন ছটফট করছে মায়ানের সাথে কথা বলার জন্য। ঠিক আগে যেভাবে তারা একে অপরের সাথে কথা বলত, হাসত। কিন্তু এখন এগুলো ভাবাই যেন মাইজার কাছে বিলাসিতা মাত্র।মাইজা তার অক্ষিযুগল বন্ধ করে নিল।মায়ান তাদের বাড়িতেই আছে। অথচ একই বাড়িতে থেকেও কি সুন্দর তাকে এড়িয়ে চলছে। মাইজা ফট করে চোখ মেলে ফেলে। আচ্ছা মায়ান আর মিসেস তনয়া তো দেশে এসেছে মায়ানের বিয়ের জন্য। তবে কি এখন চোখের সামনে নিজের ভালোবাসা অন্য কারো হতে দেখতে হবে। এটা কিভাবে দেখবে সে। কথাটা ভেবেই বুক কেঁপে ওঠে মাইজার।
মেহবিন সবেমাত্র গোসল সেরে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছিল। তখনই হুরমুর করে ঘরে ঢুকলেন মিসেস রুকাইয়া। মিসেস রুকাইয়া কিছু না বলেই আলমারি থেকে একটা জলপাই রঙের থ্রি পিস বের করে মেহবিনের হাতে ধরিয়ে দিল। মেহবিন থ্রি পিসের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে মিসেস রুকাইয়া কে বলল-
-”’এটা কেন দিচ্ছ,কী করব এটা দিয়ে?
মিসেস রুকাইয়া বিরক্তি নিয়ে বললেন-
-”’কি আর করবি। গিয়ে বেলকনি থেকে নিচে ছুরে মার।
মেহবিন দ্রুত মুখ চালিয়ে বলল-
-”কি আশ্চর্য!এটা না গত মাসে কিনলাম। ফেলব কেন আম্মু?
মিসেস রুকাইয়া একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন-
-”’হ্যা ফেলতে যখন হবে না তখন বুঝা উচিত যে তোকে পরতেই দিয়েছি। এটা পরে নিয়ে জলদি রেডি হয়ে নে।
মেহবিন ভ্রু কুঁচকে বলল-
-”’কেন আম্মু, কোথাও কি যাব?
-”হুম তোর রুনা আন্টির বাসায়।
-”’রুনা আন্টির বাসায় যেতে হলে এটা পরতে হবে কেন? আর আমি যাব না ঐ বাসায়। আমার শরীর খারাপ লাগছে।
মিসেস রুকাইয়া তেতে উঠে বললেন-
-”’তোর শরীর খারাপের নিকুচি করেছি। ঐ বাসায় যেতে বললেই রাজ্যের শরীর খারাপ এসে ভর করে না?শরীর খারাপ হলেও যেতে হবে। তারাতারি রেডি হয়ে নে।
মেহবিন অতিষ্ঠ হয়ে বলল-
-”’আচ্ছা সে নাহয় গেলাম। কিন্তু রুনা আন্টির বাসায় যেতে এটা পরতে হবে কেন?এভাবেই তো যাওয়া যাবে।
-”’হ্যা কিন্তু তোর রুনা আন্টির বাসা হতে আমরা সবাই বেরুবো।
-”কোথায় যাব?
-”ওহ,তোকে তো বলা হয়নি মনে হয়।এবার তো মায়ানের মা ও সাথে এসেছে ছেলে কে বিয়ে দেবেন বলে। তাও আবার বাঙালি মেয়ে।তাই মায়ানের জন্য আমরা সবাই মেয়ে দেখতে যাব। দ্রুত রেডি হয়ে নে মেহবিন।
চলবে…..