অভিমান পর্বঃ১৬

0
1896

#অভিমান
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা

খাটের মাঝ খানে বসে আছে তোহা। চোখে মুখে লাজুকতা। এতোসব কিছু তোহা করেছে এটা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে এই রুম থেকে। মেঘের সামনে থাকতে লজ্জা লাগছে। তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।
মেঘ তোহার সামনে খাটের সাথে পা লাগিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তোহার মধ্যে বিরাজমান।
তোহা মেঘের দিকে না তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারছে এক জোড়া চোখ তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে। যেটা ওকে আরও নুয়িয়ে দিচ্ছে।
গায়ের ওড়নাটা খানিকটা টেনে নেয় তোহা পা ওবদি কম্বল নিয়ে নেয়। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। বারবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
“কন্ট্রোল তোহা কন্ট্রোল
মনে মনে বলছে তোহা।

“ভালোবাসো আমায়?
মেঘের প্রশ্নে থমকে যায় তোহা। কি উওর দেবে জানা নেই। লজ্জায় নুয়িয়ে থাকা মুখটা উঁচু করে তাকায় মেঘের দিকে। ভালোবাসি বললে মেঘ খুব খুশি হবে। তোহা চায় মেঘকে খুশি করতে। কিন্তু সত্যি তো এটাই ও মেঘকে ভালোবাসে না। আর বাসলেও সেটা ও উপলব্ধি করতে পারছে ন। তবে এই মুহুর্তে ভালোবাসি বলাটা তোহার কাছে যুদ্ধের মতো। বলতে পারবে না।
নরে চরে বসে তোহা। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে মাথা ঝাঁকিয়ে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া মাএ।
মেঘ আগের মতো দৃষ্টি তোহাতে নিবদ্ধ করে হাত ভাজ করেই দাঁড়িয়ে আছে।
” উওর জানা নেই?
পাল্টা প্রশ্ন করে বসে মেঘ।
তোহার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। এই শীতেও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ঠোঁট কামড়ে ওড়নার শেষের অংশ দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নেয়।
অতঃপর ঢোক চিপে ঠোঁট নারিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্বৃত হয়।
“এতো নার্ভাস হচ্ছো কেনো? জাস্ট সিম্পল একটা কোশ্চেন। ইয়েস ওর নো?
বলতে পারছো না?
ওকে নো পবলেম। বলতে হবে না। একচুয়েলি তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসতো আই ডোন্ট কেয়ার।
বাট তবুও মনের কোথাও একটা পেইন হয়। লাভ ওয়ার্ড টা শুনতে মন চায় তোমার থেকে। তবে রিলাক্স কাঁপা-কাঁপি করার কিছু নেই।
মেঘ তোহার পাশে বসে বুকে হাত দিয়ে বলে।
তোহা মাথা নিচু করে নেয়। হাজবেন্ড হিসেবে এতোটুকুও মেঘ ডিজার্ভ করে ওর থেকে।
চোখ বন্ধ করে নেয় তোহা। তাচ্ছিল্য হাসে।
মেঘ মাথার কাছে বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়।
” আমি হয়ত আপনাকে ভালোবাসি না। বাট খুব রেসপেক্ট করি। আমি আমাদের সম্পর্কটাকে একটা নাম দিতে চাই। আর পাঁচটা হ্যাপি কাপল দের মতো সুখে থাকতে চাই। ছোট্ট একটা মেঘরাজ চৌধুরী চাই আমার।
শেষের কথাটা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তোহা।
মেঘ লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তোহার দিকে তাকায়।
“আমি কি ঠিক শুনলাম?
মেঘ অবিশ্বাস্যের সুরে বলে।
তোহা দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।
” তোহা তোমার আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন।
মেঘ মুখটা গম্ভীর করে বলে।
তোহার মেঘের দিকে এক পলক তাকায়।
মুখে কিছু বলে না। চোখ ফিরিয়ে খাট থেকে নেমে যেতে নেয়। মেঘ তোহার হাত ধরে।
“রাগ বা জেদের বসে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই।
শান্ত গলায় বলে মেঘ।
” আমি সব কিছু ভুলতে চাই। আপনার সাথে সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাই।
মেঘ আলতো হাসে। তোমাকে টান নিয়ে ভালো করে বসিয়ে দেয়।
“লাভ ইউ
তোহা মেঘের বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
” এখানেই আমি শান্তি খুঁজতে চাই।
চোখের কোনে পানি চলে আসে তোহার। সেটা খুশির না দুঃখের সেটা বুঝতে পারে না তোহা।
হয় মেঘকে মেনে নিতে পারার খুশিতে।
“টাচ করতে পারি তোমাকে?
মেঘ প্রশ্ন করে কিছুটা রসিকতার ছলে। তোহা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে মেঘের বুক থেকে মাথা তুলে
” আপনার হাতটা কোথায়?
“তোমার পিঠে? মেঘ সোজাসাপটা উত্তর দেয়।
” তাহলে কি টাচ করেন নি?
“অন্য ভাবে
আই মিন
তোহা ধ্যাত বলে আবার মেঘের বুকে মুখ লুকায়। ঠোঁটে লজ্জার হাসি।
” আমার মায়াবতী

পরের দিন গুলো খুব দ্রুত ই চলে যাচ্ছে। তিন দিন পার হয়ে যায়। পুরো পরিবারের সাথে তিন দিন কাটালো তোহা। খুব খুশিতে কাটিয়েছে। মেঘ আর মেঘের বাবার ছবিটা বড় করে টাঙিয়ে রেখেছে সিঁড়ির কাছে। আরমান চৌধুরী খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। সেই আঠারো বছর বয়সে ছেলেটা বাড়ি থেকে চলে এসেছিলো তিন লাখ টাকা নিয়ে।
জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলো মেঘকে। ছোট থেকেই মেঘের মাথাই বড়লোক হওয়ার ধান্দা। মেঘ মনে করে যার কাছে টাকা নেই তার কিছুই নেই। তাই তো সেই ছোট বয়স থেকেই টাকার পেছনে ছুটেছে। আর সফলও হয়েছে। বাড়ি ফেরে নি দীর্ঘ দশ বছর। কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি। বাবা মাকে ভুলেই গেছিলো।অবশ্য এখন ভুলেই আছে।
তবে আরমান চৌধুরীর ধীরো বিশ্বাস তোহা ঠওক একদিন তার ছেলেকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। মেঘকে বুঝিয়ে দেবে টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও ভালোবাসা কেনা যায় না। বাবা মায়ে স্নেহ কেনা যায় না।

আকাশ বাড়ি চলে গেছে নিউ ইয়ারের দিনই। ভালো লাগছিলো না ওর। নিপা মেয়েটাকে ছুটি দিয়েছে মেঘ।

অনার্স প্রথম বছরের পরিহ্মার রেজাল্ট দিয়েছে। ফাসক্লাস পেয়ে পাশ করেছে তোহা। সবাই খুব খুশি। মেঘ তোহাকে কাছের একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে। অবশ্য তোমাকে এ বিষয়ে কিছু বলে নি।

আজকে সবাই চলে যাবে। তোহা খুব করে কান্না কাটি করে আরমান চৌধুরী আর মেঘের মাকে আটকাতে পেরেছে। আরও কিছুদিন থেকে যাবেন তারা
বিকেলের দিকেই চলে যায় সবাই।

মাগরিবের আজান পড়বে কিছুখন পরেই। বিশাল বাড়িটার ছাঁদে যাওয়া হয় নি তোহার। মামনিকে খুব করে বলে দুজন মিলে ছাঁদে উঠেছে। পুরো ছাঁদটা গোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে ভরপুর। সাথে কিছু গাঁধা ফুলও আছে। ভীষণ সুন্দর। সালাম চাচা নামের একজন ছাঁদের দেখাশোনা করে। খুব ভালো করে পরিপাটি করে রেখেছেন তিনি। অবশ্য কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্স ও নেই। তাহলে মেঘ একটা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেবে। তবে লোকটার মন ভালো। সব গুলো কাজের লোককেই খুব ভালো সেলারি দেয়। এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে তোহার।

“মামনি তোমার হাবলাকান্ত ছেলের আবার সখও আছে।
তোহা দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে মজার ছলে বলে।
মামনি উওরে হালকা হাসে। উওর দেয় না। তোহার পাশে বসে।
” তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিস। কটা দিন দেখতে পারলাম ছেলেটাকে।
চোখ ভরে ওঠে ওনার। তোহা তারাহুরো করে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“মামনি কাঁদবা না প্লিজ। তোমার ছেলেকে সম্পূর্ণ ভাবে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো আমি আই প্রমিজ।
মামনি জড়িয়ে ধরে তোহাকে।

আজকে মেঘের ফিরতে দেরি হয়ে যায়। অফিসের কাজের চাপ বেরে গেছে। নতুন আরও একটা ফ্যাক্টরি তৈরি করছে মেঘ। সেখানে প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে।
রাত দশটায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ঢোকে মেঘ। সোফায় গা এলিয়ে দেয়। এই শীতেও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।
” মা পানি দাও
চোখ বন্ধ করে বলে মেঘ।
তোহা আরমান চৌধুরী আর মামনি অপেক্ষা করছিলো মেঘের জন্য। বাসায় ফিরলে এক সাথে খাবে। মেঘের মুখে মা ডাক শুনে খুশিতে কেঁদে ফেলেন তিনি। এক ছুটে মেঘের জন্য পানি নিয়ে যায়।

“আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আর আপনিও এতো দেরিতে আসলেন?
গাল ফুলিয়ে বলে তোহা। মেঘ আলতো হাসে।
” সরি অনেক কাজ ছিলো।
“নো এক্সকিউজ
তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন খুব খিধে পেয়েছে।
মেঘ মিষ্টি হেসে ফ্রেশ হতে যায়।

  • চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here