অভিশপ্ত বাসর রাত.পর্ব -৩

0
3519

“”””””””অভিশপ্ত বাসর রাত”””””””””””
……………..পর্ব -৩…………………….
==
===গল্পটা অনেক সুন্দর পড়ে দেখতে পারেন।

#সাবিহা বাথরুমে গিয়ে অনেক কাঁদল, আয়নায় তাকিয়ে দেখল চোখ নাক মুখ ফুলে গেছে, চোখের নিচে কালি জমেছে।খুব খুধাও লাগছে। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখল মেহবুব বিছানায় বসা, ওর দিকে তাকালোও না। ও আয়নার সামনে গিয়ে মাথা আচঁড়াতে ছিল তখনি লোকটার ফোন আসল, রুম দিয়ে বের হয়ে গেল যাওয়ার আগে দরজাটা জোরে শব্দ করে আটকিয়ে গেল যেন খুবই বিরক্ত। ডাইনিং রুমে যাবার পর সবাই ঘিরে ধরল, কত খাবার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিল না আড় চোখে তাকিয়ে দেখল মেহবুব কার সাথে যেন সোফায় বসে কথা বলছে হঠাৎ চোখাচোখি হল। এমন অবস্থা হল যেন খাবার গলায় আটকে যাবে। ওর শাশুড়ি বলল- মা আস্তে খাও। আহারে একদিনেই কেমন চেহারা হলে গেল। মহিলার দিকে তাকাল সাবিহা, এত ভাল একজন মহিলার ছেলে এতটা বেয়াদব কিভাবে হয়??? . সারা দিন কয় একবার ফোনটা হাতে নিয়েও আব্বু আম্মুকে ফোন দেয় নি, দুপুরবেলা কথা হবার সময় বলল ও ভাল আছে তারা যেন টেনশন না করে এছাড়া আর কি বা বলবে!!!? যদি শুনে তাদের নুতন জামাই বিয়ের রাতেই মদ খেয়ে ওর সাথে এমন ব্যবহার করেছে তারা মরে যাবে ওর টেনশন এ। কিভাবে ও বাচঁবে তখন??জীবনটা তো শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল। এবাড়ির প্রতিটা মানুষ খুব ভাল বিশেষ করে ওর শাশুড়ি, সব কিছু একটা দিনের মধ্যেই খুবই আপন ভাবে সবার সম্পর্কে বলল,সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।তবে মানুষটা খুবই অসুস্থ কিন্তু তার কথা শুনবে কি সাবিহার জীবনটা যে একটা অসুস্থ মানুষ শেষ করে দিল তার কি হবে!!!?ওর খুবই খারাপ লাগছিল যে ও মহিলার সাথে ঠিকমত কথাও বলছে না দেখে। . দুপুরবেলা খাবারের পরে ও রুমে গেল দেখল লোকটা নেই তো ও পুরো রুম ঘুরে ফিরে দেখল। কিছু ছবি দেয়ালে টানানো। মেহবুবের ক্যাডেট কলেজের,কেমন যেন পার্সোনালিটি সম্পন্ন চেহারা লোকটার।আলমারি খুলল এরই মেধ্য মেহবুব রুমে আসল, বলল-আমার পার্সোনাল জিনিসে তুমি হাত দাও কেন? এগুলা মোটেই লাইক করি না আমি আর তুমি কে?? শুধু কাগজ কলমের বিয়ে আমাদের এছাড়া আর কিছুই না। সাবিহা এই প্রথম কথা বলল -আপনি আমার সাথে এভাবে বাজে বিহেব কেন করছেন? আমি আগে জানলে কোনদিন এই বিয়েতে রাজি হতাম না। আপনি কি আমাকে বলবেন কি সমস্যা? মেহবুব কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি ওর বোন এসে চিৎকার করে বলল-ভাইয়া মায়ের কি যেন হইছে। তুই তাড়াতারি আয়। মেহবুব ওর দিকে একটা রাগী দৃস্টি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, সাবিহাও পিছন পিছন গেল। গিয়ে দেখে ওর মা বিছানায় শোয়া। সবাই জানে যে ও ডা. তাই ওকেই দেখতে বলল। ও প্রথম দেখাতেই বুঝল যে এটা হার্ট অ্যাটাক। বলল তাড়াতারি হসপিটালে নিতে।তখন ও, ওর শ্বশুর আর মেহবুবরা দুই ভাই ওর মাকে নিয়ে হসপিটালে নিল। হসপিটালে নেবার পর,ওর শাশুড়ি কে ভর্তি করা হল প্রায় রাত ২ পর তাকে শংকামুক্ত বলা হল। ওর শ্বশুর ওকে বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিল আজ ও না থাকলে কি না কি হত কে জানে কিন্তু ও এক বার যার ধন্যবাদ পেতে চাচ্ছিল সে ওকে দেখে বরং উলটো দিকে ফিরে তাকিয়ে ছিল। প্রতিবার ও মেহবুবের দিকে তাকায় আর ওর কষ্টে বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। কি করবে, কি বলবে কাকেই বা বলবে!!! একটা দিনের মধ্যে এত করুন অবস্থা ও নিতেই পারছিল না। তারপরও ও ওর শাশুড়ির সেবায় কোন এুটি করে নি। ওর কলিগরা এসে দেখা করে গেছে ওদের সাথে তারা মেহবুবের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল। -কি রে তোমার মেজরের সাথে আলাপ করিয়ে দাও। কিন্তু ওই নিষেধ করল, বলল- ওনার মা আসুস্থ ত এখন পরিচয় করানো থাক পরে দিবো। আসলে ও চাচ্ছিল না এখনি সব সমস্যা সবাই জানুক। আগে ওর শাশুড়ি সুস্থ হোক। তার ছেলের কোন ভাল মন্দ বোধ না থাকতে পারে কিন্তু ওর তো আছে। একজন ডা. হিসেবে হোক বা মানুষ হিসেবে। টানা এক সপ্তাহ পর ওর শাশুড়ি কে বাসায় আনা হয়। সাবিহা এই সময়টা ওনার পাশেই ছিল সারাদিন ডিউটি করত আর ফাকে ফাকে ওনার কাছে এসে বসত, অনেক গল্প করত মাঝে মধ্যে ওর ননদ আর জা আসত। বাসায় যেত যখন মেহবুব থাকত না রাতে আবার ফিরে আসত। মেহবুব আসত প্রতিদিন আফিসের পর রাতে,যতক্ষন থাকত মায়ের হাত ধরে বসে থাকত। ওর দিকে তাকাতোও না। তখন ও রুমের বাইরে চলে যেত। ওর শাশুড়ি ডাকত বলত ওর ডিউটি আছে। বিয়ের পর থেকে ওর উপর দিয়ে যে ধকল যাচ্ছে তাতে যে অ সুস্থ আছে তার প্রধান কারন এই মহিলার ভালবাসা ও যতক্ষণ না খেত সেও খেত না। এই পরিবারের সবাই ওর প্রতি কেয়ারি শুধু মেহবুব ছাড়া।
আর মেহবুবের বিয়ের প্রায়১মাস চলছে। ওর শাশুড়ির অসুস্থতার খবরে ওর বাবার বাড়ি হতে লোকজন আসল তাকে দেখতে। ও ওর মা বাবাকে দেখে কেঁদেছে খুব, তারা বার বার ওকে বুঝিয়েছে যে বিয়ের পরে এমন একটু কষ্ট হয় প্রথম প্রথম। ওকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে বলল তারা। ও কিভাবে বুঝাবে আসলে সমস্যাটা কোথায়!! আসলে ও এখনই এই পরিস্থিতিতে কাউকে কিছুই বলতে চায় না। ও শুধু একটা কথাই জানে যে ও ওর মা বাবার অনেক আদরের ছোট মেয়ে। ওর কোন খারাপ অবস্থা তারা সহ্য করতে পারবে না। তারা মরে যাবে ওর টেনশনে আর ওর বড় বোন পাগল হয়ে যাবে।তখন ও কি নিয়ে বাচঁবে!!!? মেহবুবের মায়ের আসুস্থতার সময় ওর দুই বোন আর ওর ভাইয়ের আস্থিরতা নিজের চোখে দেখেছে। একটু হলেও বুঝতে পারছে মা বাবা হারানোর ভয়টা কি জিনিস, তাদের জন্য ও হাজারটা মেহবুবের কষ্ট সহ্য করতে রাজি। . সাবিহা সারাদিন হসপিটালে ব্যস্ত থাকে, ইচ্ছে করেই সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে যাতে করে ওর মেজবুবের নিত্যকার খারাপ আচারন মনে না পরে।বাহিরেই খায়, রাতে বাসায় ফিরে তখন নিজের পড়া বা ওর ননদ জা বা শাশুড়ির সাথে গল্প করে কাটায়। তারা ওর আর মেহবুবের কথা শুনতে চায় কিন্তু ও কথা ঘুরিয়ে ফেলে। অনেক রাত করে মেহবুব বাড়ি ফিরত ও তার আগেই সোফায় শুয়ে পরত।কোন কোন দিন রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরত, গন্ধে আর ভয়ে চুপসে ও বারান্দায় চলে যেত। ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ত। আবার সকাল আটটার মধ্যে বাসা দিয়ে বের হয়ে যেত। ইচ্ছা করত না ওর বাড়ির খাবার মুখে দিতে। . মাঝে চেষ্টা করছে মেহবুবের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে কারন এভাবে আর কতদিন!!? কিন্তু ও এমন রাগী রাগী কথা বলত ওর ইচ্ছাই করত না লোকটার চেহারা দেখতে। মাঝে ভাবল সব ছেড়ে ছুড়ে ঢাকায় ওর বোনের বাসায় গিয়ে থাকবে,আর আসবে না। পরে মেহবুবকে ডির্ভোস দিয়ে খলনায় পোষ্টিং নিয়ে বাবার বাসায় চলে যাবে। ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে এতদিন সহ্য করছে কিন্তু তার ছেলে তো ওর ওর প্রতি কোন মায়া দেখায় নাই তাহলে কেন সহ্য করবে আর!!!বন্ধুবান্ধব, মা বাবা, বোন, আত্মীয় সব্জন সবার কাছে মিথ্যা সুখী ভাব ধরতে গিয়ে আজ ও ক্লান্ত। . এরই মাঝে রাতে ওর শাশুড়ি আর শ্বশুর ওকে তাদের রুমে ডাকল। -মা তোমাদের তো বিয়ের অনেক দিন হল এরই মধ্যে তোমার শাশুড়ি অসুস্থ হল, তোমার দিন রাত সেবার জোরেই তাকে ফিরে পেলাম, বাসায় আসার পর মানুষের আসা যাওয়া, তাদের সামলানোর সাথে সাথে তোমার হসপিটালের কাজ করা নিশ্চই তুমি ক্লান্ত। আমার বিভিন্ন কাজের মধ্যে মনেই ছিল না আমার ঘরে নতুন একটা বউ আসছে। -না বাবা, আমি ঠিক আছি। -না মা এটা আমার দায়িত্ব তোমার খেয়াল করা। তোমার শাশুড়ি আর আমি চাই তোমরা কয়দিন ঢাকার বাইরে গিয়ে ঘুরে আস। সাবিহার মনে হল ওর মাথায় আকাশ ভেংগে পরল, কি বলে এই লোক!! দুনিয়ার সবথেকে খারাপ লোকটার সাথে যাবে ও ঘুরতে তাও যেত যদি ওরা একে ওপরকে মানত। একবার মনে মনে ভাবল সব সমস্যার কথা বলবে কিনা পরে ভাবল থাক। -আচ্ছা মা, তুমি একটু মেহবুবকে ফোন দাও তো ওর ছুটির হিসেবটা মিলিয়েই আমি টিকিট কাটব। . এবার কি হবে ওর কাছে তো ঐ লোকের নাম্বারও নেই। ও বলল যে আমি রুমে গিয়ে ফোন দেই।বলেই দৌড়ে চলে আসল। ওর শাশুড়ি হেসে ফেলল সে ভাবল হয়ত ও তাদের সামনে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। ও রুমে এসে চুপচাপ বসে রইল, এখন কি হবে!!!ওর কাছে তো নাম্বারও নেই এসব ভাবতে ভাবতে ওর জায়ের রুমে গেল। ভাবিকে বলল-ভাবি তোমার দেবরের নাম্বারটা দেয়া যাবে?? আমি হারিয়ে ফেলেছি। ওর জা মুচকি হেসে বলল-সাবিহা আমি কিন্তু সব জানি বোন। মা বাবা দুপুরে আমার সামনেই তোমাদের ব্যাপারে আলোচনা করেছে তোমার ভাইয়ার সাথে। তোমাকে শুধু একটা কথাই বলব যে আমার দেবরটা কিন্তু খারাপ না, সময় ওকে খারাপ বানিয়েছে। তুমি প্লিজ একটু সময় নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।…..

…….চলবে……..
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here