অভিশপ্ত বাসর রাত.পর্ব -৪

0
4903

“”””””””””অভিশপ্ত বাসর রাত”””””””””””
……………..পর্ব -৪…………………….
===
==
===গল্পটা অনেক সুন্দর পড়ে দেখতে পারেন।
===
___

#রুমে গিয়ে ফোন দিল মেহবুবকে ওপাশ হতে কিছুক্ষণ পর ফোন ধরল ও। -হ্যালো, আপনি কি মেহবুব বলছেন? -জি, কে আপনি? -আমি সাবিহা। আপনার সাথে কথা বলার ছিল। বাবা আপনাকে ফোন দিতে বলেছে। -তুমি আমার নাম্বার কিভাবে পেলে? আর তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে ফোন দেয়ার? কথাটা শুনার সাথে সাথে ওর চোখে পানি চলে আসল। কিছু বলতে যাবে ওমনি দেখে ওর শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে, ও সাথে সাথে ফোন কেটে দিল।ওর চোখে পানি দেখেই সে বুঝে নিয়েছে। বলল- মা শোন মেহবুব আসলে ওকে বলবি আমার রুমে আসতে। আর ও বকা দিলে তুই কাঁদবি কেন? আসলে ব্যস্ত থাকে তো তাই রাগ করছে। বাসায় ফিরলে তুই উলটো ওকে বকা দিয়ে দিবি। ওর শাশুড়ি যাবার কিছুক্ষণ পর ওর জা আসল বুঝল ওর মন ঠিক করতে সেই পাঠিয়েছে। -এই সাবিহা আসো তোমার প্যাকিং করে দেই। আরে উঠ তো। মুখ কাল করে বসে থেক না। ও দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল। আসলে ও এ একটা মাস যতটা কষ্ট পেয়েছে তা মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেনি আজ একটা সান্ত্বনার কাধ পেয়ে সব দুঃখ গুলো চেপে ধরেছে। সব এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব বলল। ভাবি বলল-দেখ সাবিহা এটা ঠিক তোমার বয়স কম আর মেহবুবের উচিৎ ছিল তোমাকে সময় দিয়ে সব সমস্যাগুলো বলে ফেলা। ও যদি সংসার নাই করতে চায় তাহলে শুধু শুধু তোমার জীবনটা কেন নষ্ট করল, তার মা আর বাবাকে দেখানোর জন্য??? -ভাবি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আজ এতটা খারাপ বিহেভ করল ফোনে। আমি কোনদিনও এতটা অপমানিত হই নি কারও কাছে।তুমিই বল আমি কি করব? -তুমি ধৈর্য হারা হয়ো না, শান্ত হও।আমি এব্যাপারে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলব। -উনি যদি রাগ করে? -রাগ করলে করবে, তুমি একটা এস্টাবলিসড মেয়ে তুমি কেন ওকে ভয় পাবা?? ওর কোন অধিকার নেই তোমার লাইফ নষ্ট করার। -আচ্ছা ভাবি তুমি যা ভাল মনে করার কর। কিন্তু আমি ঐ লোকের সাথে কোথাও যাব না। -সাবিহা, পাগলের মত কথা বল না। যেহেতু একটা সময় পেয়েছ একটু কাছাকাছি থেকে নিজেদের জানার সুযোগটা হাত ছাড়া কর না। আমি তো তোমাকে বলেছিই, আমার দেবর ওতটাও খারাপ না যতটা তুমি ভাবছ, তুমি নিজেই একদিন আমাকে বলবা দেখ। এই বলে ভাবি চলে গেল।সাবিহা বিছানায় বসে মনে মনে বলল-এটা তোমার ভুল ধারনা ভাবি তোমরা তো এই লোকের বাইরেরটা দেখ আর আমি তো বন্ধ রুমে খারাপ আচারন গুলো দেখি। সে কোনদিন বদলাবে না। নিজের মনেই একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসল। . ওদিকে মেহবুব অফিসে রাগে অস্থির। এই মেয়ের এত সাহস, ওকে ফোন দিয়ে বলে যে বাবা ফোন দিতে বলছে। ওকে ওর ওয়াইফের কোন মর্যাদাই দেয় নি কেন শুধু শুধু ওর বাড়িতে ও পরে আছে???ও তো ভাবছিল শিক্ষিত মেয়ে, নিজের সস্মান আছে। বিয়ের ররাতে খারাপ বিহেবে পরদিনই চলে যাবে কিন্তু না সে যায় নি পরে ভাবছিল ওর মা অসুস্থতার জন্য হয়ত যায় নি, সে সুস্থ হলে চলে যাবে। নাহ আজ একটা মাস হল এখনও যাচ্ছে না। সাবিহা যখন দিনরাত পরিশ্রম করে ওর মাকে সুস্থ করে তুলল তখন ওর খুব ভাল লাগছিল, আসলে ও তো এমন বউই চাইছিল যে ওর মা বাবাকে নিজের করে আগলে রাখবে। ওকে একটা ধন্যবাদ দিতে চাইছিল কিন্তু পরে ও হয়ত নরম হয়ে যাবে ওর প্রতি এই ভেবে আর দেয় নি আর ও তো চায়ই ওকে তাড়াতে। ও শুধু মাএ বিয়ে করেছে ওর মা বাবার জন্য। মেহবুবের মনের ধারনা সব মেয়েরা রিতার মত। সবার মনের মধ্যে থাকে কিভাবে পুরুষকে ফাঁদে ফেলানো যায়। যখন আর ভাল লাগবে না তখন ছেড়ে ছুড়ে অন্য দিকে ঝুকবে।তাই তো আজ ওকে ও বাবার কথা বলে ফোন দিছে, ওকে ওর প্রতি আকৃস্ট করার ফন্দি। কিন্তু ওর মনে কোন মেয়ের জন্য জায়গা নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ও গাড়ি থেকে নামল, বাসায় ঢুকে সোজা ওর রুমে গিয়ে দেখল সাবিহা ওর ব্যাগ গুছাচ্ছে । দরজাটা আটকিয়ে ওর হাত ধরে টেনে বলল -তোমার এতবড় সাহস তুমি আমার মুখের উপর ফোন কেটে দিয়েছ। -তাহলে কি করব? আপনি আমার সাথে কেন বাজে বিহেব করেছেন? -বাজে বিহেব তো তুমি আরও দেখবা। খবরদার আমাকে ক ন্টোল করার চেষ্টা ছেড়ে দাও। এই বলতে বলতে মেহবুব ওর হাত জোরে চেপে ধরল ও ব্যাথায় আহ্ করে উঠল আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।সাথে সাথে ও ওর হাত ছেড়ে দিল। তখন মেহবুব ওর দিকে ব্যাথাতুর দৃস্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল। পরে সরি বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। হঠাৎ এই পরিবর্তন ওর সাবিহার মনে ধাক্কা দিল। . ওয়াশরুমে গিয়ে বেসিনের আয়নায় মেহবুব নিজেকে দেখে ভাবল ওকি সত্যি এমন???!!! দিন দিন ও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, দোষ তো সব রিতার যে ওকে ঠিক মত থাকতে দিচ্ছে না, এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। আজ সাবিহার কান্না সত্যি ওকে নাড়া দিয়ে গেছে। বাথরুম হতে বের হয়ে দেখে বাবা আর বড় ভাইয়া বসে আছে। -কি ব্যাপার হঠাৎ তোমরা? -তোর সাথে জরুরী কথা ছিল। বাবা বলল-তুই যে এখনও তোর মাথা হতে ওই মেয়ের চিন্তা নামাতে পারিস নি তা তো জানতাম না। -কি বলছ তোমরা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাইয়া রেগে গিয়ে বলল-তুই নাকি প্রতিনিয়ত সাবিহার সাথে খারাপ ব্যবহার করিস?? -সাবিহা বলছে? -সাবিহা কেন বলবে? মা আজকে ওকে কাঁদতে দেখছ,তোর ভাবি বিয়ের পরদিনই সকালে ওকে সোফায় ঘুমুতে দেখছে। মেহবুব ভাবছে এ সবই সাবিহার শিখানো কথা। ও ই বলছে মা আর ভাইয়াকে তারাই বাবা আর ভাইয়াকে পাঠিয়েছে। ভাইয়া আরও বলল-দেখ মেহবুব তুই প্লিজ পিছনের কথা ভুলে যা, বিয়ে করেছিস সব ভুলে সাবিহাকে নিয়ে সামনে আগা। আর কত বুঝাব তোকে, বয়স ও তো হল। তোর বন্ধুরা বিয়ে শাদী করে সবাই কত ভাল আছে দেখ। বাবা বলল-যাই হোক, আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আমি তোদের ব্যাংককের টিকিট কাটতে চাচ্ছিলাম কিন্তু এখন যা দেখছি আমি চাই তুই কালই দিমকয়েক এর জন্য সিলেট গিয়ে সাবিহাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। -আমার ছুটি নেই, পারব না। -আমি কোন কথা শুনতে চাই না। তোর জন্য আমি অপরের মেয়ের সাথে অন্যায় করতে পারব না। তোর যেতে হবেই। এই বলে বাবা আর ভাইয়া চলে গেল। মেহবুব রাগে ফুসঁতে ফুসঁতে পুরো বাসায় সাবিহাকে খুজঁল কিন্তু পেল না ও নাইট ডিউটিতে হসপিটালে গেছে। মনে মনে বলল কোথায় আর যাবা?? আমার নামে নালিশ!!! দেখে নেব।
পরের দিন সকালে সাবিহা যখন বাসায় ফিরে তখন ও জানে না যে মেহবুব বাসায়,না জেনেই রুমে ঢুকে যায়। ঢুকে তো পুরো অবাক ও এই সময় বাসায়!!! এদিকে এত কিছু হয়েছে ও জানেই না। সারা রাত ডিউটি করে ক্লান্ত।রুমে ঢুকে দেখে মেহবুব ল্যাপটপে কাজ করছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলল-আমার রুমে কেউ নক না করে ঢুকে তা মোটেই পছন্দ না। -সরি, আমি জানতাম না আপনি রুমে। ও ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে ওমনি মেহবুব ওর হাতটা জোরে চেপে ধরে দেয়ালের উপর ধাক্কা মেরে ফালালো।হঠাৎ এধরনের ব্যবহারে ও পুরো শকড তাছাড়া ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা পেল।মেহবুবের রাগী চেহারা দেখে ব্যাথার কথা ভুলে গেল। কিন্তু মেহবুবের ওদিকে হুস নেই, পাগলের মত বলল, -আমি জীবনে মেয়ে দেখেছি অনেক তোমার মত বেহায়া মেয়ে দেখিনি।তুমি আমার নামে নালিশ কর মায়ের কাছে? -কি বলছেন আপনি এসব??? -ওহ, এখন কিছু বুঝতে পারছ না, না? যখন তোমার মুখের উপর ডির্ভোস পেপার ছুড়ে মারব তখন বুঝবা। আমি এই মাএ আমার উকিলের সাথে কথা বলছি। খুব তাড়াতারি ডির্ভোস নোটিশ পেয়ে যাবা। -আপনার সাথ আমার ডির্ভোস না হলেও যে আমি থাকব না এটুকু আমি জানি। কিন্তু এই খারাপ ব্যবহারের মানে কি?? -তোমাকে এতবড় সাহস কে দিসে? আমার মা, ভাবি এদের কাছে ছোট করার..। তারপর কিছুক্ষণ থেমে বলল-তুমি চিনো আমাকে আমি কে? এক নিমিষে আমি তোমাকে, তোমার ক্যারিয়ার, ফিউচার সব শেষ করে ফেলতে পারি। এবার আর সাবিহা চুপ করে থাকার কোন উপায়ই পেল না। ও চিৎকার করে বলল-ও তাই, আপনি কে?? বলুন তো? আপনি আমার কি হন?আপনাকে কে সাহস দিয়েছে আমার ব্যাপারে কথা বলার? আপনি কে শুনতে চান, আপনি একটা খারাপ মানুষ আমার কাছে আর কিছুই না। -আমি খারাপ না??আর তুমি? বিয়ের রাত থেকে আমি খারাপ বিহেব করছি চলে কেন যাচ্ছ না?জানো কোন মেয়েরা এভাবে পুরুষের পিছনে পরে থাকে? -তাহলে আপনি কেন আমাকে বিয়ে করে এনেছিলেন? -মা বাবার কথায়। -আপনি কি একটা অমানুষ??!!আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করেছেন। -তোমাদের মেয়েদের জীবন কখনই নষ্ট হয় না। তোমাদের মত বেহায়া মেয়েদের জন্যই ছেলেদের জীবন নষ্ট হয়।তুমি যদি ভাল হতা বা আত্ন সস্মান থাকত তাহলে বিয়ের পরদিনই চলে যেতা বা যেদিন তোমার মা বাবা আসল সেদিন। এই কথা শুনার পর সাবিহা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি।ও কান্নায় ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল-আমি কি দোষ করেছি যে আপনি আমাকে এই কথা গুলো বললেন?আমি তো আপনার সংসার করার জন্যই এসেছিলাম, আপনার বউ হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম আর আপনি কিনা আমাকে খারাপ মেয়েদের সাথে তুলনা করলেন? ওর এই কথা মেহবুবের মনে কোন আঁচই ফেলল না উলটো আর রেগে বলল -ও তাই তুমি আমার বউ হতে চাও ওকে ফাইন আসো, বিছানায় আসো। বউ হও, আসো। এত ইচ্ছা তোমার যখন,আসো। এই বলে ওকে বিছানার উপর ছুড়ে মারল মেহবুব। যেই ওর কাছে আসল সাবিহা ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাপাতে হাপাতে উঠে বলল- চরম অসভ্য আপনি। আমি আর এক মূহুর্তও এখানে থাকব না। এতদিন আপনার খারাপ চেহারাটা দেখলাম আজ আপনার পশুর মত চেহারাটা দেখতে পেলাম। এই বলে ও দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। দেখল যে ড্রইং রুমে ওর জা আর ননদ গল্প করছে। ভাবিকে বলল-ভাবি মাকে বলো আমি চলে গেলাম। এই বলে ও আর দাড়াঁল না কারন তাহলে তারা নানা প্রশ্ন করবে আর ঐ লোকটাও বের হয়ে এসে না জানি কি না কি বলে, যাই হোক ওর কোন আর ও বাড়ির প্রতি পরোয়া নেই। কে কি বলুক বা করুক কিছু আসে যায় না। কাঠফাটা দুপুরবেলা কোথায় যাবে??? ওর বোনের বাসায় যাবে না কারন ও চায় না এখনি ফ্যামিলিকে সব কিছু জানাতে, এমনিতেই ওর শরীর, মন ভাল না। তাদের হাজারটা প্রশ্নের সামনে দাড়াঁনোর সাহস বা মনের জোর নেই। নিজেকে একটু সময় দিতে চায় ও।তাছাড়া রাত থেকে এক নাগাড়ে ডিউটি, সকালেও কিছুই খায় নি তারপর আবার এই অবস্থা। ঠিককরল ওর ছোটবেলার বান্ধবীর বাসায় যাবে যে ওর বেস্ট ফ্রন্ড। ওকে সব মনের কথা খুলে বলে ও। ও নিঃশ্চই এই কঠিন সময়ে ওকে বুঝবে।
সাবিহা দুপুরে ওর বান্ধবীর বাসায় গেল। বেল চাপতেই ওর বান্ধবীর মা খুলল – আরে আমাদের ডা. সাহেব যে।।। কি খবর মা কেমন আছ? এই বলে তিনি ওর পিছনে তাকালেন, বলল-জামাই কোথায়?? বলল-আন্টি উনি নেই আমি একা আসছি। -আচ্ছা মা ভিতরে আস। ও তো গোসলে তুমি বস। বসতে বসতে বলল-তোমার চেহারার একি অবস্থা? বিয়ের পর মেয়েরা আরও রূপসী হয়, তোমার গাল ভেঙে গেছে পুরো। -আসলে আন্টি, হসপিটালে অনেক প্রেশার যাচ্ছে। নিজের দিকে খেয়াল দেবার সুযোগ হচ্ছে না। -না মা তা বললে তো হয় না মা, মেয়েদের সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। পরে যখন বাচ্চাকাচ্চা হবে তখন কি হবে??? ও মনে মনে হেসে দিল ভাবল আর বাচ্চা!!! যে বাচ্চার বাবা হবে তারই তো ঠিক নেই। ভাবল যে ওর বান্ধবী আসুক তারপর একসাথে আন্টিকে জানাবে। ও বলল-আন্টি আমি মুমুর রুমে যাই খুব ক্লান্ত লাগছে। -আচ্ছা মা যাও। আমি বরং খাবার নিয়ে আসছি। ও রুমে ঢুকতে ঢুকতে মুমু বের হয়ে এল, ওকে দেখে সাবিহার কি হল নিজেও জানে না। হুঁ হুঁ করে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে শুরু করল।আন্টি কিছু একটা টটের পেয়ে রুমে চলে আসল। মুমু আর ওর মা ওকে যতই সান্ত্বনা দিচ্ছে ওর কান্নার পরিমান আরও বাড়তে থাকল। পরে কিছু সময় পর ও যখন স্বভাবিক হয়ে এল তখন সব কিছু প্রথম হতে বলতে শুরু করল। মেহবুব কি রকম বিহেব করত,কেন এতদিন একসাথে ছিল, কাল কি কি হল,আজ সকালে কি হল সব। ওর কথা শুনতে শুনতে মুমু আর মুমুর মায়েরও চোখ ভিজে আসছিল। এক সময় তারাও এই বিয়ের পরিনতির কথা শুনতে শুনতে নিঃচুপ হয়ে গিয়েছিল। পরে আন্টি বলল-তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস মা। অনেক সাহস দেখিয়েছিস। মুমু বলল-তুই আর ফিরে যাবি না ওই লোকটার কাছে। বিয়ের দিনই আমি ভাবছিলাম লোকটা একটা খাটাস। অন্য সময় হলে মুমুর এই কথায় ও হেসে দিত কিন্তু আজ সত্যি মনে হল মেহবুব আসলেই ওর সাথে অনেক অন্যায় করেছে। ও মনে মনে ভাবছিল যে আসলেই উনার একটা তিক্ত অতীত আছে আর তাই বলেই তিনি কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারেন না, ববিয়ে করেছে ফ্যামিলির চাপে পড়ে। কিন্তু তাই বলে এত খারাপ আচারন!!!! যা তা বলে, যা মুখে আসে। সে কতটুকুই বা ওকে চিনে??? এক ফোঁটাও না। আর যেভাবে ওকে বিছানায় নেবার কথা বলছিল তার পর তো ওর মনে তার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃনা জন্মেছে। আন্টি বলল-এমনিতেই ছেলেটার বয়স একটু বেশি, তোমার থেকে ওর ম্যাচিওরিটি আছে। ওর উচিৎ ছিল তোমার প্রতি ওর সহানুভূতি দেখানো। সংসার কি মুখের জিনিস!!? সাবিহা ভাবল-সহানুভূতি!!!!বিছানায় যেভাবে ছুড়ে মেরেছিল তাতেই ঐ লোকের সহানুভূতি প্রকাশ পেয়ে গেছি আমি। -আচ্ছা মা, তুমি শোও। আমি বিকালে তোমার মা বাবার সাথে কথা বলব। কি বিশ্রাম নিবে ও?শান্তিতে কবে ঘুমিয়েছে নিজেই জানে না। গত একটা মাস হয় সোফায় নাইলে রাতে ডিউটিতে চেয়ারে। সারাদিন কাজ শেষে যখন মাথাটা এলিয়ে দিত টেবিলে ভাবত এই জীবন কি চেয়েছিলাম!!? তবুও শুধুমাত্র মা বাবার কথা মনে করেই রাত পার করত। যদি ওর ডিউটি নাও থাকত তাও ওভার টাইম করত যাতে ও বাড়িতে যতটা সম্ভব কম সময় কাটানো যায়। তাও ভাবত যাক ওর মা বাবা তো ভাল আছে ও শান্তিতে আছে এই ভেবে। কিন্তু আজকেই তো তাদেরও বলতে হবে সব। কিভাবে তাদের মনমরা মুখ দেখবে!!? এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল একসময়। ……. ওদিকে সাবিহা বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর ওর জা আর ননদ মেহবুবের রুমে গেল। -ও কোথায় গেল মেহবুব? কিছুক্ষন আগে না ফিরল? -চলে গেছে, আমি বের করে দিয়েছি। -বাহ্ এই তো তুমি চাইতা, না?এখন খুশি খুব ও মেয়েটার লাইফ নষ্ট করে? -আমি কারও লাইফ নষ্ট করি নি। ও একটা ফালতু মেয়ে। বেহায়ার মত এখানে পরে ছিল। কতবার যেতে বলেছি কেন যায় নি? আর তুমি এর মধ্যে পরো না ভাবি,আমি কোন মেয়েকে কোনদিন মানব না আমার লাইফে। ভাবি আগে থেকেই ধারনা করেছিল যে মেহবুব সাবিহার উপর ওর নালিশের শোধ নিবে কিন্তু তাই বলে এভাবে বাসা থেকে বের করে দেবে!!? ও আর দেরি না করে ওর শাশুড়ির রুমে গেল তাদের সব বলল।মেহবুবের ভাইকেও ফোন দিল বাসায় আসার জন্য। ওর শাশুর শাশুড়ি তো রাগে অস্থির। তারা মেহবুবকে অনেক বকাঝকা করল শেষে ওর শাশুড়ি বলল-তুই আমার ছোট বউকে যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়, তুই আমার দিকে তাকিয়ে ওকে নিয়ে আয়। -তোমাদের দিকে তাকিয়ে ওকে বিয়ে করেছি কিন্তু ওকে আমি মেনে নিতে পারব না। ওর বাবা তখন বলল-অন্যের মেয়েকে তুমি রাস্তায় ফেলেছো এখন সাবিহার বাবার যে অপমান আমাকে সহ্য করতে হবে তা আমি কেন মেনে নিব??? তুমি বাসা দিয়ে বের হও। এই কথাটা মেহবুবের খুব লাগল। ওর সস্মান আজ ওই ফালতু মেয়ের জন্য খারাপ হল! ও তখন রাগে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে এল। পাগলের মত গাড়ি চালাচ্ছে আর মদ খাচ্ছিল। সামনে কি আছে না আছে দেখছেই না, শুধু মাথার মধ্যে সাবিহার রাগ কিরবির করছে..
মেহবুব গাড়ি চালাচ্ছে আর হর্ন দিয়ে
যাচচ্ছে। সামনে কে আছে না আছে
তা খেয়ালই নেই। মাথায় কোন হুশই ছিল
না একে তো সাবিহার উপর রাগ আরও সে
ড্রিংকস করছে।এরই মধ্যে ওর বড় ভাই
ফোন দিল।
-হ্যা ভাইয়া বল।
-তুই কোথায়? আর তোর গলা এমন
শুনাচ্ছে কেন?আমি বাসায় আসছি, তুই
তারাতারি আয় তো। আর হ্যা সাবিহাকে
যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়।
-সাবিহা আর সাবিহা। তোমরা কি পাইছ ওর
মাঝে???
– কি পাইছি তা তুই পরে বুঝবি। তুই ওকে
ফোন দে আর বাসায় নিয়ে আয়। আর
তুই ড্রিংকস করছিস না??
খবর দার গাড়ি চলাস না তাহলে -এই বলতে
না বলতেই ও পাশ হতে জোরে
আওয়াজ হল।
-হ্যালো মেহবুব, তুই ঠিক আছিস তো?
হ্যালো।
ওদিকে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে
বলতেই মেহবুবের গাড়ি একটা কাভার্ড
ভ্যানের সাথে ধাক্কা খায়। সিট বেল্ট বাধাঁ
না থাকায় স্টিয়ারিং হুইলে খুব জোড়ে ওর
মাথা আছড়ে পড়ে।মূহুর্তের মধ্যে মাথা
থেকে গল গল করে রক্ত বের হতে
থাকে। মেহবুব যখন অজ্ঞান হবে
হবে দেখে এক পুলিশ কনস্টেবল
আর কিছু লোক ওর গাড়ির কাচেঁ ধাক্কা
দিচ্ছে। এর পরে আর কিছুই দেখে নি।
ও জ্ঞান হারায়।
মেহবুবের যখন জ্ঞান যায় তখন, ওর
ফোনটা চালুই থাকে। বাইরের লোকজন
গাড়ির কাঁচ ভেঙে ওকে বের করে
করে আর ফোন ধরে ওর ভাইকে
আসতে বেলে।ভাল য অ্যাকসিডেন্ট
এর জায়গাটা ওদের বাসা হতে দূরে না। ওর
ভাই ফোনে সেই কনস্টেবলকে
হসপিটালের অ্যাড্রেস দিয়ে ওখানে
নিয়ে যেতে বলে। হসপিটালে যখন
বাসার সবাই পৌছাল দেখল ওকে ওটিতে
নিয়ে গেছে। ওর মা মেহবুব মেহবুব
বলে কান্না কাটি করছে।ওর বাবা ওর সাথে
খারাপ আচারনের জন্য আপসোস
করছে বার বার। ওর ভাবি তাদের সান্তনা
দিতে গিয়েও পারছে না।
ওদিকে সাবিহা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে,
এরই মধ্যে ওর ফোনটা বেজে উঠল
দেখে হসপিটালের ইমারজেন্সি হতে
ফোন। বলল-তাড়াতারি ওকে যেতে
হবে। ওদিকে মুমু ওকে যেতে দিতে
নারাজ।আন্টি বলল-মা তোর মন আর
শরীরের যে অবস্থা, কাজ দিয়ে
কয়দিন ছুটি নে। বলল-না আন্টি, কাজ
আছে দেখেই তো সব কস্ট গুলো
ভুলে থাকতে পারি, নিজের পায়ে নিজে
দঁাড়িয়ে আছি নইলে তো ত
মেহবুবের পায়ের নিচেই থাকতে হত।
নিজের সার্পোট নিজে করতে পারছি।
আন্টি বুজতে পারল, বলল-ঠিক আছে মা,
তুমি রাতে তারাতারি ফির। আমি তাহলে
তোমার মা বাবার সাথে তখন কথা বলব।
যখন মেহবুবের জ্ঞান ফিরল দেখে
হসপিটালের সাদা বিছানায় শোয়া। মাথাটা
প্রচণ্ড ব্যাথায় দগ দগ করছে, চোখও
খুলতে পারছে না।চোখ আধবোজা
অবস্থায় কোনরকম চারপাশটা দেখল।
ওর জ্ঞান ফিরছে দেখে নার্স ডা কে
খবর দিল। ডা এসে ওকে আবার ঘুমের
ঔষধ দিল।
নার্স যখন ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন
দিচ্ছিল ও তখন ডা. এর দিকে হা করে
তাকিয়ে ছিল। কারন সে ডা: অন্য কেউ না
-সাবিহা!!!
……….
____\_\\<\<<<___
::: :::::
=======
======>===> চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here