অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১১

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১১ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan

রাতে…
নিশি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে । রাতের আকাশ দেখছে আর আজকের কথা ভাবছে।‌ আজকের কথা ভাবতেই তার শরীর শিউরে উঠে । অজান্তেই কেমন এক ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। লজ্জা পেয়ে যায় নিশি।
হঠাৎ’ই বাতাস এসে নিশি ‘র চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। খুব ভালো লাগছে তার এই ঠান্ডা বাতাস ।।
.
এদিকে নিশান বসে বেলকনিতে বিন ব্যাগে বসে আছে। আজকের সারাদিনের কথা ভাবতেই ভালো লাগছে তার। এতোদিন পর তার জান পাখি’কে ছুঁয়েছে সে। নিশান বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে ‌চোখ বুঝতেই নিশি’র হাসি মাখা মুখ’টা ভেসে ওঠে। এই হাসি তার মুখেও হাসি’র রেখা টেনে আনে। পাশে থাকা গিটার’টা নিয়ে ‌বাজাতে থাকে।
.
#নিশান_গান_গাইতে _শুরু_করে..
ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।
ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।

আমার এ মন তোমার মনের পাড়ায়
বোকাসোকা হয়ে আড়ালে আবডালে দাঁড়ায়।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

#নিশি_এমন_আবহাওয়া_গান_শুনতে_ইচ্ছে_করে_তাই সে_ফোনের_স্পিকার’কা_অন_করে_গান_বাজাতে থাকে..

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।।

বায়ুবীয় প্রেম
আকাশ পাতাল সমতল,
বাস্তবতায় খাবী খায় শুধু
হারায় না তার মনোবল।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।।

#দুইজেনই_দুদিকে_একজন_এক_গান_শুনছে_আরেকজন_গাইছে_কিন্তু_দুজনেরই_মনের_অনুভূতি_এক_যা_কেউ_বুঝতে_পারছে_না

কেন যে তোমার সাথে
মনের এত টান,
কথা হয় নাই দেখেছি শুধু
তবুও কিসের অভিমান।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারি না তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।।

।।

পরের দিন সকালে….
ফোনে__

“নিশি : আরিফা আমার পক্ষে সম্ভব না

“আরিফা : আমি কিছু শুনছি না তুই আসবি

“নিশি : এটা কি করে সম্ভব তুই বল। আর আমার অফিস ও তো আছে

“আরিফা : নিশি একটা দিনই তো! তুই আসবি না

“নিশি : আরিফা একটু বোঝার চেষ্টা কর

“আরিফা : না আমি কিছু জানতে চাই আর কিছু শুনতে। তুই এবার নবীণ বরণে আসবি ব্যস।

“নিশি : তুই তো জানিস আমি মাঝখানে কতোদিন অফিসে যায়নি। আর কালকেই অফিসে জয়ন করেছি। এখন স্যার কিভাবে আমাকে ছুটি দিবে বল তো?

“আরিফা : নিশি শোন নাহ্ ইয়ার…( জিসান ফোন’টা নিয়ে ) নিশি তুই আসবি কি না।

“নিশি : জিসান!

“জিসান : হুম। তুই আসবি কি না।

“নিশি : জিসান তুই একটু বোঝ?

“জিসান : নিশি তুই হ্যাঁ বা না বল

“নিশি : …

“জিসান : হ্যাঁ বা না

“নিশি : হ্যাঁ

“জিসান : তার মানে তুই আসবি।

“নিশি : হুম। না আসলে ছাড়বি তোরা আমায়!

“জিসান : আমি জানতাম তুই আসবি।

“আরিফা : লাভ ইউ দোস্ত। তুই না আসলে মজা টাই নষ্ট হতো। দুইদিন পর নবীণ বরণ‌ ঠিক আছে। আমি পরশু সকালে তোকে নিতে আসবো।

“নিশি : হুম। রাখছি আমি। লেট হচ্ছে আমার।

“আরিফা : আচ্ছা ।
.
নিশি ফোন রেখে দেয় । আর দুদিন পর নবীন বরণ কিন্তু স্যার তো তাকে ছুটি দিতে চাইবে না। সে যাবে কি করে। যাই হোক আজকে যেভাবে হোক ছুটি নিতেই হবে। এখন থেকেই প্ল্যান মতো কাজ করতে হবে।।
.
এদিকে ভার্সিটিতে..

“আরিফা : তা জিসান জিজু আমাদের ট্রিট কোথায়?

“জিসান : কিসের ট্রিট?

“মেহেদী : এ্যা মা কি বলছিস কিসের ট্রিট মানে?

“জিসান : তোদের কথা আমি বুঝতে পারছি না।

“রৌদ্দুর : এটাই যে তুমি নবীন বরণ’র দিন নিশি কে প্রোপজ করছো। আর আমরা সবাই জানি নিশি তোমাকে একসেপ্ট ও করবে তাই ট্রিট টা আগে দিলেই ভালো হয়।

“জিসান : তুই কিভাবে জানলি ও একসেপ্ট করবে।

“মেহেদী : আরে এটা সবাই জানে! কি আরিফা?

“আরিফা : হ্যাঁ আমরা সবাই জানি । এখন শুধু প্রোপজ টা বাকি। আর ট্রিট কিন্তু আমার আজকেই চাই। বুঝলি….
.
আরিফা এই কথা বলে ঘুরতেই কারো বুকে’র সাথে ধাক্কা খায়। আরিফা চোখ তুলে ওপরে তাকায়। সে আরিফা’র থেকে অনেকটা লম্বা। ফর্সা গায়ের রঙ, স্লিকি চুল গুলো কপালে ঠেকছে, সূর্যের আলো তার এই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আরিফা তাকেই দেখেই কয়েক পা পিছিয়ে যায়। এরমধ্যেই ইশা এসে তার হাত’টা ধরে বলে..

“ইশা : আরে বেবি তুমি এখানে কি করছো? জানো আমি তোমাকে কতোক্ষণ ধরে খুঁজছি।

( আরিফা ইশা’র কথা শুনে তার দিকে তাকায়। সে ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইশার কথায় আরিফার বুক’টা মোচড় দিয়ে ওঠে। সে আর কেউ না আরিয়ান ছিলো। যাকে আরিফা ভালোবাসতো। এখনো বাসে, কিন্ত কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারনে আজ তারা আলাদা। আরিয়ান আগে এখানেই ‌পড়তো । কিন্তু এখন সে এই ভার্সিটির নতুন গনিত টিচার। আজ থেকেই ক্লাস করাবে।‌আর ইশা জিসানের সাথে এক ইয়ারে পড়ে ।)

“আরিয়ান : হুম চলো । ( আরিফা’র দিক থেকে চোখ সরিয়ে। )
.
আরিফা যেন অনেকটা অবাক হয়। সে এমন’টা আশা করে নি আরিয়ান’র কাছ থেকে। আরিয়ান চোখ ঘুরিয়ে ইশা’র হাত ধরে চলে যায় সেখান থেকে। সে আসলে আরিফা’কে জ্বালানোর জন্য’ই এখানে পড়াতে এসেছে আর আরিফা’কে দেখিয়ে দেখিয়ে ইশা’কে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।।
.
আরিয়ান চলে যায় ইশা’র ধরে। আরিফা তাকিয়ে থাকে তাদের চলে যাওয়ার পানে। এমন সময় মেহেদী আরিফার ঘাড়ে হাত রাখে। আরিফা এবার হুশ হয়।

“মেহেদী : কি ভাবছিস?

“আরিফা : কিছু না

“জিসান : আরিয়ান এর কথা

“আরিফা : উনার কথা ভাবতে যাবো কেন?

“রৌদ্দুর : যাই হোক আরিয়ান এমনেতেই তোকে কষ্ট দিতে এখানে এসেছে, আর এখন সেটা আরো ভালো করে পারবে?

“আরিফা : মানে..

“জিসান : তোমাদের নতুন গনিত টিচার সে। ইশ কি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এক্স যখন গনিতের টিচার ( হেসে )

“আরিফা : জিসানের বাচ্চা। মজা করছিস তুই আমার সাথে..

“জিসান : আরে তুই তো আমার একমাত্র শালি। তোর সাথে মজা করবো না তো কার সাথে করবো বল!

“আরিফা : তো এবার নিজের পকেট খালি কর আর শালি’কে শপিং এ নিয়ে চল

“জিসান : কিহহহ

“রৌদ্দুর : লও ঠেলা ( হেসে )

“মেহেদী : আমরা বাদ নাকি

“আরিফা : সেটা তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস কর

“জিসান : তুই আজকে আমার পকেট খালি করার মতলবে আছিস না।

“আরিফা : হি হি ‌হি

।।

নিশান গাড়ি ড্রাইভ করছে। এমন সময় একটা কল আসল। নিশান কল’টা‌ রিসিভ করে কানে ব্লুটুথ দিলো।
ওপাশ থেকে বলে ওঠল…

– একটা খবর আছে..?

“নিশান : কি?

– জিসান নিশি’কে প্রোপজ করবে নবীন বরণ’র দিন।

“নিশান : ওহ্

– তুই ওহ্ বলছিস? টেনশন হচ্ছে না তোর। যদি নিশি হ্যাঁ বলে!!

“নিশান : নবীন বরণ কবে?

– পরশু..

“নিশান : তার মানে আজকের আর কালকের দিন আছে আমার কাছে!

– কি করবি তুই?

“নিশান : যা দু’বছর আগে করতে পারি নি..

– তুই পারবি…

“নিশান : জানি না কিন্তু পারতেই হবে । আমি আর হারাতে পারবো না জান পাখি’কে ইয়ার।

– হুমমম। জানি আমি, দুদিন আছে তোর কাছে!

“নিশান : দুদিন..! জানি না কি করবো কিন্তু হারাতে পারবো না ওকে। অনেক ভালোবাসি জান পাখি’কে আমি। পারবো না ওকে ছাড়া থাকতে। ও থাকতে না চাইলে জোর করে রাখবো। কিন্তু আমার সাথেই ওকে থাকতে হবে। কোথায় যেতে দেবো না ওকে নিজের কাছেই আগলে রাখবো সারাজীবন।।

– হুম। হেল্প লাগলে বলিস!

“নিশান : হুম। রাখছি আমি..

– হুম।
.
নিশান এসব ভাবতে ভাবতে অফিসে ঢোকে।‌ নিশি চলে এসেছে অফিসে। নিশি নিশান’কে দেখে গুড মর্নিং স্যার বলে। কিন্তু নিশান নিশি’র দিকে তাকায় ও না। সে সোজা নিজের কেবিনে ঢোকে। নিশি মনে মনে ভাবে স্যার হয়তো আজ অনেক রেগে আছে।‌
কিছুক্ষণ পর’ই নিশি’র ডাক আসে নিশানের কেবিন থেকে।‌ নিশি নিশানের কেবিনে নক করে।

“নিশি : স্যার আসবো।

“নিশান : হুম আসুন মিস নিশি।

“নিশি : স্যার আমাকে ডেকেছেন…

“নিশান : হ্যাঁ এই যে টেবিলে দেখছো ফাইল গুলো.. এ গুলো জলদি ‌চেক‌ করে নিয়ে আসো । আর …

“নিশি : আর স্যার.. ( শালা জল্লাদ স্যার এতো গুলো ফাইল দিয়ে আবার আর করছিস )

“নিশান : কালকে আমাদের মিটিং’র presentation তুমি করবে।

“নিশি : কিইইইইইই আমি!

“নিশান : হ্যাঁ কেনো?

“নিশি : না স্যার এমনি।

“নিশান : হুম। আগে এই কাজ’টা শেষ করুন তারপর আমি presentation টা দেখিয়ে দেবো কিভাবে করতে হবে।

“নিশি : হুম স্যার ( আজ কার মুখ দেখে মুখ থেকে ওঠেছিলাম ) বিড় বিড় করে.

“নিশান : কিছু বললে..

“নিশি : নাহ ( বলেই চলে গেল )
.
“নিশান : জান পাখি… তুমি শুধু আমারই।

“নিশি : ( বাইরে এসে ) যাহ ছুটির নেবার কথা তো বলতেই ভুলে গেলাম। আর আমার মনে হয় না উনি ছুটি দিবেন। যেভাবে রেগে আছে আজকে।‌আসতে না আসতেই কাজ। উফফ আল্লাহ উঠাইয়া নাও আমাকে আর ভাল্লাগেনা।।

চলবে…..

( কেমন হয়েছে জানাবেন । আর সামনে আসছে নতুন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। এর মধ্যে আরো একজন নায়ক নায়িকা নিয়ে আসলাম । ওদের প্রেম কাহিনী নিয়ে। আর নায়ক কে আর ভিলেন কে সেটা নিয়ে সবাই নিশ্চিত। আশা করি কয়েক পর্বের মধ্যেই এটা সবাই বুঝতে পারবে )

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/384444519943993/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here