অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_৩৭

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_৩৭ ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান

নিশান আর তিশা বাইরে বের হয়। দুইজনেই ‌শপিং মল এ ঘুরছে কি কেনা যায়। হঠাৎ করেই তিশা বলে…

“তিশা : আরে নিশি না।

“নিশান : কোথায়?

“তিশা : ওই যে।

“নিশান : ( তাকিয়ে দেখল নিশি একজন ছেলের সাথে বসে আছে। ছেলেটা নিশি’র হাত ধরে আছে। নিশান এর মাথা গরম হয়ে গেল। সে একটু ঘুরে ছেলেকে দেখতে চাইলো, তাকে দেখে নিশান ‌অবাক‌ হয়ে গেল। সে বলে ওঠল.. ) জিসান…..

“তিশা : আরে কি বলছিস ওই’টা জিসান কি করে হতে পারে দেখি সর ( নিশান কে সরিয়ে দেখার চেষ্টা করে ) আরে এটা তো জিসান’ই কিন্তু ও এখানে কি করে আর নিশি’ই বা জিসানের সাথে কি করছে? নিশি তো আরিফা’র সাথে থাকার কথা তাই না! কিরে নিশান কিছু বল!

“নিশান : ( পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে, মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে নিশি জিসানের সাথে এভাবে… নিশি ওকে মিথ্যে বলেছে.. তিশা’র কোনো কথা নিশানের কানে যায় না সে শুধু নিশি কে দেখছে )

“তিশা : ( নিশানের ঘাড়ে হাত রেখে ) নিশান….

“নিশান : হুম ( তিশা’র দিকে তাকিয়ে )

“তিশা : কি ভাবছিস?

“নিশান : ( নিশি’র দিকে তাকায়? দেখে হেসে হেসে কথা বলছে জিসানের সাথে ) কিছু না। বাসায় চল!

“তিশা : কিন্তু…

“নিশান : ( তিশা’র হাত ধরে ) চল!
.
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো নিশান। তিশা মনে মনে অনেক খুশি। খুশি হবে নাই বা কেন? তাদের প্ল্যান যে এভাবে কাজ করবে সে ভাবে নি।
নিশান তিশা কে নিয়ে সোজা বাড়িতে আসে। বাড়ি’র সবাই ব্যস্ত, কারন আজ নিশান আর নিশি’র গায়ে হলুদ। সন্ধ্যায় হবে এইসব। নিশান বাড়িতে এসে নিজের রুমে ঢুকে যায়, আরশিয়া আর বাকি সবাই বসার ঘরে ছিলেন। ঘরভর্তি মানুষ। আরশিয়া এতো কাজের মাঝে নিশান কে ওভাবে ওপরে চলে যাওয়াতে অনেক অবাক হয়। তিনি যেতে নিলে দেখে তিশা নিশানের পিছন পিছন যাচ্ছে। তাই তিনি আর পা বাড়ান না। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হবে।

রুমে আসে নিশান বিছানায় বসে পরে। কিছু ভালো লাগছে না তার। এর মাঝেই ঘাড়ে কারো হাত রাখার স্পর্শ পায়। নিশান তাকিয়ে দেখে তিশা।
তিশা নিশান কে আশ্বাস দিয়ে বলে..

“তিশা : হয়তো তুই যা ভাবচ্ছিস তা না।

“নিশান : জানি না ভালো লাগছে না কিছু!

“তিশা : দেখ চাপ নিস না। ঠান্ডা মাথায় একটু ভাব বুঝলি।

“নিশান : কিন্তু… ( এর মাঝেই আরিফা কল করে, নিশান খানিকটা অবাক হয়। তারপর কল টা রিসিভ করে ) হ্যাঁ আরিফা বলো।

“আরিফা : ভাইয়া একটু নিশি কে ‌দিন তো।

“নিশান : তুমি নিশি’র সাথে নেই।

“আরিফা : নিশি আমার সাথে… কই না তো। আমি তো নিশি কে অনেক কল করলাম ও তো রিসিভ করল না। তাই আপনাকে কল করলাম।

“নিশান : …. ( নিশ্চুপ )

“আরিফা : ভাইয়া সব ঠিক আছে।

“নিশান : হুম নিশি একটু বাইরে গেছে ও আসলে আমি বলবো।

“আরিফা : আচ্ছা ভাইয়া।

“নিশান : হুম। তোমরা সময় মতো চলো এসো।

“আরিফা : জ্বি ভাইয়া…

“তিশা : কি বললো আরিফা!

“নিশান : কিছু না।

“তিশা : নিশান আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই!

“নিশান : কি?

“তিশা : আসলে আমি এই কথা’টা তোকে বলতাম কিন্তু আমার মনে হয়েছিল তুই বিশ্বাস করবি না।

“নিশান : মানে…

“তিশা : ( মোবাইল’টা বের করে ) এই ভিডিও

“নিশান : কিসের ভিডিও?

“তিশা : সেদিন আমি তোর ঘরের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম, তখন আমি নিশি আর জিসানের কথা শুনি। ভেবেছিলাম তোকে বলবো কিন্তু তুই বিশ্বাস করতি না তাই তখন ভিডিও করেছিলাম। তবুও তোকে দেখানোর সাহস হলো না।

“নিশান : কিসের ভিডিও এটা!

“তিশা : দেখ তুই!

“নিশান : ( মোবাইল’টা নিয়ে ভিডিও দেখতে লাগল। )
.
ভিডিওতে নিশি আর জিসানের দাঁড়িয়ে কিছু কথোপকথন শোনা যাচ্ছিল।

“জিসান : তাহলে আমাদের প্ল্যান টা কাজ করলো বলো।

“নিশি : হ্যাঁ, নিশান কিছু বুঝতে পারে নি।

“জিসান : আর পারবেও না ও তোর প্রেমে অন্ধ।

“নিশি : সেদিন নিশানের বদলে তোর সাথে আমার বিয়ে হবে।

“জিসান : হ্যাঁ কিন্তু তার আগে…

“নিশি : নিশানের ভাগের সব সম্পত্তি! পেয়ে যাবো চিন্তা করিস না। নিশান কে নিজের প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়ে সব নিজের নামে করে নেবো।

“জিসান : সত্যি প্ল্যান টা দারুন, আর নিশান ও কিছু বুঝতে পারলো না।

“নিশি : নিশান কি ভেবেছিলো এতো সহজে মেনে নেবো আমি ওকে, ও আমার সাথে যা করেছে সব ভুলে যাবো আমি। কোনোমতে না! ওর এমন অবস্থা করবো ও ভাবতেও পারবে না।

“জিসান : বলতে হবে ভালো অভিনেতা তুই।

“নিশি : তোর জন্য সব করতে পারি।
.
নিশান ভিডিও দেখে হাত থেকে ফোন টা পরে যায়। ওর চোখ দুটো স্থির, ওর পৃথিবী ওখানেই থেমে যায়। যেন সব কিছু থমকে যায়। নিশান কিছুক্ষণ এর জন্যে স্থির হয়ে যায়।

তিশা ওর হাতে হাত রাখে, নিশান আস্তে করে বলে..

“নিশান : একটু একা থাকতে দিবি আমায়।

“তিশা : কিন্তু..

“নিশান : প্লিজ!

“তিশা : আচ্ছা কিন্তু আমি আবার আসবো।
.
বলেই ঘর থেকে বের হয় তিশা , মুখে বিজয়ের হাসি। থাকবে বা নাই কেন এতো সহজে প্ল্যান টা সফল হবে ভাবতে পারে নি সে। সেদিন জিসান কে নিশি’র কাছে পাঠিয়ে আড়াল থেকে ভিডিও করেছে সে। তারপর ভয়েস ইডিট করে নিশান কে দেখাল সে।

“তিশা : এবার নিশি’র জারিজুরি শেষ, আমি ও দেখবো কালকে কার সাথে বিয়ে হয় নিশানের। ( বলেই বাঁকা হাসি দেয় সে )
.

কিছুক্ষণ বাদেই নিশি ফিরে আসে, নিশান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে।‌ নিশি আর জিসান একসাথে গাড়ি থেকে নামে। দু’জনেই হাসতে হাসতে বাড়িতে ঢোকে। নিশান কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এইসব। সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার। তার জান পাখি এতো বড় ধোঁকা দিলো তাকে….

নিশি রুমে এসে দেখে পুরো রুম অন্ধকার। নিশান দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। নিশি দৌড়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে নিশান কে। নিশান নিশি’র ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

“নিশি : কি হলো আপনি এখানে, পুরো রুম এতো অন্ধকার কেন? আর আপনি এভাবে কেন? ( নিশানের পিঠে মাথা রেখে )

“নিশান : ( সামনে ফিরে নিশি’র গালে হাত রাখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ) জান পাখি! কোথায় গিয়েছিল? এতো দেরি হলো যে!

“নিশি : ( কিছু টা ভোরকে গিয়ে ) না মানে আপনাকে তো বলেছিলাম!

“নিশান : ওহ্ হ্যাঁ আরিফা’র সাথে দেখা করতে।

“নিশি : মানে নিশান আমি…

“নিশান : ( নিশি’র ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে ) হুসস! আমি জানি কোথায় ছিলে তুমি!

“নিশি : ( চরম অবাক হয় )

“নিশান : আরিফা’র সাথে ছিলে আমি বিশ্বাস করি তোমায়।

“নিশি : ( হাসি দিয়ে ) কিছু হয়েছে আপনার।

“নিশান : না জান পাখি! ( নিশি’র গালে হাত রেখে )

“নিশি : মন খারাপ!

“নিশান : ( মুচকি হাসি দিয়ে ) না।

“নিশি : আরিফা এসে পরবে একটু পর।

“নিশান : হুম ( নিশি’কে নিজের কাছে এনে। )

“নিশি : জানেন…

“নিশান : ( নিশি’র ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে )

“নিশি : ( নিশানের চোখে দিকে তাকায়, দেখে নিশান ওর ঠোঁটে’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি নিশানের শার্ট আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় )

“নিশান : ( নিশি’র ঠোঁটের দিকে আগাতে হয়। হঠাৎ করেই ছেড়ে দেয় নিশি কে )

“নিশি : ( চোখ খুলে দেখে নিশান অন্যদিকে হেঁটে যাচ্ছে।‌নিশি আবার ওর পেছন থেকে নিশান কে জরিয়ে ধরে )

“নিশান : ( নিশি জরিয়ে ধরলে থেমে যায় )

“নিশি : কি হলো?

“নিশান : কিছু না..

“নিশি : ( পেছন থেকে নিশান’র সামনে এসে দাড়িয়ে ) আপনারা নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে!

“নিশান : ( আবারও নিশি’র গালে হাত রেখে ) জান পাখি!

“নিশি : হুম…

“নিশান : একটা কথা জিজ্ঞেস করি!

“নিশি : হুম…

“নিশান : কতোটুকু ভালোবাসো আমায়?

“নিশি : এটা কেমন প্রশ্ন?

“নিশান : বলো না।

“নিশি : অনেকখানি তবে বেশি না ( দাঁত বের করে হেসে )

“নিশান : ( কিঞ্চিত হাসি দিয়ে , নিশি কপালে আলতো করে একটা কিস করে ) ভালোই বললে!

“নিশি : কেন ভালো লাগে নি।

“নিশান : হুম লেগেছে।‌

“নিশি : তাহলে…

“নিশান : কিছু না। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

“নিশি : সত্যি! দিন

“নিশান : চোখ বন্ধ করো।

“নিশি : ( হেসে চোখ বন্ধ করে হাত পেতে রাখে )

“নিশান : ( তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে কিছু পেপার নিশি’র হাতে রাখে )

“নিশি : ( চোখ মেলে পেপার থেকে খানিকটা অবাক হয় , তারপর পেপার গুলো খুলে দেখতে থাকে। আর দেখার পর তার হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে যায়, সে বড় বড় চোখ করে ভ্রু কুঁচকে নিশানের দিকে তাকায় )

“নিশান : ( মুচকি হাসি দিয়ে নিশি’র সামনে দাঁড়ায় )

“নিশি : কি এগুলো!

“নিশান : যা তুমি চেয়েছিলে, মুক্তি মানে ডির্ভোস পেপার আর আমার সব সম্পত্তি!

“নিশি : নিশান পাগল হয়ে গেছেন আপনি এগুলো কি?কি বলছেন এইসব।

“নিশান : কেন জান পাখি এইসবই তো চাইতে তুমি নাহ। তাই দিয়েদিলাম। জানো জান পাখি যদি তুমি এগুলো এমনে চাইতে আমি দিয়ে দিতাম এর জন্য আমার ভালোবাসা নিয়ে না খেললেও পারতে।

“নিশি : নিশান!

“নিশান : ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) খুব ভালোবাসতাম তোমায় জান পাখি!

“নিশি : ভালোবাসতাম মানে, আমি ভালোবাসি আপনাকে, আপনি এরকম টা করতে পারেন না আমার সাথে। ( নিশান কে জরিয়ে ধরে )

“নিশান : আমি সাইন করে দিয়েছি জান পাখি!

“নিশি : ( নিশান কে ছেড়ে তার দিকে তাকায়, তারপর হুট করেই একটা চড় মারে নিশান কে ) কি বললেন আপনি! ( নিশানের কলার ধরে ) ভালোবাসেন না আমায়, ডির্ভোস দিয়ে দিবেন আমাকে। মগের মুল্লুক পেয়েছেন নাকি,‌আপনি বললেই হলো নাকি। আমি ডির্ভোস দেবো না আপনাকে শুনলেন আপনি।

“নিশান : ( নিশি’র হাত ছুটিয়ে ) এরকম কেন করছো তুমি, যা চেয়েছো তাই দিয়েছি, সব দিয়েছি তোমায়। কোন জায়গায় কমতি রেখেছিলাম আমি তোমার বলো। তুমি আমাকে ভালোবাতে না এটাই যেমন মেনেছিলাম ঠিক ছিলো। হ্যাঁ কষ্ট ছিলো তবু ও সত্যি ছিলো। মিথ্যে ভালোবাসা’র নাকট না করলে ও পারতে। আমার ভালোবাসা নিয়ে এভাবে না খেললেও পারতে। এমন টা কেন করলে বলো কেন? নাই ভালোবাসতে আমায় তবু সারাজীবন ভালোবেসে যেতাম কিন্তু তুমি… তুমি ঠকালে আমায়, ধোঁকা দিলে। কিছু সম্পত্তি’র জন্য এতো নিচে নামলে তুমি। তো ঠিক আছে… দিয়ে দিলাম সব তোমাকে। নিয়ে যাও, যার সাথে ইচ্ছে থাক। কোনো যায় আসে না আমার। কিছু হবে না… যাও।

“নিশি : নিশান… আপনি এরকম ভাবে বলতে পারলেন। ( নিশি ছল ছল চোখে তাকিয়ে )

“নিশান : হ্যাঁ পারলাম, মুক্তি চেয়েছো দিয়েছি, সম্পত্তি চেয়েছো তাও দিয়েছি এখন শুধু মুক্তি দাও আমায় ব্যস। ( নিশি’র হাত ছিকটে ছেড়ে দিয়ে )

“নিশি : ( চোখের পানি মুছে ) ঠিক আছে চলে যাচ্ছি আমি থাকবো না এই বাড়িতে চলে যাচ্ছি। ( বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিশি )
.
নিশি বেড়িয়ে যেতে বাঁকা হাসি দেয় তিশা। আড়াল থেকে এতোক্ষণ সব শুনছিলো সে।

এদিকে নিশি কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি’র সামনে এসে দাঁড়ায়। নিচে তাকিয়ে দেখে সবাই কাজ করছে, কিছুক্ষণ বাদেই গায়ে হলুদ। আরিফা আর আরিয়ান ও এসে পেরেছে। নিশি সবার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে বির বির করে বলতে লাগল…

“নিশি : আজব তো উনি বললো আর আমি এসে পরলাম, কেন? উনার কথাই কি সব নাকি। উনি বললেই হলো নাকি। উনার কথার দাম আছে আমার কথা নেই। আমি এখনই উনাকে গিয়ে বলছি আমি যাবো না।

বলেই উল্টো পথে হাঁটা ধরে নিশি। এসে উপস্থিত হয় নিশানের ঘরের সামনে। কিন্তু দরজা খুলে তাকিয়ে যা দেখে তাতে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। নিশান তিশা কে জরিয়ে ধরে আছে। নিশি বলে ওঠে…

“নিশি : নিশান…..

#চলবে….
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/401226114932500/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here