গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ৮( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan
ডাক্তার রুম থেকে বের হতেই নিশান দেওয়ালে হেলান দিয়ে এক পা দেওয়ালে রেখে আর দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে নিশি’র দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিশি বলতে শুরু করে..
নিশি : আপনি ডাক্তার’কে কেন কিছু বললেন না। উনি মনে করলেন আমি আপনার স্ত্রী।আপনার বলা উচিত ছিল এরকম কিছু না।
নিশান : যাই হোক। তোমার ব্যাথা এখন কমেছে।
নিশি : হুম কমেছে। আপনার উচিত হয় নি এভাবে সবার সামনে আমাকে কোলে করে নিয়ে আসা।
নিশান : …..
নিশি : স্যার..
নিশান : …
নিশি : স্যাররর
নিশান : হুম।
নিশি : কি ভাবছেন এতো
নিশান : ভাবছি তোমার ওজন তো ৫০ এর বেশি হবে না তাহলে তুমি টুল ভেঙে পরলে কিভাবে।
নিশি : কি বললেন আপনি আমাকে ( চেঁচিয়ে ) আমার ওজন ৫০ কেজি
নিশান : হ্যাঁ আমার তো সেরকম’ই মনে হলো
নিশি : মটেও না আমার ওজন ৪৩ কেজি বুঝলেন আপনি
নিশান : হ্যাঁ আপনি শুকটি মাছ আমি জানি। আর এই শুকটি মাছ একটা টুলও ভেঙে ফেলেছে। ওহ্ নো ( হেসে )
নিশি : দেখুন এতে আমার কোনো দোষ নেই। আপনি কিপ্টামি করে কম দামি টুল কিনেছেন। তাই আমার ওজন সামলাতে পারে নি। এতে আমার দোষ কি?
নিশান : হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি এখন চলুন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি।
নিশি : হুম।
.
নিশান এসে আবারও নিশি’কে কোলে তুলে নেয়। নিশি এতোক্ষণ ব্যাথার কারনে ওভাবে খেয়াল করেনি। এখন তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। নিশানের ছোঁয়াতে তার শরীর শিউরে উঠে। সে এক ধ্যানে নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেমন জানি একটা ভালো লাগা আছে ওই চোখে। নিশান নিশি এভাবে চাহনি দেখে জিজ্ঞেস করে..
নিশান : কি দেখছেন এতো?
নিশি : কিছু না ( নিশানের কথায় ধ্যান ভাঙে )
নিশান : আচ্ছা তুমি দেখেছো আমি তোমাকে এই নিয়ে কয়বার কোলে নিলাম!
নিশি : ৩ বার।
নিশান : ধন্যবাদ দাও একটা।
নিশি : কিহহ?
নিশান : কি মানে।
নিশি : এখানে দোষ আপনার টুলের আর আমি আপনাকে বলি নি যে আমাকে কোলে তুলুন।
নিশান : ওহ আচ্ছা তাহলে ফেলে দিই। ( নিশি’কে একটু হালকা করে)
নিশি : ( নিশানের শার্ট খামছে ধরে ) দ…দেখুন আমি ব্যাথা পাবো কিন্তু। পরে আপনার’ই ক্ষতি হবে কাজ আটকে থাকবে আপনার।
নিশান : তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছো নাকি রিকোয়েস্ট করছো।
নিশি : দুই’টাই। ( মুচকি হেসে )
নিশান : আচ্ছা ( মুচকি হেসে )
.
নিশি নিশানের সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। আসলেই হাসি’টা অনেক সুন্দর। এই প্রথম জিসান ছাড়া অন্য কারো হাসি নিশি’র কাছে এতো ভালো লাগল।
নিশান কোলে করেই নিশি’কে হসপিটাল থেকে বের করে আনে। হসপিটালে’র সবাই ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সবার এমন তাকানোতে নিশি অনেক’টা লজ্জা পায়। সে নিশানের বুকে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নিশি’র নিজে’ই জানে না সে একরক’টা কেন করছে।
.
নিশান নিশি’কে গাড়িতে বসিয়ে তার সিট বেল বেঁধে দেয়।
তার পর নিশি’কে বাসায় নিয়ে আসে।
নিশান গাড়ি থেকে নেমে নিশি’কে কোলে নিতে গেলে সে না করে। কারন মা বাবা দেখলে কি ভাববে।
নিশান তাই নিশি’কে হাত ধরেই তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে।
.
বাড়ির কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নিশি’র মা ফারহানা বেগম এসে দরজা খুলেন। দরজার ওপাশে নিজের মেয়েকে এভাবে দেখে ফারহানা বেগম অস্থির হয়ে পড়েন। নিশান নিশি’র হাত এখনও শক্ত করে ধরে আছে।
.
ফারহানা : কি হয়েছে ওর। নিশি তোর কি হয়েছে? এমন অবস্থা কেন তোর.? ( নিশি’র কাছে গিয়ে )
নিশি : আরে মা চিল বেশি কিছু না। শুধু একটু পা ফচকে গেছে। আর কিছু না। ভেতরে আসতে দাও।
ফারহানা : ( নিশি’কে ধরে ) আয় আয় ভেতরে আয়।
নিশান নিশি’কে ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর একটা সোফায় নিশি’কে বসায় ।
.
ফারহানা : ( নিশান’কে উদ্দেশ্য করে ) তুমি কে বাবা?
নিশি : মা উনি আমায অফিস’র বস। উনি আমাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আমার পা ব্যান্ডেজ করিয়ে দেন।
ফারহানা : ( নিশান’কে ) তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তোমার জন্য আজ আমার মেয়ে এতো বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা পেলো।
নিশান : এটা আমার দায়িত্ব ছিলো আন্টি আর কিছু..?
ফারহানা : তবুও বাবা,সবাই এমন ভাবে না। আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসি।
নিশান : আন্টি আপনি ব্যস্ত হবেন না । আর এখন আমাকে যেতে হবে আমার মিটিং আছে। অন্যদিন হবে এইসব। ( দাঁড়িয়ে ) আচ্ছা আন্টি আমি এখন আসি।
অফিস ছুটি’র পর রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রকি’কে একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ধাক্কা মারে। রকি ছিটকে গিয়ে দূরে পরে যায়। মানুষ সব এসে জড়ো হয়ে যায় রকি’র সামনে। সে খুব খারাপ ভাবে আহত হয়। গাড়ি’টা কিছু দূর এসে থেমে যায়। গাড়ি’র গ্লাস নামিয়ে নিশান গাড়ি থেকে রকি’র সেই রক্তাক্ত দেহ দেখতে থাকে।
নিশান : আমার জান পাখি ‘র ক্ষতি করে তুই কিভাবে শান্তি’তে থাকবি। প্রথম ভুল তাই প্রাণে মারলাম না। কিন্তু পরেরবার তোকে আর বাঁচতে দেবো না।
( নিশান গাড়ি নিয়ে চলে যায় ।)
।।
পরদিন সকালে____
নিশি ‘র মন খারাপ । আজ শুক্রবার ছুটির দিন অথচ সে আজ বাইরে যেতে পারবে না। জিসান’কে কথা দিয়েছিল আজ তাদের সাথে ঘুরতে যাবে সে। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব না।
হঠাৎ করেই কেউ নিশি ‘র গলা জড়িয়ে ধরে ..
– কিরে নিশি পাগলি.?
নিশি গলা শুনে বুঝতে পারে এটা আরিফা। সে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আরিফা । হাসি মুখে জরিয়ে ধরে আরিফা’কে । কিন্তু মূহুর্তে’র মধ্যে’ই সেই হাসি মুখ কালো হয়ে যায় যখন সে রৌদ্দুর আর মেহেদী ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায় না। তার মানে কি জিসান আসে নি।
.
দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জিসান বলে….
জিসান : কাকে খুঁজছিস তুই..?
নিশি : ( এক গাল হাসি নিয়ে ) তুই এসেছিস ।
জিসান : আরছ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অসুস্থ আমি তাকে দেখতে আসবো না।
নিশি : আমি ভেবেছিলাম তুই আসবি না।
জিসান : ( নিশি নাক ছুঁয়ে ) এমন’টা কি হতে পারে?
নিশি : জবাবে মুচকি হাসে।
আরিফা : বইন আমরাও আসছি এখানে একটু দেখ।
রৌদ্দুর : না আমাদের কি এখন আর দাম আছে?
মেহেদী : আরে আমরা কে বল যে ওর আমাদের দেখবে।
নিশি : আরে ইয়ার কি বলছিস তোরা এইসব!
জিসান : এই তোরা থাম । তা তোর পা কেমন আছে?
নিশি : হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে এখন।
মেহেদী : যাক ভালো থাকলে’ই ভালো।
নিশি : সরি ইয়ার আজ তোদের সাথে আড্ডা দেয়ার কথা ছিলো আমার কিন্তু…
মেহেদী : আরে বাদ দে পরেও দেওয়া যাবে সেটা!
আরিফা : তা তোর পায়ের এই অবস্থা হলো কি করে..?
নিশি : ….( সব বলল কিন্তু নিশানের গায়ে পরার আরতার কোলে নেওয়ার কথা বলল না। কারন জিসান ভুল বুঝতে পারে )
জিসান : দেখে শুনে কাজ করতে পারিস না ? চোখ কোথায় থাকে সবসময় আপনার ।
রৌদ্দুর : চোখ কোথায় থাকে সেটা তো আমরাই জানি?
( জিসান’কে চোখ মেরে )
আরিফা : তা আর বলতে ( মুচকি হেসে )
জিসান : এই তোরা থামবি। আর তোকে কি বললাম ?
নিশি : আরে চিল দোস্ত । তেমন কিছু হয় নি। কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবো।
জিসান : তোর চিল রাখ। এরপর থেকে দেখেশুনে হাটবি।
নিশি : হুম।
আরিফা : তোদের রাগারাগি বন্ধ হলে এবার একটু আড্ডা দেই আমরা ।
.
রাতে….
একজোড়া চোখ বসে বসে দেখে যাচ্ছে ঘুমন্ত নিশি’কে। তার জান পাখি’কে । কোনোরকম বাঁধা ছাড়া জান পাখি ‘র মুখ’টা দেখতে ইচ্ছে করে সবসময় । কি আছে এই মায়া ভরা মুখে তা দেখলেই তার সব ক্লান্তি চলে যায়। কি আছে ওই মায়া ভরা চোখে যা তার আজীবন ভয় দেখতে ইচ্ছে করে। তার সেই পাগল করা চুলের ঘ্রাণে যা তাকে নেশা ধরিয়ে দেয়।
জান পাখি’র এই দুষ্টু মাখা মন’টা মনে করিয়ে দেয় নিশান’কে সেই দু’বছর আগের কথা। সেই বর্ষনের কথা,সেই প্রথম তাকে দেখার কথা। তার চুলের ঘ্রাণে নিজেকে পাগল করার কথা। সব কিছুই ছিল কি সুন্দর কি মধুময় স্মৃতি ।
শুধু একটা ঘটনা তার জীবন থেকে নিয়ে গেল তার জান পাখি’কে। যেই ছেলেটা প্রত্যেকটি দিন তার এই জান পাখি’কে একবার দেখার জন্য অস্থির হয়ে যেত তার সেই জান পাখি’কে ঘৃণা করে চলে গিয়েছিল সে তা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। যার মাসুল তাকে আজও দিতে হবে। সে জানে তার জান পাখি তাকে ভালোবাসবে না , মেনে নিবে না তাকে কিন্তু সে কি করবে? এই জান পাখি’কে তার দরকার । পারেনি তাকে ভুলতে সে। দু’বছর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। তারপর আবার সেই জান পাখি’র কাছেই এসেছে সে। সম্ভব না তাকে ছাড়া এক মূহূর্তে থাকার কথা চিন্তা করা। অসম্ভব ভালোবাসে জান পাখি’কে সে। শুধু তাকেই চাই তার এখন তার জান পাখি তাকে এজন্য আজীবন তাকে ঘৃণা করলেও তার সমস্যা নেই। কিন্তু এটা তো তার জান পাখি হয়ে থাকবে এটাই তার জন্য অনেক কিছু। কি করবে তাকে ছাড়া সে তাকে ছাড়া এক মূহূর্ত থাকা তার জন্য মৃত্যু সমান ।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে সে জল জমে। আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ বসিয়ে দেয় জান পাখি’র কপালে । আর বলতে থাকে….
– অসম্ভব ভালোবাসি তোমাকে জান পাখি। জানি না তুমি বুঝবে কি না আর না আমি বোঝাতে পারব। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি ভাবতে পারছি না। যাই হোক না তোমার আমার হয়েই থাকতে হবে।
চলবে……
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/382415663480212/