অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:২৫
আসার পর থেকে আর শুদ্ধর দেখা পায় নি ছবি। কোনার একটা রুমে বসে আছে সে।বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনি ধরে গেছে।সেই সকাল সাড়ে ছয়টায় রওনা দিয়েছে।উঠতে হয়েছে আরো আগে।ঘুমঘুম রেশ নিয়ে বসে রইলো সে। এদিকে লোকজনের আসা যাওয়া কম।সামনের রুম গুলোতে মেহমানরা জোট বেধে গল্প করছে।তাদের হাসি ঠাট্টার আওয়াজ এখান পর্যন্ত আসছে।
মৌনতা বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে আর একটু পর পর ডিলিট করছে।আবার তুলছে,আবার ডিলিট করছে।মেয়েটা খুবই শৌখিন,আর বাচ্চা স্বভাবের।সালমানের সাথে বনিবনা হয়েছে কি না কে জানে? মুড দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো হয় নি।সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো ডিলিট করে দিচ্ছে।ছবি চুপচাপ বসে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।
মুক্তা খাটের ওপর শুয়ে আছে।শরীর ভালো নেই তার।গতকাল রাতেও জ্বর এসেছিলো।পাঁচমাসের অন্তঃসত্ত্বা সে।শরীর ভারী হয়ে এসেছে।হৈ-হট্টগোল একদম সহ্য হয় না।হৈচৈ থেকে বের করে এনে নাহিদ ওকে এইরুমে শোয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।
একটুপর নাহিদের মা নাহারা সুলতানা হাতে নাশতার ট্রে নিয়ে নাহিদের ভাবি শায়লাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—চারদিকের ঝামেলার জন্য তোদের খোঁজখবর নিতে পারছি না মা।কিছু লাগলে অবশ্যই আমাকে বলবি।আসলে নাহিদের বাবা গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে।দুই দিনে অনুষ্ঠান করলে এমন ঝামেলা হত না।আমি বারবার করে বলেছিলাম একভাগে গ্রামের সবাইকে আরেকভাগে আত্মীয়স্বজনদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করুন।তাহলে আর ঝামেলা হবে না।আমার কথা কানে নিলো না।এখন দৌঁড়াদৌড়ি কান্ড!এত মানুষ একদিনে সামলানো যায়?
নাহিদের বড়ভাবি শায়লা ওদেরকে নাশতা আর শরবত সার্ভ করলো।কাজের চাপে বেচারির সুন্দর মুখটা কালো হয়ে গেছে।এতগুলো লোকের আতিথেয়তা করা তো চারটেখানি ব্যাপার নয়।
তবুও মুখে হাসি রেখে ওদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলো।
এরমধ্যেই নাহিদের ফুপাতো ভাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
—মামি,মামা আপনাদের ডাকছে।তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন।
ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন নাহার বেগম আর শায়লা।যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেলেন,নাশতা করে নিতে আর কোন অসুবিধে হলে উনাদেরকে খবর দিতে।
উনারা চলে গেলে ছবি উঠে গিয়ে মুক্তার পাশে বসলো।মৃদুস্বরে ডাক দিলো,
—আপু?
ছবির ডাক শুনে চোখ খুললো মুক্তা।মিষ্টি হেসে বলল,
—কিছু বলবে ছবি?
—না মানে।নাহিদ ভাইয়ের বউকে তো দেখলাম না?
—পার্লার থেকে আসে নি বোধহয়।
—উনি কি ডাক্তার?
—হ্যাঁ।আমাদের জুনিয়র ব্যাচ!গাইনোকলোজিস্ট!
—ওহ!
ছবি একটু থেমে আবার জিজ্ঞাসা করল,
—আপনারা কি সকালে এসেছেন?
—হ্যাঁ।
—হলুদে আসেন নি?
মুক্তা মুচকি হেসে বলল,
—এখন তো শুধু বৌভাত হচ্ছে।মূল অনুষ্ঠান ঢাকায় গিয়ে করবে!..নাহিদের দাদুর ইচ্ছাতেই ওর বাবা এখানে বৌভাতের আয়োজন করেছেন।
—তাহলে বিয়ে?
—বিয়ে আজকেই হবে!তবে গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হওয়ার কারনে ওদের অনেক আত্মীয়স্বজন আসতে পারে নি।তাই ঢাকায় গিয়ে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।নাহিদের বাবার তো টাকা পয়সার অভাব নেই।নাহিদ আবার পরিবারের ছোট ছেলে!তাই বেশ জাঁকজমকভাবে আয়োজন করেছেন।
—ওহ!
ওদের কথার মাঝখানে মেহেদী এসে ঘরে ঢুকলো।মুক্তার খোঁজ নিতে এসেছে সে।ছবি উঠে সরে বসলো।মুক্তা আধশোয়া হয়ে উঠে বসে বলল,
—-ওদিকের কি অবস্থা? মেহমানদের খাওয়া শেষ?
মেহেদী ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না চেক করতে করতে বলল,
—আরে না।গ্রামের লোকজনই তো এখনো শেষ হয় নি।আত্মীয়স্বজন সব রয়ে গেছে।তোমার কি ক্ষিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?
—না,একটু আগে খালাম্মা আর শায়লা ভাবি এসে নাশতা দিয়ে গেছেন।আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি আমাকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ো না,আমি ঠিক আছি।ওদিকে যাও,আংকেল বোধহয় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছেন।
—আর বলো না,আমার তো মনে হচ্ছে সন্ধ্যের আগে খাওয়াদাওয়ার পর্ব সারতে পারবে না।
—শুনেছি আমি।বউ কি এসে গেছে?
—আসে নি বোধহয়।কেন?
—না এমনি।ছবি দেখতে চাইছিলো।
—না এখনো আসে নি। ঠিক আছে আমি গেলাম।
মেহেদী বেরোনোর সময় ছবিও ওর পেছন পেছন বেরোলো।বারান্দায় কাছে এসে ডাক শুনে পেছনে তাকালো মেহেদী,ছবি ইতস্তত করে বলল,
—কিছু বলবেন ভাবি?
—ইয়ে মানে উনি কি প্যান্ডেলে?
মেহেদী ঠাট্টার সুরে বলল,
—উনি টা কে?
—না মানে শুদ্ধ ভাইয়া।
মেহেদী ফ্যালফ্যাল করে ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।খানিকবাদে হো হো করে হেসে দিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,
—শুদ্ধ কি?
ছবি লজ্জায় জিভ কাটলো।ইতস্তত করে বললো,
—আপনার বন্ধু!
মেহেদী হাসি থামিয়ে বলল,
—আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে ভাবী!তাকে তো এখন পাওয়া যাবে না।তিনি ভীষণ ব্যস্ত!
মেহেদীর মুখে ভাবী ডাক শুনে লজ্জা লাগছে ছবির।হঠাৎ করেই ওকে আপনি বলছে!আগে তো তুমি করে বলতো! কেমন অস্বস্তিকর ব্যাপার।অবশ্য শুদ্ধর ওয়াইফ হিসেবে দেখলে সম্বোধনটা মোটেও অশোভন নয়।ছবি আর কিছু বললো না।মেহেদী মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
রুমে এসে দেখলো মৌনতা বিড়বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করছে।একটা ছবিও ভালো আসছে।ঘরের ভেতর কালো কালো আসছে। ছবি হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে গেলো সে।
ছবি তুলতে নাহিদদের বাগানে এসেছে ওরা। ইতোমধ্যে শ’খানেক তুলেও ফেলেছে মৌনতা।প্যান্ডেলের দিকে চোখ পড়লো ছবির। ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার, বর মানে নাহিদ প্যান্ডেলে ব্যস্ত!হাতে মাংসের বাটি।টেবিলে টেবিলে সবাইকে মাংস সার্ভ করছে।আশেপাশে তাকাতেই শুদ্ধকে দেখলো।তারও একই অবস্থা!শুধু ওর নয়,মেহেদী,সালমান সবারই একই অবস্থা।
আধঘণ্টা পরে মৌনতার ছবি তোলা শেষ হলে দুজনে বেরিয়ে এলো।বিল্ডিং এর গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে, এমন সময় শুদ্ধ হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকছে।তার পরনে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী।পাঞ্জাবী বুকের কাছে সোনালি পাথরের কাজ করা!হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো।ঘামে ভিজে পাঞ্জাবী একবারে গায়ের সাথে মিশে আছে,ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জি বোঝা যাচ্ছে।পাঞ্জাবির পেছন দিকে কোমরের কাছে খানিকটা ভাঁজ পড়েছে।তাতে ওর চমৎকার স্বাস্থ্য বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।ওরা এগিয়ে যেতেই শুদ্ধ বেরোলো।গরমে ঘেমে মুখ কালো হয়ে গেছে।কপালের ওপর কয়েক গাছি চুল এলোমেলো হয়ে আছে।হাতে বড়সড় ডালের বালতি!ডাল নিতেই ভেতরে ঢুকেছিলো সে!
মৌনতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—কোথায় গেছিলি তোরা?
—তোর ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফকে পাচার করে দিতে।
—ফেরত আনলি যে?
—তোর জন্য মায়া হলো!
শুদ্ধ চোখ পাকাতে গিয়ে হেসে ফেললো।তারপর ছবির দিকে একপলক তাকিয়ে সেই ঘায়েল করা মিষ্টি হাসিটা দিলো।তারপরই আবার প্যান্ডেলের দিকে চলে গেলো।
এদিকে আড়াইটা বেজে গেছে।ছবি সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে।গাড়িতে শুদ্ধ বারবার বলেছিলো কিছু খেয়ে নিতে, সে খায় নি।গাড়িতে উঠলে কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।নাহিদের মা আর ভাবি যখন নাশতা দিয়ে গিয়েছিলো, তখনও খায় নি সে! কিন্তু এখন পেটে ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে!
মেহমান শেষই হচ্ছে না।নাহিদের বাবা বোধহয় পুরো গ্রামের আর কাউকে বাদ রাখেন নি।সবাইকে দাওয়াত করেছে!
শুদ্ধ খালি মাংসের বাটি নিয়ে আবারও ভেতরে ঢুকেছে মাংস নিতে।এমন সময় নাহিদের মা ওর আর নাহিদের বড় ভাই নাইমের হাত চেপে একপাশে টেনে নিয়ে গেলেন।চাপা স্বরে বললেন,
—বাবা তোমার আংকেলকে বলে ভেতরে মহিলাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করো।তারপর নাহয় আরেকদফা পুরুষদের হবে।মহিলারা বেশি নেই।বেশিক্ষণ লাগবে না।
শুদ্ধ আর নাইম একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কথা বলে নিলো।নাইম বলল,
—ঠিক আছে আমি আব্বাকে বলছি।
নাহিদের বাবা অমত করলেন না।মহিলা যেহেতু বেশি নেই,তাই তাদেরই আগে খাইয়ে দেওয়া হোক।
মহিলাদের সবাইকে প্যান্ডেলে ডাকা হলো মুক্তা প্যান্ডেলে যাবে না,মৌনতা সকালে একবার খেয়েছে তাই এখন সে খাবে না।ওরা খাবে না,তাই ছবিও গেলো না।ওদের সাথে বসে রুমে রইলো।
একটু পর হৈচৈ শুনে ওরা বেরোলো।বউকে পার্লার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।প্যান্ডেলে বসানো হয়েছে।মৌনতা আর মুক্তার সাথে বউ দেখতে বেরিয়েছিলো ছবি।এমন সময় শুদ্ধ এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল।ছবি হতবুদ্ধি হয়ে বললো,
—আমাকে টেনে নিয়ে এলেন যে?
— সকাল থেকে তো না খেয়ে আছো!..খিদে পায় নি তোমার?
—আমি আগে বউ দেখবো।তারপর মুক্তা আপুদের সঙ্গে একসাথে খাবো।
—বউ তো চলে যাচ্ছে না?খাওয়া শেষ করেও দেখতে পারবে।
—কিন্তু আপুরা?
—মুক্তা এখানে বসতে পারবে না।ওর খাবার মেহেদী নিয়ে গেছে।মৌনতা এখন খাবে না।আমাদের সাথে খাবে।তখন প্রায় বিকেল হয়ে যাবে ততক্ষন তুমি না খেয়ে বসে থাকবে?
ছবি ইতস্তত করে বলল,
—আমি তাহলে মুক্তা আপুর সাথে ভেতরে বসে খাই?
শুদ্ধ ওর একটু কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
—মুক্তাকে মেহেদী খাইয়ে দেবে!
ছবি লজ্জায় থতমত খেলো।বিব্রত কন্ঠে বলল,
—ওহ!
মেহেদী খাবার ভর্তি প্লেট নিয়ে ফিরে এসেছে।ছবি জিজ্ঞেস করলো,
—আপু খায় নি?
—খেলো না তো।
ছবির প্লেটে সাদা ভাত দেওয়া হচ্ছে।উশখুশ করছে সে।ওকে উশখুশ করতে দেখে মেহেদী নিজে থেকেই বলল,
—আপনি খেয়ে নিন ভাবি।শুদ্ধর কাছে শুনলাম আপনি সকাল থেকে না খেয়ে আছেন।মুক্তা আর মৌনতাকে আমি আর নাহিদ মিলে আপনারা আসার আগে একবার খাইয়ে দিয়েছি।
ছবি কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো এমন সময় নাহিদও বলে উঠলো,
—মেহেদী ঠিকই বলেছে ভাবী।আমাদের অনেক দেরী হবে।আপনি কতক্ষন না খেয়ে বসে থাকবেন।আমরা সকালে একবার খেয়েছি।আপনি বসে পড়ুন!
বাধ্য হয়ে ছবিকে খেতে বসতে হলো।
এরপর নাহিদ একএক করে গরু,খাসি,মাছ ডিম তুলে দিলো ছবির প্লেটে।শুদ্ধ পাশ থেকে বারণ করছে,
—দিস না এত খাবার।খেতে পারবে না।নষ্ট করবে!
নাহিদ শুনলো না।প্লেটের খাবার নিয়ে ছবির বেহাল দশা!এত খাবার সে মরে গেলেও খেতে পারবে না!
ওকে খাবার দিয়ে ওরা আবার খাবার সার্ভ করতে বেরিয়ে পড়লো।
শুদ্ধ হাতে রোস্টের বাটি ,টেবিলে টেবিলে সার্ভ করছে।ছবি যেই টেবিলে বসেছে সেই টেবিলের এসে একএক করে সবাইকে দিলো।ছবির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—দিবো?
ছবির উত্তরের অপেক্ষা না করে শুদ্ধ এর প্লেটে একপিস রোস্ট তুলে দিলো।দেওয়া শেষে আর দাঁড়ালো না।
টেবিলে বসা বাকি মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব করে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে।কয়েকজন মিলে কানাকানি করছে।কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে।ইচ্ছে করেই শুদ্ধকে বারবার ডাকছে।ছবি চুপচাপ সব লক্ষ করছে আর মনে মনে রাগছে।ওরা ঝুমার মানে নাহিদের বউয়ের কাজিন!ছবির মন চাইছে খাবারের প্লেট থেকে এক এক করে খাবার তুলে ওদের মুখ বরাবর মারতে।
প্রতিটা টেবিলেই আলাদা আলাদা ফ্যান এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।এদিকের বড় স্টান্ড ফ্যানটা খটখট আওয়াজ করছে।একটুও বাতাস লাগছে না।ছবির গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।একেবারে তালপাকা গরম পড়েছে!পাশে তাকাতেই দেখলো শুদ্ধ ফ্যানের কানেকশন চেক করছে।খাবার সার্ভ করার সময় ছবির দিকে চোখ পড়ে ওর।গরমে ঘেমে এক অবস্থা।একটুপর পর বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাকের আর থুতনির ঘাম মুছছিলো।মাংসের বাটিটা মেহেদীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে এলো সে।ফ্যানের মুখটা ওদের টেবিলের দিকে সেট করে দিয়ে বলল,
—এবার খাও!
টেবিলের মেয়ে গুলো হাঁ করে তাকিয়ে আছে।ছবি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
কিন্তু একটু পর শুরু হলো আরেক ঝামেলা।ফ্যানের বাতাসের ছবির শাড়ির আঁচল খুলে মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে বারবার! এলোমেলো ভাবে একবার চুল সামলাচ্ছে তো একবার আঁচল সামলাচ্ছে।শাড়ি পরে খেতে বসে মহা মুছিবতে পড়েছে সে।শুদ্ধ ওর পাশে চেয়ার টেনে বসলো।আঁচলটা আলগোছে পিঠের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে চেপে ধরে মুড়িয়ে রাখলো।কাছে এসে না দাঁড়ালে কেউ বুঝতে পারবে না সে ছবির আঁচল সামলে রেখেছে, এমনভাবে বসেছে মনে যেন ফ্যানের হাওয়া খেতে বসেছে!ছবিকে ইশারা করে বললো,
—আমি ধরে রেখেছি।তুমি খাও!
হুট করে মৌনতা এসে হাজির।
—ছি!ছি!শুদ্ধ তুই ছবির আঁচল চেপে ধরে আছিস?..এ আমি কি দেখছি?..ইয়া আল্লাহ এমন দৃশ্য দেখার আগে আমি কেন অন্ধ হয়ে গেলাম না?
ছবির লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু শুদ্ধর মধ্যে বিন্দুমাত্র লজ্জায় আভাস নেই।মৌনতাকে ধমক দিয়ে বললো,
—খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করবি না।যা ভাগ!
—যাচ্ছি।তবে তার আগে একটা ছবি তুলে নেই।শুদ্ধ তার বউয়ের আঁচল ধরে বসে আছে এমন একটা ছবি আমাকে রাখতেই হবে।
ছবি বিষম খেলো মৌনতার কথা শুনে।ঢক-ঢক করে পানি খেলো সে!নাহিদ আর মেহেদী এদিক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো মৌনতা ওদেরকেও ডেকে এনে বলে,
—দেখ! দেখ! শুদ্ধর অবস্থা দেখ!বেশরমের মত ছবির আঁচল ধরে বসে আছে।
মেহেদী ধমক দিয়ে বলল,
—তুই তো ভাবীকে খেতেই দিচ্ছিস না।বেচারী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে!
নাহিদ বললো,
— সবকিছুতে বাঁ হাত না ঢুকালে তো ওর হবে না।এই তোর এখানে কি? সালমান ভাইয়ের মাথাটা তো শেষ করে দিয়েছিস একেবারে!বেচারা তোর জন্য গোলাপি রংয়ের পাঞ্জাবি পরে কাচুমাচু চেহারা নিয়ে ঘুরছে।যা ভাগ!
শুদ্ধ বলল,
—যা না এবার সালমান ভাইয়ের কাছে যা। কেন বিরক্ত করছিস!
মৌনতা ভিলেনের মত হেসে বললো,
—ভালোবাসা, বুঝলি না রে পাগলা এটা হলো ভালোবাসা।
ওর বলার ধরনে শুদ্ধ সহ বাকিরা সবাই হেসে ফেললো।শুদ্ধ হাসি থামিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—আমি এক থেকে দুই গুনবো এর ভেতরে তুই এখান থেকে না গেলে ডালের বাটিতে তোর মুখ চুবিয়ে দিবো বলে দিলাম।
—বউ পেয়ে গার্লফ্রেন্ডকে ভুলে গেলি?যাহ!থাক তুই তোর বউ নিয়ে আমি গেলাম।
শুদ্ধকে ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো সে,ওকে দেখতে পেয়ে সালমান ডালের বালতি রেখেই ছুটোলো ওকে ধরার জন্য।
.
.
চলবে