অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_15
.
আজ তিথির গায়ে হলুদ। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আজ তিথিকে। তিথি যা চেয়েছে তাই হচ্ছে কিন্তু তিথি আনন্দ করতে পারছে না। কেনো সে আনন্দ করতে পারছেনা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা। একটু পর পর মোবাইলের দিকে তাঁকাচ্ছে…
“” এই আপু তোকে আজ যা সুন্দর লাগছে না পুরো হলুদ পরি লাগছে। (তৃন্নি)
তিথি কিছু বলল না মনে হচ্ছে সে এখানে কিন্তু তার মনটা অন্য কোথাও রয়েছে। তৃন্নি এবার একটু ধাক্কা দিয়ে তিথিকে জিঙ্গাসা করলো…
“” এই আপু তোর কি হয়েছে??
তৃন্নির ধাক্কায় যেনো তিথির হুশ ফিরে এলো। কিছু বলতে যাবে তখনি তিথির মায়ের ডাক এলো…
“” এই তৃন্নি তিথিকে নিয়ে আয়। এখনি হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। (মা)
“” আসছি….এই আপু চল চল।(তৃন্নি)
হলুদের পর্ব শেষ হয়েছে তেমনভাবে অনুষ্ঠান না হলেও সবাই খুব আনন্দ করছে। তিথির জেদের কারনেই এইভাবে লুকিয়ে বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু তিথি কেনো যেনো কোনো কিছু মন থেকে করতে পারছেনা। কেনো পারছে না তাই ভাবছে বসে বসে। মোবাইলের দিকে তাঁকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে অয়ন একবারো কল করেনি। অয়ন বলে সে নাকি তিথি কে খুব ভালোবাসে এইকি তার ভালোবাসার নমুনা?? ওহ না অয়ন কীভাবে কল করবে তিথিকে!! তিথি নিজেই তো সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। সিম টা ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছে এখন নতুন সিম ইউস করছে আর এই নাম্বার ফ্যামিলি ম্যামবাররা ছারা আর কেউই জানে না। তিথি কি যেনো একটা ভেবে মোবাইল টা হাতে নিলো। কিছু একটা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না পাবে কীভাবে অয়নের নাম্বার তো আর সে সেভ করে রাখেনি। হতাশ হয়ে মোবাইল টা রেখে দিলো তিথি রাত পেরুলে কাল তিথির বিয়ে। এখন সে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না অয়নকে খুব মনে পরছে। বুকের ভিতর শুণ্যতা অনুভব করছে।
.
অয়নের থেকে দূরে আসার পর তিথি এখন বুঝতে পারছে সে আসলে অয়ন কে ভালোবেসে ফেলেছে। এতো দিন কেনো বুঝতে পারলো না সেইটা ভেবে তিথির নিজের উপরেই খুব রাগ হচ্ছে। আর কিছুক্ষন পর বিয়ে হয়ে যাবে এখন কি করবে। নিজের দোষে আজ এতোকিছু হচ্ছে। না কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবেনা তিথি। তিথি ভাবতে ভাবতে দড়জার দিকে এগিয়ে গেলো ঠিক তখনি….
“” তিথি মা দেখতো এই পাঞ্জাবিটা কেমন? আমার মেয়ের বিয়েতে আজ এই পাঞ্জাবিটা পরবো। (বাবা)
“” সুন্দর আব্বু ।
কি করতে যাচ্ছিলো তিথি সবাই কতো খুশি এই বিয়েটা না করে কিনা তিথি পালিয়ে যাচ্ছিলো। তিথি বাবার দিকে একবার তাঁকালো চোখে মুখে কতো খুশি। তিথির বাবা তিথির মাথায় হাত রেখে বলল…
“” মা রে আমি অনেক খুশি তুই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করছিস। ( বাবা)
একটু হেসে চলে গেলো তিথির বাবা। তিথির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আচ্ছা অয়ন এখনো আসছে না কেনো? অয়ন তো তিথিকে নিয়ে যেতে পারে এখানে এসে বলতে পারে তিথি আমার বউ। আমার বউকে অন্য কোথাও বিয়ে কেনো দিচ্ছেন। অয়ন তুমি কোথয় তারাতারি আসো তোমার তিথির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আবার তিথির মনে পরলো অয়ন এখানে কীভাবে আসবে অয়ন তো জানেই না তিথি কোথায় আছে…নিজেই নিজের চুল ছিরতে ইচ্ছে করছে কেনো সে বুঝলো না আগে। অয়নকে সে এতোটা ভালোবাসে। কাঁদছে তিথি এখন এই কান্না করা ছারা কিছুই করার নেই তিথির….
“” এই তিথি মা তোকে সাজাতে লোক এসে গে…(বড় আম্মু)
তিথির কান্না দেখে থমকে গেলো…
“” তিথি কি হয়েছে????
তিথি বড় আম্মুকে জরিয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করে দিলো। সাথে বড় আম্মুও কেঁদে দিলো। কিছুক্ষন কাঁদার পর তিথি কান্না থামিয়ে জিঙ্গাসা করলো…
“” তুমি কাঁদো কেন?
“” তুই কাঁদছিস তাই। তুই কাঁদছিস কেনো???
কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা তিথি…
“” ত..ত..তোমাদের ছেরে চলে যাবো তো তাই।
“” থাক কাঁদিসনা মা নে সেজে নে এখন বর এসে যাবে। বর ঢাকা থেকে আসবে তাই তারাতারি আসছে।
বড় আম্মু চলে গেলো পার্লারের লোক তিথিকে সাজানো শুরু করে দিলো। তিথির সেদিনের কথা মনে পরে গেলো। সেদিনও তিথিকে বউর মতোই সাজানো হয়েছিলো ঠিক অয়ন যেমনটা চেয়েছিলো সেভাবেই সাজিয়ে ছিলো।
“” আপু তোকে এতো সুন্দর লাগছে আজ দুলাভাই তো মাথা ঘুরে পরে যাবে। (তৃন্নি)
যার দেখার কথা সেই তো দেখবে না তাই যতো সুন্দর করেই সাজানো হোকনা কেনো তাতে তিথির কিছু যায় আসেনা।
“” সবাই কোথায় রে?
“” সবাই খুব ব্যাস্ত এক্ষনি বর এসে যাবে।
বলতে বলতেই হৈচৈ শুনা গেলো বর এসে গেছে তৃন্নিও ছুটে গেলো…..
.
বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলো। তিথি এখন শশুর বাড়িতে আছে রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। কবুল বলতে চায়নি তিথি কিন্তু যখন কিছুতেই তিথি কবুল বলছিলো না তখন তিথির মা এসে বলল তিথি কবুল বলছে না বলে নাকি সবাই খারাপ মন্তব্য করছে তা শুনে তিথির বাবা অসুস্থ হয়ে পরছেন। তখন বাধ্য হয়ে কবুল বলে ছিলো আসার সময় খুব কেঁদেছিলো এক পরিবারকে ছেরে চলে যাচ্ছে দুই যাকে ভালোবাসে তাকে হারিয়ে ফেলল নিজের দোষে। কিন্তু তিথি এই বিয়ে মানে না সে ঠিক করেছে লোকটা আসলে তাকে সব খুলে বলবে তার আগে বিয়ে হয়েছে সে যেনো তিথিকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।
কিন্তু লোকটা আসছে না কেনো? আচ্ছা লোকটা যদি তিথিকে ডিভোর্স না দেয়? আজ যদি তিথির কাছে অধিকার চায় না কিছুতেই না তিথির উপর শুধু অয়নের অধিকার আছে। আগে লোকটা আসুক তাকে সবটা বুঝিয়ে বলবে তারপর না মানলে সুইসাইড করবে। তিথি পিছু ঘুরতেই দেখলো লোকটা রুমের দড়জা লক করছে। তিথির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে এখন কি হবে তার সাথে ভেবে……
চলবে……….