অসুস্থ_ভালোবাসা পার্ট_১৬

0
5831

অসুস্থ_ভালোবাসা
লেখিকা: তিয়ানা তিথি
পার্ট_16
.
“” অয়ন তুমি???? তুমি এসেছো আমাকে নিতে??? আমি জানতাম তুমি আসবে আমার কাছে।
তিথি কথাগুলো বলেই অয়নকে জরিয়ে ধরলো কিছুক্ষন পর নিজে থেকে ছেরে দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো….
“” স্যরি অয়ন। আমি বুঝতেই পারিনি কখন তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। আমি যখন তোমার থেকে দূরে সরে আসছি তখন একটু একটু করে ফিল করছিলাম তুমি আমার কতোটা জুরে আছো।
“”…………..
“” জানো যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তখন আর কিছুই করার ছিল না। অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো একবার পালাতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে আর পারিনি। বিয়েটা আমাকে করতেই হলো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এই বিয়ে মানি না। আমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে তোমার সাথে তাইনা বলো তাই এই বিয়ের কোনো ভেলুই নেই।
“”…………
“” অয়ন শুনো আমাদের হাতে একদম সময় নেই কিন্তু এখনি পালাতে হবে ওই লোকটা আসার আগে। তোমার তো সন্ত্রাসী দলের অনেক লোক আছে তোমার তো অনেক পাওয়ার তাই না যখন এই লোকটা আমাদের মাঝে আসতে চাইবে তখন তুমি কিছু একটা করবে যেনো ভয় পেয়ে আর না আসে তাহলেই হবে।
“” ……….
“” অয়ন চলো আর এক মূহুর্ত এখানে দাঁড়ানো যাবে না।
তিথি অয়নের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছে কিন্তু অয়নকে বিন্দু পরিমাণ হেলাতে পারলো না জায়গা থেকে। তিথি আবার পিছু ফিরে বলল…
“” অয়ন দাঁড়িয়ে রইলে কেনো? চলো???
“” ………….
“” অয়ন তুমি কি চাও ওই লোকটা এসে আমাকে তোমার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দিক?
অয়ন কোনো কথা বলল না তিথির হাতটা ছারিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে হাতের ঘড়িটা খুলছে।
“” অয়ন কি শুরু করেছো অযথা সময় নষ্ট করছো।
অয়নের পরনে থাকা সাদা পাঞ্জাবীটা খুলে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো খুব ক্লান্ত আজ অয়ন কথা বলার শক্তিটুকুও যেনো নেই। অয়ন ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে একটা টি-শার্ট পরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। তিথি অবাক হয়ে অয়নের সামনে এসে আবার বলল…..
“” অয়ন তুমি এখানে শুয়ে পরলে কেনো? তুমি কি বাসরটা এই লোকটার বাড়িতেই করবে বলে ঠিক করলে নাকি? এইটা যদি ভেবে থাকো তাহলে আমি বলব ভুল করছো তুমি যতো বড় সন্ত্রাসীই হও না কেনো যতো পাওয়ারই থাকনা কেনো এখানে থাকাটা আমাদের জন্য বিপদজনক। চলো তো….
তিথি অয়নের হাত ধরতেই এইবার অয়ন এক ঝাটকায় সরিয়ে নিলো হাত মনে হলো তিথির হাত ধরায় অয়নের হাতে ফসকা পরে যাচ্ছে…
“” অয়ন এমন করছো কেনো?? চলো এই বাড়ি থেকে।
এইবার অয়ন মুখ খুলল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়নের চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে তিথি অয়নের চোখের দিকে তাঁকিয়ে আঁতকে উঠলো। অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে বলল….
“” এই বাড়িটা আমার তাই বাড়ি ছেরে চলে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
“” তোমার বাড়ি!!! তুমি কি আমাকে এখানে তুলে এনেছো??? আর ওই লোকটাকে কি করেছো??
“” তিথি তুমি কি এখনো কিছুই বুঝতে পারছো না??
“” কি বুঝবো??? কি বুঝার কথা বলছো তুমি??
“” বিয়েটা তোমার আমার সাথে হয়েছে। এই নিয়ে তোমাকে আমি দুু-দুবার বিয়ে করলাম।
“” সত্যি বলছো????????
অয়নের মুখে এই কথা শুনার পর তিথির খুশি আর কে দেখে খুশিতে যেনো এবার পাগলই হয়ে যাবে। তিথি দৌড়ে এসে অয়নকে জরিয়ে ধরতেই অয়ন তিথিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল…
“” তোমাকে আমি আমার এই বুকে জায়গা দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি সেই মর্যাদা রাখতে পারোনি। তোমাকে আমি আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসে ছিলাম। আমার শূণ্য জীবনে তোমাকে দেখে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিলো কিন্তু তুমি কি করেছো তিথি??
তিথির যেনো সবটাই গুলিয়ে যাচ্ছে কি শুনছে সে এইসব???? সব সত্যি শুনছে তো???
“” আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে চাইলাম আর তুমি আমাকে কিছু না জেনে সন্ত্রাসী বলে দূরে সরিয়ে দিলে। বার বার অপমান করলে। একবার আমার কাছে জানতে চাইতে পারতে আমি কেমন তা না করে তুমি তোমার মনগরা আজব সব উদ্ভট চিন্তা করে নিলে। সেদিন কিছু সন্ত্রাসী চাঁদা নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা করছিলো এক পর্যায় আমাকে পেটে ছুরি মেরে দেয়। এইসব কারনেই সবসময় জনি আর ওর লোকজন আমার সাথে থাকে আমাকে প্রটেক করার জন্য। কিন্তু সেদিন আমি একা থাকায় ওরা সেই সুযোগ বুঝে আমার উপর হামলা করে বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিলো না কিন্তু হঠাৎ তুমি এলে সবকিছু পাল্টে দিলে বেঁচে থাকার নতুন প্ররণা খুঁজে পেলাম।
অয়ন থামলো হাপিয়ে গেছে কথাগুলো বলতে বলতে বুকের ভিতর যেনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ তিথি সবথেকে বড় কষ্টটা দিয়েছে অয়ন কে….
“” স্যরি অয়ন। আমার ভুল হয়ে গেছে। (কেঁদে কেঁদে)
“” কীসের স্যরি??? সবকিছুতে স্যরি বললেই সবঠিক হয়ে যায়না তিথি। আমি জানো তো আজকেও অনেক আশা করেছিলাম ভেবেছিলাম তুমি কবুল বলবে না। কিন্তু যখন শুনলাম সবাই হৈচৈ করছে কনে কবুল বলেছে বলে তখন যেনো মূহুর্তেই সব আমার কাছে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে সেখানে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম।
“” আমি…..
থামিয়ে দিয়ে অয়ন আবার বলতে লাগলো…
“” কীভাবে পারলে তিথি অন্য কারো উদ্দেশ্যে কবুল বলতে??? একবারো আমার কথা মনে হয়নি??? আমার ভালোবাসার কথা মনেহয়নি?? আমাদের বিয়ের কথা মনে হয়নি???
তিথি কিছুই বলতে পারছেনা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। সে আজ বুঝতে পারছে সে কতো বড় ভুল করেছে।
“” চুপ করে আছো কেনো?? কীভাবে পারলে বলছো না কেনো??? আচ্ছা তোমার কি একবারো আমার ভালোবাসার স্পর্শের কথাও মনে পরেনি?? তোমার ওই ঠোটে তো এখনো আমার ঠোটের স্বাদ লেগে রয়েছে সেই কথা মনে পরে নাই তোমার?? ছিঃ তিথি ছিঃ আজ আমারই ঘৃণা হচ্ছে যে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।
তিথি দুই কানে হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল..
“” প্লিজ অয়ন চুপ করো আমি আর শুনতে পারছিনা।
অয়ন বেলকনিতে চলে গেলো আর তিথির সামনে দাঁড়ালো না। কারন তিথির কান্না সহ্য করতে পারবে না অয়ন নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসেছে কিনা। তিথি ফ্লোরে বসে বেশ কিছুক্ষন কেঁদে দু হাতে চোখের জল মুছে বেলকনিতে গেলো। অয়ন গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাতের অন্ধকার দেখছে।
“” অয়ন আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও।
অয়ন তিথির দিকে ঘুরে দাঁড়ালো শান্ত কন্ঠে বলল…
“” সেইটা আর সম্ভব না তুমি যেই মূহর্তে আজ কবুল বলেছো ঠিক সেই মূহুর্তে আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছো চিরদিনের জন্য। আমি আর তোমাকে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। তুমি তোমার মতো করে থাকো আমি আমার মতো।
অয়ন তিথিকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিলেই তিথি অয়নের হাত ধরলো…
“” আমি তোমাকে ভালোবাসি অয়ন। অনেক বেশিই ভালোবাসি।
তিথির মুখে এইভাবে ভালোবাসি কথাটা শুনে অয়নের বুকে অজানা ব্যাঁথা অনুভব হলো। এতোদিন যেই কথাটা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো আজ সেই কথাটা শুনেও অয়ন তিথিকে কাছে টেনে নিতে পারলো না। বার বার একটা কথাই মনে পরে যাচ্ছে তিথি অন্য কারো উদ্দেশ্যে কবুল বলেছে ওদের বিয়েটা কে অস্বীকার করেছে। অয়ন হাতটা ছারিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো জানে তার আজ ঘুম আসবেনা। তবুও তিথিকে দেখানোর জন্যই মিথ্যে ঘুমের ভান ধরলো অয়ন….
তিথি বেলকনির দড়জার পাশেই বসে পরলো আজ যেনো চোখের পানিও বাধ মানছে না এতো ভালোবাসা পেয়ে হারানোর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। এতো দিন ভালোবাসাটা বুঝতে চায়নি আর আজ যখন নিজে বুঝতে পারলো অয়নকে সে কতোটা ভালোবাসে তখন একটা ভুলের কারনে সব তছনছ হয়ে গেলো। অয়নকে ভালোবেসে অয়নের এতোটা কাছে থেকেও সে আজ অনেকটা দূরে। সারারাত এখানে বসে বসেই কেঁদে গেলো তিথি।
.
অয়ন শেষ রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলো নিজেই জানে না। ঘুম ভাঙ্গতেই ঘড়ি দেখলো ৮ টা বাজে। তিথির কথা মনে পরতেই বেলকনির দিকে তাঁকালো ওখানেই বসে আছে মেয়েটা সারারায় ঘুমায়নি বোধয়। অয়ন বিছানা ছেরে উঠে দাঁড়ালো তিথির দিকে আরেকবার তাঁকালো চোখ লাল হয়ে আছে মুখটা শুকিয়ে গেছে অয়ন মনে মনে বলল এইসবের জন্য তুমিই দায়ী। অয়ন চলে গেলো রেডি হতে অফিসে যেতে হবে বাসায় থাকা যাবে না তিথিকে এড়িয়ে যেতে চায় অয়ন।
অয়ন রেডি হয়ে তিথির সামনে এসে দাঁড়ালো। তিথি অয়নের দিকে তাঁকালো ভাবছে হয়তো অয়নের রাগ কমেছে এখন তিথিকে কাছে টেনে নিবে।
“” এভাবে বসে থেকে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছো আমি তোমার উপর অত্যাচার করি?? তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অফিসে যাচ্ছি।
“” আমি একা থাকবো বাড়িতে??
অয়ন আর কিছু বলল না চলে গেলো । তিথি আবারো কাঁদতে শুরু করলো অয়নের এভাবে ইগনোর করা দেখে। একটা ভুলের শাস্তি অয়ন ওরে এভাবে দিচ্ছে ভাবতেই যেনো বুক ফেটে কান্না আসছে তিথির।
.
অয়ন যাওয়ার সময় শান্তা কে বলে গেলো তিথির দিকে খেয়াল রাখতে আর ল্যান্ড লাইনে ফোন করলে যেনো তিথি কি করছে সেই আপডেট অয়ন কে জানায় আর এইসব যেনো তিথি না জানে। শান্তা অয়নের চলে যাওয়ার পর তিথির কাছে আসলো তিথির পাশে ফ্লোরে বসে গালে হাত দিয়ে তিথিকে দেখতে লাগলো। তিথি হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে শান্তা কে হঠাৎ দেখতে পেয়ে প্রথমে ভয় পেয়ে গেলো। তারপর দেখলো একটা ১৪-১৫ বয়সী মেয়ে বসে আছে তারপাশে। তিথি জিঙ্গাসা ভরা চোখে তাঁকালো…
“” ম্যাডাম আপনে তো অনেক সুন্দরি। আপনেরেই কি কালকে স্যার বিয়া কইরা নিয়াসছে?
কান্না থামিয়ে তিথি বলল…
“” হুমম…তুমি কে?
“” আমি শান্তা এই বাড়িতেই থাকি কাজ করি।
“” তুমি কি কাজ করো? তুমি কাজ করতে পারো? তুমি তো অনেক ছোট ।
“” কি যে কন ম্যাডাম আমি গ্রামের মাইয়া কি পারিনা হেইডা কন।
“” লেখাপড়া করো না?
“” না । স্যারের কাছে আসার পর ভর্তি করাইতে চাইছিলো কিন্তু আমি হইনাই আমার পড়ালেখা ভালা লাগে না। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছিলাম তারপর আর পরি নাই। আমার কাজ করতেই ভালা লাগে।
“” এখানে আসলা কীভাবে?
“” সৎ মা ঘরে রাখতে চায়না মারে ধইরা পরে একদিন আব্বায় এই বাড়ির দাড়োয়ানরে কইলো হে জানি আমার লাইগা ঢাকায় একটা কাজ দেখে পরে হে আমারে স্যারের কাছে নিয়াইলো। স্যার অনেক ভালা মানুষ আমারে থাকতে দিছে।
“” ওহ…
“” আচ্ছা ম্যাডাম আপনে কাঁদাতাছেন কেন?
তিথি এই কথা শুনে আবার জোরে শব্দ করে কান্না করে দিলো। আর শান্তা আবার গালে হাত দিয়ে তিথির কান্না দেখতে লাগলো। কিছুক্ষন কাঁদার পর বলল…
“” অয়ন আমাকে ভালোবাসে না।
“” স্যার আপনেরে ভালা না বাসলে কি বিয়া করতো?
“” ঠিক বলছো তো তুমি। তাহলে অয়ন আমাকে ভালোবাসে?
“” হো ম্যাডাম স্যার একদিন বলছিলো আপনার কথা।
“” কি বলেছিলো???
“” বলছিলো শান্তা আমি বিয়ে করে তিথিকে নিয়ে আসলে তুই সবসময় তিথির খেয়াল রাখিস।
“” তুমি নিজেই তো বাচ্চা একটা মেয়ে তুমি আমার খেয়াল রাখবা কীভাবে?
“” আমি বাচ্চা হইলেও আমি অনেক বুঝি আমার অনেক বুদ্ধি আছে। এখন আপনে কন তো কি হইছে?
“” তোমার স্যার আমাকে বলছে আমাকে আর নাকি ভালোবাসে না।
“” স্যার কি রাগ করছে আপনার উপর?
“” হুমমম আমি একটা ভুল করছি তাই।
“” এর জন্যই স্যার ওই কথা বলছে আপনারে। আপনে লাইগা পরেন এইভাবে বইসা না থাইকা। স্যার রে বুঝান আপনে স্যাররে অনেক ভালাবাসেন।
“” তুমি জানলা কীভাবে এইসব?
“” সিনেমায় দেখছি ম্যাডাম। আমিও বিয়ার পর আমার জামাই রাগ করলে তার রাগ ভাঙ্গামু তারে বুঝামু আমি তারে কত্ত ভালাবাসি।
“” সত্যি বলছো??
“” আপনেরে মিথ্যা কেন কমু?
“” আচ্ছা তুমি যাও নিচে। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি আজকে আমি রান্না করবো।
শান্তা নিচে চলে গেলো আর তিথি চলল ফ্রেস হতে আজ নিজে হাতে অয়নের সব পছন্দের রান্না করে অয়নকে চমকে দিবে ভেবেই চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো তিথির ।
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here