অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_১৮

0
153

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৮

রাতের বৃষ্টি যখন থামলো তখন প্রায় সকাল। সকালের কোমল রোদ বারান্দা থেকে ধরাধরি করে নেমে এসেছে মেঝেময়। পর্দা উড়ছে মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাসে। রাতটা শুভ্র-তুলির ভীষণ ভালো কেটেছে। গত রাতটা দুজনের জন্যেই স্বপ্নের রাত ছিলো। রাতে দেরি করে ঘুমিয়েও দুজনের ঘুমই পূর্ণ। শুভ্রর ঘুমটাই বরাবর তুলির আগে ভাঙলো। শুভ্র চোখ খুলে; দেখে তুলি বিড়ালছানার ন্যায় শুভ্রকে কোলবালিশের ন্যায় জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। শুভ্র মৃদু হাসলো। বুকটাতে যে অদ্ভুত এক শান্তি পাচ্ছে সে; বেশ বুঝতে পারছে। শুভ্র হাত বাড়িয়ে কম্বল দিয়ে তুলির উদোম পিঠ ঢেকে দিলো। তুলি আরাম পেল যেন। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে। শুভ্রর রক্ত পুনরায় গরম হচ্ছে। আবার তুলিকে নিজের সঙ্গে রাতের ন্যায় চেপে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে। শুভ্র নিজেকে সামলালো তবুও। মৃদু হেসে তুলিকে বালিশে শুইয়ে তুলির বুকে মাথা রাখলো। তুলির ঘুমের মধ্যেই শুভ্রর চুলে হাত রাখে। শুভ্র ফিসফিস করে ডাকে;

‘তু-লি, তু-লি! উঠবে না আজ?’

ঘুমের ঘোরে ওমন আদুরে ডাক শুনে চোখ কুচকায় তুলি। কে ডাকছে তাকে এত সকালে? বুকের মধ্যে কিছু একটা অনুভব করতে পারছে তুলি। শক্ত কোনো কিছু। তুলির শ্বাস না নিতে পেরে ধীরে ধীরে চোখ খুললো শুভ্র তখন তুলির বুক থেকে মুখ তুলে তুলির চোখের দিকে চাইলো। দুজনের চোখে চোখে মিলন ঘটলো। শুভ্র হালকা হাসল। তুলির কপালে চুমু খেয়ে ফিচেল কণ্ঠে প্রশ্ন করল,

‘তুলি,ঘুম কেমন হলো আজ?’

বলে ডান চোখটা টিপে দিল শুভ্র। ধীরে ধীরে তুলির মনে পড়তে লাগল রাতের কথা। কী অসম্ভব সুন্দর এক রাত ছিল গতকাল। শুভ্র প্রথমে নিজেকে সামলাতে না পেরে এগ্রেসিভ আচরণ করছিল। পরবর্তীতে হঠাৎ নিজে নিজেই বুঝতে পারলো, তুলির কষ্ট হচ্ছে। পরবর্তীতে সে হয়ে যায় শান্ত। স্পর্শও হয়ে আসে নমনীয়। ওই চরম আবেগের মুহূর্তেও তুলির সুবিধা অসুবিধার কথা শুভ্রর মাথায় ছিল। তুলি ভাবে; হয়তো জীবনে কোন এক পুণ্য করেছিল সে। যার দরুন তার ভাগ্যে এমন এক শুভ্র জুটেছে। শুভ্র তুলির কপালে পূনরাহ ঠোঁট বসালে ধ্যান ফেরে ওর। তুলি লাজুক হেসে শুভ্রকে এড়িয়ে পাশ ফিরে গেলো। কম্বলটা বুকের সঙ্গে ভালো করে পেঁচিয়ে ওদিক ফিরে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। শুভ্র তুলির লজ্জা দেখে হেসে ফেলল শব্দ করে। তুলির সফ্ট কাঁধে মুখ রাখল অবলীলায়। আয়োজন করে আরও লজ্জা দিতে বললো,

‘তুমি তো দেখি একরাতেই আমাকে পাগল করে দিয়েছ, তুলি। লাস্ট নাইট ওয়াজ দি বেস্ট, ইউ নো?’

বলে শুভ্র তুলির গালে হালকা করে ঠোঁট ছুয়ালো। তুলি লাজুক হাসল। লজ্জায় শুভ্রকে কনুই দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে শুভ্র যেন আরও শক্ত করে ঝেঁকে শোয়। তুলি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। তারপর ধিমে আওয়াজে বলে;

‘আমার জন্যেও।’

শুভ্রর কথার প্রেক্ষিতে তুলির এই উত্তর শুনে একদম অবাক হয়ে যায় শুভ্র। ব্যস্ত ভঙ্গিতে তুলিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো। তুলি তখন চোখ প্রায় খিচে শুয়ে আছে। শুভ্রর চোখের দিকে চোখ মেলানোর সাহস আর নেই তুলির মধ্যে।ছেলেটা এমন করে তাকায়; যেন চোখ দিয়েই তুলিকে ছোয়, গা ভাসায়। শুভ্র তুলির খিঁচে রাখা চোখে চুমু বসায়।বড্ড ছটফটে গলায় বললো,

‘সত্যি? তাহলে হয়ে যাক আরেকবার? হোয়াটস সে?’

তুলি বোকা বনে গেলো। শুভ্র এটা বলেছে, তার বিশ্বাসই হলো না। তারপর মনে হলো; কাল রাত থেকে লাজুক শুভ্র বদলে অসভ্য শুভ্র নামক নতুন শুভ্রর জম্ম হয়েছে। সে এমন নির্লজ্জ কথা বলে, বলবেই। তুলি চোখ পাকাল শুভ্রর দিকে। বললো,

‘একদম নয়। আপনি জানেন; গতকাল দুপুর অব্দি আমি জানতাম আমি একজন লাজুক ছেলে। মনেমনে একটু খুশিও ছিলাম সেটা ভেবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পেরুতেই আপনার অসভ্য রূপ বেরিয়ে এসেছে। আমার ঠোঁট দেখুন, অবস্থা নেই। এমনটা আপনার দ্বারা হবে, আই ডিন্ট নো দ্যাট।’

তুলি ঠোঁটটা আঙুল দিয়ে ইশারা করে শুভ্রকে দেখাল। শুভ্র তুলির ঠোঁটের দিকে বড্ড কাতর চোখে তাকাল। সত্যিই ঠোঁটটার একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলেছে সে। শুভ্র এতেই নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করেছে। তুলি হার্ট হয়েছে; ভাবলেই সে ভেতরে ভেতরে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে। শুভ্র বুড়ো আঙুল দিয়ে তুলির ঠোঁটে হালকা করে স্লাইড করে কাতর গলায় বললো,

‘সরি, আসলে কখন এভাবে আঘাত পরে গেলো- আমি বুঝতে পারিনি।।’

তুলি ভ্রু নাচলো। শুভ্র আবারো বললো;

‘সত্যি সরি আমি। আর এমন হবে না, আই সোয়ার।’

শুভ্র কণ্ঠমনিতে হাত দিয়ে চোখ বেটে প্রমিজ করল। তুলি এবার ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগল। আহাম্মক একটা। এই কাজের জন্যে অন্য স্বামীরা আরও দুষ্ট দুষ্টু কথা শোনায়। সেখানে ইনি সরি বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলছেন। এই লোককে নিয়ে কই যাবে তুলি?

শুভ্র ভাবছে, তুলি কষ্ট পেয়েছে হয়তো। তাই শুভ্রর ভুল ভাঙাতে তুলি এক কাজ করল। শুভ্রর গালে ডান হাতটা তুলে হালকা করে স্পর্শ করল প্রথমে। শুভ্র একবার গাল স্পর্শ করা তুলির হাতের দিকে চেয়ে আবারো তুলির দিকে তাকাল। তুলি শুভ্র ঠোঁটের দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিলে। শুভ্রর ঠোটটা তুলিকে বারবার-বারবার এত আকৃষ্ট করে কেন। দেখলেই ছুতে ইচ্ছে করে তুলির। মেয়ে হয়ে যেচে বলতেও পারেনা। তুলি থামল কিছুসময়ের জন্যে। তারপর কম্বলটা ভালো করে বাম হাতে বুকের সঙ্গে পেঁচিয়ে উঁচু হয়ে নিজেই শুভ্রর ঠোঁটে ঠোঁট বসায়। শুভ্র বুঝে যায়, তুলি হার্ট হয়নি, একদমই না। ধীরে ধীরে দুজন ভেসে যায় এক অদম্য সুখে। খানিক পর তুলি সরে আসে। শুভ্র তখন থম হয়ে চেয়ে আছে তুলির দিকে। তুলি গায়ে শুভ্রর একটা শার্ট জড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যায়। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করার আগে থম বনে বসে ঘাকা শুভ্রর দিকে চেয়ে বলে;

‘ইউ শুড গ্রো আপ, ম্যাই হাসবেন্ড।’

শুভ্রর ধ্যান ভাঙ্গে। অবাক হয়ে এক হাত বাড়িয়ে তুলিকে ধরার চেষ্টা করে চেঁচায়;

‘এই কী বল-‘

শুভ্র বাকি কথা শেষ করতে পারেনা, তার আগেই তুলি ঠাস করে দরজা বন্ধ করে ফেলে। শুভ্র কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে তারপর মাথা চুলকে শব্দ করে হেসে ফেলে।
______________
সকালের খাবার খাওয়ার সময় দেখা গেলো শুভম আবারও মহুদের সাথে একসঙ্গে খাবার খেতে বসেছে সেদিনের মত। এবং বসেই রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। শুভ্র তখন মাত্রই তুলিকে নিয়ে ঢুকেছে রেস্তোরাঁয়। শুভমকে দেখে শুভ্রর ফুরফুরে মেজাজ মুহূর্তেও খিঁচড়ে গেলো। শুভ্রর যে হাত তুলির ডান হাতকে সফ্টলি ধরে ছিল, সেই হাতের স্পর্শ শক্ত হয়ে গেলো মুহূর্তেই। তুলি হাতের মধ্যে শক্ত চাপ উপলব্ধি করে শুভ্রর দিকে চাইল। ভ্রু উচিয়ে প্রশ্ন করল,

‘কী হয়েছে? কোন সমস্যা?’

শুভ্র কথা বলল না। শুভ্রর রক্ত চোখে চাওনি অনুসরন করে তুলি সামনে তাকাল। শুভমকে মহুদের সাথে দেখতে পেয়ে তুলি প্রথমে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্রর মুখটা একদম কালো হয়ে গেছে। রাগে একদম ফুঁসছে শুধু। শুভ্রর এমন করুণ অবস্থা দেখে তুলি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হেসে ফেলল।
শুভ্র তুলির হাতটা ধরে সেভাবেই এগিয়ে গেলো। মহু আরিফদের সামনে যেতেই তুলি জোর করে শুভ্রর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। স্যারদের সামনে ভদ্রতা বজায় রাখা উচিত। শুভ্র চেয়ারে বসল, তুলিও বসল শুভ্রর পাশে। মহু তুলির দিকে একপল তাকাল। কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছিলো যেমন; পরপরই তুলিকে আপাদমস্তক দেখে কিছু একটা ভেবে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিঃশব্দে হাসল। তারপর আবার মুখ স্বাভাবিক করে সবার সঙ্গে গল্পে মন দিল। তুলিকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই, যা ভেবেছে তাই ঘটেছে।

শুভম শুভ্রকে দেখে হালকা হেসে সাধারণ আলাপচারিতা করতে চাইল। দেখা গেলো, শুভ্র টুকটাক উত্তর দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইছে শুভমকে। শুভম হয়তো বুঝতে পারলো। দেখা গেল; সেও আর কথা বাড়াল না। মৃদু হাসল শুধু। তাদের গল্পের মধ্যে; খানিক পর শাড়ি পরা অসম্ভব সুম্দর এক রমণী রেস্তোরাঁয় ঢুকলো। ব্যাগটা দ্রুতহাতে টেবিলে রেখে শুভমের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো;

‘সরি, সরি। বড্ড দেরি হয়ে গেলো, তাইনা? এগেইন সরি, হুঁ?’

শুভ্র এই মেয়েটার কথার ধরন দেখে কিছু একটা সন্দেহ করছে। এমন ভাবে মেয়েটা শুভমের সঙ্গে কথা বলছে যেন শুভমের খুব কাছের কেউ। শুভম হালকা হেসে বলল,

‘সমস্যা নেই। বসো। তোদের পরিচিয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে মিসেস শুভম তালুকদার; ইভা। ইভা এরা হচ্ছে আমার এমবিবিএস লাইফের ফ্রেন্স সার্কেল।’

শুভ্র চোখ বড়বড় করে তাকাল শুভমের দিকে। শুভম শুভ্রর এমন চাওনি দেখে শুভ্র দিকে চেয়ে হেসে ফেলল। ইভা সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করল। ওর কথাবার্তা বেশ মার্জিত এবং গোছানো ছিল। তাছাড়া বড্ড মিশুকেও। শুভ্রর এখনো তাদের দিকে চেয়ে হিসাব মিলাচ্ছে। মেয়েটা শুভমের স্ত্রী? একপর্যায়ে শুভমই সকল হিসাবের খাতা চুকালো। শুভ্রর উদ্দেশ্যে বললো,

‘শুভ্র, ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যা প্ল্যান, ডিজাইনড বাই আওয়ার মহু। অ্যা প্ল্যান টু মেইক ইউ জেলাস এবাইউট তুলি। আমার বউ আছে ব্যাটা, বাইরে চোখ দিকে চোখ তু লে নিবে একদম। আমি জাস্ট অভিনয় করেছি, তুলি তোদের ভালোর জন্যে জাস্ট আমার সঙ্গে তাল দিয়েছে। এন্ড অ্যাজ পার ম্যাই অভজারবেন্স, আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল। তোদের একসাথে দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে আমার।’

#চলবে
শুভম এবং ইভাকে নিয়ে কোন সারপ্রাইজ চান? জানতে চাই❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here