অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_২১

0
132

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২১

শুভ্র এবার ভয় পেয়ে যায়। তুলি শুভ্রর উপর রাগ করেছে। কদিন হয়েছে তাদের বিয়ের; এরমধ্যে শুভ্র তুলিকে কাদিয়ে ফেলেছে? শুভ্র ভীষণ অপরাধবোধে ভুগে। তুলির মুখটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে চোখের জল মুছে ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করে,

‘তুলি, তুমি কাঁদছো? কেনো? আমি কিছু করেছি?’

তুলি উত্তর দেয় না। শুভ্র এবার অধৈর্য্য হয়ে ধমকে উঠে,

‘তুলি? অ্যাই মেয়ে, তাকাও আমার দিকে। লুক অ্যাট মি।’

তুলি চায় না। সরাসরি অগ্রাহ্য করে শুভ্রকে। শুভ্র হাফ ছেড়ে তুলির নাছোড়বান্দার মতো কাজটুকু দেখে। তুলি অন্যপাশে চেয়ে শুয়ে আছে। নাইবা শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে। শুভ্র অনেক চেষ্টা করল, তুলির সঙ্গে কথা বলার। কিম্তু তুলি, ও কোন সুযোগই দিল না। শুভ্র একটাসময় রেগে গেল। রেগে বিছানা থেকে উঠে টেবিলে জোরে ঘু ষি মারল। মুহূর্তেই তার হাত লাল টকটকে হয়ে এলো। তুলি ভদ্র শুভ্রর এমন রাগান্বিত রূপ দেখে ভড়কে গেল। শুভ্র একমুহূর্ত অপেক্ষা করলো না। হাত দিয়ে টেনে তুলিকে বিছানা থেকে উঠিয়ে নিজের মুখোমুখি দাড় করাল। তুলির মুখটা ধরে নিজের মুখের দিকে ফিরিয়ে তীক্ষ কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

‘তুলি? আমাকে তোমার আর ভালো লাগছে না? আমাদের সাজেকের ওই দিনগুলো কী বাই চান্স তুমি ভুলতে চাইছ?’

তুলি চোখে চোখ রাখলো। তারপর সোজাসাপ্টা জবাব দিলো,

‘হ্যাঁ।’

‘হোয়াট?’

শুভ্র একদম বোকা হয়ে গেলো। বিস্ময় নিয়ে বললো,

‘আমার কাছে আসার তাড়া সবচেয়ে বেশি তোমার ছিলো তুলি।’

ফুটন্ত তেলে পানি ছাড়লে যেমন ছ্যাত করে উঠে, শুভ্রর এই কথা এভাবেই তুলির গায়ে ছ্যাত করে উঠল। তুলি তেতে উঠে বললো,

‘তো? এখন কী করবেন? ফাঁ সিতে ঝুলাবেন আমায়? না বলবেন, তোমাকে দিয়ে আমার শেষ। নাও, তুমি তোমার মতো, আমি আমার মতো। কোনটা?’

তুলির কথা শুভ্রর প্রথমে বোধগম্য হল না। কিম্তু যখন শুভ্র দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাল, তখন বুঝতে পারলো তুলির রাগটা মূলত কোথায়। শুভ্র সব বুঝে এবার হালকা হাসলো। তুলি শুভ্রর হাসি দেখে চরম পর্যায়ে বিরক্ত হলো। ছ্যাত করে বললো,

‘হাসছেন কেন? আপনি হাসবেন না।’

শুভ্র তুলির কপালের চুল আঙুলে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘তুলি? আমার সংসার করবে? এইজন্যে এত রাগ? ও রে বাবা।’

তুলি হকচকিয়ে গেল। পরপর মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে বললো,

‘মোটেও নয়।’

শুভ্র হাসল। কিছু ভাবল। বুঝল, হিসেব মিলালো। বিয়ে তো হয়েই গেছে তাদের। সংসার করার জন্যে দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। শুভ্র নিজে ডক্টর হওয়ায় তুলির পড়াশোনা তাদের বাসায় খুব একটা খারাপ হবে না। তুলিও এখন শুভ্রর জন্যে বিক্ষিপ্ত আচরণ করছে। পড়াশোনায় কোন মন নেই। একসঙ্গে থাকলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। শুভ্র ভাবে। তারপর চোখ বন্ধ করে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তুলির কোমরটা চেপে ধরতেই তুলি শুভ্রর দিকে চায়। শুভ্র হালকা হেসে তুলিকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে কপালে কপাল ঠেকায়। তুলি শুভ্রর বুকের কাছের শার্ট দু আঙুলে খামছে ধারে। শুভ্র এভাবে কাছে আসলে, তুলি ভেতরে ভেতরে চুরমার হয়ে যায়। কেন বারবার এমন হয়? তুলি কেন শুভ্রর সামনে নিজেকে আটকাতে পারেনা। নিজের মনটাই কেন বারবার তুলির সঙ্গে বে ইমা নি করে বসে? তুলি উত্তর পায়না। হয়তো পায়, কিন্তু স্বীকার করে না। কারণ তুলি এখনো রেগে আছে।

শুভ্র তুলির কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। একটাসময় তুলির কোমরে হাতটুকু গাঢ় করে ডাকল আলতো স্বরে;

‘তুলি? শুনছো?’

উফ, কী মারাত্মক একটা ডাক। তুলির মনে ফুলঝুরি কে ছেটায়? তুলি জবাব দিল নিজের অনিচ্ছায়, আপনা আপনি;

‘হু?’

শুভ্র তুলির কপালে চুমু খায়। তারপর আবার কপালে কপাল ঠেকায়। মিষ্টি করে এক মারাত্মক প্রশ্ন করে;

‘আমার ঘরটায় যাবে, তুলি? আমার ছোট্ট ওই ঘরটায়? যেখানে আমি, তুমি আর আম্মু মিলে আমাদের ছোট্ট এক সংসার সাজাব। সংসারের রানী থাকবে তুমি। আমি রাজা। ভালোবাসা দিয়ে সাজাবো আমাদের ওই ছোট্ট ঘর, যাবে তুলি?’

তুলির শরীরটা নৃত্যের ন্যায় ঝংকার দিল। তুলি চোখ বন্ধ করে জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলল। শুভ্র হাসল তুলির ছটফটানি দেখে। একটাসমও তুলি খুশি হলো। কিন্তু শুভ্রর কাছে ছোট হয়ে যাবে ভেবে খুশিটুকু গোপন করে গম্ভীর হয়েবললো,

‘আপনার ইচ্ছে, আপনার বউ ঘরে তুলবেন কী না। আমার এসবে তাড়া নেই।’

কথাটা বলে তুলি কিছুসময় শুভ্রর দিকে চেয়ে নিজেই বোকা হয়ে গেল। তার তাড়া নেই? এ কথাটা নিজের কাছেই মারাত্মক হাস্যকর শোনাল। গত কয়েকদিন শুভ্রের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, তাতে কোন পাগলেও বুঝবে কার তাড়া বেশি ছিল। শুভ্র ভ্রু বাঁকিয়ে তুলির দিকে চেয়ে আছে। তুলি অস্বস্থিতে হাঁসফাঁস করে অন্যদিকে চেয়ে নিজের বোকা ভাবটুকু আড়াল করার জন্যে মিনমিন করে বললো,

‘এভাবে তাকান কেন? আপনার মনে হচ্ছে, আমি মিথ্যা বলছি? আমার সত্যি তাড়া নেই।’

তুলি নিজেই নিজের সাফাই গাইছে বারবার। শুভ্র এভাবে তুলিকে দেখে শব্দ করে হেসে ফেলল। হুট করে মুখটা এগিয়ে এনে তুলির ডান গালে চুমু খেয়ে মিষ্টি হেসে বললো,

‘হ্যাঁ আপনার কোনোই তাড়া নেই আমার কাছে আসার। যা তাড়া সব আমার। আমি মেনে নিলাম। নজর লুকাতে হবে না আর।’

তুলি গালে হাত দিয়ে শুভ্রর দিকে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো লজ্জায়। গালটা শুভ্র একদম গরম করে ফেলেছে। স্পর্শটা এখনো তরতাজা। যেন শুভ্রর ঠোঁট এখনো তুলির গাল ছুয়ে বসে আছে। তুলি লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় ইতি ওতি চেয়ে হাঁসফাঁস করে তারপর না পেরে এগিয়ে এসে শুভ্রর বুকেই মূখ লুকালো। শুভ্র তুলির এমন ব্যবহারে হা হা করে হেসে তুলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এই পাগলকে নিয়ে কই যাবে শুভ্র?
_____________
বাসায় এসে শুভ্র সেই কখন থেকে আফরোজার কোলে মাথা রেখে মেঝেতে হাঁটুগেড়ে বসে রয়েছে। আফরোজা শুভ্রের ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আফরোজা শুভ্রের চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

‘শুভ্র, কখন থেকে এভাবেই বসে আছিস। কিছু বলবি? বললে বল।’

শুভ্র মিছে রাগ দেখিয়ে বললো,

‘আমি এভাবেই আছি। তুমিও বসে থাকো। মাথায় হাত বুলাও, ভালো লাগছে।’

আফরোজা হেসে উঠলেন। শুভ্র চওড়া কাঁধে হালকা করে চাপড় বসিয়ে বললেন,

‘একদম কথা লুকাবি না। তুই এমনি এমনি এখানে বসে আছিস না। তোর পেটে কিছু আছে। জলদি বল।’

শুভ্র বুঝল, আফরোজার থেকে কিছুই লুকাতে পারবে না সে। মা, মা-ই। মায়েরা সব নিমিষেই বুঝে ফেলে। শুভ্র কোল থেকে মাথা তুললো। বাচ্চাদের মতো আফরোজার কাছে চেয়ে বসল,

‘তুলিকে আমাদের ঘরে একেবারে নিয়ে আসি, আম্মু? প্লিজ।’

আফরোজা শুরুতে শুভ্রর কথা শুনে অবাক হয়েছেন। পরপরই টিপ্পনী কেটে বললেন,

‘অ্যাই, তুই না তুলিকে বিয়েই করতে চাস নি? এখন দুই মাসেই এত পাগল হচ্ছিস কেন?’

শুভ্র মাথা চুলকে অন্যদিকে চাইল। আফরোজা হাসলেন শুভ্রর লজ্জা দেখে। তারপর শুভ্রর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললেন,

‘ভালোবেসে ফেলেছিস, নাহ?’

শুভ্র হাসলো। মুগ্ধ গলায় মাকে বললো,

‘তুলি এমন একটা মেয়ে আম্মু, ওকে ভালো না বেসে পারলামই না। ওর মধ্যে সব আছে, যা আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন মেয়ের মধ্যে সবসময় চেয়ে এসেছিলাম। আর ও তোমাকেও-‘

শুভ্র থামল। মায়ের জন্যে শুভ্র ভালোবাসা কখনই বলে-কয়ে বেড়ায় না। শুভ্র মৃদু হেসে কথা এড়িয়ে বলল,

‘ও ভীষণ পারফেক্ট আমার জন্য, আম্মু। সবদিকে, সবভাবে।’

আফরোজার মনে কী যে শান্তি বোধ হলো। তার রাজা শুভ্রর জন্যে তুলিকে বেছে আফরোজা কোন ভুল করেন নি। আফরোজা লুকিয়ে চোখের কোণে থাকা জল মুছলেন। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে গম্ভীর গলায় বললেন;

‘ইয়াসমিন রাজি হবে না, শুভ্র। ইয়াজিদ ভাই তোদের এভাবে তুলে নেওয়ার আগে সাজেক যাওয়াটাও ভালো চোখে দেখেন নি।’

শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

‘কিন্তু কেন? আমি যাওয়ার আগে উনার পারমিশন নিয়েছিলাম।’

‘তুই বলেছিলিস দেখে মানা করতে পারেন নি। এখন বাই চান্স সাজেক থেকে ফিরে যদি তুলির কিছু একটা হয়ে যায়, বুঝতে পারছিস তুলির পড়াশোনায় কতটা এফেক্ট পরবে?’

শুভ্র ভ্রু বাকালো। চট করে মায়ের ইঙ্গিত ধরে ফেলে বললো,

‘ইউ মিন তুলি যদি প্রে-প্রেগন্যান্ট—‘

শুভ্র চালাক মন মায়ের কথার অর্থ ঠিক ধরে ফেলল।

#চলবে
৫ হাজার এটাতেও হবে? কেমন লেগেছে জানাবেন❤️ কোন কিছুই অযথা নয়। যে যার দিক থেকে সঠিক। ইমোশনাল নয় ব্যাপারটা আর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here