আঁধারের_গায়ে_গায়ে তমসা_চক্রবর্তী পর্ব-৯

আঁধারের_গায়ে_গায়ে
তমসা_চক্রবর্তী
পর্ব-৯

।।২৪।।

-“তোমার এই হঠকারিতার কারণে আমাকে কিন্তু বিপদে পড়তে হতে পারে মিলি। তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো, এই কেসে একজন এম.এল. এ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন “।

সেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসতেই মিলির ওপর ক্ষোভ উগরে দিল উজান।

-“এত ভাবতে বসলে তঝ আসল কাজটাই করতে পারব না কোনোদিন”!

-“তাই বলে বিনা ওয়ারেন্টে মানুষের প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নিয়ে তার বাড়ি সার্চ করবে! এটা তো ইললিগ্যাল”!

উজানের গলায় বিরক্তি প্রকাশ পেতেই ওর দিকে ঘুরে বসল মিলি।

-“তদন্তের স্বার্থে এর আগে আমরা কি কখনো মিথ্যাচার করিনি উজান! তোমার কনসার্নটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না উজান।আজ যদি হঠাৎ করে আমরা ঘরগুলো সার্চ না করতাম তাহলে তো অনেক কিছু অজানাই থেকে যেত।ট্রাই টু আন্ডারস্যান্ড উজান!কাজটা সত্যি জরুরী ছিল।আর রইল বাকি ওয়ারেন্ট! উজান আমি রাইমার হাতে মায়ের একটা পুরনো দিনের কোর্ট পেপার দিয়েছিলাম।প্রথমত ও দেখতে পায়না। দ্বিতীয়ত ওই সময় বাড়িতে ছিল একমাত্র বনমালী আর রান্নার লোক।তারা দেখে হয়ত বুঝতে পারবে যে ওটা কোর্ট পেপার কিন্তু ওতে কি লেখা আছে সেটা কি ওদের বোধগম্য হবে! তাই এত টেনশনের কোনো কারণ আছে বলে তো আমার মনে হয় না”!

-“বাহ্,তাহলে আর কি! ওইসময় কেউ ছিল না বলে আনন্দ করো। কিন্তু তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো বিকেলবেলা মিস্টার সাহা,সমতা সবাইতো বাড়ি ফিরবে।তখন কি হবে ভাবতে পারছো”!!

উজানের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।তবে মিলি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা দলা পাকানো কাগজ বের করে উজানের হাতে দিল।ওর মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এক কুটিল হাসি ।

-“এই নাও তোমার ফেক ওয়ারেন্ট। নাউ প্লিজ চিল”।

বিস্ফোরিত চোখে মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে প্রশ্ন করল উজান।

-“এটা কোথায় পেলে! এটাতো মিস সেনের হাতে ছিল”!!

চোখ নাচিয়ে কাঁধ ঝাঁকালো মিলি।

-“তুমি খেয়াল করনি।আমরা দোতলায় ওঠার সময় রাগে তোমার মিস সেন এটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।আমি বাইরে আসার সময় শুধু সুযোগ বুঝে উঠিয়ে নিয়েছিলাম”!

-“মাই গুডনেস! বিস্ময়ে সাময়িক বাকরুদ্ধ উজান অচিরেই নিজেকে সামলে প্রশ্ন করল,

-“কিন্তু মিসেস সেনের ডায়েরি ছাড়া তো আর তেমন কিছুই পেলে না।সো বেসিক্যালি তোমার এই অভিযানটা বৃথাই গেল।কি তাই তো”!!

ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি মাখিয়ে ভাসা ভাসা জবাব দিলো মিলি।

-“কোনো কাজই তদন্তে বৃথা যায় না এসিপি উজান রায়। অনেক সময় সবথেকে জরুরী সুত্র আমাদের চোখের সামনেই পড়ে থাকে কিন্তু আমরা চোখটা বন্ধ করে থাকি,তাই সেই সুত্র উদ্ধার করতে পারিনা”।

-“মানে”!

-“মানে” , মুচকি হেসে নিজের ফোনে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের সফ্ট কপিটা খুলে উজানের দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয় মিলি।

-“রিপোর্টটা দেখ ভাল করে।রক্তে যেমন অ্যালপাজোলামের মাত্রা অনেকটাই বেশি, তেমনই অ্যাড্রিনালিনের মাত্রাও কিন্তু অনেকটা বেশি। কিন্তু এটা নিয়ে রিপোর্টে আলাদা করে তেমন কিছুই উল্লেখ করা নেই।কেন জানো! কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা।তবে এই কেসে কিন্তু এটাই সবথেকে জরুরী লিড”।

-“একটু বুঝিয়ে বলবে প্লিজ”!!- উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে উজানের।

-“কাল বলেছিলাম মনে আছে,সাধারনত হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে প্রচন্ড পেইন হয়।ঘুমের মধ্যেও যদি হার্ট অ্যাটাক হয়, ভিকটিমের ঘুম শুধু ভেঙেই যাবেনা সে নিজেকে বাঁচানোর একটা মরিয়া চেষ্টা করবেই।আর এই চেষ্টাটাই পেশেন্টের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু হিমাংশু রায়ের ক্ষেত্রে তো আমরা আগেই দেখেছি যে এরকম কিছুই হয়নি। ওনার মুখে স্ট্রাগেলের লেশমাত্র ছিলনা।তাহলে অ্যাড্রিনালিনের মাত্রা বাড়ল কেন”?

-“কেন বাড়ল”!! মিলির কথার রেশ টেনেই প্রশ্নটা করে বসল উজান।

-” সেটাই তো সবথেকে বড় জট।ঠিক বুঝতে পারছি না জানো”!

-“আই.পি.এসে ফরেনসিক সায়েন্স ম্যান্ডেটরি করা উচিত।নাহলে কিভাবে যে অপরাধী নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যাবে বুঝতেও পারবে না কেউ।বাই দ্যা ওয়ে, মিস সেনের কনফিডেন্স লেভেলটা দেখলে!একটা চশমা পড়ে দিব্যি একা একাই সব করছেন।না জানলে তো কেউ বুঝতেও পারবে না রে উনি দৃষ্টিহীন”!! – হঠাৎ করেই রাইমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে উজান।

-“বাবাহ্, খুব যে মিস সেন,মিস সেন করছো।তা মিস সেনের চশমাটা দেখলে আর কানের ব্লু টুথ হেড সেটটা দেখতে পেলে না”!! – উজানের দিকে একটু তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দিয়ে প্রশ্ন করল মিলি।

-“কি আশ্চর্য!দেখব না কেন! অবশ্যই দেখেছি”!

-“শুধু দেখেছো, বোঝোনি কিছুই”! – উজানকে ব্যঙ্গ করা থেকে বিরত হলো না মিলি।

-“তোমার মিস সেন Smart Controller Glass ইউজ করেন। বুঝলে”!

-“Smart Controller Glass!! সেটা আবার কি! খায় না গায়ে মাখে”!!

নিজের অগত্যায় নিজেই হেসে উঠলো উজান।

-“এই ধরনের চশমা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউজ করে বানানো হয়।এটা বেসিক্যালি মেড ফর ব্লাইন্ড পিওপেল।লন্ডনে গবেষনারত তিন বাঙালির আবিষ্কার।এটাকে প্রথমে ইউজারের কি প্রয়োজন সেগুলো লার্ন করাতে হয়।তারপর এ.আই টেকনলজি ব্যবহার ও নিজে নিজেই বুঝতে শিখে যায়।যেমন গুগল ম্যাপ তোমাকে রোড ডাইরেকশন ইন্সট্রাক্ট করে, তেমনই এই চশমা তোমার স্টেপ মেপে তোমায় ওই হেডসেটে ইন্সট্রাক্ট করবে। পাঁচটা স্টেপ পড়ে টেবিল আছে,ডানদিকে সোফা আছে ইত্যাদি প্রভৃতি।বুঝলেন এসিপি উজান রায়”!

-“তোমার সাথে কাজ করতে গেলেই আমি আজকাল হিনমন্নতায় ভুগি মিলি। কোথা থেকে পাও এত ইনফরমেশন”!!

মুচকি হাসল মিলি।

-“আরেকবার সেন পাবলিকেশন হয়ে সার্ভে পার্ক যেতে হবে”।

-“আবার কলেজস্ট্রীট! কিন্তু কেন”!!

উত্তর না দিয়ে জানলার বাইরে চোখ রাখল মিলি। উজান জানে এসময়ে মিলিকে ঘাঁটিয়ে লাভ নেই।তাই ড্রাইভারকে কলেজস্ট্রীট যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে শরীরটাকে সিটে এলিয়ে দিল।

।।২৫।।

-“অনিমেষ বাবু,আপনি তো সেন পাবলিকেশনের বহু পুরনো কর্মচারী।আপনি বলতে পারবেন না, শুভেন্দু বাবু বা হিমাংশু বাবুর কোনো গোপন শত্রু ছিল কিনা”!!

মুখ ভর্তি কাঁচাপাকা দাড়ি, চোখমুখে ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তার ছাপ,নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন অনিমেষ বিশ্বাসের।উজানের প্রথম প্রশ্নে জবাব দিতে গিয়ে বেশ জোর হোঁচট খেলেন।

-“আমি কি করে বলবো স্যার।আমি একজন সামান্য কর্মচারী।অ্যাকাউন্টসের কাজকর্মটুকুই দেখাশোনা করি শুধু।বরাবর বড়বাবু আর ছোটবাবু যা নির্দেশ দিয়েছেন সেই মতো কাজ করেছি মাত্র”!

-“অ্যাকাউন্টসের কাজ দেখেন মানে তো টাকাপয়সার সব লেনদেন মোটামুটি আপনার হাতেই হয়”!

– ” তা তো করতেই হয় স্যার।বড়বাবু যখন যা পেমেন্ট অ্যাপ্রুভ করতেন, সেগুলোর লেনদেন আমিই করতাম। তবে বড়বাবুর পর রাইমা ম্যাডামের সবটা বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো বলে আমি খানিক সাহায্য করতাম ওনাকে”! – খানিক ইতস্ততভাবে জবাব দিলেন অনিমেষ বিশ্বাস।

-“হিমাংশু রায় কেমন মানুষ ছিলেন অনিমেষ বাবু”? – উজানের প্রশ্নের অভিঘাত সামলে ওঠার আগেই মিলি নিজের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল অনিমেষ বিশ্বাসের দিকে।

-” মানুষটা মোটেই ভাল ছিলনা ম্যাডাম।ওনার চোখের চাহনিটাই ভীষন অন্যরকম ছিল।আর ব্যবহারের কথা তো ছেড়েই দিন।মানুষকে মানুষ বলে গন্যই করত না”!

বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে মিলির প্রশ্নের জবাব দিলেন অনিমেষ বিশ্বাস।

-“তা আপনার ওনাকে অপছন্দ করার কারন কোনটা অনিমেষ বাবু? হিমাংশু বাবু আপনাকে পাত্তা দিত না নাকি অন্যকিছু”?

ভ্রূ জোড়া কুঁচকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে অনিমেষ বাবুর দিকে তাকল উজান। অনিমেষ বিশ্বাসের কপালে জমতে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম চোখ এড়ালো না মিলির ।কোনমতে নিজেকে সামলে অনিমেষ বাবু জবাব দিলেন।

-” বিশ্বাস করুন স্যার, ওনার সাথে আমার কোনো ঝামেলা বা অশান্তি কোনোটাই ছিল না। কিন্তু যে সেন পাবলিকেশন বছরের পর বছর আমার পেটের ভাত জুগিয়েছে,তার সাথে বেইমানি করব কি করে বলুন তো! ম্যাডাম সেন মারা যাবার পর বড়বাবু বেশ ভেঙে পড়েছিলেন।আপিসেও আসতেন না বেশি।আর এলেও আগের সেই দাপট আর ছিল না ওনার।হিমাংশু বাবু কিন্তু ওনার সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাইমা ম্যাডামকে দিয়ে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অ্যামাউন্টের চেক সাইন করিয়ে নিতেন। আমি একবার ম্যাডামকে সাবধানও করেছিলাম। কিন্তু ম্যাডাম আমার কথায় সেভাবে গুরুত্ব দেননি।আর তাছাড়া,যে মানুষ নিজের হবু স্ত্রীর প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঠকানোর আগে একবারও ভাবেনা, তাকে কি করে ভালমানুষ বলব বলুন তো”!

-“আপনি যেটা বলছেন অনিমেষ বাবু, সেটা তো একপ্রকার ফ্রড!কিন্তু আমরা তো শুনেছিলাম, রাইমা যেকোনো কাগজে সই করার আগে সমতাকে দিয়ে সেগুলো ভেরিফাই করাতো।তাহলে”!!

মিলির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও অনিমেষ বাবু ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

-“মানুষ ঠকানোটাও একটা শিল্প ম্যাডাম! প্রথমেই যে বললাম, হিমাংশু বাবুর দৃষ্টিটাই ভালো ছিল না।সমতাকে কম উত্যক্ত করেছে নাকি! মেয়েটাকে কতবার যে নিজের ডেস্কে বসে কাঁদতে দেখেছি! এক আধবার, ম্যাডামকে হয়ত ঘুরিয়ে বলতেও গেছিল।তবে লাভ কিছু হয়েছিল বলে তো মনে হয় না।কারন, হিমাংশু রায় ছিলেন অসম্ভব ধূর্ত মানুষ।রাজকন্যা সহ রাজ্য আর রাজপাট ধীরে ধীরে নিজের মুঠোয় করার তালে ছিলেন।তাই যাই ঘটে যাক না, রাইমা ম্যাডামকে কোনো না কোনোভাবে ঠিক ম্যানেজ করে নিতেন। তাছাড়া সমতারও হাত পা বাঁধা ছিল। সংসার চালানোর জন্য চাকরিটা ওকে করতেই হতো।কানাঘুষোয় শুনেছি,হিমাংশু রায় নাকি সমতাকে দু একবার চাকরি খেয়ে নেওয়ার ভয়ও দেখিয়েছিলেন।এরপর আপনিই বলুন, মেয়েটার আর কিই বা করার ছিল”!

অনিমেষ বাবুকে আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই ঝড়ের বেগে ওনার কেবিনে প্রবেশ করল বছর চল্লিশের এক মধ্যবয়স্ক মানুষ।তবে মানুষ না বলে গুন্ডা বললেই তার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হবে।

-“ব্যাপারটা কি বলুন তো স্যার! আগের মাসের পেমেন্টটা ক্লিয়ার করলেন না। রায় সাহেবের গাড়ি সার্ভিসিংয়ের টাকাটাও পেলাম না।এরকম ঝোলাচ্ছেন কেন”!!

উজান আর মিলির উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে
রীতিমতো মস্তানদের মত হাবভাব দেখাতে থাকল লোকটা।বাইরের লোকের সামনে এহেন আচরণে থতমত খেয়ে আমতা আমতা করতে থাকলেন অনিমেষ বিশ্বাস।

-“আমার ওপর চড়াও হয়ে কি লাভ! তোমার বাবুরা যদি সাইন না করে তাহলে আমি কি করব”!!

-“যত্তসব বা..কথা!তা সেই শুয়োরের বাচ্চা হিমাংশু রায় কোথায়! দু’দিন ধরে ফোন করছি,ধরছে না কেন মালটা”!!

-“মানে!!তুমি কিছুই জানো না নাকি”!! বিস্ময়ে হাঁ করে রইলেন অনিমেষ বাবু।

-“জানি না মানে! আবার কি জানলাম না! তোমাদের ম্যাডামও মরল নাকি”! নোংরা হাসি ছুঁড়ে দিয়ে দাঁত বের করে হাসতে থাকে গুন্ডাটা। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটা সংযত করলেন অনিমেষ বিশ্বাস।

-“ভগবানের আশীর্বাদে আমাদের ম্যাডাম একদম ঠিক আছেন।পরশু রাতে মরেছে তোমার ওই শুয়োরের বাচ্চা হিমাংশু স্যার”!

অনিমেষ বাবুর কেবিনে যেন বাজ পড়ল। আগুন্তুকের চোখে ফুটে উঠল ভয়ের স্পষ্ট ছাপ।না ভয় নয় – আতঙ্ক।

-“মা..মানে”!!বলতে গিয়ে কথা জড়িয়ে আসছিল আগুন্তুকের।অবিশ্বাসের ছাপ তার মুখের প্রতিটা ভাঁজে।- ” হিমাংশু রায় কি করে মরবে! ওর তো মরার কথা ছিল না”!! অস্ফুটে বিড়বিড় করতে থাকলেও মিলির কর্নগুহরে কথাগুলো পৌঁছেই গেল। যদিও গুন্ডা টাইপের লোকটা আর দাঁড়াল না। হাতের তালু দিয়ে নিজের ঘর্মাক্ত মুখটা মুছতে মুছতে যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিল তেমনই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল অনিমেষ বাবুর কেবিন থেকে।

-“মালটা কে অনিমেষ বাবু”! লোকটার গমন পথের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল উজান।

-“কার্তিক।কার্তিক মাঝি। বড়বাবুর বাঁধা ধরা মেকানিক।ওকে ছাড়া বড়বাবু অন্য কাউকে দিয়ে গাড়ির কোনোরকম কাজ করাতেন না।আগে তো ওই শিয়ালদার কাছে একটা গ্যারেজে কাজ করত।তবে বছর দশেক হলো নিজেই একটা গ্যারেজ খুলেছে, গৌরিবাড়ির কাছে।সেন বাড়ির সব গাড়ির কাজ ওখানেই হয় এখন”!!

অনিমেষ বাবুর কথাগুলো শুনতে শুনতে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকা দু জোড়া চোখ চকচক করে উঠলো। উভয়েরই মাথায় কেউ যেন হাতুড়ির ঘা বসিয়ে দিল।কার্তিক মাঝির দক্ষিন হস্তের ষষ্ঠ আঙুলটা উজান বা মিলি কারুরই চোখ এড়িয়ে যায়নি। নিজেদের মধ্যে একবার চোখ চাওয়া চাওয়ি করে, দুজনেই প্রায় একসাথে অনিমেষ বাবুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

-“কার্তিকের গ্যারেজের ঠিকানাটা দিন। এক্ষুনি”।

অনিমেষ বিশ্বাসের থেকে ঠিকানাটা পেয়েই মিলি বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে সেটা টেক্সট করল অরণ্যকে। তারপরই অনিমেষ বাবুর কেবিনের বাইরে এসে মোবাইলে অরণ্যের নম্বরটা ডায়াল করল।

-“ঋক, সব প্ল্যান ক্যানসেল করে দে।যে অ্যাড্রেসটা টেক্সট করলাম ইমিডিয়েটলি ইন্সপেক্টর মজুমদারকে নিয়ে সেখানে পৌঁছা। গ্যারেজটার ওপর নজর রাখতে হবে।আর শোন আকাশী টি শার্ট পড়া কোনো গুন্ডা টাইপের লোককে দেখলে তার মুভমেন্টের ওপর অবশ্যই নজর রাখিস। আমি আর উজান একটা ছোট্ট কাজ সেরেই তোদের জয়েন করব”!!

-“অলরাইট।পৌঁছাচ্ছি”!

-“আচ্ছা শোন, তোর ওই বাইকার্স ক্লাবের ছেলেটাকে বল, গাড়িটার যেকোনো ছোট একটা সমস্যা বাঁধিয়ে ওই গ্যারেজে ঢুকতে।পারলে তুইও যা ওর সঙ্গে।বাকিটা তুই নিজের মতো করে সামলে নিস, কেমন”!!

অরণ্যকে আর কোনো কথা বলার অবকাশ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিল মিলি।বিদ্যুত গতিতে পিছনে তাকিয়ে উজানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,

-“সমতা আর রাইমার কেবিনের সিসিটিভি ফুটেজগুলো খুব দরকার বুঝলে।নাহলে ব্যাপারগুলো পরিস্কার হচ্ছে না।আর হিমাংশু রায়ের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টটাও লাগবে।এগুলো চটপট কালেক্ট করার ব্যবস্থা করো প্লিজ। এখান থেকে আবার কার্তিক মাঝির গ্যারেজে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি করো”!

#ক্রমশ

/*কমেন্ট বক্সে আগের পর্বগুলির লিংক শেয়ার করা আছে*/

© আমার ভিনদেশী তারা-amar bhindeshi tara-কলমে তমসা চক্রবর্তী
#AmarBhindeshiTara
#TamosaChakraborty
# ভালো লাগলে লেখিকার নাম সহ শেয়ার করবেন 🙏।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here