ময়লার ঝুড়িতে ছোট্ট একটা বাচ্চা খেলছে। চোখ দুটো পিটপিট করে তাকিয়ে দেখছে ভয়ংকর পৃথিবীটাকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারপাশ নীরব হয়ে আছে। এমন সময় একটা কুকুর ঝুড়িটার কাছে এসে বাচ্চাটাকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে। ময়লা কম থাকায় ঝুড়িটা বেশ গর্ত হওয়ায় কুকুরটা নাগাল পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর ওটা সফল হলো। বাচ্চাটাকে মুখে নিয়েই ছুটে চলে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে বাচ্চাটা একটুও ভয় না পেয়ে, বরং হাসছে! আশেপাশে কত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে, কিন্তু কেউ কিছুই করছে না।
স্বপ্নটা ভেঙে যেতেই আভা চিৎকার দিয়ে উঠে বসে, পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে।
তার চিৎকার শুনে শফিক সাহেব দৌড়ে এলেন। মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললেন, “কি রে মা, আবার সেই স্বপ্নটা দেখেছিস?”
আভা শুধু ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে চাইল। মুহূর্তেই তিনি সবটা বুঝে গেলেন। মেয়েকে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় রে মা, স্বপ্নের জন্য কেউ কি ভয় পায়, বল? আমার সাহসী মেয়েটা সামান্য একটা স্বপ্নকে ভয় পাচ্ছে, এটা কী ভালো দেখায়? স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। তুই চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
আভা শুধু বাবার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। শফিক সাহেবের হাত জলে ভিজে যাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন মেয়েটা কাঁদছে। অদ্ভুত লাগে! যেই মেয়ে মানুষের হাজারটা তুচ্ছতাচ্ছিল্যকে গ্রাহ্যই করে না, সেই মেয়ে কীভাবে একটা স্বপ্নকে ভয় পেয়ে কাঁদে!
শফিক সাহেবের মনে পড়ে পুরনো কিছু স্মৃতি। বিয়ের দশ বছর পর তিনি আভাকে বুকে নিয়ে বাবা হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। একটা কাপড়ের ভেতর থেকে ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা নাড়াচ্ছিল একটা বাচ্চা। দেখেই সুখে বুকটা ভরে উঠেছিল তার। প্রথম বাবা হওয়ার সুখ সত্যি অনন্য! নতুন কিছু অনুভূতির জন্ম, সাথে নতুন ভালোবাসাও।
প্রতিটি পুরুষের ভেতর একজন বাবা ঘুমিয়ে থাকে। এই বিষয়টি ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই বোঝে না, যতক্ষণ না সে বাবা হওয়ার স্বাদ পায়। শফিক সাহেবও নিজের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা বাবা নামক মানুষটাকে আবিষ্কার করেছিলেন আভাকে পেয়ে! মেয়েটা সবসময় মায়ের চেয়ে বেশি বাবার সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে! তাই তো তারও মেয়ের প্রতি আলাদা একটা মায়া রয়েছে!
ভাবনায় ইতি টানতেই ভদ্রলোকের চিন্তা হতে লাগল স্বপ্নের বিষয়টা আভাকে কেন এত ভাবায়? তাছাড়া একই স্বপ্নই বা ঘুরে-ফিরে কেন দেখে! তারচেয়েও অবাক হওয়ার বিষয় সকালে ঘুম ভেঙে তার মাঝে এই ভয়ের বিন্দুমাত্র রেশ থাকে না! দেখে মনেই হয় না, রাতে সে এতটা ভয় পেয়েছিল!
মেয়ের এমন আচরণে তিনি ভীষণ ভয় পান। মাঝেমধ্যে চেনা মেয়েটাকে অচেনা মনে হয়। মনে হয় এক শরীরেই দুটি আত্মার বসবাস! এই বিষয়টা তাকে মোটেও শান্তি দেয় না। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে যখনই তিনি একান্তে সময় কাটান, তখনই বিষয়টা নিয়ে একটা অস্বস্তি তাকে তাড়া করে বেড়ায়!
★
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আভা বাড়ির পূর্বদিকে রাস্তার সাথে লাগোয়া পুকুর ঘাটে গেল। তাদের বাড়িটা পশ্চিমমুখী। বড়সড় এই পুকুরটিকে নিয়ে নানা লোককথা প্রচলিত আছে। এককালে মানুষ এটার পানি পান করত, এখনো প্রায়ই এমনটা দেখা যায়, তবে সংখ্যায় নগন্য! এলাকায় এটা “জলপরী” পুকুর নামে পরিচিত। সামনে শানবাঁধানো ঘাট, একপাশে কবরস্থান, অন্য পাশে রাস্তা, তার পাশে মানুষের বসত বাড়ি।
ঘাটে আভার বোন নাফিজা ও চাচাতো বোন শর্মি বসে দাঁত মাজছে। সে একটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পেল, “ওই দেখ কালি আইতাছে।”
কথাগুলো বলেই নাফিজা বিচ্ছিরিভাবে ঠোঁট বাঁকাল।
শর্মি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবে, “কেউ নিজের বইনের সম্পর্কে এমনে কইতে পারে!”
মুখে বলল, “তুই তোর বোনরে সহ্য করতে পারছ না ক্যান নাফিজা? আভা আপা তো ভালা মানুষ।”
নাফিজা কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় আভা তাদের কাছে চলে এলো, সবটা শুনেও না শোনার ভান করে স্মিত হেসে বলল, “কী রে, তোরা এখানে বসে কী করছিস?”
শর্মি বলল, “এইতো আপা মুখ ধুইতে আইছি। তুমি আজ চিটাগাং চইল্যা যাইবা?”
“আজকেই যাব রে। কোচিং খুলবে পরশু থেকে। পড়ার অনেক চাপ, নয়তো আরও কয়েকটা দিন থেকে যেতাম।”
“আইচ্ছা আপা তুমি কী জজ-ব্যারিস্টার হইবা?” শর্মির চোখে-মুখে কৌতূহল স্পষ্ট।
আভা চওড়া হেসে বলল, “সে পরে দেখা যাবে। আগে তো ভালো করে পড়াশোনা করি!”
নাফিজা উঠে চলে গেল ঘাটের শেষ সিঁড়িতে, তার এসব কথা মোটেই সহ্য হচ্ছে না! বিড়বিড় করে বলল, “চেহেরার যে ছিরি! সে হবে জজ-ব্যারিস্টার!”
বোনের কথাটা বোধহয় আভা শুনতে পেয়েছে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “শর্মি তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“তোমার মতো মেধা আমাগো নাই আপা, কোনোরকম চলতাছে।”
আভা মুচকি হেসে বলল, “আরে পাগলি তোরাও ভালো করে পড়াশোনা কর, তারপর আমার থেকেও ভালো রেজাল্ট করতে পারবি। সামনে তো এসএসসি পরীক্ষা তাই না?”
শর্মি বলল, “হ সামনে এসএসসি পরীক্ষা। জানো আপা স্যাররা তোমার কত প্রশংসা করে? সবসময় আমাগোরে কয়, ” ছাত্রী হচ্ছে অরনী আভা। পড়াশোনার প্রতি এত মনোযোগ ছিল তার। সচরাচর এমন ছাত্রী পাওয়া যায় না।”
আভা হাসল, “তোরা যখন স্কুল থেকে চলে যাবি, তখন তোদের কথাও বলবেন।”
নাফিজা কুলি করতে করতে সব কথা শুনছে। শর্মিকে চেঁচিয়ে বলল, “এই শর্মি তুই কি আইবি? স্কুলে যাইবি কতক্ষণে? নাকি খেজুরে আলাপ করলেই চলবো?”
আভা নাফিজার কথার ধরণ দেখে বুঝতে পারে এসব তাকেই শোনানো হচ্ছে। সে জানে নাফিজা তাকে মোটেই পছন্দ করে না! এর কারণও খুব পরিষ্কার, নাফিজা তার চেয়ে দেখতে সুন্দরী, গায়ের রঙও ফর্সা। কিন্তু, আভার গায়ের রঙ ময়লা বলে তাকে দেখে ছোট থেকেই নাক সিটকাতো সে। তাছাড়া আরও একটি কারণ হলো, আভাকে অন্য দুই সন্তানদের চেয়ে বাবা বেশি ভালোবাসেন।
নাফিজা মনে করে, আভার জন্যই তাদের বাবা তাদেরকে খুব একটা ভালোবাসেন না।
অথচ তার ধারণাটা ভুল! হ্যাঁ, শফিক সাহেব বড় মেয়েকে একটু আলাদা চোখে দেখেন এটা সত্যি, তার কারণও আছে। ছোট থেকেই মেয়েটা মায়ের চেয়ে বাবার সান্নিধ্যে বেশি ছিল। তাই বাবার তার জন্য আলাদা একটা মায়া কাজ করে। তাছাড়া সে যতটা বুদ্ধিমতী ও সাহসী মেয়ে, সেটা দেখে বরাবরই গর্ববোধ করেন শফিক সাহেব। কিন্তু, তাই বলে অন্য সন্তানদের কম ভালোবাসেন তাও ঠিক নয়! বাবা-মায়ের ভালোবাসা সব সন্তানের জন্য সমান, শুধু তাদের প্রকাশ ভঙ্গিটা আলাদা।
পাশের বাড়ির ছকিনা চাচি পানি নিতে এসে বললেন, “আরে আভা না? কবে বাড়িত আইছো? প্রথমে তো চিনতেই পারি নাই। তোমারে কতদিন কইছি কালা জামা গায়ে দিয়ো না। কালা জামা গায়ে দিলে চেহেরাখানা বুঝাই যায় না। কালা মাইনষে গায়ে দিবা লাল, বুঝছো? টকটইকা লাল রঙ কালা মাইনষেরে মানায় ভালা।”
আভা চাচির কটু কথায় শুধু হাসল, মুখে কিছুই বলল না। কারণ, এসব কথা যে তিনি নতুন বলছেন এমন নয়।
এখন তো অনেকটাই কমেছে, আগে মানুষ বলতো “এই মেয়েকে দেখেলে শুভ কাজও অশুভ হয়ে যায়।”
মানুষের এমন “উপদেশ” দেয়ার নামে অপমানগুলো আভাকে আঘাত করতে পারে না। লোকের কথায় কখনো নিজের পছন্দের পরিবর্তন করেনি। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের মানুষ তাদের কথার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলেছিল তার জীবন। প্রথম, প্রথম খুব কষ্ট হতো! কিন্তু, ধীরে ধীরে এই ব্যবহারগুলোই তাকে আরও শক্ত করে তুলেছে। তাই এখন না কোনো কষ্ট হয়, না মনের জোর কমে। বরং, মানুষের তুচ্ছতাচ্ছিল্য তাকে মনে করিয়ে দেয় জীবনে বড় হতে হবে, অনেক বড়! যতটা বড় হলে এই মানুষগুলো আজকের কথাগুলোর ঠিক উল্টো কথা বলবে!
আভা হাসল, “এইতো চাচি তিনদিন হয়েছে আসছি, আজ চলে যাব।”
“হ, তোর বাপ মাইনষেরে কইতাছে তুই নাকি ওকালতি পড়বি। হুনলেও হাসন আইসা যায়। তোর মতো কালা মাইয়ারে কেডা জজ-বেরিস্টার বানাইবো?”
কথাটা শেষ করে ফিক করে একদলা পানের পিচকি ফেললেন তিনি।
আভা এসব কথায় কর্নপাত না করে বলল, “আসি চাচি, আম্মা ডাকছে। দোয়া করবেন আমি যেন আপনাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।”
ছকিনা বেগম আভার পথের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। এত কথা বলার পরেও মেয়েটা কী সুন্দর হেসে হেসে কথা বলে! কীভাবে সম্ভব! এইটুকু একটা মেয়ের এত ধৈর্যশক্তি কোথায় থেকে আসে! মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত।
★
নাস্তা করতে বসেছে শফিক সাহেবের পরিবারের সবাই। আভার মা রেহেনা বেগম নাস্তা দিচ্ছেন সবাইকে। আভা জামা কাপড় গোছাচ্ছে তাই টেবিলে আসতে দেরি হচ্ছে।
এইদিকে তার মা চিৎকার করছেন, “দুই দিনের জন্য বাড়িতে আইছে তবুও ঘর থাইক্যা নবাবজাদী বাইর অয় না। কই মা’রে একটু সাহায্য করবো, তা না ঘরে বইয়া থাকে। এই সংসারের লাইগা খাইটাখুইটা মরি আমি, কেউ আমার দিকে ফিইরাও চায় না।”
শফিক সাহেব বিরক্তির সুরে বললেন, “মেয়েটা একটুপর চলে যাবে, তারপরও তোমাকে এসব বলতেই হবে? দুইদিনের জন্য বাড়িতে আসছে কোথায় একটু ভালো-মন্দ খাওয়াবে, তা না। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করতে থাকো। ঘরে তো আরও একটা মেয়ে আছে, তাকে তো কিছু বলতে শুনি না। তারও তো কাজ শেখা লাগবে নাকি?
রেহেনা বেগম ফোঁস করে উঠলেন, “তোমার দোষ! আদরের মাইয়ারে কিছু কওন যায় না। কই আমি যে এতো খাইটা মরি, কোনোদিন আমার লাইগা একখান কথা কইতে তো শুনি নাই! আদরের মাইয়ারে কিছু কইলেই দরদ উতলাই ওঠে?”
আভা পাশের ঘর থেকে সব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মায়ের কথা নিয়ে না ভাবলেও বাবা যদি না খেয়ে উঠে যায়, সেই চিন্তায় সে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আম্মা আমাকে দাও, আমি করে দিচ্ছি।”
রেহেনা বেগম অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, “আর ঢং দেখানো লাগবো না। আগুন লাগাই, জল ঢালতে আইছে!”
শফিক সাহেব খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন।
নাফিজা বলল, “থাক আম্মা তুমি কিছু কইয়ো না, আমরা কি বাবার আপন নাকি যে আমাগোর জন্য টান থাকবো?”
আগুনে ঘি পড়েছে, এবার আর কে থামায়! রেহেনা বেগম আভাকে উদ্দেশ্য করে নানা কথা শোনানো শুরু করলেন। আসলে তিনি এমনই, আভাকে খুব একটা পছন্দ করেন না! আভা তার নিজের মেয়ে না। শফিক সাহেবের বোনের মেয়ে। যখন তিনি বিয়ের পর দশ বছরেও মা হতে পারলেন না। তার ননদ আভাকে জন্ম দিয়ে মারা গেলে তাকে নিয়ে এসে মেয়ের মতো লালন-পালন করেন। আভাকে নিয়ে প্রায়ই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়াঝাটি হয়।
একটা প্লেটে নাস্তা নিয়ে বাবার কাছে যায় আভা। রাগ হলে শফিক সাহেব পুকুরের অপর পাড়ের প্রাইমারি স্কুলের মাঠে গিয়ে বসে থাকেন। আজ স্কুল বন্ধ তাই কেউ নেই।
সেখানে গিয়ে সে দেখল তার বাবা নীরবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে, এই জগৎ সংসার থেকে তার মন উঠে গেছে! আকাশ পানে তাকিয়ে থেকে জীবনের সব শূন্যতার কথা নিঃশব্দে-নিভৃতে বলে চলেছেন।
সে বাবার পাশে গিয়ে বসল। শফিক সাহেব মেয়ের দিকে না তাকিয়েই বললেন, “একটু পরেই না চলে যাবি? তৈরি না হয়ে এখানে কেন এসেছিস?”
ভদ্রলোকের দৃষ্টি এখনো সেই ছাইরঙা আকাশটার দিকে।
আভা কোনো উত্তর না দিয়ে পরোটার টুকরোতে ডিম পেঁচিয়ে বাবার মুখের সামনে ধরল। তিনি মেয়ের দিকে তাকালেন।
শফিক সাহেবের মনে হলো, কৃষ্ণ বর্ণের মেয়েটার মুখ জুড়ে প্রগাঢ় মায়া! ডাগর আঁখিতে শূন্যতা, কিন্তু তাতে দুর্বলতার লেশ মাত্র নেই! কেন যেন একটু আগের রাগের অগ্নিকুণ্ডটা মুহূর্তে বরফের মতো শীতল হয়ে গেল। মেয়ের স্নিগ্ধ মুখের দিকে চেয়ে অন্তর-আত্মায় শান্তি অনুভব করলেন।
এই এক সমস্যা! ভদ্রলোকের সবকিছুর উপর রাগ হয়, শুধু এক এই মেয়েটি ছাড়া। মেয়েটি যেন তার জীবনের পরম আরাধ্য সম্পদ!
শফিক সাহেবের ঠোঁটের প্রান্তিক কোণে লঘু হাসির রেখা ফুটে ওঠল। আভাও মাতৃস্নেহে বাবার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল, “বাবা তুমি আমাকে সবসময় বলো খাবারের উপর কখনো রাগ করতে নেই, মানুষের অপমানের জবাব দিতে হলেও খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে তুমি নিজেই কেন খাবারের উপর রাগ করো? এ তো ভারি অন্যায়!”
তিনি মেয়ের দিকে স্নেহভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বাবাকে যেভাবে মেয়ে শাসন করছে, দেখে মনে হচ্ছে কোনো স্নেহশীল মা তার ছোট্ট অবাধ্য শিশুকে মায়াভরা শাসনে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। সেই সন্তান মায়ের বকুনি শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে আর খাচ্ছে!
শফিক সাহেবের মনে হলো এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত! যদি সময়কে ধরে রাখা যেত। তবে এই সময়টুকু তিনি আটকে রাখতেন।
তিনিও মেয়েকে খাইয়ে দিলেন। বাবা-মেয়ের সুন্দর কিছু আনন্দঘন সময় কেটে গেল। এই দুটি মানুষের মাঝে তেমন কোনো কথা হলো না। তারপরও দুজন-দুজনের ভেতরটা অনায়াসে পড়ে ফেলল। কেউ কাউকে নিজের কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলল না। তারপরও দুজনেই বুঝে নিল, কতশত অব্যক্ত বাক্য, ভাগ করে নিলো সকল শূন্যতা ও অপ্রাপ্তিকে। তারা জানে, দুজন দুজনের ঢাল হয়ে আছে সর্বক্ষণ, সারাটি জীবন!
#আঁধারে_ঢাকা_ভোর
#অধ্যায়_এক
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা
ইনশাআল্লাহ চলবে..
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত পাঠক, উপন্যাসটা ২০২০ এ লেখা। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দু’দিন পর পর এক পর্ব দেব ইনশাআল্লাহ। এটায় কোনো রকম অনিয়ম করব না আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে। আমাকে দোয়ায় রাখবেন। ভালো থাকবেন।