#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -১০
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। অন্তু,নিবিড়, সাগর সাদা পাঞ্জাবি পড়ে পিক তুলতে ব্যস্ত। পায়েল,রিমি দু’জনে হলুদ ও নীল রঙের জামদানি শাড়ি জড়িয়েছে গায়ে, চুলের খোপায় লাল গোলাপ গেঁথেছে। বর ও কন্যা পক্ষের হলুদ অনুষ্ঠান একই সাথে হচ্ছে। কেননা রনকদের বাড়ি অর্থাৎ ইনশিতার হবু শশুর বাড়ি ঢাকাতে। তাই বান্দরবানে বিয়ের আয়োজন একসাথেই করা হয়েছে। রনক ও ইনশিতা স্টেজে বসে কথা বলতে মগ্ন। তৃপ্ততার আনন্দ দু’জনের চোখে মুখে উপচে পড়ছে। পড়বেই না কেন?দীর্ঘ তিন বছরের প্রণয়ে আবদ্ধ থাকা দু’জন যুগলের ভালোবাসা সার্থক হতে যাচ্ছে অতি শীগ্রই। চারদিকে হৈ হুল্লোড়। এতোদিন গুমোট পরিস্থিতিতে থাকা বাড়িটার কানায় কানায় আজ কোলাহলে পরিপূর্ণ। ঝুমু ও আমরিন একসাথে হলুদের ঢালা নিয়ে এসে স্টেজে রাখল। নিবিড় এক পলক চাইল আমরিনের মুখের দিকে। আমরিন নিবিড়ের দৃষ্টি বুঝলেও তোয়াক্কা করল না। কারণ সেদিন নিবিড়ও তার কোনো তোয়াক্কা করে নি। নিবিড় কে এক প্রকার অগ্রাহ্য করে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতে লাগল। মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল নিবিড়ের। দাঁতে দাঁত খিঁচে ডেকে উঠল,
‘ দাঁড়া আমরিন।’
কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই পা দু’টো আপনাআপনি থমকে গেল আমরিনের। জমে গেল সে। নিবিড় খুব বেশি নিকটে এসে দাঁড়াল। রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা চোখে ভাসতেই সূক্ষ্ম একটা ঢুক গিলল আমরিন। দৃঢ়,ভয়ার্ত স্বরে বলল,
‘ কিছু বলবেন ভাইয়া?’
‘ অনেক কিছু বলব।’- কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিল নিবিড়।
নিবিড়ের রাগান্বিত কথা শুনে আমরিনের সঞ্চিত সব সাহস ফুঁশ করে উড়ে গেল। তবুও সে দমতে রাজি নয় এই ছেলের কাছে। এতো বছর একটা হুমকির ভিত্তিতে তার মনে ভালোবাসা জাগিয়ে আবার তাকে ইগনোর করবে,কষ্ট দিবে। তাহলে কেন সাড়া দিবে সে এই ছেলের ডাকে!দিবে না। একদমই দিবে না। মনে সাহস জুগিয়ে আমরিন কঠোর কন্ঠে বলল,
‘ জ্বি বলুন ভাইয়া।’
আমরিনের কঠোর কন্ঠে ধপ করে জ্বলে উঠল নিবিড়ের দু চোখ। এমনিতেই আমরিনের উপর তীব্র মেজাজ গরম ছিল তার কারণ মেয়েটা তাকে এখানে আসার পর থেকেই ইগনোর করে যাচ্ছে। এখন তো আগুনে ঘি ঢেলেই দিল। চারদিকে তাকিয়ে একটুখানি সময়ও বিলম্ব না করে আমরিনের হাত টেনে বাড়ির পিছন দিকে নিয়ে এল নিবিড়। আমরিন বিচলিত কন্ঠে মৃদু স্বরে চেঁচালো,
‘ কি করছেন?ছাড়ুন আমাকে।’
নিবিড়ের তাতে কোনো হেলদোল নেই। আমরিন কে নিজের সাথে চেপে ধরল শক্ত করে। অবাক দৃষ্টিতে নিবিড়ের মুখের দিকে তাকাল আমরিন। কোমরে জ্বলন অনুভব করতেই নিবিড় থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফটাতে লাগল । চোখ দুটোতে নেমে এল অসহায়ত্ব। নিবিড় কোমর থেকে হাত সরিয়ে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ল আমরিনের সম্মুখে। কোমরের খালি অংশটুকু শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিল অতি যত্নসহকারে। চোখের পলক ফেলতে ভুলতে গেল আমরিন। হতভম্ব হয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল নিবিড়ের কর্মকান্ড। শাড়িটা ঠিক করে উঠে দাঁড়াল নিবিড়। আমরিন কে কাছে টেনে নিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
‘ এভাবে শাড়ি পড়লে কেন?’
‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই!’–থমথমে গলায় বলল আমরিন।
আমরিন বলতে দেরি করলেও তার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আঁকড়ে ধরতে একটুও বিলম্ব করল না নিবিড়। কোমরে চাপ দিয়ে নিজের আরো কাছে টেনে আনল আমরিন কে। নিমিষেই একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আমরিনের দেহের সর্বাঙ্গে। মৃদু নড়ে উঠল সে। নিবিড়ের বুকে হাত দিয়ে ঠেলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লজ্জায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ল। চোখ বড় বড় করে লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল নিবিড়ের দিকে।
‘ কেন করলেন এমনটা?’
নিজের ওষ্ঠযুগল হাত দিয়ে মুছে নিবিড় বাঁকা হেসে চোখ টিপে প্রতুত্তর করল,
‘ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই! ‘
অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল আমরিন। আমরিনের কাছে এই মুহুর্তে নিবিড় কে শয়তান মনে হচ্ছে। এতো বছর ভুল মানুষ কে চিনেছিল সে। সবার চোখে ভদ্র, গম্ভীর, ইননোসেন্ট ছেলের আসল রুপ তো এতোদিন লুকায়িত ছিল। কি অসভ্য ভাবা যায়!ইচ্ছে হলেই কি কিস করা যায়! হাঁটতে থাকা নিবিড়ের পথ অবরোধ করে দাঁড়াল আমরিন। নিবিড় প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে তাকাতেই আমরিন গলার জোর বাড়িয়ে বলে উঠল,
‘ ইচ্ছে হলেই কিস করবেন?কেন করবেন?আমার ঠোঁট কি আপনার কেনা সম্পত্তি?’
মুচকি হাসল নিবিড়, যা দেখে আমরিনের হৃদয় মুহুর্তের জন্য থমকে গেল। অবুঝ মনে বছর খানেক আগে উদয় হওয়া ভালোবাসা নিমিষেই অনেকখানি বেড়ে গেল সামনে স্থির ছেলেটার জন্য। নিবিড় নির্বিঘ্নে মুখের হাসি বজায় রেখে বলল,
‘ তুমি আমার কেনা সম্পত্তি নও, তবে আমার ভবিতব্য। এবং আশা করি বলতে হবে না ভালোবাসি।’
সাথে সাথেই শিষ বাজানোর আওয়াজ কানে এসে প্রতিধ্বনিত হলো দু’জনের। আওয়াজ অনুসরণ করে তাকাতেই চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে জাগল আমরিনের। পায়েল,অন্তু, সাগর,ঝুমু,আহান,রিমি একসাথে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে। অন্তু শিষ বাজাতে বাজাতে তিরস্কার সুরে বলে উঠল,
‘ কিছু দেখি নি ভাই, শুধু শুনেছি ভালোবাসি। ‘
অন্তুর তিরস্কার সুর শুনে এক মুহুর্তও স্থির থাকতে পারল না আমরিন। লজ্জায়, অভিশঙ্কায় এক প্রকার ছুটে পালিয়ে গেল। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সবাই। অন্তু দাঁত কেলিয়ে নিবিড় কে প্রশ্ন করল,
‘ আদ্র জানে তো ভাই?নইলে কিন্তু বন্ধুর হাতে মারা পড়বি। বোনদের ব্যাপারে কিন্তু ভীষণ পজেসিভ।’
‘ ভালোবেসেছি বলেই অনুমতি পেয়েছি।’
নিবিড়ের কথায় উঁহু উঁহু করে উঠল সবাই। পায়েল, রিমি,সাগর, অন্তু ঝেঁকে ধরল নিবিড় কে ট্রিট দেওয়ার জন্য। নিবিড় হেয়ালি স্বরে বলে উঠল,
‘ বিয়েতে তো কব্জি ডুবিয়ে খাবি। তোদের মতো রাক্ষসদের বার বার খাওয়ানোর টাকা নাই আমার। তবে ভিক্ষা দিতে আমি মোটেও কৃপণতা করি না।’
নিবিড়ের কথা শুনে সবগুলো মিলে কিল ঘুষি দিতে লাগল পিঠে। বেচারা নিবিড় সবসময় বেঁচে বেঁচে থাকত কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এখন অন্তুর মতো কেলানি খাচ্ছে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে। পায়েলের ফোন বেজে উঠল শব্দ করে। স্ক্রিণে ভেসে উঠল ‘ অভিক।’ সবাই ভ্রুঁ নাচাতেই পায়েল জড়তা নিয়ে এক গাল হাসল। অন্তু সবার অলক্ষ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শব্দ করে হেসে উঠল। পায়েল কে রাগানোর মোক্ষম সুযোগ সে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয়। লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বলল,
‘ উফ!তোরা এমনভাবে তাকাবি না তো। আমার খুব লজ্জা পাচ্ছে।’
হাসির রোলে মুখরিত হয়ে গেল নিস্তব্ধ জায়গাটা। পায়ে রাগে তেড়ে এল অন্তুর দিকে দ্রুত গতিতে। অন্তু কে আর পায় কে!পায়েল কাছে আসার আগেই অন্তু প্রগাঢ়পাড়। পায়েল থেমে গিয়ে হালকা হেসে অভিকের কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেল। বাকি সবাই স্টেজের দিকে চলে আসল।
___________
কালো পাঞ্জাবির হাতা ফ্লোড করতে করতে আদ্র স্টেজের দিকে আসছে। সারাটাদিন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। আদরের বোনের বিয়েতে কোনো প্রকার ত্রুটি রাখতে চায় নি সে। তাই নিজ হাতে সবটুকু করেছে। মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে,ক্লান্তি দেহে ভর করেছে প্রখরভাবে। কিন্তু শ্যামাঙ্গিনী কে চোখে চোখে রাখার জন্য সকল ক্লান্তি কাটিয়ে রেডি হয়ে এল। মেয়েটার সারাদিনের পায়চারী আজ তার চোখে পড়েছে। তাকে দেখার তৃষ্ণায় ছটফট করতে দেখে মেয়েটা কে নিজের বুকে মিশিয়ে নিতে প্রবল ইচ্ছে জেগেছিল। শত ব্যস্ততা থাকলেও ইচ্ছে করেই আজ দেখা দেয় নি আদ্র। আড়ালে দেখে গেছে মেয়েটার অস্থিরতা। অসম্ভব শান্তি অনুভব করছে আজ। চার বছরে তাকে কাছে না পাওয়ার বিষাক্ততার বিষ শ্যামাঙ্গিনী নিজেই কাটিয়ে দিয়েছে। বাগানের কাছে আসতেই পা দু’টো থমকে গেল আদ্রর। নীল বর্ণের দু’চোখে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ল। রক্তজবার ন্যায় টকটকে লাল চোখ দুটো একদৃষ্টিতে বাগানের এক কোণায় দুটো মানুষের উপর নিবদ্ধ।
”
”
পূর্ব নিষ্পলক চেয়ে আছে তুলির দিকে। তুলির খানিকটা অস্বস্তি লাগলেও সামলে নিল । কোনো ক্রমেই আর আদ্র নামক মানুষটার কথা ভাববে না ও। আদ্র কে এড়িয়ে যাওয়া নিজের জন্য শ্রেয় মনে করল। কারণ সে তো আদ্রর যোগ্য নয় তা আদ্র নিজ মুখেই স্বীকার করেছে। এমন এক বাক্য শুনার পর তুলির প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তবুও ইনশিতার জন্য নিচে এল। কোনোভাবেই কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না সে আদ্রর জন্য দুর্বল তবে দেখা যাবে অযোগ্য বলে সরাসরি অপমান করা হবে তাঁকে। সেই ভয়ে তুলি পিছিয়ে গেল,আদ্রর মুখোমুখি না হওয়ার দৃঢ় পণ করল। মনে প্রাণে দোয়া করল আদ্রর জীবনে যোগ্য কারো আগমন হোক। কিন্তু মন!তুলির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আদ্র কে দেখাতে ইচ্ছে করছে কষ্টগুলো। চিল্লিয়ে বলতে চাইছে মন,’দেখুন না ডাক্তার সাহেব আমি ভিতরে ভিতর মৃত্যুবরণ করছি,নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছি। দয়া করে রক্ষা করুন আমায়। ভিক্ষা দিন আপনাকে।’ পূর্বের ডাকে ভাবনার জগত হতে বেরিয়ে এল তুলি। অগোচরে কৌশলে মুছে নিল কার্ণিশে লেগে থাকা জল টুকু। গলাটা বার বার ধরে আসছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আজকাল চিৎকার করে কাঁদার সুযোগ টুকুও নেই। পূর্বের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে বলে উঠল,
‘ গতকাল আসেন নি যে?ভাইয়ের বিয়ে অথচ আপনি লেট।’
আলতো হাসল পূর্ব। এক হাত পিছনে নিয়ে নম্র স্বরে জবাব দিল,
‘ আসলে একটা ফ্রেন্ডের এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওকে দেখতে হসপিটালে গিয়েছিলাম তাই গতকাল আসতে পারি নি। কিন্তু মনে হচ্ছে আজ এসেই ভালো করেছি। নইলে তো এক শ্যামবর্ণার ফোলা ফোলা কান্নামিশ্রিত ডাগরডাগর আখিঁদ্বয় সর্বপ্রথম দেখার চান্স টুকু আমি মিস করে যেতাম।’
তুলি বুঝতে পারে পূর্ব তার চোখের পানি দেখে ফেলেছে। তাই ঠোটের কোণে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,
‘ কাজল দিলে আমার চোখের এমন দশা হয়। আপনি,,,’
তুলি কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই একটা শক্তপোক্ত বলিষ্ঠ হাত তার ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। ভয়ার্ত চোখে পাশ ফিরতেই চোখে পড়ল আদ্র কে। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তুলির আদ্রর রক্তিম দৃষ্টি দেখে। পূর্ব আদ্রর তুলির হাতে ধরে রাখতে দেখে রাগে হাত মুঠো করে নিল। তুলি কে নিজের দিকে টেনে নিল আদ্র। পূর্বের দিকে তীক্ষ্ন নজর নিক্ষেপ করল তীর্যক কন্ঠে বলে উঠল,
‘ রিলেক্স পূর্ব। সুস্থ আছো এইটা কি বেশি নই?যে তোমার নয় তার জন্য রেগে যাওয়া নিছক। তাঁকে নিজের জন্য কল্পনা করার পূর্বে নিজের জীবন নিয়ে আগে একবার চিন্তা করে নিও, কারণ আদ্র নিজের অস্তিত্বে অন্যের উপস্থিতি অনুভব করার আগেই সমাপ্তির পাতা টেনে দিবে।’
পূর্বের চোখে দুশ্চিন্তা ফুটে উঠল। যা বুঝার বুঝে গেল সে। কিন্তু সে পিছাবে না। কারণ তার মন তুলি কে ভালোবেসে ফেলেছে। তুলি কে না পাওয়ার কষ্টে জর্জরিত হতে চাই না সে। আপাতত চলে যাওয়ায় সঠিক মনে হলো তার। তুলি আদ্রর কথা না বুঝলেও তার শক্তির কাছে পেরে উঠতে পারছে না। মনে পড়ে গেল আদ্রর বলা বাক্যটা। কষ্ট হলেও আদ্র তার হাত ধরে টান দিতেই চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ হাত ছাড়ুন আদ্র ভাইয়া।’
ভ্রুক্ষেপ করল না আদ্র। রাগে ক্ষোভে কষিয়ে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে তুলি কে। খুন করলেও তার এই রাগ কমবে না। কিন্তু নিজেকে কিভাবে খুন করবে সে?একটু থেমে তুলির শাড়ি ভেদ করে হাত দু’টো কোমরে চেপে ধরল। কাছে টেনে নিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,
‘ ছাড়ব না।’
তুলি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
‘ কেন ছাড়বেন না?কোন অধিকারে স্পর্শ করেছেন আমায়?আপনি আমার খালাতো ভাই। খালাতো ভাই কে এভাবে অধিকার খাটানোর অনুমতি তো আমি দেই নি।’
কথাগুলো বলতে গিয়ে অসহনীয় পীড়ন হচ্ছিল তুলির। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আঁটকে গেল। বহু কষ্টে চেপে রাখল ঠোঁট কামড়ে। আদ্রকে দেখাতে চায় না নিজের ভেঙেচুরে যাওয়া অনুভূতিগুলো, যারা কান্না রূপে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার ডাক্তার সাহেব কে অপমান করার অপরাধে। আদ্র ফিচেল স্বরে বলল,
‘অধিকার চাই তোমার?’
তুলি খানিকক্ষণ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে প্রশ্নটা বুঝার চেষ্টা করল। কিন্তু চোখে পড়ল আদ্রর চোখের কোণে চিকচিক করা জল। পলক ঝাপটাল তুলি। সে কি ভুল দেখছে?আরেকবার দেখার আগেই আদ্র তার হাত ধরে টানতে টানতে রাদিফ সাহেবের রুমের সামনে উপস্থিত হল। বাড়ির সকল মেহমান বাহিরে স্টেজের কাছে। রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগম তৈরি হয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখনই ছেলেকে দেখে দাড়িয়ে পড়লেন দু’জন। বিস্মিত চোখে তাকালেন আদ্রর পিছনে থাকা তুলির দিকে। রাদিফ সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন। সায়েরা বেগম এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবেন, পূর্ব মুহুর্তে রাদিফ সাহেব হাত দেখিয়ে বাঁধা দিলেন। ছেলের দিকে চেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন,
‘ ভিতরে এসো আদ্র। কি হয়েছে?তুলির হাত কেন ধরে রেখেছো?তুলি তুই কি কিছু করেছিস প্রিন্সেস? আমার ছেলে রেগে আছে কেন?’
তুলি জড়তা-সংকোচে আড়ষ্ট হয়ে পড়ল। জবাব দেওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পেল না। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে খালা-খালুর সামনে কল্পনা করে নি কখনো। আদ্র রাদিফ সাহেবের দিকে দৃষ্টি রেখে বিনীত স্বরে বলল,
‘ আমি তুলি কে বিয়ে করতে চাই বাবা। আশা করি জীবনে প্রথম বার আপনার নিকট কিছু চাওয়ার বিনিময়ে আপনি আমায় ফিরিয়ে দিবেন না। ‘
বাক্যগুলো ঝংকার তুলে তুলির শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছাল। মুহুর্তেই থমকে গেল তুলির পৃথিবী টা। রাদিফ সাহেবের হাসিমাখা মুখটা চোখে পড়ল তার। সেই হাসি মুখ খানা উপেক্ষা করে সায়েরা বেগমের দিকে তাকিয়ে শান্ত ও স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠল,
‘ কিন্তু আমি পূর্ব ভাইয়া কে বিয়ে করতে চাই খালা মণি। ‘
#চলবে,,,?
(ভুল -ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ গল্প খুবই তাড়াহুড়ায় লিখেছি। রি-চেইক করার সুযোগ হয় নি।)