আকাশে তারার মেলা সিজন 2 পর্ব-১১

0
2386

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -১১

কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে তুলির। আদ্রর হাত থেকে টুপ টুপ করে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝড়ছে ফ্লোরে। সাদা ফ্লোরে লাল বর্ণের তরল দেখে তুলির কান্নার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। তার মনে হচ্ছে এই রক্তক্ষরণ তার হৃদয় থেকে হচ্ছে। সেদিকে অপলক চেয়ে থেকে চোখ বুঁজে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল,

‘ কবুল।’

পরপর আরো দু’বার বলে মায়ের বুকে মাথা গুঁজে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল তুলি। আদ্রর রক্তিম চেহারার দিকে তাকানোর সাহস আর তার নেই। অন্যায় করেছে সে। বিরাট অন্যায়। আজ তুলি উপলব্ধি করতে পারছে শুধু ভালোবাসলেই হয় না,ভালোবাসার মানুষটার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়,বুঝে নিতে হয় মানুষটার অপ্রকাশিত অনুভূতি। আফসানা বেগম মেয়ে কে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

‘ কাঁদছিস কেন আম্মু?বিয়েতে কি তোর অমত ছিল?’

তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল,

‘ না আম্মু। আমি নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছি। কিন্তু আদ্র ভাইয়া আর খালামণি তো আমাকে কখনও ক্ষমা করবে না। আমি কীভাবে ওনাদের মুখ দেখাবো?আমায় নিয়ে চলো প্লিজ। নিয়ে চলো এখান থেকে। ‘

তুলির কান্নামিশ্রিত স্বরের কথাগুলো রুমে উপস্থিত সবারই কর্ণগোচর হল। সায়েরা বেগম ধীর পায়ে হেঁটে এসে তুলির পাশে বসলেন। আফসানা বেগমের কাছ থেকে টেনে নিজের কাছে আনলেন তিনি। কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। তার থেকে বেশি সারা চেহারা জুড়ে ভয় ও অনুশোচনার ছাপ। সায়েরা বেগমের বুঝতে অসুবিধা হল না অনুশোচনায়, কষ্টে ভিতর থেকে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। তিনি তুলির চোখের পানি মুছে দিলেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে ঝাপটে ধরলেন নিজের সাথে। মমতার ছোঁয়া পেয়ে তুলি অশ্রু ভরা কন্ঠে বলে উঠল,

‘ আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি খালা মণি। আমি ক্ষমার যোগ্য না। কেন তোমার বুকে জায়গা দিলে আমাকে?তবুও বলব আমায় ক্ষমা করে দাও।’

‘ তুই যা দেখেছিস,শুনেছিস তা-ই বিশ্বাস করেছিস। তোর কোনো দোষ নেই তুলি। তুই ছোট কিন্তু এটা থেকে শিক্ষা নিবি,মনে রাখবি আমরা তোকে খুব ভালোবাসি।’

সায়েরা বেগমের বুকে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল তুলি। আজ থেকে সে কারো অর্ধাঙ্গিনী। কেউ তাকে বউ বলে সম্বোধন করবে সবার কাছে। এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষটা কে নিজের করে পাবে কখনও ভাবে নি তুলি। মনের সুপ্ত কোণে সঞ্চারিত প্রণয় আজ সার্থক। কিন্তু তুলির ভয় হচ্ছে। তীব্র ভয় হচ্ছে আদ্র ক্ষমা করবে তো?

কিছুক্ষণ আগে~~

পূর্ব কে বিয়ে করার কথা বলতেই আদ্র দ্রুত গতিতে তুলির হাত টা ছেড়ে দিল। প্রচন্ড অবাক হল তুলি আচমকা আদ্র হাত ছেড়ে দেওয়াতে। আনত মস্তক তুলতেই চোখে পড়ল আদ্রর করুন চাহনি, যা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে আদ্রর হৃদয়ে সৃষ্ট হওয়া ঝড়ের বেগ। সায়েরা বেগম ছেলের চাহনি দেখে আঁতকে উঠলেন। এগিয়ে এসে তুলির দু হাত আঁকড়ে ধরে ভয়ার্ত স্বরে বললেন,

‘ কি বলছিস মা?পূর্ব কে কেন বিয়ে করবি?’

‘ কারণ আমি আদ্র ভাইয়ার অযোগ্য খালা মণি। ‘

নিচু স্বরে বলল তুলি। সায়েরা বেগমের চোখ বড় বড় হয়ে এল। তিনি অনাসয়ে বুঝতে পারলেন তুলি আদ্রর রুমে বলা কথাগুলো শুনে ফেলেছে। কিন্তু তুলি বোধহয় পুরো কথা শুনে নি। তুলি যদি পূর্ব কে বিয়ে করে তাহলে ওনার ছেলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। বহু কষ্টে চার বছর আগে ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ওনার। ছেলেটা ছোট থেকেই একাকীত্ব নিয়েই কাটিয়েছে। নিজেকে গম্ভীর প্রকৃতির হিসেবে প্রকাশ করেছে সর্বদা। কলেজ জীবনে একটু-আধটু সুখী হলেও তা স্থায়িত্ব হয় নি বেশিদিন। বরং নিজেকে আরো শক্ত করে গুটিয়ে নিয়েছিল আদ্র। রাগ হয়ে উঠেছিল তার চিরসঙ্গী। তার হৃদয়ে জমায়িত কষ্টের কাছে রাগের মাত্রা কম হলেও রাগ কেই প্রাধান্য দিয়েছে বেশি। ভাঙতে চায় নি সে তাই তো নিজেকে গড়েছে কঠোরভাবে। পরিবার থেকে দূরে থেকেছে বছরের পর বছর। সায়েরা বেগমের সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার জন্যই আদ্র পাঁচ বছর পর ফিরে এসেছে বাড়িতে একেবারের জন্য। নয়তো মাঝে মাঝে এলেও চলে যেতো। নিজের ফ্ল্যাটে আলাদাভাবে থাকত। ফ্ল্যাট টা আদ্রর দাদা আদ্রর জন্য কিনে রেখেছিলেন। তিনি আদ্র কে চোখে হারাতেন। সায়েরা বেগম তুলির দু’হাত টেনে এনে বসালেন সোফায়। পাশে বসে কোমল স্বরে বলে উঠলেন,

‘ আমার ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে মা। রনকের ফ্যামিলি কে আমরা না করে দিয়েছি।’

‘ কিন্তু আমি তো গ্রাম্য মেয়ে, আদ্র ভাইয়ার অযোগ্য খালা মণি। তোমরা আদ্র ভাইয়ার জন্য যোগ্য কাউকে খুঁজে নিও।’

তুলির ছলছল নয়ন দেখে এবার সবটাই পরিষ্কার হয়ে গেল সায়েরা বেগমের। রাতে সবাই তৈরি হওয়ার সময় সায়েরা বেগম আদ্রের রুমে গিয়েছিলেন। সকাল বেলা রাদিফ সাহেবের বড় বোন মুমতাহিনা খানম বিশাল ঝামেলা করেছেন আদ্রের বিয়ে নিয়ে। উনি চাইছেন আদ্র ওনার ছোট মেয়ে রূপসা কে বিয়ে করুক। রাদিফ সাহেব রূপসা কে ছেলের বউ করে নিয়ে যাবেন বলে বড় বোন কে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে বেঁকে যাবে তা তিনি ভাবেন নি। তাছাড়া ছেলেকে তিনি খুব ভালোবাসেন তাই ছেলের খুশি ওনার কাছে মুখ্য। আদ্র অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায় সেটা জানতে পেরেই মুৃমতাহিনা খানম ইচ্ছে মতো গালাগাল করেছে সেই মেয়েকে। বাড়ির সবাই সেই খবর না জানলেও ড্রইং রুমে যারা উপস্থিত ছিল তারা সবাই জেনেছে। আদ্র সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরেই কাজের মেয়ে রিমার কাছ থেকে সব শুনেছে। রিমা আবার আদ্র ভক্ত। বিয়ে উপলক্ষে আদ্রদের সাথে এসেছে এখানে। সব শুনে আদ্র হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। সায়েরা বেগম ছেলের অবস্থা দেখে রিমা কে দমকে আদ্রর পিছু পিছু রুমে এলেন। রুমে এসেই হন্তদন্ত হয়ে বলতে শুরু করলেন,

‘ তুলি অযোগ্য, গ্রাম্য মেয়ে এসব আমাদের দৃষ্টিতে নয় আদ্র। তোর ফুপু আম্মা রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। প্লিজ কোনো সিনক্রিয়েট করিস না। ইনশিতার বিয়েটা মিটে যাক। ‘

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল আদ্র। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

‘ তুলি অযোগ্য, গ্রাম্য মেয়ে। আমার জন্য পারফেক্ট নয়। কথাগুলো ফুপু আম্মার কাছে শ্রেয় মনে হলেও মেয়েটা আমার চোখে আমার নিঃশ্বাসের কারণ। কাউকে আমি আমার নিঃশ্বাস কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দেই নি। তাকে অপমান করারও না।’

কথাগুলো বলেই আদ্র ওয়াশরুমে চলে গেল। উত্তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন সায়েরা বেগম। অর্ধেক শোনা কথা আঁকড়ে ধরে পুরোটা বিবেচনা করা একদম উচিত নয়। সায়েরা বেগম তুলি কে সবটা খুলে বললেন। সব শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়ল তুলি। পরক্ষণেই প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠল তার হৃদয়। আদ্রর রক্তাক্ত হাত দেখে চোখে টলমল করা জল গড়িয়ে পড়তে লাগল অনবরত। সায়েরা বেগমের সাথে ছুটে আসতে নিলে হাত দিয়ে থামিয়ে দিল আদ্র। মাথা নিচু রেখেই ধরা গলায় বলল,

‘ তুলির মাথার ঘোমটা টা টেনে দাও মা। বাবা কাজী সাহেব কে নিয়ে আসছেন হয়তো। ওকে একবার জিজ্ঞেস করো তো পূর্ব কে বিয়ে করতে চাই নাকি আমাকে?’

আদ্রর এমন ব্যবহার তুলি ঠিক মানতে পারছে না । আদ্র তার সাথে রাগ দেখাচ্ছে না,কিছুই বলছে না। কিন্তু আদ্রর না বলা আর্তনাদ তুলি শুনতে পাচ্ছে। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সায়েরা বেগম কিছু বলার আগেই তুলি দ্রুত গতিতে উত্তর দিল আদ্র কে,

‘ আমি আপনাকেই বিয়ে করব।’

তখনও আদ্র মাথা তুলল না। সায়েরা বেগম ছেলের হাতের মুঠোয় থাকা ছুরি টার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। নিজের রাগ দমনের জন্যই আদ্র রাগ টা নিজের উপর ঝাড়ছে। কখন যে আদ্র পাশের ঝুড়ি থেকে ছোট্ট ছুরি টা হাতে চেপে ধরেছে কেউই খেয়াল করে নি। আর করলেই কি! এতে আদ্রর রাগ তুলির উপর দিয়ে যেতো, যা আদ্র নিজেই চায় না। রাদিফ সাহেব বাহির টা সামলিয়ে তুলির বাবা-মা এবং কাজী সাহেব কে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকল। আদ্রর হাতের দিকে চাইতেই ওনার বুক টা হাহাকার করে উঠল নিমিষেই। ছেলের বিন্দুমাত্র কষ্ট ওনার সহ্য হয় না। তাই তো আদ্রর জন্য তুলির বাবা -মার কাছে দু বছর আগেই তুলির হাত চেয়েছেন। তুলির বাবা-মা প্রথমে ভীষণ ইতস্তত করছিলেন। কেননা আদ্র তুলির থেকে বয়সে দশ-এগারো বছরের বড়। কিন্তু রাদিফ সাহেব ও সায়েরা বেগমের অনুরোধ ফেলে দিতে ব্যর্থ হল। শেষমেশ তুলির ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর বিয়ে হবে বলে ঠিক করা হয়। অথচ এখন আদ্রর জেদ ও তুলির কান্নার কাছে হার মানতে বাধ্য হল সবাই। বিয়েটা হয়ে গেল একদম গোপনে। ইনশিতার বিয়ের পর অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিলেন দুই পরিবার মিলে।
_____

রাদিফ সাহেব, সায়েরা বেগম কাজী সাহেব কে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। সাথে তৌফিক সাহেব ও বেরিয়ে গেলেন। আফসানা তুলির শাড়ি টা ঠিকঠাক করে দিয়ে মুখ মুছে তুলি কে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তুলি তার মা’র হাত টা ধরে বলল,

‘তুমি যাও আম্মু। আমি একটু পর আসছি। ওনার হাত টা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চলে আসব।’

মেয়ের কথায় মৃদু হাসলেন আফসানা। মাথায় হাত বুলিয়ে সায় জানিয়ে চলে গেল। আদ্র তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে। হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে এখনও। তুলির ভয় হচ্ছে এখন। বেশি রক্ত ঝরলে তো ক্ষতি হবে এই লোকটা কি ডাক্তার হয়ে বুঝতে পারছে না?সায়েরা বেগম ব্যান্ডেজ করতে গেলে আদ্র সাফ জানিয়েছে,

‘ আমি করে নিব মা। ইনশিতার কাছে যাও। আমি চাই না আমার বোন শূন্যতা অনুভব করুক। একটু পর আমিও চলে আসব। আর হে, বাহিরে যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ বিয়ের কথা টের না পায়।’

আদ্রর শেষ কথাটা শুনে সবাই প্রচন্ড চমকাল। হয়তো আদ্র ভালো কিছু ভেবেই এমনটা বলেছে সবাই এটাই ধরে নিল। একে একে সবাই চলে গেলে তুলি ভীত-সন্ত্রস্ত পায়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আদ্রর সামনে এসে বসল। কাঁপা কাঁপা হাতে আদ্রর কাটা হাত টা আলতো করে স্পর্শ করতেই মাথা তুলে প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকাল আদ্র তুলির দিকে। প্রগাঢ় সেই দৃষ্টিতে বক্ষস্থলে তীব্রভাবে কম্পন অনুভত হল তুলির। কেঁদে দিল শব্দ করে। কাঁদতে কাঁদতে আদ্রর হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগল। কোনো প্রকার বাঁধা দিল না আদ্র। তুলির হাত টা ধরে নিচ থেকে টেনে তুলে সোফায় বসাল। পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ থেকে ঝরে পড়া অবাধ্য জল গুলো মুছে দিতে লাগল। তুলি ভেবেই কুল পাচ্ছে না একটা মানুষ এমন কি করে হয়?তুলি মানুষ টা কে আঘাত করেছে। মানুষটার অনুভূতি গুলো উপেক্ষা করেছে,অস্বীকার করেছে,অবিশ্বাস করেছে তবুও তার
এতো যত্ন!তুলির দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আদ্র। আদ্রর রক্তিম বর্ণের চোখে তাকিয়ে তুলি অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলে উঠল,

‘ আমায় ক্ষমা করে দিন আদ্র।’

‘ তুমি আমায় ভেঙে দিয়েছ তুলা। হাতের রক্তক্ষরণ দেখতে পেলেও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দেখার সক্ষমতা তুমি অর্জন করো নি। তোমার প্রতি আমার অভিযোগ নেই তাই ক্ষমা করার প্রশ্নই উঠে না। তবে আমি তোমায় স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না। ‘

আদ্রর গম্ভীর স্বরের কথাগুলো বিষাক্ত তীরের ন্যায় তুলির বুকের ঠিক বা পাশে গিয়ে বিঁধল। সদ্য বিবাহিতা তুলির দুনিয়া থমকে গেল আদ্রর মুখের শেষ বাক্যে। শূণ্যতায় খা খা করে উঠল হৃদপিণ্ড। কম্পিত গলায় প্রশ্ন করল,

‘ মানে?’

তুলির গালে এক হাত রাখল আদ্র। চোখে রাগের আভাস থাকলেও গলার স্বর শান্ত।

‘ এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছে তোমায় গলা টিপে মেরে ফেলি পূর্ব কে বিয়ে করতে চাওয়ার অপরাধে। পরমুহূর্তে মনে হলো আমি বাঁচতে চাই, আর বাঁচার জন্য তোমার প্রয়োজন। তাহলে তোমায় কিভাবে নিঃশেষ করি বলো?আমি তোমাকে ভালোবাসি তুলা। আমি তোমার যোগ্যতা দেখি নি বরং বহু বছর আগে তোমার মধ্যে নিজের বেঁচে থাকার কারণ দেখেছি। তুমি ভালোবাসা অনুভব করলেও বিশ্বাস করার যোগ্যতা অর্জন করো নি। যেদিন আমার ভালোবাসায় বিশ্বাসের যোগ্যতা অর্জন করবে সেদিনই স্ত্রীর মর্যাদা পাবে তুমি।এতোকাল অপেক্ষা করেছি, আরেকটু নাহয় করব।’

তুলি বুঝতে পারল আদ্রর কথাগুলোর মর্মার্থ। আজ আদ্র সঠিক। ভুল তো সে ছিল। আদ্র চলে যেতে নিলে হাত ধরে আঁটকে দিল। অস্ফুটস্বরে ডাকল,

‘ আদ্র!”

স্মিত হাসল আদ্র। তুলির হাত ছাড়িয়ে কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের মুখ বরাবর তুলে ধরল তুলির দেহ টা। উত্তাল ঢেউ গর্জে উঠলো তুলির বুকে। আলতো হেসে বলে উঠল,

‘ বাহ্!বেশ ভালো করেছেন আদ্র। আমি তো আরো ভাবছিলাম কীভাবে আপনার বরাবর হবো। একটুখানি মেয়ে আমি। যাক সুবিধা করে দিলেন ডাক্তার সাহেব। ‘

আদ্র তুলিকে আরেকটু কাছে টেনে নিল। মাদকতায় ভরপুর নীলাভ চোখ দুটো তুলির সারা মুখে বুলালো। সারা মুখ জুড়ে কিছু সেকেন্ডের ব্যবধানেই লজ্জার ছাপ ফুটে উঠেছে। লজ্জামিশ্রিত মুখখানা আদ্রর সবটুকু রাগ নিঃশেষ করে দিল। তুলির কপালে কপাল ঠেকিয়ে দুষ্টমির স্বরে বলল,

‘ যদি ফেলে দেই?’

‘ জানি ফেলবেন না। তবে সুযোগ যখন পেয়েছি একটা কথা বলে দেই?যদি কখনও আর সুযোগ নাহয়!’

তুলির কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল আদ্র। নড়ে উঠল তুলি ভালোবাসার উষ্ম ছোঁয়ায়। পড়ে যেতে নিলে আদ্রর গলা আঁকড়ে ধরল শক্ত করে। আদ্রর সম্মতি পেয়ে বুকে মুখ গুঁজে লজ্জামিশ্রিত স্বরে বলে উঠল,

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি আদ্র । ‘

#চলবে,,,!

( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here