আকাশে তারার মেলা সিজন 2 পর্ব-৫৫

0
2330

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব__৫৫( অন্তিম)

‘ তু,,তুলা কে বিয়ে দিয়ে দিব ফুপু আম্মু।’

পাঁচ বছরের অদ্রির মুখে উচ্চারিত বাক্যে চক্ষু জোড়া বড় বড় হয়ে এল ড্রইং রুমে উপস্থিত সকলের। সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল তুলির ললাটে। ঠোঁট দুটো কিঞ্চিৎ সংকুচিত। ছোট্ট অদ্রির দিকে তেড়ে আসতেই,সে লুকিয়ে পড়ল ইনশিতার পিছন। ইনশিতা হাত বাড়িয়ে সামনে টেনে আনল।মেয়েটার দিকে তাকালেই চক্ষু ফেরানো দায় হয়ে পড়ে। গায়ের রং একদম আদ্রর মতো। গাল দুটো লাল লাল আভায় ছেয়ে থাকে সর্বদা। চোখ! তা তো একদম মায়ের গুলো পেয়েছে বললেই চলে। ছোট্ট অদ্রিও ডাগরডাগর আখিঁদ্বয়ের অধিকারীণি। ইনশিতা সোফায় বসে গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল অদ্রির। বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

‘ তোমার মা কে তুমি বিয়ে দিবে কেন প্রিন্সেস?’

ইনশিতার মায়াময় কন্ঠে আরেকটু গুটিশুটি মেরে গেল অদ্রি। নাক ফুলিয়ে আঁড়চোখে চাইল টুকটুকে লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা তুলির পানে। কোমরে হাত দিয়ে পলকহীন তার দিকেই চেয়ে আছে তুলি। মিহি স্বরে বলে উঠল অদ্রি,

‘ সকালে রোয়ান ভাইয়ার চুল টানছিলাম। আমি মনে করেছি ভাইয়া আরাম পাবে। কিন্তু ভাইয়া আম্মুর কাছে বিচার দিয়েছে আমি নাকি ইচ্ছে করে ভাইয়ার মাথায় ব্যাথা দিয়েছি। আম্মু আমাকে বকেছে। আম্মু আমার থেকেও রোয়ান ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসে, তাই আমি বিয়ে দিয়ে দিব। কুমিল্লার তুলা কে কুমিল্লা পাঠিয়ে দাও। আমাদের বাসায় রেখো না ফুপু আম্মু। বাবাই থাকলে কখনও বকতে পারত না আমাকে।’

তুলির মাথা ঘুরতে লাগলো। অদ্রির পাকা পাকা কথায় হতভম্ব,নির্বাক!চেহারায় এক ফালি বিস্ময়। আমরিনের হাতে থাকা মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে আদুরে বুলি আওড়ালো অদ্রি।

‘ ফুপু আম্মু টু, বাবাই কে কল দাও প্লিজ। বলবে অদ্রি তাকে খুব মিস করছে। এখনই না আসলে আমি কষ্ট পাবো,কাঁদব। ‘

আমরিন করুণ চাহনি নিবদ্ধ করল তুলির দিকে। তুলির ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। অদ্রির এই এক স্বভাব কিছু হলেই বাবাই চায় তার। মেয়েটা ঠিক তার মতোই নাজুক হয়েছে। ছোট্ট ধমকেই কাঁদতে শুরু করে ঠোঁট ভেঙে। ইনশিতা কপালে চুমু এঁকে দিল। স্মিত হেসে বললো,

‘ রোয়ান কে আচ্ছামতো মাইর দিব আজ। হ্যাপি?’

ঠোঁট ছাড়িয়ে হাসল অদ্রি। হাসবেই না কেন! রোয়ান কে মোটেও সহ্য হয় না তার। সারাক্ষণ তার উপর ছোট খাটো টর্চার করে। যেমনঃ চকলেট কেঁড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে,চুলে তেল দিয়ে দেয় একদম চুবা চুবা করে,আরও অনেক অনেক কান্ড। গাড়ির শব্দ কর্ণগোচর হতেই অদ্রি খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল। ছোট ছোট পা ফেলে প্রস্থান করল ড্রইং রুম। তুলিও ছুটে এল মেয়ের পিছু পিছু। অদ্রির চক্ষে খুশিতে পানি চিকচিক করছে। সেদিকে চেয়ে মৃদু হাসি ফুটে উঠল তুলির অধর কোণে। মা ও মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষের প্রতীক্ষায়। এটাই দু’জনের অভ্যেস। প্রতিদিন অপেক্ষা করা মানুষ টার জন্য। আদ্র গাড়ি থেকে নেমে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। দ্রুত বেগে হেঁটে এসে গায়ের জ্যাকেট টা জড়িয়ে দিল অদ্রির গায়ে। ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,

‘ এতো ঠান্ডায় বাহিরে দাঁড়ানোর দরকার ছিল না।’

‘তোমাকে না দেখলে শান্তি লাগে না বাবাই।’

আদ্র তড়িৎ গতিতে তুলির দিকে এক পলক চাইল। পরক্ষণেই অদ্রিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

‘ আমারও লাগে না। তা আজকে কি কোনো বিচার আছে আপনার মায়ের নামে?’

অদ্রি প্রতিদিন কোনো না কোনো বিচার দেয় তুলির নামে। মা-মেয়ে একদম মিলে না। মান-অভিমান লেগেই থাকে দু’জনের। কিন্তু মায়ের সামান্য একটু মন খারাপ, কষ্ট অদ্রির দ্বারা সহ্য হয় না। কেননা এতে তার বাবার বুকে যন্ত্রণা হয়। অদ্রি ধীর স্থির ভঙ্গিতে বললো,

‘ তুলার জন্য জামাই খুঁজতে হবে বাবাই।’

সাথে সাথেই চমকপ্রদ দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকাল তুলি। এই মেয়ে কি বলছে এসব?জামাই খুঁজতে হবে মানে?আমার তো জামাই আছে। ভয়ংকর এক ডাক্তার সাহেব আছেন। তুলি আনমনে আওড়ালো। আদ্র তুলির একদম কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তুলির চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল,

‘ দেখেন তো আমাকে আপনার আম্মুর জামাই হিসেবে পছন্দ হয় কিনা মিস তুলনা আহনাফ অদ্রি?’

তুলি মস্তক লজ্জায় নত হয়ে গেল। লাল প্রলাপে ঢেকে গেছে শ্যামবর্ণ কপোল দুটো,যা আদ্রর চোখে আটকালো। বিঁধল ঠিক বুকের বা পাশে। অদ্রি আদ্রর দিকে একটু চেয়ে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা তুলির দিকে তাকাল। আহ্লাদী স্বরে বলে উঠল,

‘ আমার বাবাইকে পছন্দ তো তোমার আম্মু?’

ইশ!এই মেয়েটা বাবার বৈশিষ্ট্য যেন অক্ষরে অক্ষরে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে। যার ফলস্বরূপ এতটুকু বয়সে ঠোঁট কাটা স্বভাবের হয়েছে। তুলি মনে মনে বলে উঠল-‘ পছন্দ তো খুবই নগন্য শব্দ। ডাক্তার সাহেব কে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা দুষ্কর।’

ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত আদ্র। নিশ্চুপ তুলির দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,

‘ তুমি কিন্তু আবারও তুলা বলে ডেকেছ অদ্রি। বাবাই নিষেধ করেছিলাম।’

‘ স্যরি বাবাই। আমার যখন আম্মুর প্রতি বেশি বেশি ভালোবাসা পায় তখন ডাকি। নামটা মিষ্টি লাগে। কারো সামনে ডাকব না। কিন্তু আম্মুকে কানে কানে ডাকব।’

মেয়ের কথা শুনে তুলি চট করে মাথা তুলল। ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে এল নিমেষ৷ আদ্র কোল থেকে নামিয়ে ইনশিতার পাশে বসিয়ে দিল অদ্রি কে। ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠল,

‘ তিন্নি,আরিশ,রোয়ান কোথায়?’

‘ তিন্নি,আরিশ ঘুমোচ্ছে ভাইয়া। রোয়ান কে নিয়ে রনক ভাইয়া বাহিরে গেছে।’

পাশ থেকে প্রতুত্তর করল আমরিন। তিন্নি,আরিশ তার ছেলেমেয়ে। টুইনস বেবী হয়েছে আমরিনের। বয়স দু’বছর। আদ্র কোনো কথা না বলে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। অর্ধেক সিঁড়ি অতিক্রম করে থমকে গেল আকস্মিক। ঘাড় ফিরিয়ে চাইতেই তুলি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল পিছন পিছন। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। ইনশিতা, আমরিন মুখ টিপে হাসছে।

রুমে প্রবেশ করা মাত্র আদ্র দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তুলির কোমর পেচিয়ে কাছে টেনে আনল প্রচন্ড জোরে। বিন্দু মাত্র দূরত্ব রাখে নি দু’জনের মাঝে। ধুক করে কেঁপে উঠল তুলির বক্ষঃস্থল। হুড়হুড় করে কম্পন ছড়িয়ে পড়ল দেহের প্রতিটি অংশে,সর্বাঙ্গে। পুরো কায়া শিউরে উঠছে। আচমকা আদ্রর স্পর্শে নেতিয়ে পড়ছে তুলি। সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস বিমোচন করে দিল আদ্র। শাড়ি ভেদ করে আগ্রাসী হস্ত দু’টো বিচরণ করতে লাগল উম্মুক্ত অংশে। আঁখিপল্লব বন্ধ হয়ে গেল তুলির খানিকক্ষণ আগেই। আদ্রর শার্টের কিছু অংশ মুষ্টিমেয় করে নিল। শ্বাস ফেলতে লাগল অত্যন্ত ধীরে ধীরে। নত হয়ে গালে গাল স্পর্শ করাতে মগ্ন আদ্র। কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিচেল স্বরে বলে উঠল,

‘ আবারও মোবাইল ভেঙে ফেলি এটাই চাও?নাকি বয়রা হয়ে গেছো? কতগুলো কল দিয়েছি, একটা বারও পাই নি। তুমি কি জানতে না তোমার রিনঝিন স্বর আমার কর্ণধার নাহলে ক্লান্তি আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেই? স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারি না।’

নিরুত্তর তুলি। তার নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আদ্রর অ্যাডামস অ্যাপল বরাবর। আদ্রর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে, আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে। কিয়ৎক্ষণ কেটে যেতেই তুলি মুখ খুলে। নিচু স্বরে বললো,

‘ আমি নিচে ছিলাম আমরিনের সাথে,শুনতে পাই নি। আপনার মাথা ব্যাথা করছে ডাক্তার সাহেব?’

‘ উঁহু!আজকাল মাথা ব্যাথা করে না। ব্যাথা করে হৃদপিণ্ড। প্রিয় তুলা কে এক নজর না দেখতে পেলে যন্ত্রণা অনুভব হয়,ছুটে আসতে ইচ্ছে করে হসপিটাল থেকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ডাক্তার হয়ে ভুল করে ফেললাম, বঞ্চিত করছি চোখ দুটোকে তুলাকে সারাটাদিন অবলোকন করা হতে।’

তুলির কপালে গভীর ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আস্তে আস্তে সরে গেল আদ্র। গায়ের শার্ট টা খুলে টাওয়াল নিয়ে ঢুকে পড়ল ওয়াশরুমে। ধপ করে বিছানায় বসল তুলি। বুকটা কাঁপছে প্রচন্ড। প্রখর অনুভূতিতে ভরে যাচ্ছে মন,অন্তরাত্মা, চিত্তপট।

এখনও সেই ভয়াবহ মুহুর্তগুলো মনের আয়নায় প্রস্ফুটন হলে তুলি ভয়ে জমে যায় বরফ ন্যায়। তুলির যখন আদ্রকে দেখার জন্য কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা তখন পায়েল বাধ্য হয়ে আদ্রর সিচুয়েশন খুলে বলে। সব শুনে এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলেও পরমুহূর্তে পাগলের চিল্লিয়ে কেঁদেছে। বার বার আবদার করেছে আদ্রর কাছে নিয়ে যাওয়ার। মেয়ের মুখটা পর্যন্ত দেখে নি। তুলির অস্থিরতা, পাগলামিতে বাধ্য হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আদ্রর কাছে। আদ্র কোনো কথা বলে নি। নিবিড় কে ইশারা করে তুলিকে তার পাশে শুয়ে দিতে বললো। শুয়ে দিতেই অসুস্থ শরীর নিয়ে তুলি আদ্রর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ডাক্তার কিছু বলতে চেয়েও আদ্রর জন্য বলতে পারল না। আদ্র পিঠে হাত রাখতেই তুলি অস্পষ্ট কান্নারত কন্ঠে বলে,

‘ আমাকে ফেলে যাবেন না ডাক্তার সাহেব। কে আগলে রাখবে আমাকে?তুলা ডাক না শুনলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারব না, বাঁচা হবে না আমার আপনি বিহীন।’

তুলির কথায় আদ্রও কেঁদেছে নিঃশব্দে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা বেড়ে গিয়েছিল প্রবল। মনে মনে শুধু তুলির সুখ ভিক্ষা চেয়েছে। নিজেকে ধাতস্থ করে,সামলে নিয়ে সাগর দিন-রাত এক করে আদ্রর ট্রিটমেন্ট করেছে। তুলি কে কেউ আদ্রর কেবিন থেকে সরাতে পারে নি। পনেরো দিনের মাথায় আদ্র শঙ্কা মুক্ত হয়েছে। বাড়িতে আনার পর তুলি তার সেবা করার চেষ্টা করলেও আদ্র দেয় নি। বরং অসুস্থ শরীর নিয়ে যতটুকু সাধ্য হয়েছে প্রাণ প্রিয় তুলার কেয়ার করে গেছে। মাথা ব্যাথায় কুঁকড়ে যেতে দেখেছে তুলি আদ্র কে দিনের পর দিন। এত বড় এক্সিডেন্টে বেঁচে যাওয়াটাই অনেক। নিজের ব্যাথা লুকিয়ে আদ্র তুলির জন্য ভেবেছে শুধু।

চোখের কার্নিশে নরম স্পর্শ অনুভূত হতেই তুলি নড়েচড়ে উঠল। চকিতে তাকাল সম্মুখে। আদ্র সবটুকু জল শুষে নিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল,

‘ চোখে পানি কেন?আর যদি দেখি তাহলে বেলকনি থেকে ফেলে দিব। চলো এখন খেতে যাবে।’

আদ্রর ছোট্টখাট্ট হুমকিতে তুলি স্মিত হাসল। সমান তালে হাঁটতে লাগল আদ্রর পাশে। এখন নিচে যেতে হবে। আদ্র নিজ হাতে খাইয়ে দিবে তাকে ও অদ্রিকে। প্রতিদিন এমনটাই করে। এটা যেন তার নিত্যকার অভ্যাস।
_____________

হৈচৈ, কোলাহলে ভরে গেছে বাড়ির প্রতিটি কোণা কোণা। বাচ্চাদের ছোটাছুটি তে মুখরিত চারপাশ। কয়েকজন বাচ্চা কাচ্চা একত্রিত হলেই পুরো বাড়ি মাথায় তুলার জন্য যথেষ্ট। তুলি,আমরিন নাস্তার ট্রে নিয়ে ছাঁদে এল। হলদে নিয়ন আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে পুরোটা ছাঁদ। মেঝেতে বিছানো পাটিতে বসে আড্ডায় মশগুল আদ্র ও তুলির বাবা মা। অন্যদিকে নিবিড়, অন্তু, পায়েল,রিমি,ইনশিতা, রনক সকলে কথা বলছে বসে বসে। তুলি ভ্রুঁ কুঁচকে চারপাশে চাইল। আদ্র তো এখানে ছিল?তুলি নাস্তার প্লেট রাখতেই পায়েল অন্তুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ রাহিন কে ডেকে নিয়ে আয় অন্তু। ও তো কিছুই খায় নি।’

‘ ওর খিদে লাগলে খেয়ে নিবে। হয়ত খিদে লাগে নি।’

কথাটা বলতে দেরি হলেও পায়েলের তেঁতে উঠতে এক সেকেন্ডও লাগল না। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল,

‘ এখন যাবি তুই। আলসে একটা!ছেলের জন্য মায়া নেই।’

অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল অন্তু। ছেলের পিছন পিছন ঘুরতে ঘুরতে বেচারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাহিন খুব দুষ্ট প্রকৃতির। তিন বছর বয়সে তার দুষ্টামির শেষ নেই। পা বাড়াবে তার পূর্বেই আদ্র সকল বাচ্চা পার্টি নিয়ে ছাঁদে হাজির হলো। আহান ও ঝুমুও আসল সাথে। তুলি আনন্দিত দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রর দিকে। তুলি কবে ধরে বলছিল সবাই একসাথে হয় না অনেকদিন, আহান ঝুমুকেও দেখা হয় না। ইচ্ছে টা আজ পূর্ণ করে ফেলল আদ্র। এই মানুষ টা কে যত ভালোবাসবে তুলি ততই কম হবে। তুলির কাছে নিজের অস্তিত্ব মানেই ‘আদ্র’।

আহানের মেয়ে আনিশার গালে ছোট্ট একটা চুমু খেল তুলি। সবাই আজ পরিপূর্ণ। এক,দুই বাচ্চার বাবা-মা হয়ে গেছে। রিমি ও ইনশিতা আবারও মা হবে। পূর্ব কে আসতে বলেছিল আদ্র। কিন্তু হুট করে কানাডা থেকে আসা তো সম্ভব নয়। তবে খুব শীগ্রই আসবে বাংলাদেশে তিশা ও ত্রিহান কে নিয়ে। গতবছরই কানাডা চলে গিয়েছিল। মাঝে সাঝে কথা হয় ভিডিও কলে তিশা,ত্রিহান,পূর্ব ও দাদির সাথে।

অম্বর,অন্তরিক্ষে হাজারো তারাদের বিচরণ। পুরো আকাশ দখল করে নিজেদের শাসন চালাচ্ছে। ঝলমল করে আকৃষ্ট, বিমোহিত করে চলেছে মানব জাতিকে। ছাদের কার্ণিশে ঠেসে দাঁড়াল তুলি। শীতে জুবুথুবু অবস্থা!তার উপর বিশুদ্ধ, হিম শীতল গায়ে কাটা দিচ্ছে। আদ্র এক হাতে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিল। তুলি মুগ্ধময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল উজ্জ্বল ফর্সা মুখটায়। অন্তরে বইছে মৃদুমন্দ হাওয়া। আদ্র সবার অগোচরে চুলের ভাঁজে ছুঁয়ে দিল ওষ্ঠ যুগল। খুবই আলতোভাবে। সম্মুখে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে ম্লান হাসল। তুলিও চাইল। সবার হাসিখুশি মুখগুলো দেখে হৃদয় জুড়িয়ে আসছে। বুকে মাথা রেখে শান্তিতে চোখ বুঁজে অনুভবের জগতে পাড়ি জমালো। অনুভব করতে লাগল আদ্রর হৃদস্পন্দন। সেই সাথে শুনল আদ্রর মাদকতায় ভরপুর কন্ঠস্বর।

‘ বিশাল, বিস্তর আকাশের ন্যায় আমারও একটা আকাশ আছে তুলা। যেই আকাশে আমার প্রিয় মানুষগুলো ঝলমল করছে তারা হয়ে। সূদুর ওই আকাশে তারার মেলা প্রতিনিয়ত বসে না, কখনও কখনও ঢেকে যায় কালো,কৃষ্ণ মেঘে। কিন্তু আমার আকাশ!তাতে মেঘ আসলেও তারার মেলার সমাপ্তি ঘটে না কভু।’

[ সমাপ্ত ]

(আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন প্রিয় পাঠক/পাঠিকা? অবশেষে গল্পটা সমাপ্ত হলো। আমরা সবাই জানি,কোনো মানুষই ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। দীর্ঘ সময় ধরে গল্পটা লিখেছি। অনেক ভুল থাকতে পারে। গল্পটা কেমন হয়েছে সেটা আমি ঠিক বুঝব না। কারণ আমার কাছে মনে হবে আমি ভালোই লিখেছি। আপনারা কষ্ট করে আজ মন্তব্য করে যাবেন গল্পটা কেমন হয়েছে প্লিজ। আদ্র-তুলিকে কেমন লেগেছে অবশ্যই বলবেন। থিমটা খুব একটা বিশেষ ছিল না। জীবনের সুখ,দুঃখ, ভালোবাসার মুহুর্তগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমার দ্বারা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করে দিবেন। গল্পটা কেমন হয়েছে বলবেন কিন্তু! আপনাদের মন মতো হয়েছে কিনা জানাবেন।🖤🖤🖤🖤)

পিক ক্রেডিট ঃ তাঈব❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here