আকাশে_তারার_মেলা ✨পর্ব-১৬

আকাশে_তারার_মেলা ✨পর্ব-১৬
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মন মাতানো হাওয়া গায়ে মেখে নিচ্ছে তুলি। একটু আগেই বাসায় এসেছে। গভীর রাতে ভেসে আসা শীতল বাতাস চোখে মুখে এসে লাগতেই দু’ চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে মগ্ন হয়ে পড়েছে । মনের মধ্যে জমে থাকা ভালো লাগা টা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।তুলির কাঁদতে ইচ্ছে করে। ভীষণ ইচ্ছে করে কাঁদতে। কল্পনাতীত ছিল জীবনে আদ্রর মতো একটা মানুষ কে পাওয়া। বাবা-মায়ের ভালোবাসা থেকে বছর খানেক আগে বঞ্চিত হওয়ার পর কখনও আর এমনভাবে কেউ আগলে রাখে নি তাকে। এই পরিবারের প্রত্যেক টা সদস্য কতটা নির্লিপ্ত ভাবে আপন করে নিয়েছে তাকে। আদ্রর ভালোবাসা তার হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা সবটুকু কষ্টই নিঃশেষ করে দিয়েছে। এতো বেশি তো তুলি তার ছোট্ট জীবনে কখনও চায় নি। তবুও চাওয়ার চেয়ে বেশিই তার প্রাপ্য হয়েছে। আদ্রর মুখের প্রশস্ত হাসি তার প্রশান্তির এক বিশেষ কারণ। আকাশে ছড়াছড়ি তারা গুলো ও হয়তো বিশাল খুশি তুলির জন্য। তাই তো এতো ঝলমল করছে। প্রশস্ত চাঁদ ও তার জোস্না ছড়িয়ে দিয়ে চারদিক টা কেমন আলোকিত করে রেখেছে। তুলির মনেও যে স্বচ্ছ আলোর ছড়াছড়ি। ভালোবাসার আবেশে দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ছে মেয়েটা। আজকাল তো মনে হয় জীবনে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আদ্র। মিনমিন করে ধীর কন্ঠে বলল,,,

–” আমি আমার এতো বছরের জীবনে কিছুই করতে পারি নি আদ্র কিন্তু আপনাকে অর্জন করতে পেরেছি। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমার “আদ্র আহনাফ। ” সময়ের স্রোতে শত সাফল্যতা আমায় ধরা দিলেও আপনিই আমার শ্রেষ্ঠ অর্জন হয়ে থাকবেন চিরকাল।”

–” তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন নয় তুমি আমার অস্তিত্ব তুলা।”

আচমকা পুরুষালি ভরাট কন্ঠ শুনে তুলির হৃদপিণ্ড টা ছলকে উঠল বজ্রপাতের ন্যায়। ভয় পেলেও মুখে ফুটল মৃদু হাসি। ইশ্! ওনি কিভাবে শুনে ফেললেন? মনে মনে প্রশ্নটা করেই পাশ ফিরে আদ্র কে নিজের খুব নিকটে পেল। থরথর করে কাঁপতে লাগল বুক টা। আদ্রর চোখে ঘুমের রেশ। লাল হয়ে আছে চোখ দুটো। নেশা মিশ্রিত চোখে চেয়ে ছোট্ট একটা ধাক্কা খেল হৃদয়ে। মুখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। নীরবতা কাটিয়ে প্রশ্ন করল,,,

–“না ঘুমিয়ে এখানে কি করছেন? ”

–” তোমার সাথে আকাশে তারার মেলা দেখতে আসলাম।”

—” তারা গুলো অনেক সুন্দর তাই না?”

কোনো জবাব দিল না আদ্র। তুলির কোমরের একপাশে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিল। জমে গেল তুলি। এক হাত দিয়ে খামচে ধরল রেলিং এ রাখা আদ্রর এক হাত। মুখ তুলে চাইতেই চাঁদের ঝলমলে আলোয় দৃষ্টি আঁটকে গেল আদ্রর মুখের দিকে। তুলির চোখ যতবারই আদ্র তে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ততবারই বেহায়া মন আঁটকে যায় আদ্রর চেহারায়। নিজেকে তখন ফিকে লাগে তুলির কাছে। আবছা আলোতে ও আদ্রর চেহারায় কতটা উজ্জলতা। আর নীলাভ দু’টি চোখের মাদকতা তো গ্রাস করে নিচ্ছে তুলি কে। তুলির ইচ্ছে করছে আদ্রর সারা মুখে কালি মেখে দিতে। ঐ অসভ্য, ফাজিল মেয়েটা ও সুদর্শন বলেছিল যা মনে পড়লেই মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় তুলির। দাঁত কিড়মিড় করে দমিয়ে রাখছে রাগ টুকু কে। তুলির চোখের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসল আদ্র।

–“আমার তুলার চোখে রাগের আভাস দেখতে পাচ্ছি কেন?”

–“ঐ মেয়েটার জন্য। “(তুলির সোজা সাপ্টা জবাব)।

–” তুমি তো মেরেই ফেলতে মেয়েটা কে। বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা কিন্তু অনেক,,, ”

আদ্র কে বলতে না দিয়ে আদ্রর হাতে খুব জোরে কামড় বসিয়ে দিল তুলি। ব্যাথায় কিছুটা বিরক্তি সূচক শব্দ বেরিয়ে এল আদ্রর মুখ থেকে। ভেজা বেড়াল হয়ে গেল তুলি। আদ্র রাগী চোখে তাকাতেই বলে উঠল,,

—“মিথ্যা কথা বলতে আঁটকে দিলাম ডাক্তার সাহেব। মেয়েটা যখন এসেছিল আপনার চোখ তো মোবাইলেই নিবন্ধ ছিল আর বাকি সময়টুকু আমাকে সামলাতে। ”

–” এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না আমাকে রাক্ষসের মতো কামড় বসিয়ে দিলে। বড্ড বাড় বেড়েছে তোমার।”

কথাটা বলেই তুলির দুহাত পিছন থেকে চেপে ধরে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিল আদ্র। ভয়ে চুপসে গেল তুলির মুখ টা। সে তো ভেবেছিল আদ্র হয়তো কিছু বলবে না কিন্তু এখন তো আদ্রর রাগী কন্ঠ শুনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হার্ট বিট ও হচ্ছে দ্রুত গতিতে। ভয়ের চোটে তুলি গড়গড় করে বলল,,

–“ভুল হয়ে গেছে ডাক্তার সাহেব। আর এমন অপরাধ করব না। আপনি চাইলে সারা রাত আপনার পা টিপে দিব। মাথা টিপে দিব। গলাও টিপে দিব। হি হি হি।”

–“গলা ও টিপে দিবে তুলা?”–চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করল আদ্র।

ঢোক গিলল তুলি। আরও কিছু বলতে নিলে ঠোঁটে আদ্রর আঙুলের স্পর্শ পেয়ে থমকে গেল। প্রকান্ড এক তুফান শুরু হল হৃদমাঝারে।মুখে হাসি ঝুলিয়ে আদ্র খানিকটা ঝুঁকে গেল তুলির দিকে। লজ্জায়, অভিসঙ্কায় ধুকপুক করতে লাগল তুলির বুকটা। কিছুটা পিছনে হেলে যেতেই আলতো করে তুলির অধরে নিজের ওষ্ঠদ্বয় বুলাল আদ্র। আগের চেয়েও অধিক জমে গেল তুলি। চোখ বুঁজে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়ল। আমতাআমতা করে বলে উঠল,,

–“আমি পড়ে যাব আদ্র।”

–“ভয় নেই। আমি আছি না?”

ধপ করে চোখ মেলল তুলি। আদ্রর নেশাময় চাহনি তে স্থির করল নিজের দু চোখ। আদ্রর মুখে উচ্চারিত কথাটা অনাবিল শান্তি বয়ে আনল তুলির মনে। অনুভূতি গুলো ও গহীনে চিৎকার করে বলতে লাগল,,–“ভয় নেই তুলি। তোর ডাক্তার সাহেব আছে তো।” এতোটা আশ্বাস দিয়ে কথা তো কখনও কেউ বলে নি। কেউ তো তার জন্য এতোটা ভাবে নি। হাতে হ্যাঁচকা টান অনুভব করতেই আদ্রর বুকে গিয়ে পড়ল। বুকে মাথা ঠেকিয়ে আদ্রর পিঠে নিজের দু হাত রেখে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। পরম আবেশে আবারও বুঁজে নিল ডাগরডাগর আঁখিদ্বয়। পূর্ণতা যেন তুলি কে ঘিরে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে। আজও শান্তির একটা ঘুম হবে তার। তুলির ছোট্ট জীবনের একটাই শান্তির উৎস তার ডাক্তার সাহেব ।আদ্রও কিছুক্ষণ তুলি কে জড়িয়ে রেখে নরম স্বরে ডেকে উঠল,,

–“তুলি?”

কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারদিকে নিস্তব্ধতার মাঝে তুলিও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। কোন শব্দই আদ্রর কর্ণগোচর হল না। তুলির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে মেয়েটা। এই মেয়ের এতোক্ষণ ঘুম আসছিল না অথচ আদ্রর প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতেই পাড়ি জমাল ঘুমের রাজ্যে। কোলে তুলে রুমে এনে শুয়ে দিল আদ্র। এসির পাওয়ার টা কমিয়ে দিয়ে কাঁথা টেনে দিল গায়ে। তুলির একটা অভ্যেস আছে শীত হোক কিংবা গরম বারো মাসই গায়ে কাথা দিয়ে ঘুমায়।তার মনে এক উদ্ভট ধারণার বসবাস আছে তা হল– গায়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে না ঘুমালে কেউ তাকে পা ধরে টেনে নিয়ে যাবে। প্রথম প্রথম তুলির উদ্ভট অভ্যেস টা শুনে ভীষণ চমকেছিল আদ্র। তার মন বলল– মেয়েটা আসলেই নিতান্তই বাচ্চামো স্বভাবের।তুলির মাথার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল কোনো শব্দবিহীন। তৈলাক্ত মুখে চোখ বুলিয়ে গভীর একটা চুমু খেল কপালে। নেশাতুর কন্ঠে উচ্চারণ করল,,

–” আর তো মাত্র কয়েক টা মাস। তারপর সতেরোর গন্ডি পেরিয়ে আঠারো তে পা রাখবে তুমি। ঠিক অপেক্ষা করে নিব যেমন টা করে এসেছি বছরের পর বছর। মাসখানেক পেরুলেই প্রতি রাতে আমার বুকেই হবে তোমার ঠাঁই। নিত্যদিনের মতো নতুন নতুন অনুভূতি নিয়ে উড়ে বেড়াবে আমার অন্তরের গহীনে।”

______
খয়েরী কালার লেহেঙ্গা পড়ে ওড়না টা এক সাইডে মেলে দিল তুলি। কালো লেহেঙ্গা টা দু হাতে আঁকড়ে ধরে দ্রুত গতিতে ছুটে এল আমরিন। বড় বড় শ্বাস ফেলে বলল,,

–“এই তুলি হয়েছে তোর?ভাইয়া নিচে অপেক্ষা করছে। ভাইয়ার কিন্তু লেইট করা একদম পছন্দ না।”

–“হুম চল।”

আমরিনের সাথে বের হয়ে আসল তুলি। লেহেঙ্গা দু হাতে আগলে নিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অলরেডি কিছুটা লেইট করে ফেলেছে সে। আদ্র হয়তো রেগে বোম হয়ে আছে। একদমই তাকাবে না তুলি আদ্রর দু চোখে। তাকালেই দেখা যাবে চোখ থেকে আগুনের ফুলকি ঝড়ে পড়ছে যা নিমিষেই ভস্ম করে দিবে তাকে। তার চেয়ে ভালো সোজা গাড়ি তে বসে পড়বে। মাথা নুইয়ে হাঁটতে লাগল তুলি। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে সামনের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল আদ্র। শ্বাসরুদ্ধ করে কয়েক পলক নিশ্চুপ আঁটকে রইল তুলির মাঝে। স্থির তার মাদক চাহনি। ভিতর থেকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে তুলির কৃষ্ণবর্ণী চোখ দুটো। নিমিষেই আদ্রর বক্ষপিঞ্জর এলোমেলো হয়ে গেল। কোনো ক্রমেই সরিয়ে আনতে পারছে না দু চোখ। আদ্রের সান্নিধ্যে এসে দাঁড়াতেই আনমনেই হাত টা চেপে ধরল আদ্র। লজ্জায় চুপসে গেল তুলির মুখটা। ঠোঁট টিপে হেসে আমরিন গিয়ে গাড়িতে বসল। তুলির শক্তি আদ্রের বলিষ্ঠ হাতের তুলনায় নিছক। তাই মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

–“কি করছেন?”

–“তুমি কি করছো?”—ঘোর লাগা কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করল আদ্র।

থতমত খেয়ে গেল তুলি। গলার জোর খানিকটা বাড়িয়ে বলে উঠল,,

–“মানে?”

হাত টা টেনে সম্মুখে দাড় করাল তুলি কে। ড্যাবড্যাব চোখে তুলি তাকিয়ে রইল আদ্রর চোখে। এই চোখের মাদকতা কাটিয়ে উঠা যে তুলির জন্য দুঃসাধ্য। আদ্রর নেশাময় কন্ঠে কিছু কথা শুনে পিলে চমকে উঠল তুলির। বজ্রপাতের ন্যায় শুনাল কথাটা। আদ্রর ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি। কানে এখনও ঝংকার তুলে বাজছে আদ্রের কথাটা।

–” তুমি আমায় নেশা ধরিয়ে জিজ্ঞেস করছো কি করছি? নিজেকে সংযত করে রাখতে পারো না? এই যে আমার বেহায়া চোখ আঁটকে যাচ্ছে তোমার উম্মুক্ত গলায়। এখন কিছু করলে তো বলবে আমি অসভ্য।”

ইশ! কি লজ্জা! তড়িঘড়ি করে ওড়না টা ঠিক করে নিল তুলি। সামনের দিকে পা ফেলতেই আবারও টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসল আদ্র। একটু নত হতেই লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল তুলি। মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়াল আদ্র। তুলি কে সামনে বসিয়ে দরজা টা লাগাতে লাগাতে বলে উঠল,,,

–“আজকেই বিয়ে টা করে নিলে মন্দ হয় না। তোমার লাল রাঙা ঠোঁট দুটো ভীষণ টানছে আমাকে।”

চোখের আকৃতি বড় করে পিছনে তাকাল তুলি। আমরিন কে কানে হেডফোন গুঁজে রাখতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল। তুলির কাছে আদ্র কে এখন ঠোঁট কাটা বেহায়া মনে হয়। এতো ম্যাচুরিটি সম্পন্ন মানুষ অথচ কত লাগাম ছাড়া কথা বার্তা তার। জায়গায় জায়গায় তুলি কে লজ্জায় শিহরিত করার জন্য প্রস্তুত থাকে। বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দ টা এখনও সমানতালে বেজেই যাচ্ছে।


গাড়ি থেকে নেমে নিজের ব্লেজার টা আদ্র তুলির দিকে এগিয়ে দিল। জড়তা নিয়ে ব্লেজার টা পড়িয়ে দিল তুলি। হৃদয়ে শীতল বাতাস অনুভব করল। উপলব্ধি করতে পারল বউ হওয়ার অনুভূতি। ভিতরে গিয়ে রিমির সাথে দেখা করল তুলি ও আমরিন। বরযাত্রী ও এসে গেছে। সাগরের সাথে ও কৌশল বিনিময় করে অন্যদিকে যেতে নিলে কোথা থেকে ছু করে এসে আদ্র তুলি কে জড়িয়ে নিল এক হাতে। লজ্জার৷
ছাপ ফুটে উঠল তুলির দু গালে। দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে নিবে তার আগেই থামিয়ে দিল আদ্র। এক পলক তাকিয়ে সামনের দিকে চেয়ে বলে উঠল,,

–“তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে পুরো বিয়েতে। বউ হারালে বউ পাব কিন্তু তুলা কে কেউ উড়িয়ে নিয়ে গেলে আমি নিঃশেষ হয়ে যাব। তার চেয়ে ঢের ভালো নিজের কাছেই বন্দী করে রাখি।”

–“কিন্তু! ”

–“কোনো কিন্তু না। দূরে একটা মহিলা কে দেখতে পাচ্ছো?”

সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। মহিলা টা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে কপাল কুঁচকে। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে তুলি জবাব দিল,,,

–“হু।”

–“ওনি অলরেডি তোমাকে ও আমরিন কে ওনার দুই ছেলের হবু বউ বানিয়ে ফেলেছেন। আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করছিলেন আমি তোমাদের ভাই কিনা! তাই একটু দেখিয়ে দিলাম কার ভাই আর কার লাগি হাসবেন্ড। ”

কিছুক্ষণ বিস্মিত হয়ে রইল তুলি। মিনিট খানেক পর মুচকি হেসে আদ্রর এক হাত নিজের এক হাতে মুষ্টিমেয় করে নিল।কিছুটা আওয়াজ করে মহিলা টা কে শুনানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠল,,,

–“আমি অলরেডি বুকিং। শুনেছি প্রত্যেক মানুষের জন্মের পিছনে একটা উদ্দেশ্য থাকে। আর আমার জীবনের উদ্দেশ্য এই মানুষটার জীবনসঙ্গিনী হওয়া।”

তুলির কথা শুনে এক রাশ মুগ্ধতা ঘিরে ধরল আদ্র কে। প্রচন্ড অবাক হচ্ছে আদ্র। বয়সে ছোট মেয়েটাও আজকাল কেমন পাগল করে দেওয়া কথা বলে। প্রত্যেক টা কথা হৃদয়ে গেঁথে যায়। অনুভূতি গুলো ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভালোবাসা মানুষ কে সত্যিই প্রচন্ড বেহায়া বানিয়ে দেয়। আর ভালোবাসার কাঙ্গাল মানুষ গুলো তো একটুখানি ভালোবাসা পেলেও আগলে রাখে নিজের চেয়েও যত্ন করে।


ওয়াশরুমে হাত টা ধোঁয়ার জন্য এসেছিল আমরিন। বের হতে না হতেই কে যেন দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরল তাঁকে। ভয়ে চোখ বন্ধ রেখেই কাঁপতে লাগল অনবরত। চোখে মুখে অনুভব করতে লাগল গরম নিশ্বাস। পেটে অজ্ঞাত মানুষটার হাতের স্পর্শ পেয়ে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল তার।হাতের বিচরণ ক্রমশ বাড়তে লাগল। আর না পেরে চোখ মেলে তাকালো আমরিন। ছলছল চোখদ্বয়ে ভেসে উঠল নিবিড়ের রক্তিম বর্ণের চেহারাটা।

—” আমার ফোন ধরছিলি না কেন তুই? আমাকে পাগলের মতো বানিয়ে এখন নিজেই পিছু হটে যাচ্ছিস? মন চাইল কয়েকদিন প্রেম করলি আবার মন চাইল যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি? তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে ছেড়ে দিব? আজ তোর ভাইয়ের সামনেই আমি সব বলব তুই কতটা বেড়েছিস। আজকাল কেমন চিট করাও শিখে গেছিস।”

ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেল আমরিনের। দুই দিন ধরে নিবিড়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করছে না সে। নিবিড়ের হাত টা জড়িয়ে ধরে বলল,,

–” আমার দোষ নিবিড়? তোমার কোনো দোষ নেই? তোমার এসিস্ট্যান্ট শিপরা আপুর সাথে তোমার এতো কিসের মেলামেশা? ওইদিন কলেজ থেকে ফিরার পথে আমি দেখেছি ওনি তোমার সাথে গাড়িতে ছিল। তুমি ওনার কাছেই যাও। আমার কাছে কি?”

কথাটা বলতে দেরি হলেও আমরিনের গাল চেপে ধরতে একটু ও দেরি করল না নিবিড়। অগ্নি কন্ঠে বলে উঠল,,

–” শিপরা আমার এসিস্ট্যান্ট, বউ না। কাজের সুবাদে বিভিন্ন মিটিংয়ে সাথে যায়। তোর লজ্জা করল না এমন বাজে ভাবনা আনতে? এই তোর ম্যাচুরিটি। সামান্য দেখার দোষে তুই আমায় দু’টো দিন যন্ত্রণা দিয়েছিস? তোকে কঠোর শাস্তি দিব আমি । যন্ত্রণায় ছটফট করবি তুই। ”

আমরিনের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল নিবিড়। সরাতে চেয়েও সরাতে পারছে না আমরিন।

—” তুই আমার এতো বছরের ভালোবাসা গুলো এক নিমিষেই মিথ্যে দাবি করলি আমরিন। আমি শান্তিতে থাকতে দিব না তোকে। রেডি থাকিস কালই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোর বাড়িতে হাজির হবো।”

কথাটা বলে আর এক মিনিট ও দাঁড়াল না নিবিড়। আমরিন রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে। নড়ার শক্তি টুকু ও হারিয়ে ফেলছে। কি ভাববে আদ্র ও পরিবারের সবাই? কিভাবে ফেইস করবে নিজের পরিবার কে?আর এতো জলদি বিয়ে? চিন্তিত হয়ে পড়ল আমরিন। তুলিই পারবে এটার সমাধান করতে সেটা ভেবে পা বাড়াল।
_____

ছাদে আড্ডার আসর জমেছে। একপাশে বিভিন্ন খাবার,কোল্ড ড্রিংকস রাখা। রাতের আঁধারে ছাদে করা লাইটিংয়ে সবকিছু মিলিয়ে বেশ জমজমাট লাগছে। সাগরদের বাসা এটা। ছাদ টা বেশ সুন্দর। একপাশে সুইমিংপুল ও আছে। তুলি প্রথম বার এমন ছাদ দেখেছে। মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করে যাচ্ছে পুরো ছাদ টা। বিয়ে শেষে সবাই চলে এসেছে সাগর দের বাসায়। আজ রাত টা আদ্রর পুরো বন্ধু মহল এখানেই কাটাবে। আমারিন ও তুলি যেহেতু তাদের গ্রুপেরই একটা অংশ তাই তারাও এখানে। সবাই বসে আড্ডা দিলেও তুলির গলা শুকিয়ে গেছে তাই পানি খেতে আসল। আদ্র কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। পানি না পেয়ে একটা কোল্ড ড্রিংকস এর বোতল খুলে এক ঢোক পান করল তুলি। সাথে সাথেই মুখ টা কুঁচকে ফেলল। মাথা টাও কেমন ঝিম ধরে গেল। পরক্ষণেই আরেকবার মুখে দিতেই ভীষণ মজা পেল। একেবারে পুরোটা সাবার করেই দম নিল। অন্য একটা নিয়ে খেতে লাগল।মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত মুখে এগিয়ে এল অন্তু। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

–“পুরোটা খেয়ে নিলে তুলি?”

–“হু। ভাইয়া আপনার কি জমজ ভাই আছে? ইশ! আপনার জমজ ভাই টা দেখতে ঠিক আপনার মতো।

তুলির উল্টা পাল্টা কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল অন্তু। ভয়ে বেচারার হার্ট টা ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। আদ্র যদি জানতে পারে তাহলে আর আস্ত রাখবে না। এসব আদ্র মোটেও পছন্দ করে না। এতো বছরের বন্ধুত্বে কখনও আদ্র কে নেশা জাতীয় কিছু পান করতে দেখে নি। এসবের নাম শুনলেও মাথায় রক্ত উঠে যায় আর সেই জায়গায় তুলি পুরো দুই দুটো বোতল খেয়ে ফেলেছে। তুলি মাতাল স্বরে বলে উঠল,,,

—“আমার আদ্র বেবি কই গেল? ”

জিভ কাটল অন্তু। আমতাআমতা করে বলল,,

–“তুলি বোন আমার এখান থেকে এক পা ও নড়াবে না ঠিক আছে? আমি তোমার জন্য দৌড়ে গিয়ে লেবু পানি নিয়ে আসছি।”

–“আচ্ছা।”

অন্তু যেতেই তুলি কে আর পায় কে। ঢুলতে ঢুলতে সবার সামনে এসে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠল,,

–“আমি সবাই কে গান শুনাবো, নাচও দেখাব।”

তুলির এমতাবস্থায় চমকে গেল সবাই। আমরিন উঠে আসতেই তুলি ঠেলে আমরিন কে সরিয়ে দিল। কড়া গন্ধে আমরিনের আর বুঝতে বাকি রইল না। সুইমিংপুলের কাছে ভাই কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠল আমরিন। আদ্র এখনও উল্টো ঘুরে কথা বলছে। আবারও আটকাতে যাবে এর মধ্যেই তুলি গেয়ে উঠলো,,

“পরে না চোখের পলক।”
“কি তোমার রূপের ঝলক!”

লাইন টা গেয়েই চোখের পলক ঝাপটা তে লাগল। সবাই তো প্রচন্ড অবাক। ঢুলু ঢুলু পায়ে আদ্রের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আদ্র পিছন ফিরতেই নিজের ওড়নার কিছু অংশ আদ্রের মুখের উপর দিয়ে আবারও গেয়ে উঠলো।

“দোহাই লাগে মুখটি তোমার আঁচলে ঢাকো।”
“আমি জ্ঞান হারাব, মরে যাব
বাঁচাতে পারবে না কেউ। ”
“ওও আমি জ্ঞান হারাব, মরেই যাব বাঁচাতে পারবে না কেউ।”

সত্যিই শেষমেশ মেয়েটা কে কেউই বাঁচাতে পারল না। গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল আদ্র। রাগে আক্রোশে ফেটে পড়ছে। থাপ্পড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে সুইমিংপুলে পড়ে গেল ধপ করে।বাকি সবাই তো ভয়ে প্রগাঢ়পাড়। অন্তুু তো লেবু পানি রেখেই লুঙ্গি ধরে ভোঁ দৌড়।

#চলবে,,,,

( গতকাল গল্পটা দিতে পারি নি তার জন্য দুঃখিত। অর্ধেক লিখা ছিল কিন্তু এতটুকু তো পোস্ট করা যেত না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here