#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ০৭
পরদিন নিবির তখন ঘুম থেকে উঠেই নি। গতকাল যে অত্যাচার তার উপর দিয়ে গেছে। তাতে যে সে বেচে আছে এটাই বেশি। নিবিরের হাত-পা অনেক জায়গায় কেটে কেটে গেছে। তার চেহারাই চেঞ্জ হয়ে গেছে। নিবির ইস্পেশাল ক্রিমিনাল সাইটের রুমের ফ্লোরে পরে ঘুমোছিল। একটু পরে ইন্সপেক্টর আসে। সে নিবির কে ডাকে কিন্তু নিবির সব ব্যাথা ভুলে গভীর ঘুমে ব্যস্ত। ইন্সপেক্টর নিবিরের উপর পানি ঢেলে দেয়। নিবির লাফ দিয়ে উঠে বসে পরে। সে ইন্সপেক্টর কে বলে,” ম্যাম আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন প্লিজ!” ইন্সপেক্টর তাকে পানি খেতে দেয়। নিবির সব টুকু পানি সাবার করে দিয়ে একটা দীর্ঘ স্বাস ফেলে। ইন্সপেক্টর তাকে আবার বলে,” দেখ নিবির, যত তারা তারি তুমি তোমার দোষ স্বীকার করতে তত তোমার জন্যই ভাল। তোমার সাজা কমবে। নইলে তোমার উপর এরকম চার্য চলতেই থাকবে। ” নিবির ফুপিয়ে কেদে উঠে বলে,” ম্যাম আমি কিছু জানি এই খুনের ব্যাপারে। আমি শুধু সেদিন রেস্টুরেন্টে খেতে গেছিলাম। আমি খুন করি নি। ” এই বলে নিবির আরো জোরে কাদতে থাকে। ইন্সপেক্টর আর কিছু বলে না। সে[ইন্সপেক্টর] এক কন্সট্রেবল কে নিবিরের জন্য খাবার দিতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রুম থেকে বেরুনোর পর তার[ইন্সপেক্টরের] অ্যাসিস্টেন্ট কন্সট্রেবল কে বলে,” আচ্ছা ছেলে টা কি খুন করতে পারে?” অ্যাসিস্টেন্ট কিছু বলার সাহস পায় না। ইন্সপেক্টর তাকে[অ্যাসিস্টেন্টকে] আবার জিজ্ঞেস করে বলে,” আপনি পাবে না। বলেন আপনার মতে কি হতে পারে?” কন্সট্রেবল তখন বলে,” ম্যাডাম আমার তো প্রথম থেকে মনে হচ্ছে ছেলেটা খুন করে নি। ওর চেহারা টা দেখছেন একদম বাচ্চা ছেলেদের মত নিষ্পাপ।” “আমারও এরকমই মনে হচ্ছে। কিন্তু আবার মনে হচ্ছে খুন টা ওই করেছে।” বলে ইন্সপেক্টর তার চেয়ারে বসে পরে আর কন্সট্রেবল তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ইন্সপেক্টর মেয়েটা তখন কন্সট্রেবল কে বলে, ” আরে ভুইয়া সাহেব বসেন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?” কন্সট্রেবল বলে,” ঠিক আছে ম্যাডাম কোন সমস্যা নাই। আমি দাড়িয়েই ঠিক আছি।”
ইন্সপেক্টর এর বয়স হবে ২৪-২৫ বছর এর মত। দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু সে এই পুলিশের চাকরিই বা কেন নিয়েছে তা একমাত্র সেই জানে। তার কোয়ালিফিকেশনও অনেক ভাল। অনেক ভাল ভাল চাকরি পেত। কিন্তু সে এই পুলিশের চাকরিই নিয়েছে। অন্যদিকে তার অ্যাসিস্টেন্ট কন্সট্রেবল এর বয়স হবে ৬০-৬৫ বছর এর মত, অনেক টা বুড়ো হয়েগেছে বেচারা। তাই হয়ত ইন্সপেক্টর মেয়েটা তাকে [কন্সট্রেবলকে] বাবার সম্মানের খাতিরে বসতে বলছে। ইন্সপেক্টর মেয়েটা মাত্র কয়েক মাস হয়েছে পুলিশে জয়েন করেছে।
যাহোক, কন্সট্রেবল নিবির কে খাবার নিয়ে দেয়। কিন্তু নিবির কোন মতেই তা খেতে ইচ্ছুক না। খাবেই বা কিভাবে তার উপর যে মার্ডার কেস এর আরোপ লাগানো হয়েছে। তারউপর যে অত্যাচার! তাতে খাওয়া তো দুরের কথা বেচে থাকাই তার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে। অনেকটা সময় কাটানোর পরে নিবিরের পেটে আর কিছু মানে না। তার এখন শুধু খাবার চাই। কোন কিছু না দেখে সে তার সামনে দেওয়া খাবার খেয়ে নেয়।
নিবিরের হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সে হাটতেই পারছে না। সে কোন রকম ভাবে চেয়ারে বসে টেলিবে মাথা ঠেকিয়ে আবার শুয়ে পরে। একটু পর ইন্সপেক্টর চলে আসে। ইন্সপেক্টর এসে দেখে নিবির ঘুমিয়ে পরেছে। খুব মায়া হয় নিবিরের জন্য ইন্সপেক্টর এর। সেও[ইন্সপেক্টর] এখন ভেবে নেয় বেচারার[নিবির এর] উপর অযথা লাঠি চার্য চালাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে তাকে[নিবির] এই খাচা থেকে মুক্ত করে দিতে। কিন্তু এখানে তার কোন কিছুই করার নেই। কারন এই কেস উপর পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে এখন তার[ইন্সপেক্টর ] আর কোন পাওয়ার নেই। তাকে শুধু নিবিরের খুন এর কারন জানার জন্য সব পাওয়ার দেওয়া হয়েছে।
ইন্সপেক্টর নিবিরের দিকে তাকিয়ে নানান চিন্তা করতে থাকে। এরমধ্যেই চিফ ইন্সপেক্টর চলে আসে। চিফ ইন্সপেক্টর এসে শব্দ করতেই ইন্সপেক্টর মেয়েটা ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকে[চিফ ইন্সপেক্টর ] কে স্যালুট করে। এরপর বলে উঠে [ইন্সপেক্টর মেয়ে], ” স্যার আপনি এখানে!” চিফ ইন্সপেক্টর বলে,” হ্যাঁ। আমি এখানে এসেছি ও[নিবির] কি ওর দোষ স্বীকার করেছে আর ম্যাজিস্ট্রেট কে কেন মেরেছে বলেছে কিছু।” ” না স্যার এখন অব্দি কিছু বলে নি অনেক টর্চার করেছি ওর উপর কিন্তু কচ্ছু বলে নি। বার বার শুধু বলছে ও নাকি খনু করে নি।” এই বলে ইন্সপেক্টর মেয়েটা নিবিরের দিকে একপলক চেয়ে দেখে। নিবির এখনও ঘমোচ্ছে। চিফ ইন্সপেক্টর আবার বলে,” খনু ওই করেছে। আরো হার্ড টর্চার চালাও। দেখো এমনি মুখ খুলবে।” এই কথা শুনে ইন্সপেক্টর মেয়েটা একটু থমকে যায়। তারপর আবার বলে,” স্যার ওর উপর সব কিছু চালিয়েছি কিন্তু ওর মুখে একই কথা। এর চেয়ে বেশি টর্চার করলে ও মরেই যাবে।” চিফ ইন্সপেক্টর বলে,” মরু’ক তাতে কি প্রবলেম। কিন্তু ওর মুখ দিয়ে স্বীকার করাতেই হবে। ” শেষের কথা গুলো ইন্সপেক্টর মেয়েটার বুকে গিয়ে লাগে। তার মনে উদয় হয়, আমাদের[পুলিশের] কাজ দোষী কে শাস্তি দেওয়া আর নির্দোষ কে শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া। কিন্তু তার অফিসার তাকে একজন ব্যাক্তি নির্দোষ হওয়া শর্তেও তাকে[নিবির] মারার কথা বলছে। ইন্সপেক্টর মেয়েটা বলে উঠে,” কিন্তু স্যার….. ” সম্পুর্ন কথা সে[ইন্সপেক্টর মেয়েটা] শেষ না করতে চিফ বলে উঠে, ” কোন কিন্তু না! তোমাকে যে কাজ করতে বলছি। তুমি সে কাজ করো।” ” ইয়েস স্যার! ” বলে চুপ হয়ে যায় সে[ইন্সপেক্টর মেয়েটা]। এরপর চিফ ইন্সপেক্টর চলে যায়।
ইন্সপেক্টর মেয়েটার এখন নিবিরের জন্য খারাপ লাগতে লাগে। সে নিবির কে ডেকে তোলে। এরপর সে জিজ্ঞেস করে,
– আমি তোমাকে পার্সোনালি বলছি, তুমি কি সত্যি ম্যাজিস্ট্রেট কে খুন করেছো? যদি করে থাকো আমাকে বল। আমি তোমার সাজা কম করে দেব। নইলে এভাবে থাকলে তোমাকে মারতেও ওদের[পুলিশ] কোন দ্বীধা করবে না।
– আমি আর কত বার বলব। আমি বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি যে, আমি খুন করি নি। আমি মত্র দু-তিন দিন হলো ঢাকা এসেছি।[এতিম বাচ্চাদের মত করে বলে নিবির]
– কিন্তু এর তো কোন প্রমান নেই যে তুমি খুন কর নি। আর তোমাকে বাচাবো।
কিছুক্ষন মাথা নিচু করে নিবির কিছু একটা ভাবতে থাকে এরপর আবার বলে,
– আচ্ছা আমি এটা বুঝতে পারছি না যে, প্রথমে আপনি আমাকে মারার নির্দেশ দিলেন। এর এখন আসছেন বাচানোর জন্য। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
– আসলে আমরা যত ক্রিমিলান ধরেছি তাদের কে তোমাকে যে টর্চার করেছি তার অর্ধের টর্চার করতেই তারা তাদের সত্য কথা বলে দিয়েছে। কিন্তু তোমাকে অনেক অত্যাচার করেছি তাও তুমি খুনের দায় নাও নি। এতে স্পষ্ট যে তুমি খুন টা করো নি। কিন্তু আমার উপরে যারা আছে, তারা আর কাউকে ধরবে না তোমাকেই চালান করে দিবে। কিন্তু তোমার জন্য আমার মায়া হচ্ছে।
– পুলিশের আবার মায়াও আছে?
– আর কারো আছে কি না আমি জানি না। কিন্তু আমি কোন অন্যায় সহ্য করতে পারি না।
– হুম তবে শুনেছি, রেস্টুরেন্টের এক ওয়েটার নাকি আমার পক্ষে সাক্ষি দিতে রাজি হয়েছে।
– ওহহ! তাহলে তো বেচেই গেলে।
কথা শেষ হতেই ইন্সপেক্টর তার কক্ষে চলে যায়। আর নিবির সে বন্ধি খাচাতেই পরে থাকে।
বিকেলে সুপ্ত আসে নিবিরের সাথে দেখা করতে। নিবির তখন আনমনে বসেছিল। সুপ্ত এসে নিবিরকে ডাক দেয়। নিবির সুপ্তর ডাক শুনতেই দৌড়ে আসতে যায়, ঠিক তখনই হোচট খেয়ে পরে যায়। কারন তার পা পুলিশের মাইরে এতই দূর্বল হয়ে পরেছে যে, সে হাটতেই সক্ষম না আর দৌড় তো দুরের কথা। এই দেখে সুপ্তর চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। নিবির মেঝে থেকে আবার উঠে দাঁড়ায়। আর সুপ্তর দিকে ধীরে ধীরে হেটে আসতে থাকে। নিবির সুপ্তর কাছে পৌছে গেলে সুপ্ত নিবিরের হাত জড়িয়ে ধরে বলে,” আসলে দোষ টা আমারই ছিল। কারন আমিই তোকে ঢাকা নিয়ে এসেছি। আমি যদি তোকে জোর করে ঢাকা না নিয়ে আসতাম। তাহলে আজ তোকে পুলিশের মার খাওয়া লাগত না।” নিবির একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,” আরে নাহহ! তুই তো আমাকে ঢাকা নিয়ে এসে আরো ভাল করেছিস। তুই যদি আমাকে ঢাকা না নিয়ে আসতি, তাহলে আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ইচ্ছে অপূর্ণই থাকত।” ” তোর জীবনের সব চেয়ে বড় ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যেত মানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সুপ্ত। নিবির বল,” থাক তুই বুঝবি না। তোকে অন্য সময় বলব!” নিবিরের এই কথা শুনে সুপ্ত আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে না। এরপর সুপ্ত আবার বলে উঠে,
– আজ সকালে তোর মেইল আসছে। তোর চাকরি পাকা হয়ে গেছে। আগামী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে তোকে অফিসে জয়েন দিতে হবে। নইলে তোর চাকরি চলে যাবে।
– আজ কয় তারিখ?
– ২৭ তারিখ!
– তার মানে ৮ দিনের মধ্যে অফিসে জয়েন করতে হবে। কিন্তু আমাকে যে মার্ডার কেস এর আসামী বানিয়ে দিয়েছি।
– আমি তাদের সাথে সে ব্যাপারেও কথা বলেছি। আমরা যদি প্রমান করতে পারি তুই খুব করিস নি। অর্থাৎ তোর এই কেস যদি আদালতে ফলস প্রমান করতে পারি। তাহলে তোকে তারা চাকরি টা করতে দিবে কোন প্রবলেম নেই।
– কিন্তু আমার কি এই কেস থেকে রেহাই হবে?
– হবে না কেন? তুই তো আর খুন করিস নি। তাহলে ওরা তোকে এভাবে টর্চার করবে কেন?
নিবির অনেকক্ষন চুপ থাকে। তারপর নিবির সুপ্তর চাকরির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। সুপ্ত বলে,” ওটা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না।” আরো অনেক সময় তারা কথা বলে। তারপর ইন্সপেক্টর এসে সুপ্তকে চলে যেতে বলে। সুপ্ত আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/