আত্মতৃপ্তি পর্ব ০৮

0
317

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ০৮

অবশেষে কোর্টে যাওয়ার দিন চলে আসে। আজ নিবিরকে কোর্টে নিয়ে যাবে পুলিশ। সকাল থেকে সেই প্রস্তুতিই চলছে। করা গার্ড এর সাথে কোর্টে নিয়ে যাবে নিবির কে। কন্সট্রেবল এসে নিবিরের হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাদের গাড়িতে নিয়ে যায়। তার[নিবিরকে যে গাড়িতে তুলেছে সেই গাড়ি] গাড়ির সামনে দুটো গাড়ি আর পিছনে তিনটে গাড়ি দাড় করিয়ে রেখেছে। এরপর ইন্সপেক্টর কন্সট্রেবল সবাই গাড়িতে উঠে পরে কোর্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়ির মধ্যে সব কন্সট্রেবল নিবিরের দিকে করা ভাবে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন জার্নি করার পর তার কোর্ট পৌছে যায়। কোর্টে এর ফাস্ট কেস নিবিরদেরই। তাই তারা কোর্টের ভিতর ঢুকে পরে। ওদিকে সুপ্ত আর ইশতিয়াক ওয়েটারকে নিয়ে অনেক আগেই কোর্ট পৌছে যায়। নিবির কোর্টের ভিতর ঢুকতেই সুপ্তদের দেখতে পায়। সুপ্ত দৌড়ে নিবিরের কাছে আসে। আর নিবির কে বলে,” দোস্ত তুই চিন্তা করিস না! আমি তোকে যেভাবে হোক ছাড়িয়ে নিব। আর তুই যে দোষী না সেটাও প্রমান করে দিব।” নিবির কিছু বলে না শুধু সুপ্তর কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে গেলে। একজন কন্সট্রেবল সুপ্তকে ধমক দিয়ে বলে,” যা সর এখান থেকে।” এই বলে সুপ্তকে দূরে সরিয়ে দেয়। সুপ্তর খুব রাগ হয় কন্সট্রেবল এর উপর। তার ইচ্ছে করে কন্সট্রেবলকে খুন করার। কিন্তু এমনিতেই এক সমস্যার সমাধান পাচ্ছে না সে। তাই আরেক সমস্যা ঘটাতে চায় না সুপ্ত। সে তার রাগকে দমন করে নেয়।

নিবিরকে কোর্টের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়। কিছুক্ষন ওয়েট করার পর জর্জ চলে আসে। শুরু হয়ে যায় তাদের লড়াই। অনেক সময় ধরে তাদের কেস চলতে থাকে। সবার বুকে শুধু ধুক ধুক করতে থাকে। যেন রুহ একবার বেরিয়ে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে। সব শেষে জর্জ সাহেব তার রায় ঘোষণা করেন।

সবাই কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে। পুলিশ, নিবির, সুপ্ত, ইশতিয়াক সবাই। সুপ্ত, নিবির আর ইশতিয়াক কোর্ট এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। দূর থেকে ইন্সপেক্টর দেখে মুচকি হাসে। তার[ইন্সপেক্টর ] হাসির কারন কেউ বুঝতে পারে না। তার[ইন্সপেক্টর] পার্সোনাল কন্সট্রেবল তার দিকে তাকিয়ে বলে,” ম্যাম একটা মার্ডার কেস এর আসামী ছাড়া পেয়ে গেল আর আপনি হাসছেন।” ইন্সপেক্টর কন্সট্রেবল এর দিকে তাকায়। কন্সট্রেবল ভয় পেয়ে যায়। তখন ইন্সপেক্টর বলে,

– আপনি কিভাবে জানলেন যে ওই[নিবির] খুনটা করেছে?

– মানে?

– মানে আপনি কিভাবে শিউর হলেন যে খুনটা ওই করেছে? যেখানে কোর্টই প্রমান করতে পারল না! আর যদি ওই খুনটা করে থাকে তবে ও কোন স্বাধারন ছেলে না। আর ওর সাথে আমি খুব শীগ্রই দেখা করব।

– ম্যাম আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।

– আপনাকে কিছু বুঝতে হবে না। আপনারা পুলিশ স্টেশনে চলুন।

ইন্সপেক্টরসহ সব পুলিশ আবার পুলিশ স্টেশনে ফেরত চলে যায়। তবে নিবিরকে রেখে, কারন নিবিরকে আর জেলে রাখার অনুমতি নেই তাদের।

ওদিকে সুপ্ত ইশতিয়াক কে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে বুঝতে পারছে না। সুপ্ত ইশতিয়াক কে জিজ্ঞেস করে,

– তোকে কত টাকা দিতে হবে?

ইশতিয়াক এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে বলে উঠে,

– আমি তোকে খুন করব যদি টাকার কথা বলিস!

– তুই আমার জন্য কাজ করেছিস তোকে তো পারিশ্রমিক দিতে হবে।

– এসব কথা ছাড় এখন। আমি যদি এই ছোট একটা কাজের জন্য পারশ্রমিক নিই, তাহলে আমরা আর বন্ধু হলাম কোথায়।

– তার মানে তুই ফ্রিতে কাজ করলি?

– কে বলছে ফ্রিতে কাজ করলাম! চল আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াবি।

সুপ্ত মুচকি একটা হাসি দেয়। হাসি টা ছিল অনেক রহস্য জনক। এই হাসির রহস্য খুজে বের করা খুব কঠিন। হাসির মাঝে একটু সুখ ছিল, একটু দুঃখ ছিল, একটু বন্ধুত্তের পরিচয় ছিল আর একটু নিরাশের ছায়া ছিল। কেউ বুঝতে পারে না এই হাসির রহস্য। এরমধ্যে নিবির বলে উঠে, ” আমি কিন্তু ওই রেস্টুরেন্টে[তাজ রেস্টুরেন্ট] আর যাব না!” এই বলে নিবিরে একটু পিছন সরে যায়। সুপ্ত আর ইশতিয়াক হেসে বলে,” আচ্ছা ওই রেস্টুরেন্টে যাব না। আমরা অন্য রেস্টুরেন্টে যাব।” নিবিরের ওই রেস্টুরেন্টের কথা মনে পড়লেই ভয় লাগে।

তিনজন মিলে রেস্টুরেন্টে যায় খাওয়ার জন্য। তারা গল্প করতে করতে খেয়ে নেয়। সব শেষে ইশতিয়াক বলে উঠে,

– দোস্ত তোরা মজা কর আমার যেতে হবে?[ইশতিয়াক ]

– যাবি মানে আর কিছুক্ষন থাক আমাদের সাথে।[সুপ্ত]

– হুম আর কিছুক্ষন থাকেন না প্লিজ![নিবির]

– না আজ আর থাকতে পারব না। সুপ্ত তুই তো জানিসই আমি খাওয়া-দাওয়ার সময় টুকু পাই না। অনেক কাজ পরে আছে।[ইশতিয়াক ]

– আপনাকে আমি আবারো ধন্যবাদ জানাই। কারন আপনি আমার অনেক বড় একটা উপকার করেছে।[নিবির]

– আরে আর বলতে হবে না। আর তুমি কিন্তু আমাকে আপনি করে করে বলে না। যদি বন্ধু ভাবো![ইশতিয়াক ]

– বন্ধু ভাববো না কেন? আপনি ওও সরি তুমি আমার খুব ভাল এক বন্ধু।[নিবির]

– আর কি তোর শত্রু নাকি? [সুপ্ত]

– আরে নাহহ তুই তো আমার ভাই![নিবির]

তিন জনের মুখেই ছোট করে মুচকি হাসি দেখা যায়। ইশতিয়াক আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। নিবির আর সুপ্ত সেখানে বসেই গল্প করতে থাকে। নিবির সুপ্তকে তার[সুপ্তর] চাকরির ব্যাপারে বল,” যাক কাল থেকে তাহলে তুই নিয়মিত চাকরি করতে পারবি।” সুপ্ত কিছু বলে শুধু মাথা নিচু করে থাকে। নিবির তার এরকম আচারনের মানে বুঝতে পারে না। তাই সে আবার সুপ্তকে জিজ্ঞেস করে। তখন সুপ্ত আর চুপ থাকতে পারে না। সে বলে,” আমি ওই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।” নিবির থমকে যায় সুপ্তর এরকম কথা শুনে। নিবির আবার বলে উঠে, ” চাকরি চাড়ছিস মানে! তুই চাকড়ি ছাড়তে গেলি কেন?”সুপ্ত আবার একবার মুখ খুলে আসতে আসতে বলে,” তোকে যেদিন পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল, সেদিন বসকে বললাম ছুটি দিতে। কিন্তু সে ছুটি না দিয়ে আরো আমাকে বকাবকি শুরু করে দিয়েছিল। তার সালার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।” এই সুপ্ত আবার চুপ হয়ে যায়। নিবিরও চুপ স্তব্ধ হয়ে যায়। ও[নিবির] কি বলবে। তার কাছে বলার মত কোন কিছুই নেই। কারন সুপ্ত যদি চাকরি ছেড়ে নিবিরের জন্য দৌড়াদৌড়ি না করতে তাহলে সে[নিবির] আজ জেলের মধ্যেই পচে মরত। সুপ্ত সব নিরবতা ভেঙে দিয়ে বলে কাল থেকে কিন্তু তোর অফিস আছে। তো সেভাবে রেডি থাকিস। নিবির মাথা নেড়ে শুধু সম্মতি জানায়।

দুজন আবার অনেকক্ষন চুপচাপ থাকে। হঠাৎ করে নিবির বলে,

– তাহলে কি কোন জব দেখছিস?

– হুম। একটা জব দেখলাম কিন্তু সেখানে খাটা খাটনি অনেক তাই আর সেখানে বেশি কথা বলি নি। কিন্তু এরপরও জব খুজে দেখছি, দেখি কি করা যায়।

– আচ্ছা দেখতে থাক তোর যেটা ভাল লাগে সেটাই করিস। আর যদি কোন জবও না পাস তাহলে আমি তো আছিই।

সুপ্ত নিবির আবার চুপ হয়ে যায়। তার আরো কিছুক্ষন কথা বলে বাসায় চলে যায়

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here