আত্মতৃপ্তি পর্ব ১৬

0
311

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ১৬

সুপ্ত আর নিশি বেড়িয়ে পরে। যেতে যেতে সুপ্ত নিশিকে বলে,

– আচ্ছা যাচ্ছি টা কোথায়?

– তুমি যে এর আগে তোমার কোন বন্ধু দিয়ে নাম নিবিরকে ছাড়িয়ে ছিলে। তার কাছেই চল।

– কিন্তু তুমি একথা জানলে কিভাবে?

– এই প্রশ্ন করার সময় এখন না। আগে নিবিরকে বের করে আনতে হবে। তারপর সব কথা। কিন্তু বার বার পুলিশ নিবিরকেই কেন এ্যারেস্ট করে?

– আমার কথা তো এই একটাই! আগে ওকে বের করে নিয়ে আসি। তারপর ওর খবর আছে। কিন্তু এবার ওকে বের করাই তো মুশকিল ব্যাপার!

– হুম তুমি ঠিকই বলেছো।

– ঠিক তো হবেই দেখতে হবে না কে বলছে।

– তোমাত ডায়লগ এবার বন্ধ করো।

ওরা ইশতিয়াক এর বাসায় পৌছে যায়। ইশতিয়াক কে সব খুলে বলে। ইশতিয়াক তো পুরো অবাক হয়ে যায়। এখন আবার ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা তো মোটেও সহজ কথা নয়। এমনিতেই এর আগেও ওর নামে মার্ডার কেস আছে। সুপ্ত বলে, ” যেভাবেই হোক ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।” ইশতিয়াক সব কিছু গুছিয়ে গাছিয়ে সুপ্ত আর নিশি কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। সুপ্ত বলে উঠে, ” কই যাবি এখন?” ইশতিয়াক জবাব দেয়,” নিবিরের কাছে। কারন ওই জানে ওর প্লাস পয়েন্ট সম্পর্কে। ” ওরা নিবিরের উদ্যেশ্যে পুলিশ স্টেশনের দিকে যায়।

পুলিসস্টেশনে পৌছে ইশতিয়াক ইন্সপেক্টরকে নিবিরের সাথে দেখা করার জন্য রিকুয়েষ্ট করে। ইন্সপেক্টর বলে,” আপনার[ইশতিয়াক] সাথে একটু পার্সোনাল কথা আছে। প্লিজ তাদের[সুপ্ত আর নিশি] কে একটু বাহিরে ওয়েট করতে বলেন।” ইশতিয়াক সুপ্ত আর নিশিকে ইশারা করে বাইরে যেতে বলে। সুপ্ত আর নিশি বাইরে চলে আসে। এখন ইন্সপেক্টর বলে,” আচ্ছা এটা কি আপনি ঠিক করছেন? মোটেই ঠিক কাজ করছেন না। একজন চেইন কিলার কে আপনি বার বার ছাড়াতে হেল্প করছে। জানেন ও কত বড় খুনি।” ইশতিয়াক হেসে উঠে ইন্সপেক্টর এর কথা শুনে। সে ভাবে নিবির আর চেইন কিলার! হতেই পারে না। সে ইন্সপেক্টর কে বলে,” এই কাজ টা আপনারাও ঠিক করছেন না। একটা ভালো ছেলেকে তুলে বার বার তুলে নিয়ে এসে টর্চার করছেন।” ” কেস থেকে পিছে চলে যান। নইলে আপনার চাকরি নিয়ে সময়্যা হয়ে যাবে।”এই বলে ইন্সপেক্টর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ইশতিয়াক আবার বলে,” আমিও দেখবো কার চাকরি থাকে আর কার টা যায়। আর এই যে কোর্ট এর পার্মিশন পেপার। আপরা কি এবার নিবিরের সাথে দেখা করতে পারি?” এই বলে ইশতিয়াক ইন্সপেক্টর এর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দেয়। ইন্সপেক্টর এর আর কোন কিছু করার ছিলো না তাদের বাধা দিতে।

ইশতিয়াক, সুপ্ত আর নিশি নিবিরকে দেখতে যায়। গিয়ে দেখে নিবির বসে আছে। নিবির তাদের দেখে এগিয়ে আসে। সুপ্ত বলে উঠে,” তোকে কতবার বলছি যে, সাবধানে থাকবি। নিজেও ভালো থাকবি না অন্যকেউ ভালো থাকতে দিবি না।” নিবির বলে, ” এই লাস্ট, এরপর আর এইরকম অসাবধানতার সাথে থাকব না। প্লিজ এইবার একটু এখান থেকে বের কর।” সুপ্ত নিবিরকে আবার বকতে যাবে, তখনি ইশতিয়াক বলে,”আচ্ছা এমন কোন প্লাস পয়েন্ট বল, যার দ্বারা তোমাকে আমরা বাচাতে পারি।” নিবির কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে ভাবে। তারপর বলে,” হ্যাঁ…! আমি যখন ব্রিজের উপর ছিলাম তখন হয়ত সিসি ক্যামেরা কাজ করছিলো না তাই আমাত ফুটেজ টা উঠে নি।” ইশতিয়াক আরো কয়েকটা ব্যাপারে প্রশ্ন করে নিবিরকে। সব তথ্য নেওয়ার পর তারা[ইশতিয়াক, সুপ্ত আর নিশি] যায় রোড সিসিটিভি ফুটেজ অফিসে। সেখানে ভালোভাবে সব চেক করে। সত্যিই নিবির ব্রিজে উঠার কিছুক্ষন পর সিসি ক্যামেরা কাজ করে না। আবার নিবির চলে যাওয়ার পর সব ক্যামেরা ঠিক হয়ে যায়। আর সেই লোককে[ যেই বিজনেসম্যান খুন হয়েছে] কেউ মারতেও দেখে নি। আর নিবিরকে তো আরো না। তাহলে আবার কোর্ট এ আবেদন করা যায়।

এবারো অনেক কষ্টে নিবিরকে পুলিশ স্টেশন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সবাই নিবিরকে সাথে নিয়ে নিবিরদের বাসায় আসে আর তার[নিবির] রুমে বসে। সেখানে সবাই ছিল। নিশি, ইশতিয়াক, সুপ্ত এমন কি বাড়িওয়ালাও উপস্থিত ছিল। ইশতিয়াক বলে,

– আচ্ছা নিবির পুলিশ বার বার তোমাকেই এ্যারেস্ট করে কেন? খুন গুলো তো তুমিই করো নি?[ইশতিয়াক]

– না ভাই আমি খুন করতে যাবো কেন! আমিও বুঝতে পারছি না যে, আমি যেখানেই যাই খুনিটা টা সেখানেই খুন করে। কেউ একজন আমাকে ফাসানোর চেষ্টা করছে।[নিবির]

– কিন্তু তোর পিছনে কে লাগতে যাবে?[সুপ্ত]

– আমি জানি না!……. সবাই কি আমাকে দোষারোপ করছিস? তোরা কি ভাবছিস আমিই খুন গুলা করছি? [নিবির]

কেউ কিছু বলে না। নিবির আবার বলে,

– আচ্ছা তাহলে কালই আমি আবার চলে যাব?[নিবির]

– কই যাবা তুমি?[নিশি]

– আমার গ্রামের বাড়ি।[নিবির]

– রাগের মাথায় এরকম কথা বলো না তো![নিশি]

– আরে ভাই বুঝোস না কেন! তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড তোরও কেউ নাই আমারও কেউ নাই। তোর কিছু হলে তো আমি ঠিক থাকতে পারি না। তুই এরকম জায়গায় যাস কেন?[সুপ্ত]

সবাই চুপ! কেউ কিছু বলছে না। সুপ্ত নিশির দিকে তাকায় দেখে নিশির মন খারাপ হয়ে গেল অচিরেই। এই একটু আগেই কত খুশি ছিল নিবির আসায়। নিশির মন খারাপের কারন বুঝতে পারে সুপ্ত। সে বলে,

– নিশি তুমি চিন্তা করো না। নিবির কোথাও যাবে না। ও এখানে থাকবে।

– সত্যি তো!

– হুম।

সবাই নিশি আর নিবিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুপ্ত ইশতিয়াক আর বাড়িওয়ালা কে বলে ওরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসে এবং খুব ভালোবাসে। নিশি অনেকটা লজ্জা পায়। সে কিছু একটার ছলনা দিয়ে বাইরে যায়। একটু পর আবার ফিরে আসে। ইশতিয়াক বলে উঠে,

– আচ্ছা নিবির আমি তাহলে চলি। আর তুমি কিন্তু সাবধানে থেকো।[ইশতিয়াক ]

– চলি মানে! রান্না করব, খাবে তারপর যাবে।[নিবির]

– নাহহ। আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর রাতও অনেক হয়েছে।[ইশতিয়াক ]

– ইশতিয়াক তুই কিন্তু যেতে পারবি না। বাসায় আসছিস না খেয়ে তোকে যেতে দিব না।[সুপ্ত]

নিবির, সুপ্ত আর নিশির অনুরোধে ইশতিয়াক আর যেতে পারে না। নিবির বাড়িওয়ালার বউকে বলে,” আন্টি যদি কিছু না মনে করেন। তাহলে সবার রান্না টা একটু করে দিবেন। আমরা ছেলে হয়ে তো এত মানুষের রান্না করতে পারব না।” বাড়িওয়ালার স্ত্রী বলে,” আচ্ছা বাবা কোন সমস্যা নাই। আমাকে সব গুছিয়ে দাও একটু আমি রান্না করে দিচ্ছি।” নিবির আর সুপ্ত সব গুছিয়ে দেয়। বাড়িওয়ালা স্ত্রী আর নিশি রান্না করে। এদিকে সুপ্ত, ইশতিয়াক, নিবির আর বাড়িওয়ালা গল্প করে। অনেকটা সময় তারা গল্প করে। তারপর অবশেষে রান্না শেষ হয়। বাড়িওয়ালা আর তার স্ত্রী চলে যেতে লাগে। তখন নিবির তাদের ঠেকিয়ে বলে,”আপনারা হলেন মা-বাবার মত।এটা আপনারাই বলছেন। কিন্তু ছেলের ঘর থেকে কি কখনো মা-বাবা না খেয়ে চলে যায়।” তারা আএ কথা বলে না। আর বলবেই বা কি। নিবির ঠিক কথাই বলছে। এরপর সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে ইশতিয়াক বিদায় নেয় তাদের থেকে। আর বাড়িওয়ালাও চলে যায় তাদের রুমে। শুধু থেকে যায় নিশি! বিছানায় নিবির আর নিশি বসে আছে আর সামনে চেয়ারে বসে আছে সুপ্ত। সুপ্ত মনে মনে ভাবে মেয়েটা কি আজ এখানেই থাকবে নাকি। ওর ভাবসাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। যে করেই হোক ওকে এখান থেকে বাসায় পাঠিয়ে দিতে হবে। সুপ্ত বলে উঠে, ” নিশি তুমি বাসায় যাবে না?” নিশি কিছু বলতে যাবে তখনই তার বাবার ফোন আসে।

– হ্যালো বাবা!

– নিশি মা তুই কোথায়?

– আমি নিবিরদের বাসায়।

– নিবিরকে কি পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে?

– হুম বাবা।

– যাক ভালো কথা। তো তারাতারি বাসায় আসো। অনেক রাত হয়েগেছে তো!

– হুম বাবা। যাব এখন।

কথা শেষ হলে নিশি ফোন কেটে দেয়। নিশি নিবিরকে বলে,” নিবির আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে।” নিবির কিছু বলে না। সুপ্ত নিশিকে জিজ্ঞেস করে,” কি বলল তোমার বাবা?” ” বাসায় যেতে বলল।” এই বলে নিশি নিছানা থেকে নেমে আসে। সুপ্ত মনে মনে বলে, ঠিক হইছে। বাসায় যাও এখন। থাংক ইউ আংকেল, নইলে আজ আপনার মেয়ের যে কি হত আল্লাহ-ই জানে। নিশি বাইরে যেতে লাগে, তখন নিবির বলে উঠে, “দাঁড়াও আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসি।” নিশি বছর, ” না । আমাকে ড্রপ করে দিতে হবে না। এমনিতেই তুমি এই মাত্র একটা পেরেশানি এর মধ্যে থেকে আসলা। এখন রেস্ট করো তুমি।লাগলে দু-তিন দিন তুমি অফিস ছুটি নাও। আমি আব্বুকে বলে দিব নি।” নিশি নিবিরকে আর সঙ্গে যেতে দেয় না। নিশি একাই চলে যায় বাসায়। নিবির সুপ্ত কোন কথা না বলে শুয়ে পরে।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here