আত্মতৃপ্তি পর্ব ১৮

0
502

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ১৮

রাতে আড্ডা শেষ করে খাবার খেয়ে তারা দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।

ঘুম থেকে উঠে নিবির খেয়াল করে রুমে সুপ্ত নেই। সে ভাবে হয়ত ছাদে আছে। তাই সে নিজের মত নিজে ফ্রেশ হয়ে নেয়। কিন্তু এখনও সুপ্তত কোন খবর নেই। নিবির বাসার সব রুম চেক করল কিন্তু সুপ্তকে পেল না। তার যায় ছাদে যেটা সুপ্তকে এই বাসায় খুজে পাওয়ার শেষ রাস্তা। কিন্তু সেখানেও নিরাশ হয় নিবির। ছাদেও খুজে পায় না সুপ্তকে। এবার সে বাসার সামনে বাজারে খোজে কিন্তু তাও সুপ্তকে পায় না। সে ভাবে এত সকালে তো সুপ্ত কোথাও যায় না। আর ও তো ঘুম থেকেই উঠে না এত সকালে। এবার সে সুপ্তকে ফোন দেয়, কিন্তু ফোন বন্ধ। নিবিরের সব কিছু ওলট-পালট মনে হচ্ছে। সে বাসার সামনে রাস্তায় বসে পরে।

হঠাৎ কিছুক্ষন পর অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে নিবিরের ফোনে। সে কলটা রিসিভ করে। রিসিভ করতেই সুপ্তর কান্নার আওয়াজ পায় নিবির। সে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে পরে। নিবির বলতে থাকে, ” সুপ্ত কই তুই? আর তুই কাদসিস কেন? কি হইছে তোর।” ওপাশ থেকে সুপ্ত কান্নাজরিত কন্ঠে বলে,” আজ সকালে আমি যখন ঘুম থেকে উঠে বাসার সামনে বের হইছি। কোথা থেকে যেন কয়েকজন লোক এসে আমাকে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। আর আর চোখ বেধে কোথায় যেন নিয়ে আসে। তুই প্লিজ আমাকে বাচা। ওরা আমাকে অনেক মেরেছে।” এই বলে সুপ্ত আবার কাদে। আর নিবির রাস্তার মাঝে ছটফট করতে থাকে। নিবির আবার ওপাশ থেকে শব্দ শুনতে পায়। কে যেন সুপ্তকে বলেছে,” তোকে আমি কিভাবে এখানে নিয়ে এসেছি, সেটা বলতে বলি নি। তোর বন্ধুকে বলে ও কখন আসবে তোকে নিয়ে যেতে?” এই বলে সুপ্তর থেকে সে ফোন টা কেরে নেয় আর সুপ্তকে আবার মারতে শুরু করে। নিবির চিৎকার করে বলেতে থাকে,” সাহস থাকে তো আমার আমার সাথে লড়! আমার বন্ধুকে ছেড়ে দেয়। নইলে তোর পুরো গোষ্ঠী আমি শেষ করে ফেলব।” ওপাই থেকে লোকটা হাসতে থাকে। আর বলে,” আমি সেটাই চাই যে তুই আমার কাছে আয়। তোকে আমি আধ ঘন্টা দিচ্ছি তোর বন্ধুকে বাচানোর জন্য। এরপর আমার ছেলে-পেলেরা তোর বন্ধুকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় জানিয়ে দেবে।”

নিবিরের অবশেষে কেদে ফেলে আর বলে,” প্লিজ আমার বন্ধুকে কিছু বলিস না। যা করার আমার সাথে কর। আমাকে বল কোথায় যেতে হবে?” ওপাশ থেকে লোকটা হাসতে থাকে আর বলে,” তোর কান্নার আওয়াজ শুনে আমার কি যে ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে আমি এখানেই নাচি। তোকে আমি অ্যাড্ড্রেস পাঠিয়ে দিয়েছি। তুই তারাতারি আয়। সময় মাত্র আধ ঘন্টা।” বলেই ফোন কেটে দেয় লোক টা। নিবির ফোন চেক করে দেখে একটা লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছে। নিবির পড়নে ছিল একটা টাওজার আর সেন্ডো গেঞ্জি। নিবির তার পরনের কাপড়ের চিন্তা করে না। সে লোকেশন অনুযায়ী পথ চলতে থাকে।

নিবির আধ ঘন্টার আগেই দেখানে পৌছে যায়। সেখানে ১২তলা একটা বিল্ডিং দেখতে পায় সে। সেই বিল্ডিংয়েই আছে সুপ্ত। সে সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকে বিল্ডিং য়ে। নিবির ১০তলায় পৌছে যায়। দেখানে কিছু মানুষের আওয়াজ শুনতে পায়। এরপর সে দৌড়ে তাদের মাঝখানে ঢুকে পরে, তার নিজের জান এর পরোয়া না করে। নিবির তাদের মধ্যে চিৎকার করে বলতে থাকে,” সুপ্ত কোথায়? কোথায় সুপ্ত? বের করে দে ওকে নইলে এখানে থেকে একটাও জ্যান্ত ফিরতে পারবি না কেউ।” আর সুপ্তকে ডাকতে থাকে। একটু পরেই সেখানে একটা লোক আসে হাসতে হাসতে। সে এসে নিবিরের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিবির লোকটাকে কখনো দেখে নি। আর চেনেও না। লোকটা নিবিরকে দেখে বলে,” ইসস বন্ধুর জন্য বন্ধুর কি দরদ রে বাবা!” নিবির লোকটার কলার ধরে বলে,” ভালো চাস তো সুপ্তকে বের করে দে নয় তো আমিও জানি না যে তোকে কি করব?” বলতে বলতেই কয়েকটা গুন্ডা এসে নিবিরের দু হাত ধরে লোকটার কাছে থেকে দূরে নিয়ে যায়। তখন লোকটা বলে,” রোমিওর[নিবির] জুলিয়েটকে[সুপ্তকে] নিয়ে আয় তো!” এরপর আরো দু-তিন জন গিয়ে সুপ্ত কে নিয়ে আসে নিবিরের সামনে। নিবির ভয় পেয়ে যায় সুপ্তকে দেখে। ওরা সুপ্তকে খুব মারধর করেছে। সুপ্তর পুরো শরির রক্ত দিয়ে মাখা। নিবির সুপ্তকে ডাকতে থাকে। কিন্তু সুপ্ত কোন কথায় বলে না।

অনেক্ষন পর সুপ্ত একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ছাড়ে আর অনেক কষ্ট করে সামনে তাকায় দেখে নিবিরকেও কয়েকটা গুন্ডা ধরে রেখেছে। কিন্তু সুপ্ত কোন কথা বলতে পারে না। নিবির জোরে জোরে চিৎকার করে সুপ্তকে ডাকে। কিন্তু সুপ্ত কোন কথাই বলে না। একটু পর লিডার গুন্ডা লোকটা তার ছেলে-পেলেদের সুপ্তর দিকে ইশারা করে বলে,” ওর চ্যাপ্টার টা খতম কর।” নিবির দেখে দুজন সুপ্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বড় একটা ছুরি নিয়ে। নিবির তাদের চিৎকার করে থামতে বলে। কিন্তু গুন্ডা গুলো থামে না। তারা সুপ্তর দিকে এগিয়েই চলে। নিবির গুন্ডাদের লিডার এর হাতে-পায়ে ধরে সুপ্তকে মারতে বারন করে। বলে,” যা করার আমার কর। মারলে আমাকে মার কিন্তু সুপ্তকে ছেড়ে দে। ” কিন্তু সে[গুডাদের লিডার] কোন কথাই কানে নেয় না। সে[গুন্ডাদের লিডার] বলে,” দেখ ভাই, তোদের মারার কোন মুড আমার নেই। কিন্তু বস বলেছে তোদের মারতে। আর আমি আমার কাজ করছি।”

এরপর দুজন গুন্ডা গিয়ে সুপ্তর গলায় ছুরি চালায়। আর সুপ্ত মেঝেতে লুটিয়ে পরে। নিবির জোরে একটা ঝাকি দিয়ে সবাইকে ফেলে দিয়ে সুপ্তর কাছে দৌড়ে যায়। সুপ্তকে কোলে তুলে নেয় সে। সুপ্ত কিছু বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। নিবির সুপ্তকে জড়িয়ে ধরে বলে,” সুপ্ত কথা বল। কথা বল তুই। ” তারপর থেমে গিয়ে আবার বলে,” তুই শুদু একটু ধৈর্য ধর। তোর কিছুই হবে না। আমি কিছুই হতে দিব বা তোকে।” এই বলে নিবির সুপ্তকে কোলে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। এর মধ্যেই সুপ্ত দীর্ঘ নিঃস্বাস নেয় আর বলে,” ওরা কারা আমি জানি না। কেন আমাকে মেরেছে তাও জানি না। শুধু এটা জানি ওরা তোকেও মারবে। কিন্তু আমার কসম খেয়ে বলে, তুই ওদের কাউকেই ছাড়বি না।” নিবির না চাইতেও তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।

নিবির সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে ঠিক তখনই পিছন থেকে কয়েকটা গুন্ডা নিবিরকে টেনে ধরে তারপর নিবিরকে এক টানে আবার সেই রুমের মাঝে নিয়ে যায়। নিবিরের হাত থেকে সুপ্ত দূরে রুমের এক কোনায় ছিটকে পড়ে যায়। নিবির উঠে আবার সুপ্তর কাছে যায়। আর সুপ্তকে কোলে তুলে নেয়। সুপ্তকে কোলে তুলে নিয়ে নিবির স্তব্ধ হয়ে যায়। নিবির সেখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কারন সুপ্ত হাত-পা সব ছেড়ে দিয়েছে। সুপ্তর বুকের স্পন্দনও থেমে গিয়েছে। নিবির সুপ্তকে কোলে থেমে মেঝেতে নামিয়ে সুপ্তকে ডাকতে থাকে। কিন্তু এবার সুপ্ত তাকায়ও না কথাও বলে না। নিবির সুপ্তকে জিড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদতে থাকে। নিবিরের চোখ লাল হয়ে যায়।

একটু পরে কয়েকটা গুন্ডা নিবিরকেও ছুরি দিয়ে মারতে আসে। নিবির তাদের হাত ধরে ফেলে। আর ওদেরকে এক ঘুসি মেরে দূরে ফেলে দেয়। একে একে সবাইকেই মারতে থাকে নিবির। গুন্ডাদের লিডার ভয় পেয়ে যায় সবাকে একে একে মারতে দেখে। পুরো স্বশান ঘাট বানিয়ে ফেলে রুম টা। তারপর গুন্ডাদের লিডারকেও মারে নিবির। লোকটা মারের আঘাতে দূরে পরে থাকে। নিবির দৌড়ে এসে সুপ্তকে আবার কোলে তুলে নেয়। আর বলে থাকে,” তুই জানতে চেয়ে ছিলি না, আম্মু-আব্বু কিভাবে মারা গিয়েছিল? এই জানোয়ার গুলোয় তাদের মেরে ছিল। আমি তোকে এ জন্যই বলি নি। কারন আমি তোকেও হারাতে চায় না। কিন্তু আজ তোকেও ছাড়ে নি ওরা। আমি তোর কসম খেয়ে বলছি একটাকে ছাড়ব না। সব গুলাকে কুকুরের মত করে মারব।” নিবির একটু থেমে যায়, একটু পর আবার বলতে শুরু করে,” তুই আরো জানতে চেয়েছিলি না যে ম্যাজিস্ট্রেট আর বিসনেসম্যান এই দুজনকে, কে মেরেছে? আমিও মেরেছি দুজনকে। কারন আমার বাবা-মাকে ওরাই মেরেছিল।” এই বলে নিবির জোরে জোরে কাদতে থাকে। নিবির বার বারই সুপ্তকে ডাকে।

নিবির হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নেয়। আর আবার বলে শুরু করে,” যারা তোকে আর আমার মা-বাবা থেকে আমাকে দূর করেছে। আমার ছোট বেলার সুখ কেরে নিয়েছি। আমার বাইকে আমার থেকে কেরে নিয়েছে। ওদের কাউকেই ছাড়ব না। সব গুলাকে শেষ করব। ওদের বংশ নির্বংশ করে দিব।” বলতে সুপ্তকে জড়িয়ে ধরে।

একটু পর গুন্ডার লিডার ছুরি হাতে নিয়ে পিছন থেকে নিবিরের দিকে এগিয়ে আসে। নিবিরের একদম কাছে এসে নিবিরের পিঠে ছুরি চালায়।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here