#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ১৯
একটু পর গুন্ডার লিডার ছুরি হাতে নিয়ে পিছন থেকে নিবিরের দিকে এগিয়ে আসে। নিবিরের একদম কাছে এসে নিবিরের পিঠে ছুরি চালায়।
কিন্তু নিবির হাত দিয়ে ধরে ফেলে। আর গুন্ডাকে একটা ঘুসি দিয়ে ওর হাত থেকে ছুরি টা নিয়ে নেয়। এরপর নিবির ছুরি হাতে নিয়ে গুন্ডাকে মারতে যাবে, ঠিক তখনই নিশি আর ইন্সপেক্টর মিথিলা সেখানে হাজির হয়ে যায়। ইন্সপেক্টর মিথিলা হাতে বন্দুক দিয়ে নিবিরের দিকে তাক করে বলে,” নিবির তুমি যদি আর এক পা ওখান থেকে আগাও তাহলে আমি তোমাকে গুলি করে দিব।” কিন্তু নিবির তার ভঙ্গ করে গুন্ডার দিকে এগিয়ে যায়। ইন্সপেক্টর আবার বলে নিবিরকে পিছে সরে যেতে, নিবির সরে না বরং গুন্ডার দিকে পা বাড়ায়। আর গুন্ডার কাছে গিয়ে তার[গুন্ডার] পেটে ছুরি বসিয়ে দেয়। গুন্ডাটা কিছুক্ষন লাফালাফি করতে করতে মারা যায়।
নিশি বলে,” নিবির আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম যে তুমি কখনো খুন করতে পারো না। মিথিলা ম্যাম[ইন্সপেক্টর] আমাকে বলেছিল, কিন্তু আমি কখনই তা বিশ্বাস করি নি। আমি তাকে আরো ভুল বুঝেছি। আমি যানতাম না যে তুমি একটা খুনি! আমি নাটক কিরেছিলাম, ভালোবাসার। কিন্তু আসতে আসতে আমি তোমাকে সত্যি সত্তিই ভালোবাসতে লাগছিলাম। আজকের তোমার আসল চেহারাটা দেখার পর নিজের উপরই ঘৃনা হচ্ছে। কাকে নিয়ে আমি এত দিন সত্তিকারের স্বপ্ন দেখছিলাম। তো আগের দুটো খুন তুমিই করেছো!” নিশি বলতে বলতে চোখের পানি মুছে তার উড়না দিয়ে। একটু থেমে নিশি আবার বলে,” এখন কথা বলছো না কেন? আগের দুটো খুন কে করেছে? বল…. বল না কেন…?”
ইন্সপেক্টরও বলতে থাকে,” সে[নিবির] বলতে পারবে না নিশি। কারন খুন গুলো সে নিজেই করেছে। আর আজকের খুন টা তো তুমি নিজের চোখেই দেখলা। নিশি তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম ওর[নিবির] কথা কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো নি।” কথা গুলো নিশির দিকে তাকিয়ে বলে ইন্সপেক্টর মিথিলা। এরপর গুলি হাতে নিয়ে নিবির কে বলে,” তোমার উপর নজর ছিল সেইদিন থেকে, যেদিন তুমি ম্যাজিস্ট্রেট কে খুন করেছিলে। তোমার উপর আমি আরো ভালো ভাবে নজর রাখার জন্য নিশিকে রিকুয়েষ্ট করি মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করার জন্য। জানো ওকে[নিশি] মানাতে আমার তিন দিন লেগেছিল। কারন সে তোমার মত খুনির সাথে মিথ্যে রিলেশন করতেও রাজি ছিল না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে নিশি তোমাকে সত্তিকারেই ভালোবেশে ছিল। আর আজ সেটাও তুমি শেষ করে দিলে।”
নিবির মৃদু হাসি দেয়। নিশি আর ইন্সপেক্টর মিথিলা কিছু বুঝে উঠে না। তারা একে উপরের দিকে অবাক চোখে তাকায়। তারপর দুজনেই আবার নিবিরের দিকে তাকায়। নিবির বলে উঠে,” মিথিলা….! ওহহ সরি ইন্সপেক্টর মিথিলা..! আপনি আমাকে সেদিন থেকে নজর রেখেছেন, যেদিন আমি প্রথম খুন করি। আর আমি আপনার উপর সেদিন থেকে নজর রাখি, যেদিন আপনি পুলিশে জয়েন দিয়ে এই পুলিশ স্টেশনে আসেন। হ্যাঁ..! আমি এখানে ছিলাম না তখন, তখন আমি ছিলাম আমার গ্রামের বাড়ি ছিলাম। তবুও আমি আপনার যত্ন নেওয়া বাদ দেই নি।”
ইন্সপেক্টর মিথিলা একদম অবাক হয়ে যায় নিবিরের কথা শুনে। সে নিবিরের দিনে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায়। নিবির বলে উঠে, ” কি বিশ্বাস হচ্ছে না?” ইন্সপেক্টর মিথিলা আসতে করে মাথা নেরে বলে, ” না!!” নিবির এবার বলতে শুরু করে,” আপনার একজন প্রিয় কন্সট্রেবল আছে, যার নাম রফিক ইসলাম। এবং সে আপনার দায়িত্বেই থাকত। যে কিনা আপনার থেকে ৩মাস আগে এই পুলিশ স্টেশনে জয়েন দেয়। মনে পড়ছে কি লোকটার কথা?” ইন্সপেক্টর মিথিলা আবারো মাথা নেরে সম্মতি জানায়। নিবির আবার বলতে থাকে,” উনি যতটুক আপনার প্রিয় ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রিয় ছিল আমার কারন আপনার প্রতিটা পদক্ষেপ আমাকে আগেই বলে দিত সে। ”
ইন্সপেক্টর মিথিলা যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল। তার মাথায় কিছুই কাজ করছে না। ওই লোকটা[ কন্সট্রেবল রফিক] নিবিরকে কেন সাহায্য করতে যাবে। লোকটার সাথে নিবিরের কি সম্পর্ক? নানান প্রশ্নে মিথিলার মাথা ঘুরছে। নিবির বলে উঠে, ” শক লাগলো…? লাগারই কথা..!” মিথিলা বলে উঠে, ” লোকটা তোমাকে কেন সাহায্য করে? আর তোমার সাথে তার কি সম্পর্ক? ” নিবির বলে,” সেটা একটু পরে জানলেও চলবে, আগে আমাকে বলতে দেন। সে[কন্সট্রেবল রফিক] আমাকে এটাও জানায় যে, আপনি নতুন জাল ফেলছেন নিশিকে দিয়ে। তবে নিশি কিন্তু খুব ভালো অভিনয় করে গেছে। আই এ্যাম ইমপ্রেস্ড। নিশি আমাকে অনেক জিজ্ঞেস করেছে মার্ডার এর ব্যাপারে। আর আমি ওকে একি উত্তর বার বার দিয়েছি। যার কারনে সেও মেনে নিয়েছিল যে আমি খুন করি নি। কিন্তু আজকের এই ঘটনার পর সব শেষ হয়ে গেল। তবে আর কিছু ভাববেন না ইন্সপেক্টর ম্যাম, আমি লাস্ট আর একটা খুনই করব।”
ইন্সপেক্টর মিথিলা নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,” কাকে খুন করবে?” নিবির বলে,”সেটা আমি আপনাকে আগেই জানিয়ে দেব। যেভাবে প্রতিবার আপনাকে আমি আগেই একটা মেসেজ পাঠাতাম আপনার ফোনে। কি দেখতেন নে মেসেজ গুলো। আর সেগুলো দেখেই তো আমাকে এসে এ্যারেস্ট করতেন।” মিথিলা আবার জিজ্ঞেস করে,” হ্যাঁ আমাকে আগে থেকেই কেউ একটা মেসেজ করত যে অমুক জায়গায় অমুকের মার্ডার হবে। আমাকে ইনফর্ম করতে আবার নিজেকেও পুলিশের হাতের ধরিয়ে দিতে আবার সেখান থেকে জামিন নিয়ে আবার বের হতে কেন? চাইলে তো তুমি পালিয়ে নিজেকে এ্যারেস্ট হতে বাচাতে পারতে। কিন্তু সেটা করনি কেন?”
নিবির বলে,” আগে বন্দুক টা নিচে নামান, আপনার হাত ব্যাথা গেছে হয়ত। আর আমি এখান থেকে এখনই যাচ্ছি না। ” নিবিরের কথাটা শুনে আবারো একবার অবাক হয় ইন্সপেক্টর মিথিলা। সে বন্দুক টা নিচে নামায়। এরপর নিবির আবার বলে শুরু করে,” আমি যদি নিজেকে পুলিরের হাতে ধরা না দিতাম, তাহলে আমাকে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হত। আর আপনারা আমাকে ট্রেস করে আমার কাছে পৌছে যেতেন। তখন আমার বাচার কোন রাস্তা থাকত না। আর যখন নিজে হাতে ধরা দিয়েছি। তখন কোর্ট থেকে আমার জামিন হয়েছে। আমি নিশ্চিন্তে অন্য খুনের জন্য প্লান করতাম।”
ইন্সপেক্টর মিথিলা বলে,” খুব মাস্টার মাইন্ডের সাথে খুন গুলো করেছো, নিবির সাহেব। কিন্তু আর নয় এবার তোমাকে জেল-এ পরে মরতে হবে। তোমাকে আর কেউ বাচাতে পারবে না।” নিবির হাসতে থাকে ইন্সপেক্টর মিথিলার কথা শুনে। আর বলে,” আপনি আমাকে এ্যারেস্ট করতে পারবেন না।” ইন্সপেক্টর কিছুই বুঝে না নিবিরের কথা।
নিশি নিবিরকে বলে,” তুমি কেন খুন করেছো এই ভালো মানুষ গুলোকে? কি করেছিল তারা?” নিবির রুমের মধ্যে হাটতে হাটতে বলে,” ওই গুলা ভালো মানুষ ছিল? ওই গুলা যদি ভালো মানুষ হয়ে তাহলে আমার বন্ধু সুপ্ত কি? আমার বাড়িওয়ালা কি? তারা কি ভাল মানুষ না? আর তুমি বলছো ওরা আমার কি করেছিল! আরে আমি ওদের কি করেছিলাম যে, ওরা আমার বাবা-মাকে নির্মমভাবে মেরেছিল। আমার ভাই কি করেছিল যে তাকে মেরেফেলেছিল? সুপ্ত কি করেছিল যে ওকেও শেষ করে দিল?” এই বলে নিবির কাদতে থাকে।
নিশি আর ইন্সপেক্টর মিথিলা শক খেয়ে যায় নিবিরের কথা শুনে। নিবির চোখ মুছে নিশির দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে,” এমন কি তোমার বাবাও এর সাথে যুক্ত ছিল!” নিশি এবার আর ঠিক থাকতে পারে না। কারন তার বাবা কেন নিবিরের বাবাকে খুন করতে যাবে? ইন্সপেক্টর এর মাথা যেন একদম হ্যাং হয়ে গেছে। সব কথাই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নিশি নিবিরকে বলে,”খবরদার আমার বাবার নামে মিথ্যে কথা বলবে না। আমার বাবা তোমার বাবা-মাকে খুন করতে যাবে কেন?” নিবির বলে উঠে, ” তোমার সামনে তোমার বাবা ভালো। কিন্তু তার আসল চেহারা তোমরা কেউ জানো না। এমন কি পুলিশও না।”
নিশি বুঝতে পারছে না যে নিবিরের বাবা-মাকে কেন তার নিজের বাবা খুন করতে যাবে। আর পুলিশ আর বিজনেসম্যান এর সাথে তার বাবার কি সম্পর্ক। নিশি নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,” আর বাবা তোমার বাবা-কে মারতে যাবে কেন? আর তুমি যাদের খুন করেছো তাদের সাথে আমার বাবার কি সম্পর্ক? ”
প্রশ্ন গুলো শুনতেই নিবিরের চোখে ভেসে উঠে সেই দিনের কথা। সে তার অতীতের মধ্যে ডুবে যায়……!
________Flashback________
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/