#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
২৫.
প্রাণটা হাতে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে যেন! দেহটা নিথর এতে প্রাণভোমরা প্রবেশ করাতে এক ফোঁটা অমৃত চাই তবেই না প্রাণভোমরা যথাস্থানে প্রবেশ করবে। একটা মিনিট কথা বলার আকুতিটাও দিহানের ঠিক তেমনই মনে হল চৈতীর কাছে। সে ফিরে তাকালো দিহানের দিকে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে চৈতী কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হেঁটে গেল খাটের সামনে। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকার ফলেই পা দুটো প্রচণ্ড ভারী হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে পায়ে নাকি পানি নামে তেমনটাই তো বলেছিলো ফুপি। যখন যখন ফুপি পায়ের পাতা ফুলে যেতে দেখেছে তখনি তিনি আঙ্গুলে টিপে চৈতীকেও দেখাতেন কেমন দেবে যায় আঙ্গুলটা। সমস্যাটা আগে ছিলো না মাত্রই কয়েক দিন আগে থেকে চোখে পড়ছে। এখনও ঠিক তেমনই অবস্থা বুঝতে পেরে চৈতী পা দুটো ছড়িয়ে বসলো খাটে। দিহানও জানালার কাছ থেকে সরে এসে খাটের সামনে দাঁড়ালো। চৈতী কোনমতে উঠে খাটের কিনারাতেই বসেছে তাই আর সামনের অংশে বসার জায়গাটুকুও নেই। চৈতীর মুখ দেখেও বোঝা যাচ্ছে সে খুব ক্লান্ত আর অনেকটা কষ্ট করেই খাটে উঠে বসেছে। এই প্রথম দিহানের মায়া লাগলো চৈতীর ক্লান্ত মুখটা দেখে। চৈতীকে সে কম আদরে রাখেনি ছোট থেকে কিন্তু আজকে যেই মায়াটা তার অনুভবে জাগ্রত হলো সেটা মামাতো বোন চৈতীর জন্য নয় তা শুধুই তার সন্তানের মায়ের জন্য হলো। এটাও বোধহয় এক ধরনের স্বার্থপরতা। দু’দিন আগে যে চৈতীর জন্য তার চিন্তা হচ্ছিলো না আজ সেই চৈতীর জন্য প্রগাঢ় অনুভব! শুধু মাত্র চৈতীর মাঝে নিজের অস্তিত্বের কথা জানে বলেই এই অনুভূতি। দিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চৈতী বলল, “দাঁড়িয়েই কথা বলবে? ঘরটা তোমারই বসে কথা বলো।”
চৈতী নির্বিকার ভঙ্গিতে খাটের পেছনের বোর্ডে হেলান দিয়ে বসে বলছে কথাগুলো। দিহানও কেমন চৈতীর আজ্ঞাবহ দাসের মতোই মাথা নিচু করে আছে যেন চৈতীর কোন আদেশের অপেক্ষায় উপস্থিত সে। চৈতীর বলা শেষ হতেই বেলকোনির জন্য রাখা বেতের চেয়ারটা ঘরেই ছিলো সেটা টেনে বসলো খাটের কাছে। চৈতী চোখ বুঁজে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “কি যেন বলবে বলছিলে?”
“কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি।”
“আর আমাদের সন্তানটা?”
প্রশ্নটা করার সময় কম্পিত কণ্ঠে অনেকটা লজ্জা আর ভয় এসে মিশে গেল দিহানের। এতক্ষণ চৈতী চোখ দুটো বুঁজেই ছিলো কিন্তু এই মুহুর্তে দিহানের প্রশ্ন শুনে চোখ মেলে তাকালো সে। দৃষ্টিতে হিংস্রতা আর কপালের মাঝে রাগের রেখা। দিহান এই দৃষ্টি দেখে অসহায় হয়ে পড়লো তৎক্ষনাৎ। হতে পারে সে ভুল করেছে সব ছেড়ে পালিয়ে কিন্তু তার পরিস্থিতিটাও তো কেউ বুঝতে পায়নি।
“দ্যাখ চৈতী যা হয়েছে,,
” এই থামো থামো, এত অস্থির হয়ে কথা বলছো কেন তুমি আর যা হয়েছে মানে কি?”
“আমাকে মাফ করে দে প্লিজ?”
“মাফ!”
চৈতী উচ্চারণটা কেমন যেন ব্যঙ্গাত্মক সুরে করলো। দিহান থেমে গেল।
“তোরা কেউ আমাকে বুঝতে চাস নি তখন। আমি মৃত এক মানুষের মায়ায় নিজেও মৃতের মতন ছিলাম। সে রাতটাতে যা হয়েছে!”
“সে রাতটাতে যা হয়েছে আমি করেছি। তুমি ভেবো না এ নিয়ে তোমার ওপর কোন দ্বায় বর্তাবে। নিশ্চিন্ত থাকতে পারো তুমি আমার সন্তানের জন্য কোন ভোগান্তিতে পড়তে হবে না তোমায়।”
“এই সন্তান তোর একার নয়।”
“চুপ, একদম চুপ। এই সন্তানটা শুধুই আমার একার। সে রাতের কথা বলছো না! সে রাতটা তোমার জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত রাত আর সেও তোমার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু আমার সন্তান আমার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত নয় আর না কোন ভুলের ফসল। কিন্তু তুমি তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে দ্বায়িত্ব নিতে এসো না অনুরোধ করছি।”
পেটের ওপর হাতটা রেখে চৈতী অনেকটা চেঁচিয়েই বলল কথাগুলো। আর এতেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে তা দেখেই দিহান বসা থেকে উঠলো। চৈতীর কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত হতে বলছে কিন্তু চৈতী এ অবস্থায়ও দিহানের রাখা হাতটা সরিয়ে দিলো কাঁধ থেকে। আস্তে আস্তে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। আধশোয়া থেকে এবার পুরোপুরি শুয়ে পড়লো। দিহান অপলক তাকিয়ে দেখছে চৈতীকে কেমনটা দেখে গিয়েছিলো আর কেমনটা সে হয়ে গেছে! দিহান আর কিছু বলতে চাইলো না। চৈতীই আবার বলল, “আমি আর চেচাচ্ছি না তুমি তোমার কথা শেষ করো।”
দিহানও পুনরায় চেয়ারে বসলো। সে কথা শুরু করলো, “তোর সাথে বিয়ে হওয়ারও আট মাস আগে প্রিয়ন্তি মারা গেছে। বাড়িতে তোরা সবাই জানিস আমি মাস্টার্সের জন্য চট্টগ্রামে ছিলাম। শুধু মা জানতো আমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনের পর দিন হাসপাতালে পড়েছিলাম। প্রিয়ন্তি তখন মৃত্যু শয্যায়। ক্যান্সারের শেষ স্টেজে এসে তার রোগটা ধরা পড়লো। প্রথমদিকে তার অসুস্থতা ছিলো খুব সাধারণ তবে চেহারা দেখে অস্বাভাবিক লাগতো । দেশে ট্রিটমেন্ট শুরু করলেও তাকে প্রথম দিকেই ব্যাঙ্গালুরোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো । ডাক্তাররা বলেছিলো সে সুস্থ হয়ে উঠবে শিগ্রই। কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু তার উন্নতি কিছুই হয়নি। মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগেই তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হলো তখন আমি পুরোপুরি তার বিছানার পাশে গেঁড়ে বসলাম। নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু দিন গুণছিলাম কবে সে সুস্থ হবে কবে আবার আমার আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল গুঁজে হাটতে যাওয়ার বায়না করবে। আমার সময়গুলো সব আটকে ছিলো হাতপাতালের কেবিনটাতে। প্রিয়ন্তি সুস্থ হলো না, সে আমার আঙ্গুলে আঙ্গুলও রাখলো না শুধু আমার হাতের ওপর মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গেল।”
দিহান কথাগুলো অগোছালো ভাবেই বলে চলছে। তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে আরো আগেই কিন্তু সে কাঁদতে চাইছে না। চৈতীর সামনে প্রিয়ন্তির জন্য কান্নাগুলোকে সে কিছুতেই বইতে দিতে চায় না। দিহানকে থামতে দেখে চৈতী বলল, “তারপর!”
“আমাদের বিয়ের মাস দুই আগেই তো আমি ঢাকায় ফিরেছিলাম। কিন্তু সেই ফিরে আসাটা ছিলো মায়ের কিছু কসম, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের জন্য আর তারপরই একদিন অভ্রের সাথে তোকে দেখলাম।”
চৈতী বলে উঠলো, “পরের ঘটনাগুলো আমি জানি বিস্তারিত বলতে হবে না।”
“হু, আমি প্রিয়ন্তির ঘোর থেকে তখনও বের হতে পারিনি। আমার ভালোবাসার মানুষটা আমারই হাতের ওপর শেষ নিঃশ্বাস ছেড়েছিলো অথচ তাকে দাফন করার আগে সবাই কি বলল জানিস, আমি নাকি তাকে শেষ দেখাও দেখতে পারবো না তাকে একটাবার ছুঁয়ে দেখতে পারবো না। অথচ সে যেতে যেতেও আমার হাতেই তার মাথাটা রেখেছিলো পরম শান্তিতে। আমি পাগলের মত প্রিয়ন্তির বাবা,মা, তার ভাই এমনকি এলাকার সবচেয়ে মুরুব্বি মানুষটারও পায়ে পড়েছি তাকে একটাবার দেখার জন্য কিন্তু কেউ দেয়নি। মৌলভী সাহেবকে বলেছিলাম এমন কোন উপায় থাকলে বলে দিন যার মাধ্যমে আমি তার মাহরাম হতে পারবো।”
দিহান আবারও থেমে গেল চৈতী এবার পাশ ফিরে দিহানের উল্টোদিকে ফিরে বলল, “অনুমতি পেলে আমি ঘুমাবো। আমার সন্তানকে আমি আপাতত কারো প্রিয় মানুষ থেকে বিছিন্ন হওয়ার গল্প শুনতে দিতে চাচ্ছি না।”
“না, আজ তোকে শুনতে হবে সবটা। আমি আমার ভেতরের কষ্টগুলো কাউকে বলতে পারি না। সবাই আমার রাগ, ছন্নছাড়া স্বভাবটাকেই দেখে এসেছিস কিন্তু আমার ভেতরটা বুঝতে চাইলি না। মা জোর করলো বিয়ের জন্য, তুই জোর করলি,,,,” থেমে গেছে দিহান। সে রাতের কথা মুখে আনতে গেলেই মনে হচ্ছে সন্তানটার জন্ম নিয়ে চৈতীর মনে কষ্ট জমবে। সে আরেকটু কথাটাকে বদলে বলতে চাইলো, “আমি চাচ্ছিলাম তোর সাথে নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিন্তু সময়টা তোরা কেউ দিসনি।”
“তোমার কথা শেষ হয়েছে, আমি ঘুমাবো।”
দিহান চুপ হয়ে গেল। সে নিজেও এবার যেন হুঁশ ফিরে পেল। কি করছে সে! এসেছিলো তো চৈতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে জীবনটাকে নতুন করে শুরু করার অনুরোধ করতে। অথচ সে এসবের কিছুই করলো না উল্টো মৃত মানুষটার নামের গুঞ্জন তার অনাগত সন্তানকে শোনাচ্ছে! চৈতীর গায়ের জামাটা একটু একটু ভেজা ছিলে মনে পড়ে গেল দিহানের। সে নিজেকে খুব স্বাভাবিক রেখে ডাকলো চৈতীকে।
“তুই জামাটা বদলে নিলে ভালো হতো একটু আগেই তো ভিজেছিলি! ঠান্ডা লেগে যাবে তোর, বাবুর।”
“যেদিন সবাই জানতে পারলাম বাচ্চাটা পেটে আছে সেদিন থেকেই তার আর আমার জন্য চিন্তা করার মানুষের কমতি হচ্ছে না। তাই তুমি অযথা প্রিয় মানুষটার শোক ছেড়ে তার কথা ভেবে সময় নষ্ট কোরো না।”
চৈতী কথাটা বলেই আবার চুপ হয়ে গেল। দিহানও আর কিছু বলল না। সে ঘরেই ঘুমাবে নাকি চলে যাবে ভেবে ঠিক করতে পারলো না। কিন্তু এবার তো সে এখানেই থাকতে চায় যতোই অপমান করুক চৈতী যতো যাই বলুক সবাই। তাই আর এখন ঘরই ছাড়বে কেন! এ ঘরে সোফা নেই, ডিভান আছে কিন্তু তার সাইজটা খুবই ছোট। বাধ্য হয়েই একটা কাঁথা আর বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। রাতটা পার হোক কাল থেকে দিনটা সে নতুন করে শুরু করবে। সেই শুরুটা হবে তার সন্তান আর তার মাকে নিয়ে।
নতুন ভোর মানেই নতুন এক সময়। পুরনো সময়কে পেছনে ফেলে সামনে চলার এক নতুন আয়োজন। এই আয়োজনে যে মানুষটা যত সক্রিয় তার জীবনের আলো ততোটা উজ্জ্বল। দিহানের জীবনে প্রায় আঠারো মাস পর এক উচ্ছল ভোরের আগমন ঘটেছে। প্রকৃতির থরে থরে সজ্জিত রুপ প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই চোখ মেলে তাকিয়েছে দিহান। রাতটা কোনমতে পার করেই সে খুব ভোরে জেগেছিলো। তারপর নিজের বালিশ আর কাঁথা উঠিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে খাটের ওপর চৈতীর পাশে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে সে কিছুক্ষণ লনে হেঁটে আবার ঘরে ফিরে মাকে ডাকলো। দিলশাদ কাল খুব বেশি কথা বলেনি ছেলের সাথে কিন্তু তার মন চাইছিলো খুব কথা বলুক। দিহানও জোর করে কারো সাথে কথা বলার সাহস করেনি কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠেই মনে হচ্ছে মায়ের সাথে কথা বলা দরকার। বাবার সাথে প্রতিদিন কথা হতো তবুও বাবা তাকে একটাবার ইঙ্গিত দেয়নি কিছুর। সে অনেকটা জোর করেই মা- বাবার সাথে কথা বলতে চাইলো। ধাক্কা দিতেই দিলশাদ খুলে দিলো দরজাটা। প্রতিদিনকার নিয়ম মাফিক আজও তারা স্বামী স্ত্রী নামাজের পর বসে কথা বলছিলেন আর তসবীহ গুনছিলেন। দিহানকে দেখে তার বাবা হাসি মুখেই জিজ্ঞেস করলেন, “এত সকালে উঠে গেছিস?”
দিলশাদ তখনও কোন কথা বলেননি দিহানের সাথে। মা বাবা খাটে বসে আছেন দিহান চেয়ারটা টেনে সামনাসামনি বসলো। জবাব দিলো, “ঘুম ভেঙে গেছে আব্বু।”
“খিদে লেগেছে?” দিলশাদ প্রশ্ন করলো।
মাথা নাড়িয়ে দিহান জানালো “না” লাগেনি। এরপর দিহান চুপ করে রইলো কিছু সময়। তা দেখেই বাবা আবার প্রশ্ন করলেন, “কিছু বলবে?”
“আমার কি করা উচিত আব্বু?”
দিহানের কথা শুনে তার বাবা -মা দুজনেই তাকালেন তার মুখের দিকে।
“ক্ষমা চাওয়া উচিত স্ত্রীর কাছে যদি নিজের ভুল মেনে থাকো।” দিহানের বাবা বললেন কথাটা। দিলশাদ চুপচাপ বসা থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন তা দেখে দিহান মাকে ডাকলো। কিন্তু তার বাবা বাঁধা দিয়ে বললেন, “যেতে দাও। আমরা দুজন কথা বলি কেমন!”
দিহান বাবার সাথে যথেষ্ট ফ্রী কিন্তু তার সকল ভয়,ভীতি, ভালেবাসা আর দূর্বলতার জায়গাটা সবসময়ই মা ছিলো। আর তাই সে আজও চাইছিলো মা যেন তাকে পথ বলে দেয় সম্পর্কটাকে নতুন করার। সুন্দর একটা ভবিষ্যত গড়ার ব্যবস্থা মা’ই করে দিতে পারবে এমনটাই ভাবে দিহান। তার বাবা বাঁধা দিয়ে মাকে ডাকতে বারণ করলো বরং তিনি নিজেই তাকে চমৎকার পথের সন্ধান দিলেন দারুণ এক উদাহরণ দিলেন গাছের চারার। ‘যত্ন’ একটা চারাকে যেমন বাঁচতে সাহায্য করে সেই চারাকে বেড়ে উঠার জন্য আলো,বাতাস দেয় তারপরই চারাটা ধীরে ধীরে গাছ হয়ে উঠে। সম্পর্কও ঠিক তাই যত যত্ন তত তার সৌন্দর্য। যত্ন করলেই একটা চির ধরা সম্পর্কও সহজ আর সুন্দর হতে বাধ্য। ভালোবাসা,আদর যত্নে গাছ হোক বা সম্পর্ক তা চমৎকারভাবে সতেজ হয়ে নতুন রুপে ধরা দিবে। চৈতীর সাথে তার সম্পর্ক সম্পূর্ণ জোরের মুখে তৈরী হয়েছিলো। দু জনের মনের ভেতর অন্য দুটি মানুষের প্রতি আবেগ, মোহ আর ভালোবাসাও ছিলো কিন্তু এই নতুন সম্পর্কে একটা চারাগাছ তাদের অনাগত সন্তান। এখন এই সন্তানের দিকে একটু মনোযোগী হলেই দেখবে তারা তাদের ভেতরে বসবাস করা মোহময় সেই মানুষগুলোর স্মৃতি ঘোলাটে হয়ে যাবে। দিহান কিংবা চৈতী যে কোন একজনও যদি এই সম্পর্কটাকে যত্ন নেয় দেখবে একটা সময় পর তাদের মধ্যকার দূরত্ব আপনাআপনি ঘুচে গেছে। ক্ষমা করার কথাও তখন আর মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন হবে না। মন থেকেই ক্ষমা এসে ভুলিয়ে দেবে পেছনের কষ্টগুলো।বাবার কাছ থেকে উঠে সে নিজের ঘরে গেল। চৈতী এখনও ঘুমে তাই দিহান ঘরের মৃদু আলোটা নিভিয়ে দিলো। কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিলো থেমে থেমে তাই হয়তো সকালের বাতাসটা একটু বেশিই শীতল। বাইরের আলোয় পর্দা ভেদ করেই ঘরটা আলোকিত করেছে। দিহান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো চৈতীর দিকে। প্রথমে চৈতীর ফোলা মুখটা পরেই তার দৃষ্টি আটকে রইলো চৈতীর পেটের দিকে। ওখানটায় একজন আছে আর সে তার খুব আপন৷ এ জগতে তার নিজের খুব আপন সে মানুষটা! ভাবতেই দেহে অজানা এক শিহরণ বয়ে গেল। ছন্নছাড়া তার জীবনটাতে এক ছন্দের আগমন ঘটবে! তাকে বদলে ফেলতে হবে তার গোটা জীবনটাকে। একটানা চৈতীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটাসময় দিহানের মনে অদম্য এক ইচ্ছে জেগে উঠলো।
চলবে