#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
২৬.
ঝলমলে আলো পর্দা আর ঘুলঘুলির ফাঁক গলে ঘরের ভেতর জায়গা করে নিচ্ছে একটু একটু। চৈতীর ঘুম এখনও গভীর তার নিঃশ্বাসে শব্দ হচ্ছে। দিহান সেই কখন থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চৈতীর দিকে। তার চোখ বারবার ঘুরে বেড়াচ্ছে চৈতীর পেটের ওপর। মনে জাগছে অদমনীয় এক ইচ্ছা। ওই পেটে হাত রেখে সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করার এক প্রচণ্ড আবেগি ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে তাকে হাত বাড়াতে হবে। কিন্তু ছুঁতেই যদি চৈতী জেগে যায় আর উত্তেজিত হয়ে পড়ে! ভাবতেই ম্লান হয়ে গেল ইচ্ছেটা কিন্তু একেবারে হারিয়ে গেল না। হয়তো কোন একদিন সুযোগটা চলে আসবে তার যদি চৈতী মাফ করে দেয়।
“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?”
চৈতীর ঘুম ভাঙতেই দিহানকে অপলক তাকানো দেখে ভড়কে গেল। দিহান একদম খাটের পাশে দাঁড়িয়ে তার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পেরেই সে বিব্রত হয়েছিলো। চৈতীর কন্ঠে দিহানের ঘোর ভাঙে সে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়, “ঘুম ভাঙলো তোর? অনেক বেলা হলো তো খিদে পায়নি?”
এলোমেলো চুলগুলো দু হাতে পেঁচিয়ে কোনরকমে একটা খোঁপা করলো। খাট থেকে নেমে বিছানার চাদরটা একটু টেনে ঠিক করে চৈতী বাথরুমে ঢুকে গেল। দিহান অবশ্য সেদিকে আর খেয়াল না দিয়ে ঘর থেকে বের হলো। মিনিট দশেক বাদে ঐশীর কাছে জেনে চৈতীর জন্য একটা ডিম সেদ্ধ আর পাউরুটি নিয়ে এলো জেলি লাগানো। চৈতী মুখ হাত ধুয়ে বের হতেই দিহানকে দেখলো ট্রে হাতে। চৈতী সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ডাইনিংয়ে। দিশান নাশতা করছিলো চৈতীকে দেখতেই হাসিমুখে বলল, “শুভ সকাল জুনিয়র”
“ভাইয়া! এখনও জুনিয়র তোমার উইশ নেওয়ার যোগ্য হয়নি। জুনিয়রের মাকে রেখে তাকে কেন বলো সবসময়!”
“জুনিয়র জবাব না দিলেও শুনতে তো পাচ্ছে তাই নারে! কখন উঠলি ঘুম থেকে?”
রুটি ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছে আর সাথে সাথে কথা বলছে দিশান। ঐশী রান্নাঘর থেকে সবজির বাটি নিয়ে এসে চৈতীকে দেখে বলল, “তুমি এখানে কেন ভাই তো নিয়ে গেল তোমার নাশতা।”
চৈতী এ কথার জবাব দেয়নি। তার আচরণ এমন যেন, দিহান সম্পর্কিত কোন কথাতেই সে মুখ খুলবে না৷ দিশানও এবার কিছু বলতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই দিহান এসে দাঁড়ালো ট্রে সমেত। চৈতীকে ডাইনিংয়ে দেখে তার বুঝতে বাকি নেই মেয়েটা খাবে না তার নিয়ে যাওয়া খাবার। দিহানের মনে হলো জোর করলে বাড়াবাড়ি হবে। তাই ট্রেটা রেখে চলে গেল সেখান থেকে আর তাকে পেছনে পেছনে ডাকলো দিশান৷ সে শুনলো না কোন ডাক৷ থাক চৈতী নিজের মত রাগের পাহাড় অত সহজেই ভাঙবে নাকি! সে তো শুধু ভুল করেনি ওভাবে ছেড়ে গিয়ে অন্যায় করেছে খুব বড়। একটাবারও চিন্তা করেনি এতগুলো দিন যখন সে পালিয়ে ছিলো সবার থেকে তখন চৈতীকে নিয়ে লোকে কথা বলছে কিনা। বিয়ের পর যে মেয়ের স্বামী তাকে ছেড়ে পালায় তাকে নিশ্চয়ই লোকের কথা শুনতে হয়! সে তো এসব কিছুই ভাবেনি। ঘরে এসে ব্যাগ থেকে জামা কাপড়গুলো বের করলো দিহান। কিন্তু কাপড়গুলো আলমারিতে রাখবে কি রাখবে না এই নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ হলো নিজেই নিজের কাছে। এক, দুই দিন না ছয় মাসেরও বেশি সময় সে বাড়ির বাইরে আর এতদিনে নিশ্চয়ই ঘরের ভেতরেও নিয়ম বদলেছে তার জিনিসপত্রেরও! আলমারির একটা পাল্লা টানতেই খুলে গেল। লক করেনি চৈতী তাতে অবাক হয়নি দিহান কিন্তু সে অবাক হলো দ্বিতীয় পাল্লা খুলেই। এ পাশটা খালি পড়ে আছে সেই জায়গাটুকু যেটুকু দিহান খালি করে গিয়েছিলো। তারমানে চৈতীও হাত লাগায়নি এপাশে একবারও। নিজের কাপড় গুছিয়ে রেখে দিহান নাশতার জন্য টেবিলে যেতেই দেখলো দিশান উঠে গেছে। তার বাবা খাচ্ছে চৈতীর পাশে বসে। সে অনেকটা ইতস্তত করেই বাবাকে বলল, “আব্বু, আমি কি চাকরিটা ফেরত পেতে পারি?”
দিহানের বাবা বললেন, “পেতে পারো তবে আগের পোস্ট আর ফাঁকা নেই। আমার একজন এসিস্ট্যান্ট দরকার ছিলো চাইলে জয়েন করতে পারো। আমার অভিজ্ঞ লোক দরকার তবুও তোমাকে সুযোগ দেওয়াই যায় কিন্তু!”
“কিন্তু কি?”
“স্যালারি বেশি হবে না।”
“বেশি লাগবে না আগে যা ধরেছিলে তাই দিও।”
“মাথা খারাপ তোমার?”
দিহান চমকে গেল বাবার কথা শুনে। চৈতীও বেশ অবাক হলো ফুপার রিয়াকশন দেখে। দিহান প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছ?”
“আগের পোস্টটা ছিলো ম্যানেজারের। বেতন ধরা হয়েছিলো তোমার পঁয়ত্রিশ কাজ জানো না তবুও কারণ তখন তোমাকে আমার ছেলে হিসেবে ঢুকিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ব্যবসা তো তোমার আর দিশানেরই। নিজ হাতে শিখিয়ে পরিয়ে নেব কিন্তু তুমি সেই সুযোগটা পায়ে ঠেলে পালিয়ে গেছো। এখন আর মালিকের ছেলে মালিক হিসেবে নয় ঢুকতে চাইলে সাধারণ কর্মী হয়েই ঢুকবে। তবুও অনেকরকম ছাড় দিচ্ছি। পছন্দ হলে আজকে থেকেই জয়েন করো আদারওয়াইজ অন্য পথ খোঁজো।”
খুব সাবলীল ভঙ্গিতে এই প্রথম বাবার মুখে কোন কঠিন বাক্য শুনলো দিহান। সে এখন আর অবাকও হতে পারছে না। তার ভুলের জন্যই আজ বাবা এইটুকু কঠোরতা প্রকাশ করলেন। মন্দ লাগছে না কিন্তু কিছুটা হতাশা তো হয়েই গেছে। চৈতীর খাওয়া শেষ তাই সে নিজের প্লেট নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। তখনি শুনতে পেলো দিহান তার বাবাকে বলছে, “এমন আর হবে না আব্বু। স্যালারি আগেরটাই ধরো প্লিজ একটু বোঝো এখন আমার বাচ্চার জন্যও তো সেভিংস লাগবে তাই না!”
“বাচ্চার জন্য কি লাগবে আর লাগবে না তা তোমার অফিসের বস নিশ্চয়ই দেখবে না! আমি যা বলেছি তাতেই যদি পোষায় তো আজই জয়েন করো দশটার মধ্যে। আর হ্যাঁ কাল থেকে তোমার সময় শুরু হবে অন্যদের মতোই নয়টায়।”
হশাশ চোখে তাকিয়ে আছে দিহান। বাবার কথাবার্তা এতক্ষণ কঠিন মনে হলেও এবার ভীষণ নিষ্ঠুর মনে হলো। কোনমতে নাশতা শেষে ঘরে গেল সে। চৈতীর সাথে আপাতত কিছু বলার নেই তবে তার রাগ ভাঙানোর জন্য সহজ যে কথাটা মাথায় আসছে তা হলো জোর করে তার অভ্যাসে জড়িয়ে যাওয়া। যেমনটা জড়িয়েছিলো চৈতী! তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বাবা আর দিশানের সাথেই বের হলো দিহান অফিসের জন্য আর যাওয়ার সময় চৈতীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি অফিসে যাচ্ছি।”
চৈতী ফিরেও তাকালো না তার দিকে। দিহান চলে যেতেই চৈতী গেল ঐশীর কাছে দোতলায়। তাকে দেখেই ঐশী অস্থির হয়ে গেল কেন সে উপরে এলো কষ্ট করে। তাকে ডাকলেই তো সে নিচে যেত৷ এ কথার চৈতী হাসলো বলল, “এখনও এতোটা অসুস্থ নই আপু৷ আমার ও ঘরে ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম তোমার কাছে আসি আর এ ফাঁকে একটু হাঁটবো।”
“না চৈতী হাঁটতে হয় লনে, ড্রয়িংরুমে অথবা তোমার ঘর থেকে মা বাবার ঘরে যাও। কিন্তু এখন তোমার সিঁড়ি বেয়ে চলাটা সত্যিই রিস্কি। দ্যাখো কেমন হাপাচ্ছো তুমি! তোমার যখন ইচ্ছে হবে আমাকে একটু ডাকলেই হবে আমি নিচে বসেই গল্প করবো তোমার সাথে।” কথা বলতে বলতে ঐশী এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো চৈতীকে। ধীরে ধীরে পানিটা শেষ করে পা মেলে খাটের ওপর বসলো চৈতী।
“চকলেট খাবে?”
চৈতী মাথা ওপর নিচ করলো সে খাবে। ঐশী একটা চকলেটের প্যাকেট চৈতীর হাতে দিতেই চৈতী বলল, “ভাইয়া কাল আমাকেও দিয়েছিলো এগুলো।”
“তোমার জন্যই এনেছিলো বলছিলো জুনিয়র নাকি মামার কাছে আবদার করেছে। কিন্তু জুনিয়র আর তার মামা তো জানে না তার মামী তার ভাগ থেকে দুটো লুকিয়ে ফেলেছে।” ঐশীর বলার ঢংয়ে চৈতী ঐশী দুজনে একসাথেই হেসে উঠলো। চকলেট খেতে খেতে চৈতী বলল তার আজকাল পা ফোলাটা বেশি বেশিই হচ্ছে । চৈতীও কিছু কথাবার্তা বলল কিন্তু এর মাঝেই সে হঠাৎ চৈতীকে বলল, “ভাইয়াকে নিয়ে কি ভাবলে?”
“কি ভাববো?”
“ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে তোমাদের জন্য;”
“আমাদের জন্য নয় তার সন্তানের জন্য আপু। আর সে এসেছে বলেই কি আমি হাসিমুখে সন্তানকে তার হাতে তুলে দিবো!”
“অবশ্যই না। যেভাবে দীর্ঘ সময়টাকে তুমি পার করেছো তা আমরা দেখেছি। সবচেয়ে বেশি যখন তোমার তাকে প্রয়োজন ছিলো সেই সময়টাতেই সে পাশে ছিলো না। কিন্তু চৈতী!”
“কিন্তু কিছুই না আপু৷ এই বাড়ি তার সে ফিরে এসেছে এতে আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমি একান্ত বাধ্য হয়ে পড়ে আছি এখানে আর এই সন্তান! যতোই অস্বীকার করি অধিকার তারও আছে ওর ওপর কিন্তু ততদিন না যতদিন সে ভূমিষ্ট না হচ্ছে। আর আমি জানি ফুপি অপেক্ষায় আছে আমাদের একটা সুন্দর সংসার দেখার কিন্তু আমি চৈতী বলছি তার সাথে আমার কোন সংসার হবে না।”
উত্তেজিত হয়ে গেছে চৈতী তা বুঝতে পেরেই ঐশী তার মাথায় হাত রাখলো। বড় বোনের মতোই স্বস্নেহে তাকে চুপ হতে বলে বোঝাতে লাগলো সময় নিয়ে যেন সিদ্ধান্ত নেয় চৈতী। মানুষ মাত্রই ভুল কিন্তু সেই ভুলটাকে শুধরানোর চেষ্টা করলে ভুল মানুষটাকেও সুযোগ দিতে হয়। আর দিহান তো এবার নিজে থেকে ক্ষমা চেয়েছে, সে তার ভুল শুধরে নতুন করে বাঁচতে চাইছে তাদের নিয়ে। ঐশী জানে না প্রিয়ন্তিকে ঘিরে ঘটনাগুলো। সে শুধু জানতো দিহানের জীবনে কেউ একজন ছিলো যে এখন নেই। কিন্তু চৈতী তো জানে সবটা তবুও কি সে সুযোগ দিবে না একটাবার! চৈতী ভাবতেই চায় না আর দিহানকে নিয়ে নতুন কিছু। তার শুধু মনে পড়ে যায় সেই রাতটাতে সে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলো দিহানের কাছে। কিন্তু দিহান তার বিসর্জনের মূল্যটুকুও দেয়নি। আর আজ হঠাৎ এসে বলছে সব ক্ষমা করে দিতে! এতোটাই কি সহজ ভুলে যাওয়া সব! মুখ বুজে সে সবটা মেনে নিতো যদি দিহান চলে যাওয়ার পর একটাবার বলতো, “চৈতী আমাকে সময় দে আমি ফিরে আসবো কোন একদিন। তুই যা করেছিস তা অন্যায় আর এই অন্যায়কে ভুলিয়ে ফিরতে সময় লাগবে আমার।” এরপর চৈতী নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতো আর সে ফিরে এলে নতুন করে শুরু করতো সবটা। কিন্তু সে কি করলো! চৈতী আর ভাবতে পারে না দিহানকে নিয়ে।
দীর্ঘ সময় পর বসের বড় ছেলে আবারও অফিসে এসেছে এবং এবার সে সাধারণ এক কর্মী হিসেবে এসেছে। এই নিয়ে সকাল থেকেই অফিসে প্রতিটি কর্মচারীই কানাঘুঁষা করছে।রীতিমতো কেউ কেউ হাসাহাসিও করছে দিহানকে দেখে। কারণ, মোটামুটি অনেকেই দিহানকে দেখেছিলো ছন্নছাড়া আর পাগলাটে আচরণে। দিহানের কান পর্যন্তও আসছে কথাগুলো কিন্তু এবার সে কোনদিকেই পাত্তা দিতে চাচ্ছে না। নিজেকে এবার আর আগের মত করে উপস্থাপন করতে চায় না সে কারো সামনে। নিজেকে বদলে নিবে দারুণভাবে অন্তত তার সন্তানের জন্য।
সারাদিন পরিশ্রমের সাথে দারুণভাবেই কেটে গেল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে সে মাকে ফোন করে জানতে চাইলো কি খাবে সে নিয়ে আসতে চায়। দিলশাদও খুব স্বাভাবিকভাবে ফোনটা হাতে রেখেই চৈতীকে প্রশ্ন করলো, “কিছু আনতে বলবো খাওয়ার জন্য?”
দিশান প্রায় প্রতিদিনই ফেরার পথে কিছু না কিছু নিয়ে আসে। চৈতী ভাবলো দিশানই করেছে ফোনটা তাই সে বলল, “ভাইয়াকে বলো আমার জন্য আমড়া নিয়ে আসতে।”
দিহান ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শুনেছে কথাটা। দিলশাদও আবার একই কথা জানালো। দিশান আর বাবা ফিরে এসেছে যথা সময়েই তাদের হাত খালি। চৈতী বসার ঘরে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছিলো। ময়না খালা বলেছে বাচ্চা গর্ভে থাকলে কুরআন, কালাম যত পড়বো সন্তান তত নেক হবে। চৈতীও চেষ্টা করে নামাজ, কালাম ঠিক রাখার। আগে তো সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজটাও ঠিকঠাক পড়তো না। এখন সন্তানের উছিলায় এদিকটাতেও পরিবর্তন এসেছে তার। কোরআন বন্ধ করতেই সে দিশানকে বলল, “আমড়া পাওনি ভাইয়া?”
“আমড়া!”
“হ্যাঁ, তুমিই ফোন করেছিলে না কি খাবো জিজ্ঞেস করে?”
চট করেই দিশানের মনে হলো ফোনটা হয়তো ভাইয়া করেছে। কিন্তু এখন যদি ভাইয়ার কথা শুনে চৈতী আমড়া না খায়! তাই সে একটু বুদ্ধি খাটিয়েই বলল, ” হ্যাঁ কিন্তু আমড়া আমি পাইনি৷ একজনকে পাঠিয়েছি সে পেলেই দিয়ে যাবে। এখন তো সিজন না বুঝলি তাই সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না।”
“ওহ।”
দিলশাদ আর ঐশী দুজনেই স্বস্তি পেল দিশানের জবাব শুনে। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে সে চৈতীর জন্য ভালো করলো। কিন্তু দিহান এখনো ফিরছে না। সে বেচারা সত্যিই আমড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে পুরো ঢাকা শহরে। দিশানরা যখন রাত নয়টায় বাড়িতে দিহান তখন ঢাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের পথে। অনেক খুঁজে এক বন্ধুর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক বাড়িতে পেল বারোমাসি আমড়া গাছ। বাড়ির কর্তার অনুমতি নিয়ে মাত্র দেড় ইঞ্চি সাইজের কচি গোটা পাঁচেক আমড়া নিয়ে রওনা দিলো ঢাকার পথে। আবারও উল্টো পথে জ্যাম ছাড়িয়ে বাড়ি ফিরতে রাত বারোটা বাজলো দিহানের। কলিংবেল বাজাতে দিলশাদ এসে দরজা খুলে দিলো। ঘামে ভেজা শার্ট লেপ্টে আছে শরীরে তার। মায়ের দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।
“হাসছিস কেন?”
“এই দ্যাখো।” বলেই সে পকেট থেকে কচি কচি আমড়াগুলো বের করে মাকে দেখালো। মায়ের হাতে আমড়াগুলো দিয়ে বলল তার খিদে নেই সে এখন ঘুমাবে। দিলশাদও ছেলের মুখের হাসি দেখে আর কথা বাড়ালেন না। দিহান আলতো করে দরজা ঠেলতেই খুলে গেল। আজ ঘরের বাতি বন্ধ করেনি চৈতী। অন্যান্য রাতে সে মৃদু আলো জ্বেলে ঘুমায় আজ হয়তো মনে ছিলো না৷ এতে যেন দিহানেরই লাভ হলো। সে চুপচাপ অনেকটা সময় চৈতীর পাশে বসে অপলক নেত্রে দেখতে লাগলো তাকে। কোথায় ছিলো এতোটা মায়া এতদিন! দিহান কেন চৈতীর মুখের এই মায়া আগে দেখতে পারেনি এই নিয়ে আফসোস হচ্ছে তার।
চলবে
(ফোন বন্ধ হবে হবে অবস্থায় আছে। নো রিচেক, নো এডিট 😑)