আপনিময় তুমি সিজন 2পর্ব-৫

0
1282

#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 05…

🍁১১.🍁
৯-বছর পর…

সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে যায়—নাম, পরিচয়, ঠিকানা, অস্তিত্ব, মানুষজন সবকিছু। কত আপন মানুষ পর হয়ে যায়। পর মানুষ হয়ে যায় পরম আপন। কিন্তু সময় তার নিজের নিয়মেই চলে। অতন্দ্রি সে। তৎপর সে নিজের নিয়ম রক্ষার্থে। কড়া প্রশাসকের মতো পালন করে তার নিয়মানুবর্তিতা। কারও কোনো খেয়াল না করে। এভাবেই চলে যায় দিন, মাস, বছর, যুগ শতাব্দি। বদলে যায় মানুষের জীবন। অতীত গিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন অতীতের। তার মাঝে কত ভাঙা-গড়া, বিচ্ছেদ-সমন্বয় হয় তার ইয়ত্তা কেউ রাখে না। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে। ভবিষ্যতের আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। তাই তো সময়ের তিনটি কাল নিয়ে এটাই বলা যায়,

অতীত মানে অভিজ্ঞতা।
বর্তমান মানে হতাশা।
ভবিষ্যৎ মানে প্রত্যাশা।

এর ভাবার্থ এটাই—অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমানের হতাশার সাথে লড়াই করে ভবিষ্যতের ভালো কিছুর প্রত্যাশার নামই জীবন।

এটাই আমি। এটাই আমার ভাবনা। তাই তো অতীতকে ভুলে নতুন জীবনে পা বাড়াতে যাচ্ছি। জানিনা, এই নতুন জীবন আমাকে কীভাবে গ্রহন করবে? আমি কীভাবে নিজেকে সাজিয়ে নেব? তবুও ভালো কিছুর জন্য আমি আমার নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছি। হয়তো এখানেই আমার মঙ্গল নিহিত। হতেও পারে এর থেকে আমি বেঁচে থাকার কারণ পেয়ে গেলাম।

হ্যাঁ, আর কোনো খারাপ কিছু ভাব্বো না। শুধু ভালোটাই ভাব্বো।

-আনহা…

কথাগুলো ডাইরীতে লিখে ‘আনহা’ নামের নিচে একটা ডুডুলসের (🙂) ছবি আঁকল আনহা। ডুডুলসের মতো ওর ঠোঁটেও ফুটল হাসির রেখা।

তখনি আনহার মা সাহানার ডাক পড়ে। ‘আনহা আজ না তুই ভার্সিটিতে যাবি?’

মায়ের ডাকে দ্রুত ডায়রিটা ড্রয়ারে রেখে দিল আনহা। বলল, ‘হ্যাঁ, মা। আমি আসছি।’

‘ভাত খেয়ে তারপর যাবি।’

‘আমার লেট হয়ে যাবে তো।’

‘তাহলে আর ভার্সিটিতে গিয়ে কাজ নেই। বাড়িতেই বসে থাক।’

‘উফফ! আচ্ছা, ঠিক আছে।’

আনহা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে খাবার টেবিলে যায়। টেবিলে খাবার রাখা। আনহা প্লেট উল্টাতেই দেখে পাউ ভাজি আর পরোটা রাখা। মুহূর্তেই আনহার খুশিটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাহানা জগে পানি নিয়ে টেবিলে রাখে। আনহা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে, ‘মা তুমি আমার জন্য…’

‘কী করব বল? এতদিন পর ভালো কিছু হচ্ছে তোর সাথে। এইটুকু না দিয়ে কী পারি? খা…’

আনহা মাথা নাড়িয়ে খাবারটা বেশ আয়েশ করে খায়। তারপর হাত ধুয়ে নিজের রুমে যায়। ব্যাগে ছোট একটা নোটবুক আর কলম নিয়ে বের হতে যায়। তখনি কিছু একটা ভেবে ফিরে আসে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে নীল রঙের একটা লকেট বের করে গলায় পরে। আবারও মুখে হাসি ফোটে আনহার। চোখটা বন্ধ করে লকেটটা বুকে চেপে ধরে মুচকি হেসে বলে, ‘ইহান…’

আবার ডাক পরে সাহানার। ‘কিরে যাবি না ভার্সিটিতে।’

‘যাচ্ছি…’ বলেই বেরিয়ে পড়ে আনহা।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
🍁১২🍁
‘সাব্বাস গুরু। তুই পারবি। চালিয়ে যা।’ চিৎকার করে বলছে জিহাম। সবাই অয়ন নাম করে উৎসাহ দিচ্ছে। অবশেষে লাইন ক্রস করে প্রথমে লাইন ক্রস করল অয়ন। তারমানে জিতে গেছে অয়ন।

অয়ন বাইক নিয়ে থামতেই জিহাম দৌড়ে ওর কাছে যায়। জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমরা আজকেও জিতে গেছি। আজকের বাজি পুরো ২৫হাজার টাকা ছিল।’

‘আমার টাকা।’ হ্যালমেট খুলে জিহামের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল অয়ন।

‘এই নে।’ জিহাম ওর হাতে টাকার একটা বান্ডেল দিল।

অয়ন টাকাটা নিয়ে বলল, ‘কত আছে?’

জিহাম ইতস্তত হয়ে বলল, ‘১৫ হাজার।’

ভ্রু কুঁচকায় অয়ন। বলে, ‘বাকি দশ হাজার?’

‘বাইক তো আমার তাই বাকি ১০ হাজার আমার।’

‘তোর বাইক তার জন্য ৫হাজার টাকাই যথেষ্ট।’ জিহামের হাত থেকে ৫-হাজার টাকা নিয়ে।

জিহান সাথে আমতা আমতা করে বলল, ‘এটা কিন্তু ঠিক না অয়ন। তুই জুলুম করছিস।’

হাসল অয়ন। বলল, ‘ঠিক আছে আমি অন্য কারো বাইক নিয়ে নিব।’

এ-কথায় নিভল জিহাম। বলল, ‘এই রাগ করছিস কেন? আমি কি তাই বলেছি?’

‘তাহলে চল।’

তারপর দু’জনে মাঠে গেল। হাঁটতে হাঁটতে জিহাম বলল, ‘হ্যাঁ রে তুই তো একটা বাইক কিনে নিলেই পারিস।’

‘টাকাটা কি তোর বাপ দেবে? আমার কিপ্টা বাপ তো দেবে না।’

‘তাহলে রেসিং-এর টাকা জমিয়ে তুই কিনতেই পারিস। আমাকে আর ভাগ দিতে হবে না।’

‘কেন টাকা পাস বলে কি কষ্ট হচ্ছে?’

‘কি যে বলিস?’

কিনব রে জিহাম। বাইক কিনব।’ তখনি একটা মেয়ে অয়নের দিকে ইশারা করে ও তার দিকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে জিহামকে বলে,’ আম্মা বলেছে এ-মাসেই দেবে। তাহলে নিজেরটা ভাঙার কী দরকার?’

‘তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু নেক্সট প্লান কী?’

‘আপাতত রাইসাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানানো।’

‘কিহ! আর ইউ সিরিয়াস! তুই জানিস রাইসার বাবা কে? তাছাড়া, ও এখানের কোনো ছেলেকেই পাত্তা দেয় না।’

‘তাই তো ওকেই চাই। ভাব তো, যে মেয়ে কাউকে পাত্তা দেয় না সে আমার গার্লফ্রেন্ড। তাছাড়া ওর মতো ক্লিলার লুক এখানের কার আছে? উফফ! দেখলেই মন চায়… নাঃ বললাম না।’

‘কী বলতি?’

এ-কথায় আচমকাই অয়ন জিহামের গলা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘শী ইজ ভেরি হট ইয়ার। বিশ্বাস কর…’

অয়নের কথাটা শেষ হওয়ার আগেই কেউ ওর কাঁধে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। প্রচন্ড গতিতে থাপ্পড় বসায় ওর গালে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব অয়ন আর জিহাম। আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে দেখছে। ব্যাপারটা বুঝতে অয়নের মস্তিষ্ক কিছুটা সময় নিল। নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই কিছু একটা আওড়ে নিল। নিজেকে বোঝাল—ওকে কেউ মেরেছে। হ্যাঁ, মেরেছে। ও ধীরে ধীরে তাকাল থাপ্পড় দাতার দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই ভ্রু-কুঁচকে আসে। নাঃ, এটা তো দাতা নয় দাত্রী। একজন সেলোয়ার-কামিজে থাকা খাঁটি বাঙালি মেয়ে। থাপ্পড় খেয়ে ওর রাগ করার কথা। কিন্তু না, হচ্ছে না। ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটিকে দেখল। অতঃপর জিহামের শার্টের কলার টেনে কর্কশ কণ্ঠে জিহামকে বলল, ‘ওই সালা। আমি কী কোনো খালাম্মারে হট-সেক্সি বলছি রে? তাইলে এই আফায় আমারে মারল কেন?’

অতঃপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই যে আপা নিজেকে দেখেছেন। আপনি যদি হট কথাটা শুনে আমাকে মেরে থাকেন তাহলে বলছি, চাপ নিয়েন না আপনাকে বলি নাই।’

কথাটা শুনে মেয়েটির রাগ আরও বেড়ে গেল। তা দেখে অয়ন আবার বলল, ‘আফা মাইন্ডে নিয়েন না। আমি বুঝতে পারছি না আপনি রাগ করছেন কেন? খালাম্মা বলার জন্য নাকি অন্য কারণে। তবে যদি ভেবে থাকেন, খালাম্মা বলছি বলে, তাহলে আগেই বলি—আপনাকে দেখে হট মনে হচ্ছে না। হ্যাঁ, হলেও হতে পারেন। কিন্তু আপনার ড্রেস-আপের জন্য বোঝা যাচ্ছে না। তাই সরি…’

কথাটা সহ্য হলো না। ও আরেকটা থাপ্পড় মারতে চাইল অয়নের গালে। কিন্তু এবার আর তা অয়নের গালে লাগে না। বরং অয়ন ওর হাতটা মুচড়ে মেয়েটার হাত দিয়ে ওর গলাই চেপে ধরে। বলে, ‘একবার ছেড়ে দিয়েছ বলে কী ভেবেছ—অয়নের গাল সস্তা। যখন মন চায় স্টার্মের মতো থাপ্পড় বসাবা। নেহাত মেয়ে নাইলে… ‘

আরও জোরে চেপে ধরে মেয়েটার হাত। মেয়েটা গলায় থাকা নীল লকেটটা চেপে ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে। নিজেকে ছাড়াতে চায়। কিন্তু অয়ন ওকে একেবারেই নিজের কাছে এনে মেয়েটির কানের কাছে গিয়ে বলে, ‘বাট তুমি দেখতে অতটাও খারাপ নও। শুধু একটু ওল্ড ফ্যাশান। যা আমার পছন্দ নয়।’

‘ছাড়ো আমাকে।’

‘উহুম… তা তো হচ্ছে না। প্রথম টাচ তুমি করেছ। এবার আমার পালা। ও-ই যে হিন্দিতে একটা কথা আছে না, ‘তুমনে টাচ কিয়া আপনি মার্জিছে। আব ওস্কি মার্জি চালেগি, জিসকো তুমনে টাচ কিয়া।’

‘এটা কোন ছবির ডায়লক?’ সন্দিহান হয়ে জানতে চাইল জিহাম।

ইহান বিরক্ত হয়ে বলল, ‘অয়ন v/s খালাম্মা।’

বলেই মেয়েটাকে মাঠে সবার সামনে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। তখনি একটা মেয়ে এসে মনে মনে বলল, ‘আনহা এটা কী করল? ওকে না করলাম তবুও অয়নের সাথে ঝামেলা করল? এখন কী হবে?’

.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন। ]

আমি আগেও বলছি এখনো বলছি, এর কাহিনী সম্পূর্ণ আলাদা।

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here