#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 06…
‘কী করছ ছাড়ো আমাকে? খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।’
‘খালাম্মা খারাপের দেখেছেনটা কী? ফ্রি ফ্রি থাপ্পড় মেরে চলে যাবেন অথচ কিছু নেবেন না তা কী করে হয়? আমার তো একটা দায়িত্ববোধ আছে নাকি? এভাবে কীভাবে এমনি এমনি যেতে দেই। এত কষ্ট করে শরীরের এনার্জি খুইয়ে থাপ্পড় মেরেছেন বলে কথা।’
‘দেখো..’
‘বিশ্বাস করুন আপনাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা পোষন করছি না আমি। সো দেখাদেখি ক্যান্সেল।’
বলেই অয়ন আনহাকে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় তা বুঝতে পারছে না আনহা। বার বার ছেলেটার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু কে শোনে কার কথা?
‘বলছি না ছাড়ো?’
‘এইতো আর একটু।’
তখনি আনহা খেয়াল করল ছেলেটা ওকে চারুকলা ভবনের সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন? আনহা আরও জোর দিয়ে ওর হাত ছাড়াতে চায় কিন্তু পারে না। ছেলেটা হাতের ছাল-চামড়া তুলেই দম নেবে। নাঃ, পারল না। ছেলেটা ওকে টানতে টানতে ডান দিকে নিয়ে গেল। দেখে, চারুকলা ভবনের সামনের মাঠে কতগুলো ছেলেমেয়ে রং, তুলি ও ক্যানভাস নিয়ে ছবি আঁকছে। ছেলেটা ওদের কাছে গিয়ে বলল, ‘হায় গাইস, তোমাদের একটু ডিস্টার্ব করলে সমস্যা হবে?’
‘কোনো সমস্যা নেই অয়ন। কিন্তু করবে টা কী?’
‘রং খেলব। তোমাদের রং-তুলি যদি পেতাম।’
‘টেক ইট।’
অয়ন ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আনহার দিকে তাকায়। বলে, ‘খালাম্মা, তাই না। হুমম, এবার দেখবা অয়ন কী করে?’
বলেই মগে গোলা রঙ আনহার গায়ে ছুড়ে মারে।সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বলে, ‘কী হলো তোমরা বসে আছ কেন? রঙ খেলার পারমিট তোমাদেরও আছে।’
অয়নের কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই চারদিক দিয়ে আনহার গায়ে রঙ নিক্ষেপ শুরু হয়। অয়ন অনেক আগেই সরে গেছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। এতক্ষণ শুধু আনহার গায়ে রঙ মারলেও এবার রঙিন পানি দিয়ে ফোলানো বেলুন আনহার গায়ে মারছে। চারদিক থেকে এমন হওয়াতে আনহা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অয়নও ক্ষণে ক্ষণে একটা বেলুন আনহার গায়ে মারছে। আনহা না পেরে চিৎকার করে বলছে, ‘স্টপ। প্লিজ, স্টপ ইট।’
কিন্তু কেউ শুনল না। এক পর্যায়ে আনহা নিজেকে সামলাতে না পেরে ভিজা মাটিতে পিছলা খেয়ে কাদায় পড়ে মাখামাখি হয়। পায়ের গিড়ায় আঘাত পায়। ব্যথায় ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তখনই অয়ন বলে উঠল, ‘খালাম্মা আপনার কী এখনো থাপ্পড় দেওয়ার ইচ্ছে আছে? তবে বলে দিন শো আর কিছুক্ষণ জারি রাখব।’
কিন্তু আনহা কিছু বলতে পারল না। ভেজা শরীর রঙে মাখামাখি। অস্ফুটভাবে শরীরের শেপ বোঝা যাচ্ছে। আনহা নিজেকে আড়াল করতে ব্যস্ত। আশেপাশের লোক কী করছে বা ছেলেটি কী বলছে তার কোনো খেয়াল ওর নেই।
কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা অয়নের বোধগম্য হলো। ও ধীর পায়ে আনহার কাছে গিয়ে একহাঁটু গেড়ে বসল। বলল, ‘এবার বলুন থাপ্পড়টা মেরেছিলেন কেন?’
আনহা রাগী চোখে অসহায় নিয়ে অয়নের দিকে তাকায়। ইহান আবারও জিজ্ঞেস করে, ‘কী গো বলবেন না নাকি?’ তাহলে আমার কাছে অন্য ব্যবস্থাও আছে। ওই জিহাম খালাম্মার রঙগুলো ধুইয়ে দে তো।’
কথাটা শেষ করার আগেই বালতি ভর্তি পানি আনহার দিকে ছুড়ে মারা হয়। অয়ন ওর সামনে থাকার কারণে তা অয়নের গায়েও লাগে। অয়ন আর আনহা দু’জনের সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। তা দেখে অয়ন ক্রোধে ফেটে বলে, ‘সালা, আহাম্মক কী করলি তুই এইটা? তোরে আমারে গোসল করাইতে কইছি?’
‘সরি, ইয়ার।’
‘সালা, রাখ তোর সরি।’
তখনি আনহা উঠে যেতে চায়।
‘আরে আরে খালাম্মা যায় কই?’ বলেই আনহার হাত ধরে। যার কারণে আনহা আবার পিছলে অয়নের গায়ের পড়ে যায়। অয়নের দু’কাঁধের উপর হাতের ভর রাখে। কিন্তু টাল সামলাতে পারে না। অয়নকে সমেত মাটিতে পড়ে যায়। আনহার ভেজা চুল অয়নের মুখে আঘাত খায়। অয়ন ওর দু’হাত দিয়ে আনহার বাহু ধরে ওকে নিয়ে উঠে বসে। সঙ্গে সঙ্গে আনহা অয়নকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বলে, ‘অসভ্য ছেলে। এরকম করতে লজ্জা করে না।’
আনহার এ-কথায় অয়ন নিজের দিকে দেখে। কালো শার্টের উপর জ্যাকেট পড়ে আছে। শরীরের কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া ও তো ছেলে খালি গায়ে থাকলেই বা সমস্যা কোথায়? তাই চিমসে গলায় আনহাকে বলল, ‘লজ্জা কী গাছে ধরে নাকি রে বাবা? তাছাড়া আমি কী মেয়ে নাকি কথায় কথায় ৩হাত ঘোমটা দেব। জামাকাপড় তো ঠিক ভাবেই পড়েছি। এই যে দেখো, এটা শার্ট—যার নিচে আছে গেঞ্জি। এটা প্যান্ট—থাক এর বিবরণ দিলাম না। পায়ে আছে জুতো, পরে আছি মুজো। এতে লজ্জা কী আছে রে ভাই? আমি তো আর… ‘ গলা খাঁকারী দিল। বলল, ‘সেটা বুঝে নেও।’
আনহা আবার চলে যেতে নেয়। অসহ্য লাগছে ছেলেটাকে। এমন গায়ে পড়া ছেলে জীবনে একটাও পায়নি। এখন নিজের গালেই থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন ওকে থাপ্পড় মেরে আপদ ঘাড়ে তুলতে চেয়েছে?
কিন্তু ওর যাওয়ায় এবারেও বাধা দেয় অয়ন। ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। আনহা আবার মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যায়। মাটির ধাক্কায় ওর ওড়না নিচ থেকে গলায় থাকা লকেটটা বেরিয়ে আসে।
এতক্ষণ অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছিল। কিন্তু যেই না লকেটের দিকে অয়নের নজর যায় মুহূর্তেই থমকে যায় ও। দৃষ্টি শুধু লকেটের দিকে কেন্দ্রীভূত করে। রোদের আলোয় নীল পাথরটা জ্বলজ্বল করছে। অয়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লকেটটা দেখে চলেছে। আনহা মাটিতে পড়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছে। ভেজা মাটি পিছলে আছে তাই উঠতেও কষ্ট হচ্ছে। সহসা অয়ন স্তম্ভিত হয়ে আনহার দিকে এগিয়ে যায়। আনহার সামনে দু’হাঁটু গেড়ে বসে লকেটটা টাচ করতে যায়। কিন্তু আনহা ওর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা দূরে সরিয়ে দেয়। বলে, ‘আমার লকেটে হাত দেবে না বলছি। তাহলে কিন্তু…’
কিন্তু ওর কোনো কথাই অয়নের কানে যায় না। ও লকেটের দিকে চেয়ে আছে। এই লকেটটাই ও কাউকে দিয়েছিল। হ্যাঁ, এটাই। এটা শুধু কোনো পাথর ছিল না। একটি মূল্যবান ছোট একটি রত্ন ছিল। অয়নের বাবা নিয়ে এসেছিলেন। আর ও সেটা না বলে কাউকে দিয়েছিল। তারমানে সেই কী?
অয়ন এবার আনহার দিকে তাকায়। তখনি বালতি ভর্তি পানি আনহার গায়ে ছুড়ে মারে জিহাম। আনহার মুখ থেকে রঙ কিছুটা সরে যায়। ভালোভাবে এই মুখশ্রী দেখে নেয় অয়ন। অচেনা এই মানবীর মাঝে চেনা কাউকে খোঁজার চেষ্টা করে। আনমনেই অয়নের বাঁ’হাত আনহার গালে চলে যায়। সামনে আসা চুলগুলো কানে গুঁজে দেয়। অয়নের এ কান্ডে আনহা বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকায়৷ অয়নের হাতটা গাল থেকে সরিয়ে দিতে চাইল —অয়ন তা আঁকড়ে ধরতে চায়। আনহার গালে হাত দিয়ে ওকে অনুভব করার চেষ্টা করে। এবার আর আনহা সহ্য করে না। উঠে দাঁড়ায়। সাথে অয়নও৷ সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা থাপ্পড় বসায় অয়নের গালে। থাপ্পড়টায় সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়৷ জিহাম কিছু বলতে যাবে কিন্তু অয়নকে দেখে থেমে যায়৷ ছেলেটা রাগ করার বদলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। যেন মেয়েটি কাছে সম্মোহিত হয়েছে।
অয়নকে সবাই দেখছে আর ফিসফিস করছে। থাপ্পড় খেয়েও ও পাথর কেন হয়ে আছে? অয়ন তা উপেক্ষা করে আনহা দেখে বাঁকা ঠোঁটে হাসছে। যা আনহার সম্মানে আঘাত করল। ও আবার যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু এবারেও ব্যর্থ। কিন্তু এবার যেন ছেলেটা অতিরিক্ত করে ফেলেছে—ওর ওড়না ধরে।
‘আমার ওড়না ছাড়ো।’
‘ছেড়েই তো দিয়েছিলাম আপনাকে। তাহলে নিজে থেকে ধরা দিতে কেন এলেন?’ অস্ফুট গলায় বলল অয়ন।
কথাটা আনহার বোধগম্য হলো না। ভ্রু-কুঁচকে বলল, ‘সরি…’
সঙ্গে সঙ্গে অয়ন ওর ওড়নায় টান দেয়। আনহা ওড়না শক্ত করে ধরার কারণে ওড়না সমেত ওর কাছে এসে পড়ে। অয়ন তৎক্ষনাৎ বাঁ’হাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। আনহা বিচলিত হয়ে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে, ‘কী করছ? ছাড়ো বলছি।’
অয়ন মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টিতে ওকে দেখতে দেখতে ডান হাতে আনহার মাথার খোপা খুলে চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে দেয়। ওড়নাটা দিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে আশেপাশের দিকে তাকায়৷ দেখে অনেক ছেলে রয়েছে। অয়ন কিছুটা ইতস্তত হয়। অতঃপর গায়ের জ্যাকেটা আনহার গায়ে জড়িয়ে দেয়। ওর ভেজা শরীরে শেপ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা দৃশ্যমান হয়ে আছে। দেখতে খারাপ দেখাচ্ছে।
এতক্ষণে আনহার নিজের দিকে খেয়াল আসে। কিন্তু ছেলেটা এমন কেন করল বুঝল না। ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন ওর ঠোঁটে আঙুল রাখে। বলে, ‘চুপচাপ এখান থেকে বাসায় চলে যাবেন। আজ যেন আপনাকে ভার্সিটিতে না দেখি। তাহলে কিন্তু ডোজটা ডাবল হবে।’
বলেই আলতো ধাক্কা দিয়ে আনহাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়৷ খিলখিল করে হেসে ওঠে। কেন জানেনা হাসিটা আনহার কাছে খুব পরিচিত লাগছে? কিন্তু তা মনে করার সময় নেই। ও দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়৷
তখনি জিহাম এসে বলে, ‘ব্যাপারটা কী হলো? মেয়েটাকে ছেড়ে দিলি?’
ওর কথায় অয়ন তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ‘জাল ছিড়ে মাছ বেরোতে পারবে। পুকুর ছেড়ে যাবে কই? ঠিকি জালে পুরে নেব। এতদিনের অপেক্ষা, এমনি এমনি ছেড়ে দেব।’
বলেই আনহার যাওয়ার দিকে তাকায়। জিহাম ওর কথায় হা মিলিয়ে বলে, ‘যেমন তোর মর্জি।’ বলে চলে গেল।
অয়ন আনহার যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে নিজের মনেই বলে উঠল, ‘আপনি আপনার ইহানকে চিনতে পারেন নি আনহা। কিন্তু ইহান তার ‘আপনিকে’ ঠিক খুঁজে নিয়েছে।’
বলেই বাঁকা ঠোঁটে হাসল অয়ন। বলল, ‘ওয়েট করুন আনহা কালকের জন্য। আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে। অনেক খুঁজেছি আপনাকে—পাই নি৷ এবার যখন নিজেই ধরা দিয়েছেন—এখন তো আপনার টা আপনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।’
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
একটা জিনিস ভুল হয়েছে৷ কালকে ৯ বছর পরের কথা। কিন্তু সেটা কম হয়েছে। বছরটা ১১ বছর হলে সামঞ্জস্য হবে।
দেখুন আমার মতো বড় পার্টের স্টোরি অন্যকেউ দিতে বলে আমার জানা নেই। এখন যেহেতু ছোট করে দিচ্ছি নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। দয়া করে ছোট কেন হলো—এটা জিজ্ঞেস করবেন না। সাধ্য থাকলে বড়ই দিতাম।
ধন্যবাদ…
@মেহের