আমার পুতুল বর পর্ব : (১+২ )
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
“আমার মনের আকাশে মেঘ জমেছে ও সূয্যি মামা মেঘ টা একটু দূর করে দাও না ” ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের ঐ ঘন কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিলো ছোট্ট আরশি তখনই মায়ের ডাক পড়লো। আজ তাদের এয়ারপোর্ট যেতে হবে। তার খালার পুরো পরিবার আজ কানাডা চলে যাবে। সাথে চলে যাবে ছোট্ট আরশির গম্ভীর পুতুল বর টা ও যার কারণেই আজ তার মন ভার। আরশি দ্রুত ছাদ থেকে নেমে এলো ।
~ কিরে এসময় আবার কোথায় গেছিলি? জলদি বেরোতে হবে তো নাকি চল !! কই গো আরশির আব্বু কোথায় তুমি? তোমাদের নিয়ে হয়েছে মহা জ্বালা কাজের সময় বাপ মেয়ে দুটোয় গায়েব হয়ে যায়।।
শার্ট এর বোতাম লাগাতে লাগাতে আফিফ হাসান বেরিয়ে এলেন। তার সামনে তার সহধর্মিণী রণচন্ডি রূপ ধরে আছেন মেকি হাসি দিয়ে তিনি আরশির দিক এগিয়ে গেলেন ।
~কি হয়েছে আমার আম্মিটার? মন খারাপ? খালামনিরা চলে যাবে বলে? চিন্তা করোনা আম্মি ওরা আবার জলদি ফিরে আসবে তোমার জাদু আপুর অপারেশন হয়ে গেলেই ফিরে আসবে কেমন? আরশি এক রাশ মন খারাপ নিয়েই মাথা নাড়ালো ।
বাইরে থেকে সিএনজির আওয়াজ আসতেই তারা সবাই বেরিয়ে পড়লো এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে।
ওখানে পৌঁছে আরশি এক দৌড়ে তার খালামণি কে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। অহনা জামান ও তাকে পরম আদরে আগলে নিলেন । মেয়েটা যে কে তিনি বড্ডো ভালোবাসেন। ছেড়ে যেতে ওনার ও কষ্ট হচ্ছে আর এই বাচ্চাটার ও যে হচ্ছে তা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন ।
~ মা আমার মন খারাপ করিস না আমরা জলদি ফিরে আসবো আর রোজ তোর সাথে কথা ও বলবো ভিডিও কলে প্রমিস। মন খারাপ করিস না মা।
~ মামণি আমিতো তোমার ব্রেভ গার্ল আমি মন খারাপ করি নি । তোমরা আমার জাদু আপ্পি কে জলদি ঠিক করে নিয়ে এসো ।
~ ( কপালে চুমু দিয়ে) আচ্ছা । ঐতো তোর জাদু আপ্পি তোকে ডাকছে যা। আরশি দৌড়ে সুজানার কাছে গেলো।
~ ( জড়িয়ে ধরে) বোনু আমাকে ভুলে যাবিনা তো??
~ জাদু আপ্পি কে কি আরশি রাণী ভুলতে পারে?( কাদো কাদো গলায়) দুজনেই ফিক করে হেসে দিল। সাথে হাসি ফুটলো বাকি সবার মুখে ও। মিস্টার সুরাজ জামান এগিয়ে এলেন। আরশি কে কলে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন ।
~ মামনি ঠিক মতো পড়াশুনা করবে । আব্বু আম্মুর সব কথা শুনবে আর আমাদের বেশি বেশি মনে করবে কেমন?( হেসে দিয়ে) আর কয়দিন বাদে যখন ভাই বা বোন আসবে তখন তাকে অনেক অনেক আদর করবে যেমন তোমার জাদু আপ্পি তার ভাই কে করে। কেমন?
(আরশির আম্মু আরিয়া লজ্জা পেলেন যার দরুন আফিফ হাসানের পিছনে লুকালেন) এটা দেখে সবাই জোরে হেসে উঠলো। আরশি হেসে মাথা দুলালো। কোল থেকে নেমে একবার সামনে তাকালো তার পাষাণ পুতুল বরটার দিকে যে একমনে ফোনে গেমস খেলছে। দিন দুনিয়ার কোনো হুশ তার নেই। আরশি গুটি গুটি পায়ে তার কাছে হেঁটে গেলো। তার সামনে গিয়ে বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর ও যখন সামনের ব্যাক্তির কোনো হেলদুল হলো না তখন মিনমিনে আওয়াজে ডাক দিল ~ সূয্যি ভাইয়া? এবার ও সে চোখ তুলে তাকালো না। আরশির এবার চোখে পানি এসে গেছে। আবার কাদো কাদো গলায় ডাকলো। এবার সামনের ব্যাক্তিটি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকালো।
~ কি হয়েছে তোর? দেখছিস না কতো মনোযোগ দিয়ে খেলছিলাম? প্লেনে উঠলে তো আর পারবোনা খেলতে। এখন বল ডাকছিলি কেনো? আর তোকে কতদিন বলবো ঐটা সূয্যি না সূর্য হবে ৫ এ পড়িস এখনও ভুল উচ্চারণ করিস !!
এক রাশ অভিমান আর মন খারাপ নিয়েই জামার নিচ থেকে একটি কাপড়ে বানানো পুতুল বউ বের করে দিলো। পুতুলটির গায়ে সাদার মধ্যে গোল্ডেন পারের শাড়ি জড়ানো , গলায় মুক্তোর মালা আর হাতে মুক্তোর চুরি । পুতুলটা সূর্যর দিক এগিয়ে দিলো। সূর্য গম্ভির ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।
~ এটা আমাকে দিচ্ছিস কেনো? আমার কি এখন পুতুল খেলার বয়স? আর আমি যতদূর জানি এইটা তো তোর কদিন আগে বিয়ে দেওয়া পুতুল বউ টা।
~ হুঁ।। ওর দায়িত্ব সবসময় ওর বরের পাশে থাকা তাই ওকে তোমায় দিচ্ছি। আগলে রেখো আমিও আমার পুতুল বর টাকে আগলে রাখবো। নাও ধরো।
সূর্য পুতুলটা হাতে নিয়ে আরশির দিক তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে মাইকে এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে তাই এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনে উঠে গেলো পুরো পরিবার ।
আরশি আর কিছুই বললো না শুধু ছল ছল চোখে তাদের যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। তার পুতুল বরটা তার ই থাকবে তো নাকি হারিয়ে যাবে নতুন শহরে??
ভয় ঢুকে গেলো এতটুকু এই বাচ্চা মেয়েটার মনে।
এবার আরশির পরিচয় এ আসা যাক। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আরশি। কিন্তু কদিন বাদেই বড় বোনের তালিকায় নাম তুলবে সে। আরশি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। বাবা মার সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়লে কি হবে আরশির পুতুল খেলার অনেক শখ যার দরুন পুতুল বানাতো। বিশেষ করে বর বউ। বউ এর জায়গায় নিজেকে বসালেও বরের জায়গায় কাউকে বসাতে পারতো না। কিন্তু একদিন সেই জায়গা টা কেউ একজন দখল করলো। হ্যা আরশি তার পুতুল বর কে পেলো। তার এক মাত্র খালামনির ( কখনো আবার মামনি ডাকে ) ছেলে সাজিদ জামান সূর্য। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে । আরশির থেকে ঢের বড়। আরশি কে নিত্যান্তই বাচ্চা হিসেবে দেখে কিন্তু আরশির কাছে সে তার পুতুল বর । সূর্য বরাবর ই কম কথা বলে এবং গম্ভীর টাইপের। বন্ধু মহল ও সেজন্যে ছোট। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য রাফিদ, নিতুল, ফাবিহা আর টিয়া । সূর্যরা দুই ভাই বোন । বড়ো বোন সাবিহা জামান সুজানা। ইন্টারে পড়ছে। প্রি ম্যাচুয়ার বেবী হওয়ায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন ই তাকে হতে হয়। তার মধ্যে এখন অন্যতম এক পায়ে ভর দিতে পারেনা কারন ডান পায়ের থেকে বা পা টা একটু ছোট । সাথে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও আছে । ডক্টর বলেছেন পায়ের অপারেশন করালে ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুরাজ জামানের কানাডাতে একজন ভালো ডাক্তার বন্ধু আছেন যার দরুন স পরিবার কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। অপারেশন এর পর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ফিরবেন না । মিস্টার সুরাজ একজন সফল ব্যাবসায়ী। আর আরশির বাবা আফিফ উনার আনডারেই কাজ করেন।
সূর্যর যাওয়ার পর আরশির কিচ্ছু ভাল লাগছে না তারা গেছে প্রায় বছখানেক। মাঝে অনেক কথা হতো মামনিদের সাথে কিন্তু এখন অত একটা হয় না । আরশি পিএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে তাই সবার আগে সূর্য কে জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি সূর্যের পরীক্ষার জন্য সে মহা ব্যাস্ত। হ্যা দেশে ফিরতে দেরি হবে বিধায় ওখানেই ওদের পড়াশুনা শুরু করিয়ে দিয়েছেন সুরাজ জামান। কিন্তু এখানে একজনের মন খারাপের পাল্লা ক্রমশ ভারী হতে থাকলো তা কেউ জানতে পারলো না।
৬ বছর পর,
ট্রিং ট্রিং ট্রিং ~~
উফফ কি সমস্যা তোর এভাবে বেল বাজাচ্ছিস কেনো? আসছি তো নাকি!!!
~ কতক্ষন লাগে তোর আসতে ? সেই ১৫ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি মহারানীর আসার কোনো নাম গন্ধ নেই ।
বলি কি করছিল তুই?
~ আরে মিহি আপু জানোনা? আমার আপুর তো একটা বর আছে তাকে আদর না দিয়ে কি করে আসবে সে? ( আরশির ছোট ভাই আরশ আপেল খেতে খেতে জবাব দিলো)
~ মারবো টেনে এক চড় বেশি পাকামো করিস তুই আর স্কুল এ যাওয়ার সময় ও তোর খেতে খেতে যেতে হবে? মোটা হয়ে যাচ্ছিস তুই সেই খেয়াল রাখিস??
~ আম্মুউউউ !!!!
আরিয়া দৌড়ে বেরিয়ে এলেন। ~ কিরে কি হলো এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো?? আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস? ( আরশ এর কান টেনে) ।
~ উইইই আম্মু লাগছে তো! নিজের মেয়েকে কিছু বলো আমাকে মোটু বলছে এ্যএ্যএ্য!!!
আরিয়া রাগী চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহি আর আরশি সাইকেল নিয়ে পাগার পাড়।
কিছুটা দূর গিয়ে সাইকেল থামিয়ে দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে মিহি জিজ্ঞেস করলো~আচ্ছা তুই কি এখনও তোর পুতুল বর কে নিয়ে পরে থাকবি? সে কোনো খোঁজ নিয়েছে তোর?
আরশি চুপ হয়ে গেলো। চোখ জোড়া ও ছল ছল করে উঠলো। মিহি বুঝতে পারলো এভাবে বলাটা ঠিক হয় নি।
~ আচ্ছা বাদ দে চল জলদি যাই নইলে টাকলা স্যার খবর করে ছাড়বে আমাদের।
আর কিছু না বলে ওরা কলেজ এর দিকে রওনা হলো। কিন্তু আরশি শুধু একটা কথাই ভাবছে তার পুতুল বর কি সত্যি তাকে ভুলে গেছে??
#চলবে
#আমার পুতুল বর
#লেখিকা : আরশি জান্নাত ( ছদ্মনাম )
পর্ব:২
ঠাস!!!
তুমি আজ আবার এসব ছাই পাস খেয়ে এসছো?? তোমাকে আমি কবে মানুষ করতে পারবো? চেচামেচির আওয়াজে ছুটে এলেন অহনা। ~ কি করছো টা কি এতো বড়ো ছেলের গায়ে কেউ হাত তোলে??( সুরাজ জামান কে আটকিয়ে)
~ একদম চুপ!! তোমার আশকারায় ভালো ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । পড়াশোনায় শুধু ভালো হলেই হয় না কাজে কর্মে ও ভালো হতে হয়। এই দেশে এসে ও এতটা বেয়ারা হয়ে গেছে। যাকে নিয়ে এত চিৎকার চেঁচামেচি সে নির্বিঘ্নে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে। এতে সুরাজ জামান আরো রেগে গেলেন। কিছু বলতে যাবেন তার আগেই সেখানে সুজানা চলে আসে।
~ বাবা মাথা ঠান্ডা করো। তোমার প্রেশার বেড়ে যাবে ।
আর ভাইকে বললে ও কোনোদিন ও শুনবে না। এসবের কলকাঠি তো ওই নেন্সির হাতে। আমার ভাই টাকে পুরো শেষ করে দিলো। আর মা তুমিই বা কেনো ওই মেয়েটাকে ভাই এর কাছে ঘেঁষতে দাও বলতো? বেয়াদব মেয়ে একটা।
~ তুই আর তোর বাবা মিলে আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছিস আমি বুঝিনা? ওই মেয়েকে আমারও ভালো লাগেনা কিন্তু সূর্যর লাগে। ও তো ঐ মেয়ের ব্যাপার এ কিচ্ছু শুনতেই পারে না। আমি কিছু বলিনা পাছে যদি আমার ছেলে আমার থেকে দূরে চলে যায়!
~ (সুজানা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করলো। ) বাবা আমি বলি কি এখন তো আমি সুস্থ আর ভাই এর ও পড়া শেষ প্রায় বাকিটা দেশে গিয়ে কমপ্লিট করতে পারবে ।তাই এখানে থাকার কোনো মানেই হয় না । চলনা আমরা দেশে ফিরে যাই । আমার বিশ্বাস ভাই ওখানে গেলেই ঠিক হবে।
সুরাজ জামান গম্ভীর ভাবে ভাবলেন কিন্তু কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন। অহনা জামান ও ওনার পিছু পিছু গেলেন। সুজানা নিজের ঘরে বেলকনিতে দাড়িয়ে দেশে থাকাকালীন মুহূর্ত গুলো মনে করছে। সব থেকে বেশি মনে পড়ে তার ছোট্ট আরশি রানিটার কথা। এখন হয়তো অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। অনেক বছর কথা হয় না। সময় এর অভাবে আর কাজের চাপে পুরনো দিনের কথা গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে আই মিস ইউ মাই মিরর কুইন)।
সূর্য ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। তার এখন বড্ডো ঘুম পাচ্ছে। সে নিজেও জানে সে যেই কাজ গুলো করছে তা ঠিক না। কিন্তু ওইযে অভ্যাস!!! এই অভ্যাস জিনিস টা খুব খারাপ সহজে ছুটতে চায় না। বালিশে মাথা রেখে জানলা দিয়ে ওই আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ টা বন্ধ করে ফেললো। ( পুতুল বর !! তোমার পুতুল বউ টা যে বড্ড একা হয়ে গেছে। শুনতে পাচ্ছো? ডাকছে তোমায়!!!! আসবে না) ঝট করে চোখ খুলে উঠে বসলো সূর্য। দু হাতে মাথার চুল টানা শুরু করলো।
~উফফ!!! কেনো শুধু এই কথা গুলোই কানে বাজে?? এতো গুলো বছরে রোজ রাতে ঘুমোতে গেলেই এই কথা গুলো শুনি। কেনো? ( সূর্য উঠে বেলকনিতে গেলো । বেলকনির গ্রিলে একটা পুতুল বাধা। যেটা বাতাসের তালে তালে ঝুলছে। পুতুল টা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলো। বির বির করে বললো ” পুতুল বর” !! সত্যিই কি আমার কোনো পুতুল বউ আছে? যে আমার অপেক্ষা করছে? নাকি তোকে বলতে না পেরে আমাকে জ্বালাচ্ছে? কোনটা?) হঠাৎ কিছু মনে পড়লো সূর্যর কিছুক্ষন ভাবলো তারপর আবার পুতুলটার দিকে তাকালো। কিছু না বলে ঘুমোতে চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর বির বির করে বললো~ মিস ইউ ডল।
অররেহহ বাপরে!!!! উফফ মাগো আমায় কোমর টা বোধয় গেলো। আহহহহ আরে ঐ মাইয়া তাকায়া দেখস কি উঠা না আমারে।।।। ~( আমি এতক্ষন শকে ছিলাম মিহির চিৎকারে হুস আসতেই ওর হাত ধরে টেনে তুললাম) কিরে?? ঠিক আছিস? বেশি লেগেছে? আরে ঐদিকে কেনো আমার দিকে তাকা।
~ তুই চুপ কর । ঠিক আছি কিনা দেখতে পারছিস না ? এই ধলা বান্দর কে তো আজ আমি খুন ই করে ফেলবো 😡
~ ও হেলো!!! কে ধলা বান্দর।।। ভাষার কি ছিরি। আর নিজের দোষে পড়েছ তুমি এমন হাত নেড়ে নেড়ে আরেক দিক তাকিয়ে হাটলে তো পড়বেই।।
~ আচ্ছা??? আমি নাহয় দেখী নাই আপনি কি করতেছিলেন?? মাছি মারতেছিলেন?? আমাকে ধাক্কা দিলেন কেনো?
~ আমার তো আর কাজ নাই যেচে এসে পাগল কে খেপাই??( কলার ঠিক করে ভাব নিয়ে)
~😳 এই রে এখন তো মহাভারতের যুদ্ধ হবে!!! আব মিহি চল না ক্লাস এর দেরি হচ্ছে আর রেহান ভাই আপনাকে সাগর ভাইয়া ডাকছে ওইযে!
~। মিহিকে টেনে নিয়ে আসলাম।
😤 ওই ফাজিল টা আমাকে পাগল বললো ওকে তো আমি!!! আরে মিহি বাদ দে ক্লাস এ চল টাকলা আসতে আর ২ মিনিট বাকি।।।।
~হুঁ চল আজকের মতো ছেড়ে দিলাম
~ 😬 হুই চল।
কিরে বেটা !! তুই ওই লাল মরিচের লগে আজকে আবার লাগছিলি?? হাহাহা ( সাগর)
~ আরে ধুর আমার আর কাজ নাই লাগে? ( বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলে নাহিদের হাত থেকে ক্যান নিয়ে খেতে লাগলো)।
~ বুঝিনা তোর সাথেই এতো লাগে কেন??(নাহিদ)
~ আরে বুঝস্ না ওই হচ্ছে লাল মরিচ আর এ হচ্ছে বোম্বাই মরিচ তাই লাগে ( সাগর)
রেহান রাগী চোখে তাকাতেই চুপ মেরে গেলো। এরা সবাই আরশিদের সিনিয়র এবার থার্ড ইয়ার এ ।
কলেজ আর ভার্সিটির বিল্ডিং পাশাপাশি হওয়ার সুবাদে রেহানের সাথে মিহির প্রায় ই ঝগড়া লাগে।
যার শুরুটা হয়েছিল ওদের দেখা হওয়ার প্রথম দিন।।।।
সেদিন আরশিদের কলেজের প্রথম দিন ছিল আর রেহানদের ক্লাস পার্টি । রেহান হাতে কালো রং নিয়ে বন্ধুদের পিছনে দৌড়াচ্ছিল কারণ তাকেও রং দিয়ে ভুত বানিয়ে দিয়েছিল ফাজিলগুলো। রেহান দৌড়ানোর সম় অসাবধানতায় পড়তে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলেও হাতের রং পরে যায়। কিন্তূ নিচে নয় কারো গায়ে। রেহানা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। সামনের ব্যাক্তির চিৎকারে তার হুশ আসে।
~ আপনার কি কোনো কাণ্ড জ্ঞান নেই? এভাবে যাকে তাকে রং মেরে দিলেন? ( শরীর থেকে রং ঝাড়তে ঝাড়তে কথা গুলো বলছে মিহি)
~ আই এম সরি মিস।।। আসলে আমি খেয়া…
~ হাহহঃ এখন বলবেন তো যে খেয়াল করেন নি? ( রেহান বোকার মতো মাথা নাড়ায়)
~আপনাদের আমার খুব ভালো মতো চেনা আছে সব মেয়ে পটানোর ধান্দা।। যত্তসব লাফাঙ্গা!
~ এক্সকিউজ মি!! আপনি কিন্তূ একটু বেশিই বলছেন আমিতো বললাম ই ভুলবশত হয়ে গেছে।
~ আপনার ভুল আর বশত দুইটাই আপনার কাছে রাখুন ।।
~ আপনি কিন্তু…
~ মিহি!!
~ রেহান!!
~কিরে তোর এই অবস্থা হলো কি করে?(আরশি)
~ তুই এখানে দাড়িয়ে কি করছিস?(অভ্র, রেহানের বেস্ট ফ্রেন্ড)
~ এই মেয়েটার জন্য দাড়িয়ে আছি। দেখছিস না কেমন ঝগড়া করছে বেহুদা।
~ কিহ!!! আমার জন্য? অমি বেহুদা ঝগড়া করি??(চেঁচিয়ে)
~ আপনি কি কানে কালা? এক কথা কতোবার বলতে হবে?
~ আপনি কিন্তূ বারাবারি….
~ উফফ মিহি থাম তো আগে বল কি হয়েছে?
~ আমি বলছি। এর পর রেহান পুরো ঘটনা খুলে বললো। আরশি আর অভ্র একে ওপরের দিকে তাকালো। তারপর হেসে দিলো।
~ এইটা কোনো কথা মিহি?? উনি তো বলছেন ভুল করে ফেলেছেন ক্ষমা করে দে!
~ আরশি তুই ও ওনার সাপোর্ট নিচ্ছিস?
~ আরে বাবা.. আব _ লিটেল সিস্টার আমার ফ্রেন্ড এর হয়ে আমি মাফ চাইছি। ও বুঝতে পারে নি যে তুমি চলে আসবে। অভ্র কথা টা বলে আরশির দিকে তাকালো। আকাশী রঙের জামাতে ওকে অনেক শুভ্র লাগছিল।
~ এই অভ্র? তুই কেনো ক্ষমা চাইলি? ( রেহান)
অভ্র আরশি থেকে চোখ সরিয়ে রেহানের দিকে তাকালো। ~ তুই চুপ থাক!! যা ওই হারামী গুলোকে খোঁজ কোথায় লুকিয়েছে কে জানে। রেহান একবার মিহির দিকে কট মট করে তাকিয়ে চলে গেলো। মিহি ও মুখ ভেংচি় দিলো।
~ আরশি তুই একটু অপেক্ষা কর আমি এগুলো একটু পরিষ্কার করে আসছি। ( বির বির করতে করতে চলে গেলো)
~ আরশি মাথা দুলিয়ে অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
~ (হালকা হেসে) আজ কলেজ এর প্রথম দিন ছিল তাইনা?
~ হুঁ।
~ আজ ই এমন একটা কান্ড হলো।
~ হালকা হাসলো কিছু বললো না।
~ নাম?
~ জ্বি??
~ মানে তোমার আর তোমার ফ্রেন্ড এর নাম কি?
~ ওহ আমি আরশি জান্নাত আর ও মিহিকা রহমান। আপনাদের?
~ আমি ইমতিয়াজ আহমেদ অভ্র। আর ঐ ছেলেটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফারদিন রেহান। আমরা এবার থার্ড ইয়ার এ উঠবো তার জন্যই আজ ক্লাস পার্টি ছিলো।
~ ওহ আচ্ছা।
~আরশি চল , আসি ভাইয়া।( আরশির হাত ধরে কলেজ বিল্ডিং এ নিয়ে গেলো মিহি) অভ্র ওদের যাবার পানে তাকিয়ে আছে।
এর পর যখন ই মিহি আর রেহানের দেখা হয় কোনো না কোনো কারণে ঝগড়া লাগবেই। মিহি অল্প তে রেগে লাল হয়ে যায় বলে রেহানের ফ্রেন্ডরা ওকে লাল মরিচ ডাকে। আর রেহান প্রায় ই রেগে বোম হয়ে যায় বলে ওকে ডাকে বোম্বাই মরিচ।😂 আজ ও লেগে গেলো ঝগড়া।
~ মিহি তোকে কতবার বলেছি উনি আমাদের সিনিয়র ওনার সাথে এভাবে ঝগড়া না করতে!( আরশি)
~ বাহ ভাই বাহ 😲 দোষ এখন সব আমার? উনি যে আমাকে ধাক্কা দিলেন ওটা দেখলি না? যা তোর সাথে কথা নেই দূরে যা তুই।।( রেগে মুখ ফুলিয়ে)
~ আরে মা আমার রাগিস কেনো? আমিতো বললাম কারন ক্লাস এর সবাই কানা ঘুসা করে। যা আর বলবো না তা ও রেগে থাকিস না প্লিজ!!😐
~ 😒 আচ্ছা যা রাগলাম না।
এর পর দুজনেই হেসে দিলো। এদের বন্ধুত্ব টাই এমন কেউ কারো উপর রাগ করে থাকতে পারেনা। আরশির সাথে মিহির বন্ধুত্ব হয় ক্লাস ৭ এ থাকতে। যা এখন পর্যন্ত অটুট আছে।
#চলবে