আমার পুতুল বর পর্ব: ৫ + ৬

আমার পুতুল বর পর্ব: ৫ + ৬
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)

আরশ ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ন্যান্সি আর রোজের দিকে। এই প্রথম সামনাসামনি এমন বিদেশিদের দেখছে সে তাই এরকম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে এরা কি ফর্সা!! একদম দুধের মত , আর এতো শুকনো মনে হচ্ছে একটা ফু দিলেই পড়ে যাবে😂 আরশের এই ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ন্যান্সি আর রোজ কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। সুজানা এসে আরশ এর দিকে তাকিয়ে দেখল ও ন্যান্সি আরো রোজকে দেখে যাচ্ছে।।
~ কিরে!! ওভাবে কি দেখছিস?
~না প্রথমবার বিদেশি দেখছি তো তাই একটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করছিলাম কালকে স্কুলে গিয়ে আমার বন্ধুদের বলতে হবে তো যে আমার বাসায় একটা নয় দুইটা বিদেশি মেয়ে মানুষ এসেছে, আর একটা বিদেশী ভাইয়াও এসেছে , সাথে আমার খালামনির পরিবার । আর আমার ওমন সুন্দর দেখতে ভাই এর কথা আমি বলবো না?(বেশ ভাব নিয়ে)
~ সুজানা হেসে আরশের কান টেনে দিয়ে বলল তুই স্কুলে এইসব গল্প করতে যাবি??
~ আরে আপু তুমি জাননা স্কুলে আমার একটা শত্রু আছে । দুদিন পর পর বিদেশ থেকে ওর ভাই নতুন নতুন জিনিস কিনে পাঠাবে আর ও ভাব দেখাবে আমাদের সামনে, এবার আমিও আমার বাড়িতে আসা এতগুলো বিদেশি মানুষদের নিয়ে একটু ভাব দেখাবো।
~ এবার সুজানা হো হো করে হেসে উঠলো।। বড্ড পাজি তো তুই!! তা তোর এই শত্রু টা কে শুনি??
~ আছে আছে আমাদের পাশের বিল্ডিং এই থাকে ফুলকলি
~ ফুলকলি??
~ আসলে ওর নাম কলি আমরা ওকে ফুলকলি বলে ডাকি।।
~ বা…. বা এতদূর!! কি চলছে বলতো?(সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
~আরশ বোকা হেসে চোরের মত এদিক সেদিক তাকিয়ে পালালো।
~সুজানা ফিক করে হেসে ফেললো।। ( আসছি পরে আরশির সাথে একবার দেখা হলো তারপর মেয়েটা গায়েব কোথায় হয়ে গেল?)
ও খালামণি!! বলছি তোমার মেয়েকে দেখেছো? সেই কখন দেখেছিলাম তারপরে আর তার দেখা নেই কোথায় গিয়ে বসে আছে সে??
( রান্নাঘরে আরিয়া আর অহনা কাজ করতে করতে গল্প করছিল তখনই সুজানা এসে কথাটা বলল)
~ হ্যাঁ রে ছুটকি সত্যিই তো!! গেল কোথায় মেয়েটা?
~ জানিনা তো আপা দাঁড়াও ডাকছি এই আরশি!! আরশি!! কোথায় গেলি রে??
(আরশি নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল। মনে করছিল তখনকার ঘটনা– আরশি যখন হতাশ হয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে সূর্যকে দেখার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই একজোড়া বাদামী চোখ তার চোখে আটকে গেল। কিছু সময়ের জন্য আর সে একদম স্তব্ধ হয়ে গেল!! তার কাছে মনে হল সময়টা যেন থেমে গেছে ওই চোখের গভীরে সে হারিয়ে যাচ্ছে। সে পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে । বাদামী চোখ ওয়ালা লোকটিও তার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে। আরশি যখন নিজের খেয়ালে ডুবে তখন তার বাবা তাকে ডাক দিল!!
~(আরশি পর্দা পিছন থেকে বেরিয়ে বাবার সামনে এলো) হ..হ্যাঁ বাবা!
~তুমি ওখানে কি করছিলে এখানে এসো দেখো তোমার জাদু আপ্পি এসছে কথা বলবেনা??
~ আরশি দ্রুত সুজানাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তার নিজের কোনো বড় বোন নেই সে সুজানাকে সব সময় তার বড় বোন হিসেবে দেখে এসেছে । এতটা বছর তার বোনের থেকে দূরে থাকতে তার একটুও ভালো লাগছিলো না।। কিন্তু আজ তার শান্তি লাগছে বোনকে আবার কাছে পেয়ে।
~ ( সুজানা তো তাঁর আরশি রানিকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছে) রাগ করেছিস জাদু আপ্পির উপর? তাই এতক্ষন আসার পরেও কাছে আসিস নি তাই না? আমি অনেক সরি কি করবো বল নিজের জীবনটা গুছাতে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে আমার আরশি রানীর খোজ রাখতে পারিনি ।। ক্ষমা করে দিস বোন।
~ না আপ্পি কি বলছো? আমি রেগে নেই।(কাঁদো কাঁদো গলায়)
~ সত্যিই তো??
~ এক্কেবারে সত্যি!!( দুজনে হেসে আবার একে(
অপরকে জড়িয়ে ধরল)
~ এইযে মামনি আমাকে বোধহয় দেখতে পারছ না তাইনা??
~ না না বাবাই তা কেন হবে? ( সুরাজ জামান আলতো করে আরশি কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিলেন) আমার আম্মিটা কত বড় হয়ে গেছে।। মাশাল্লাহ!!
~ কই দেখি আমার মা টাকে ! মাশাল্লাহ! মা তুই তো আরো সুন্দর হয়ে গেছিস!! কারো নজর না লাগুক।।
( আরশি প্রচুর লজ্জা পাচ্ছে)
~আরে তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করবে নাকি? ভিতরে এসো! সূর্য বাবা আয় তোর বন্ধুদের কে ও নিয়ে আয়।(আরশি এতক্ষণে খেয়াল করলো সূর্যের পাশে আরো কিছু মানুষ আছে।। দেখেতো বিদেশি মনে হচ্ছে তাহলে এরা কি সূর্য ভাইয়ার বন্ধু??)
~ হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরা ভীতরে এসো।(আফিফ হাসান)

সবাই সোফার রুমে বসলো। সূর্য এতক্ষন যাবৎ চুপচাপ আছে। কিচ্ছু বলছেনা। আরশ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালে ও আরশ কে হাত নেড়ে কাছে ডাকলো। তারপর ওর পাশে বসতে ইশারা করলো।

~ তুই আরশ না??
~ হ্যাঁ তুমি কি সূর্য ভাইয়া?? (জিভে কামড় দিয়ে) সরি আপনি!
~ হাহা তুই আমকে তুমিই বলবি আর হ্যা আমি তোর সূর্য্য ভাইয়া।।( আরশ এবার বাকিদের দিকে তাকালে অহনা এগিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো)
~ আমাকে চিনতে পেরেছিস?? যদিও সামনে কখনো দেখিস নি , আমিও দেখি নি তোকে।। আমি তোর আম্মুর বড়ো বোন মানে তোর খালা মনি। আর ঐ আংকেল টা তোর সম্পর্কে খালু হয় কিন্তূ তুই ও তোর আপুর মতো বাবাই ডাকবি। ঠিক আছে?( আরশ বুঝদার দের মতো মাথা নাড়লো) অহনা হেসে সুজানার দিকে ইশারা করে বললো ও তোর বড়ো আপু হয়, তোর আপুর জাদু আপ্পি। সুজানা ও আরশকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক আদর করলো। আরশ সুর্যের পাশে যারা আছে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই সুজানা ওদের পরিচয় বলল–আরশ তোমার সূর্য ভাইয়ার পাশে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে ওর নাম হচ্ছে রিক আর তার পাশে ন্যান্সি আর ওই পাশের আপুটা রোজ। আরশ কে হাই বললো। তারপর থেকে আরও রোজ আর নিচের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল।
~কিরে আরশি রানী তুই এতো ভদ্র কবে হলি বলতো? আগে তো বহুৎ ছটফট করতিস এখন এক জায়গাতে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস?? এমা তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস? ধুর বোকা লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমরাই তো এদিক আয়!!(আরশি বাবার পাশের সোফায় দাঁড়িয়েছিল সুজানার কথায় মাথা নিচু করে ওর সামনে এগিয়ে গেল । কেনো জানিনা সূর্যকে দেখে ওর খুব লজ্জা লাগছে ।)
~ বসতো আমার পাশে। আরশি সবার দিকে একবার তাকিয়ে ইতস্তত করে তাকিয়ে সুজানা আর সুর্যের পাশে বসে গেলো। সূর্যের ওপর পাশে আরশ। ( আফিফ হাসান আর সুরাজ জামান ব্যাবসায়িক আলাপ করছেন, আরিয়া আর অহনা তাদের সুখ দুঃখের গল্প বলেছেন। আর সূর্যের বন্ধুরা আরশিদের বাড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত। আর সূর্য্য একমনে ফোন চালাচ্ছে যেনো এটাই তার অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটা না করতে পারলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে! তার পাশে যে কেউ বসে আছে তার সেদিকে কোন খেয়ালই নেই!!!😒 আরশি মনে-মনে সূর্যকে একটা ভেংচি কাটলো)
~তুই তো এবার কলেজ তাইনারে??( আরশি সূর্যের থেকে চোখ সরিয়ে সুজানার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো) কোন ইয়ার??
~ এবার পরীক্ষা দিবো।।( আড়চোখে সূর্যের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।। সুজানা সেটা খেয়াল করল)
~ যাক ভালই।। আচ্ছা তুই তো সবার সাথে কথা বলি সূর্যের সাথে তো কথাই বললিনা কথা বলবি না তোর সুয্যি ভাইয়ার সাথে??(ব্যঙ্গ করে)

( আরশির এবার লজ্জার সাথে অস্বস্তি ও হচ্ছে কিন্তু যেই ব্যক্তিকে নিয়ে বলা হচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই)
~ সূর্য এই সূর্য!! কি তখন থেকে ফোন টিপে চলেছিস বলতো?? আরে বাবা দেখ না!! ও হচ্ছে আমাদের আরশি আমার আরশি রানী আর তোর ড…
~হ্যাঁ এতক্ষণে এতজনের মুখে নাম শুনে বুঝে গেছি।।( আর কিছু বলল না) আরশির এবার বেশ খারাপ লাগলো এমন করছে কেন?? একবার জিজ্ঞেস তো করতে পারত কেমন আছে?? মনোক্ষুন্ন হলো তার
~ কিরে তুই সূর্য?? মেয়েটা কেমন আছে জিজ্ঞেস তো করতেই পারিস??
~ চোঁখ তুলে আরশি কে ভালভাবে দেখে আবার ফোনে মনোযোগ দিয়ে বলল – দেখে তো ভালই মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করার কি আছে?? (আরশির এবার ভীষণ কান্না পাচ্ছে এমন করছে কেন লোকটা?? আগেও এমন করত ঠিকমত কথাই বলতে চাইতো না এখনো কি একটুও পাল্টায়নি??)
~ উফফ!! সূর্য তোকে নিয়ে আর পারিনা.. আরশি তুই ওর কথায় কিছু মনে করিস না ও তো বরাবরই এরকম।।
~ হুঁ
~ এই সূর্য আমরা কি এভাবে বসে থাকবো?? আমার না ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে!!( সূর্যের এক হাত জড়িয়ে ধরে)
~ মাত্রই তো এলাম এখনি কি ঘুরতে যাওয়া যায় নাকি?? বিকেলের দিকে বেরোবো।। আর এখানে বড়রা এভাবে হাত ধরে আছিস কেন ছাড়!!!
(ন্যান্সি মুখ বাকালো , সুজানা, রিক আর রোজ মুখ টিপে হাসলো)
~ ( ফিস ফিস করে) বেশ হয়েছে মেয়েটার ঢং একটু বেশি!!(আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটা কেমন ছোট করে রেখেছে ও যা ভাবছে তা ঠিক কিনা বুঝতে আবার বললো)
জানিস সব সময় এরকম চিপকে থাকে সূর্যের সাথে আর সূর্যটাও না একদম কিছু বলেনা আমরা যদি ঐ মেয়েটাকে কিছু বলতে চাই সূর্য উল্টা আমাদের বকে দেয়। সূর্যের সকল বদভ্যাস ওর জন্যই তো তৈরি হচ্ছে।। কিন্তু বাকি ফ্রেন্ড গুলো ভালো আছে আমার শুধু এই মেয়েটাকেই সহ্য হয় না।। ( আরশির চোঁখ ছল ছল করছে) সুজানা এটা দেখে যা বোঝার তা বোঝা গেলো।।। ওর বেশ খুশি খুশি লাগছে যে ওর ভাবনা সত্যি।। তারমানে আরশি সত্যিই সূর্যের প্রতি দুর্বল।।
~ আপু আমি একটু উপরের থেকে আসছি।। ( আরশি দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল)

তারপর থেকে নিজের রুমে বসে সুজানার বলা কথাগুলো ভাবছিল।।। ন্যান্সি মেয়েটার সাথে সূর্য ভাইয়ার এতো কি ?? তবে কি আমি ন্যান্সিকে পছন্দ করেন?? ন্যান্সির জন্য নাকি বাড়ির সবার সাথে রাগারাগি করেছেন।। আরশির চোখ থেকে পানি পড়ছে যতই এসব ভাবছে ততবেশি মনটা আরো বিষিয়ে যাচ্ছে । আরশি যখন বালিশে মুখ গুঁজে কাদছিলো তখনই মার ডাক পড়লো তাই কোনোমতে দ্রুত মার কাছে গেলো। যাবার পথে সোফায় বসে থাকা সূর্যের সাথে চোখাচোখি হলো আরশি দ্রুত চোখ নিচে নামিয়ে সোজা রান্নাঘরে মায়ের কাছে গেলো)

#চলবে

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব: ৬

সন্ধ্যাবেলা মিহি নিউজফিড স্ক্রল করছিলো বসে বসে। তার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আজকে আরশির পুতুল বর এলো তাই বলে আরশির কোন খোঁজই নেইনি তার। দিনে একবারও ফোন দিল না।।(মন খারাপ করে এফবিতে সবার পোস্ট দেখছে) হঠাৎ একটা পোস্টে নজর আটকালো। কিছুক্ষণ আগে করা একটা মেয়ে তার সাথে রেহানের ছবি পোস্ট করলে বলেছে–” অনেক মিস করবো আমার কলিজা”।। এটা দেখে মিহির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।। অভ্র কেও ট্যাগ করা হয়েছে আর ও আর অভ্র ফ্রেন্ড যার কারণে পোস্টটা ওর আইডিতে ও চলে এসেছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটা আর রেহানকে দেখছে, মেয়েটা রেহানকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর রেহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে হাসছে।।(এটা দেখে মিহি মুখ বাকালো আর ভাবলো কই আমার সামনে তো কোনদিন এভাবে হাসতে দেখি নি আর এখানে দেখো কিভাবে দাঁত কেলাচ্ছে 😒)
দেখাচ্ছি মজা।। মিহি একটা ফেইক আইডি খুলল নাম রাখল–”ধলা বাঁদরদের আমার অপছন্দ”😂 তারপর ওইটা দিয়ে রেহানকে রিকোয়েস্ট পাঠালো। আর মেসেজ রিকোয়েস্ট এ রেহানের আর ঐ মেয়েটার পিক দিয়ে বললো– ” এই আপুটাকে আমি চিনি ওনার ব্যাপারে কিছু বলার আছে দয়া করে আমার কথা টা শুনবেন আপনার ভালো হবে “। এখন একবার খালি অ্যাকসেপ্ট করলে হয় তখন বুজাবো আমার সাথে এতোদিন বহুৎ ভাব নিয়েছে বেটায়। এবার আমার পালা। কথাটা বলে একটা শয়তানি হাসি দিলো।।

রেহান ফ্রেশ হয়ে কফি খাচ্ছিলো আর ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎ ফোনে টুং আওয়াজ হলো। চেক করে দেখলো মেসেজ রিকোয়েস্ট এসছে। ইগনোর করতে গিয়েও আইডির নামটার দিকে চোখ আটকে গেলো। কৌতূহল নিয়ে মেসেজ ওপেন করলো। তারপর মেসেজ পড়ে কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবলো। আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটের কোন বাকা হাসি ফুটে উঠলো। ও রিপ্লাই দিলো –” কি বলতে চাও লাল মরিচ? পরিষ্কার করে বলো!
মিহি মেসেজের ই অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু রেহানের লেখা লাল মরিচ দেখে ওর কাশি উঠে গেল।( ব্যাপারটা কি হলো ব্যাটায় কি আমাকে চিনে গেলো নাকি?? না তা কি করে হবে? আর যদি নাই চিনে তাহলে এই নামে ডাকলো কেনো? ) ওর ভাবনার মাঝেই আবার মেসেজ এলো!
~ কি ভাবছো তো চিনলাম কি করে? কারণ তোমার মত এরকম উল্টোপাল্টা নাম আর যাই হোক একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ রাখতে পারবে না। এবার ঠিক করে বলো মাইশা কে নিয়ে কি বলবে?
~ এ্য্য্য !! মাইশা টা আবার কে?? ও মনে হয় ছবির মেয়েটা।।
~আসলে বলছিলাম আপনি আপনি!! এই আপনি আমাকে লালমরিচ কেনো বললেন?? চেনা নেই জানা নেই দুম করে লালমরিচ ডেকে বসলেন??😡
~কে বলল তোমাকে আমি চিনি না?? তোমার মত পাগলদের কি এত সহজে ভুলা যায়??
( মিহির এবার রেগে ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা) বাজে বকা বন্ধ করুন।
~ আমি কি করেছি ? আর বাজে তো তুমি বকছো। আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি আইডি টা ১ ঘন্টা আগে খোলা। আর এই পিকটা ও ১ ঘণ্টা আগেই পোষ্ট করা হয়েছে। এখন তুমি বলো এসবের মানে কি???
মিহি ধরা পড়া চোরের মতো মুখ করে ফোনের দিকে তাঁকিয়ে আছে।।
~ আচ্ছা কিছু বলা লাগবেনা শুধু এইটুকু বলো তুমি কি সামহাউ জেলাস??
এবারে মিহি রেগে সোজা ব্লক করে দিলো। আর ফোন টা অন্য পাশে ফেললো।
~ সত্যিই মিহি তোর আর বুদ্ধি হবে না। কি দরকার ছিল এরকম একটা কান্ড করার না জানি ওই ধলা বান্দরটা এখন কি ভাবছে?? ধুর বাবা ভাল লাগেনা।।

আর এদিকে রেহান হাসছে মিহির এমন পাগলামো দেখে। ঐসময় নিধি এলো রেহানের ঘরে। রেহানকে হাসতে দেখে বললো – কিরে ভাইয়া এই রাতে তোকে জ্বীন- পরি আছর করল না তো?? এভাবে হাসছিস কেন একা একা?
রেহান হাসা বন্ধ করে নিধির মাথায় চাটি মারলো।
~ আহ!!! মারছিস কেনো?
~ তুই এতো বাজে বকিস কেনো? আর কাজ নেই? যা কাজ কর নয়তো পড়তে বস।
~ ওমা! নিজে একা একা হাসবে আর আমি কিছু বললেই দোষ। আর আমার কাজের কথা তোকে বলে দিতে হবে না। আমি আমার কাজ জানি।😒
~ হ্যাঁ তো যা। নিজের কাজ করে আমায় উদ্ধার কর।
~ হুহ!! আমিতো এসছিলাম এইটা বলতে যে মা তোকে নাস্তার জন্যে নিচে ডাকছে। এবার মাকে গিয়ে বলবো–মা!!! তোমার ছেলে প্রেমে পরেছে তাই একা একা হাসছিল। বলেই দৌড় দিল।
~ এই তুই কি বললি?? নিধি দাঁড়া বলছি দাড়া। সে ও নিধির পেছনে দৌড়।

নীহারিকা নিধি । রেহানের এক মাত্র ছোট বোন। এবারে অনার্স প্রথম বর্ষে। রেহানের ভার্সিটি তেই পরে। রেহানের বাবা অস্ট্রেলিয়া থাকেন। মা মুমতাহিনা আজাদ স্কুল এর হেড টিচার। মা আর বোনকে নিয়েই রেহানের দুষ্টু মিষ্টি পরিবার।

অভ্র বেলকনিতে বসে বই পড়ছিলো বেশ মনোযোগ দিয়ে। তার মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটলো ফোনের আওয়াজে। মোবাইলের দিকে না তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো দেখল ঠিক এগারোটা পনেরো বাজে। ও বেশ বুঝতে পারছে ফোনটা কে দিয়েছে।। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে কোন কথার আওয়াজ আসছে না। অভ্র ও চুপ করে আছে। বেশ কিছুক্ষন পর বলল,
~ কিছু কি বলবে নাকি ফোনটা কেটে দিবো?
~ হ্যাঁ তাই তো করবে। আমি ফোন দিলেই তো তুমি বিরক্ত হও। খালি ভাবো কবে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে।
~ দীর্ঘশ্বাস ফেলে , দেখো নিধি রোজ রোজ একই কথা বলবেনা। আর ফোন দিয়ে তুমি জরুরী কথা তো কিছু বলই না খালি আজগুবি কথা যত। ( বিরক্তি নিয়ে)

~ নিধি মন খারাপ করে ফেললো। ও সেই প্রথম দিন থেকে অভ্র কে পছন্দ করে এই কথাটা অভ্র ও জানে। প্রথম প্রথম নিধি অভ্র কে দূর থেকে ফলো করতো কিন্তু হুট করে সাহসটা একটু যেন বেড়ে গেল এখন রোজ টাইম করে ফোন দেয় আর উল্টোপাল্টা বকে।। আর এতে অভ্র ভীষণভাবে বিরক্ত হয় এটাও জানে । কিন্তু ওর অভ্র কে বিরক্ত করতে ভালোই লাগে। তবে ভার্সিটিতে অভ্রর থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রাখে কারণ ও জানে ওর ভাইয়া আর অভ্র বেস্ট ফ্রেন্ড।। মাঝে মাঝে ভয় হয় যদি ভাইয়া জানতে পারে তাহলে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে!!!
~ কি হলো টা কি? কি ভাবছো আবার।। শুনো নিধি তুমি রেহানের বোন বলে তোমাকে আমি কিছু বলছি না কিন্তু তুমি যেগুলো করছো সেগুলো কিন্তু ঠিক না মাঝে মাঝে তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করে ফেলো।।
~বেশ করেছি একশো বার করব যতদিন পর্যন্ত তুমি আমাকে মেনে না নেবে আমি এমনই করব।।।( বেশ জোর দিয়ে কথা টা বললো)
~ সেটা কোনদিনও পসিবল নয় তুমিও ভালো করে জানো
~না আমি কিছু জানি না জানতেও চাই না।। এইরে!! বারোটা বেজে গেছে শুনো আমি ঘুমোতে গেলাম। তুমি নিশ্চয়ই এখন বই পড়ছো।। পড়াটা বাদ দাও, বাদ দিয়ে ঘুমাও আর সকাল সকাল আমি ফোন দিব কিন্তু, প্রথম রিং হতেই রিসিভ করবে তা না হলে কিন্তু তোমার খবর আছে। গুড নাইট উম্মমাহ!!😘 নিধি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।।
অভ্র হতভম্ব হয়ে গেল।। মেয়েটা প্রচুর পাগলাটে ধরনের। একজন সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলে যেনো আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।।

আরশি মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। তার মা তাকে বলেছিল সূর্যকে কফিটা দিয়ে আসতে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সে এসেছিল সূর্যের ঘরে কফি দিতে। কিন্তু কপি দিতে এসেই বাঁধলো এক বিপত্তি!!! প্লাজুতে পা বেজে পরে যেতে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলেও হাতের কফিটা সামলাতে পারলো না। গরম কফি সোজা সূর্যের গায়ে পরলো। আরশি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
,~ হোয়াট দা হেল!!! কি করলে এটা তুমি? দেখে কাজ করতে পারোনা?? আর কাজ না জানলে করতে আসো কেনো??( চিৎকার করে কথা গুলো বলছে আর গা থেকে কফি ঝাড়ছে)
~ ( কেঁদে দিয়ে) আম স….সসরি।। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি। প্লিজ আপনি বসুন আমি ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
~ তার কোনো দরকার নেই। তুমি যাও এখান থেকে।
~ কিন্তু পুরে গেছে অনে…
~কিরে সূর্য কি হয়েছে চিৎকার করলি কেন ওভাবে ??( অহনা) নিচে সোফায় বসে অহনা আর আরিয়া গল্প করছিল সূর্যের হঠাৎ চিৎকারে তারা দৌড়ে সূর্যের ঘরে এলো।। অহনা সূর্যের টি-শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখলো কফি লেগে আছে আর বুকের কিছুটা অংশ লাল লাল দেখা যাচ্ছে।। উনি আরশির দিকে তাকালেন, বুঝতে পারলেন এখানে কি হয়েছে।। আরিয়া ও ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো। সূর্যের দিকে তাকিয়ে তিনি আতকে উঠলেন।
~ একি!! এসব কী করে হলো?? আরশি এই তুই করেছিস তাই না?? তোর কি কোনদিনও বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না?? এতো ছটফট করিস কেন? দেখতো ছেলেটার কি অবস্থা করেছিস!!!
~ আচ্ছা আরু বাদ দে না বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে বকিস না। সূর্য তুই যা টি শার্ট টা পাল্টে নে।। আমি সুজানাকে বলছি মলম লাগিয়ে দিতে। ততক্ষণে রিক , সুজানা, রোজ আর ন্যান্সি ও সূর্যের ঘরে এসে হাজির।।

~ এ কি ভাই তোর কি হলো?? এদিকে আয় মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। বস এখানে।
~ দোস্ত তোর বুকের দিকে এমন লাল লাল হয়ে গেছে কেন? মনে তো হচ্ছে পুরে গেছে, গরম কিছু পড়েছে নাকি? ( রিক)
~ন্যান্সি দৌড়ে সুর্যের পাশে বসে গেল! বেবি তুমি ঠিক আছো এসব কি করে হলো??
~ আহ! ন্যান্সি সর তুই ওকে আগে ঔষুধ লাগাতে দে!( রোজ)
ন্যান্সির হঠাৎ চোখ গেল আরশির দিকে।। তারপর নিচে পড়ে থাকা ভাঙ্গা কফির মগটা দেখে বুঝতে পারল এটা আরশির কাজ।। আরশির দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে–
~তুমি করেছো না এসব??
~ আমি বুঝতে পারিনি এমন টা হয়ে যাবে।
~ কি বুঝতে পারোনি?? দেখতো ওর কি অবস্হা করেছো তুমি?
~ ন্যান্সি চুপ কর তুই ! কেউ তো আর ইচ্ছে করে ভুল করে না। মেয়েটা কে শুধু শুধু বকিস না।।
রিক, সুজানা আর অহনা ন্যান্সির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। সূর্য আরশির দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরশি একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের ঘরে দৌঁড়ে চলে এলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here