আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব:৩১
~আপু! এই আপু !!
রুমের দরজা হালকা খুলে মাথা বের করলো সুজানা।
~কি হয়েছে ডাকছিস কেন?
~ এভাবে কেন দাঁড়িয়ে আছিস লুকোচুরি খেলছিস নাকি? আর ডাকছি মানে কটা বাজে?আমাদের তো এতক্ষনে ওইখানে উপস্থিত থাকার কথা। তোদের হয় নি? ( সূর্য ভিতরে উকি দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু সুজানা আটকে দিলো )
~ তুই যা আমরা পরে একসাথে আসছি। এখনো তো মিহি আসে নি…..
~ এসে গেছি। এসে গেছি। ( বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিয়ে ) সূর্য ভাইয়া সাইড প্লিজ।
সূর্য মিহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো গোলাপী রঙের শাড়ি পরেছে মিহি দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে ওকে। কিন্তু কুচি এভাবে উচুঁ করে ধরে রেখেছে কেনো? ও কিছু না বলে এক সাইডে চেপে গেলো। মিহি জলদি জলদি করে সুজানাকে চাপিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো। ভিতরে সব দেখে একটু পর আবার সুজানার মাথার ওপর দিয়ে উঁকি দিলো।
সূর্য অদ্ভূতভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছে করছেটা কি এরা?
~ ভাই তুই রেডি হলি না তুই কি এভাবেই যাবি! আই মিন শার্ট প্যান্ট পরে?? পাঞ্জাবি তো পড়তে পারতিস।
~ নো আই এম ওকে উইথ ইট!
~ দিস ইজ নোট ডান ইয়ার !! লুক এট মি আমিও পাঞ্জাবি পড়েছি। ( কলার ঠিক করতে করতে বললো রিক ) সূর্য ,সুজানা, মিহি তিনজনই রিকের দিকে তাকালো। রিক একটা ব্লু পাঞ্জাবি পড়েছে। উইথ ডেনিম ব্ল্যাক জিন্স। হাতে ব্ল্যাক বেল্টের ঘড়ি। ওকে পুরো বাঙালি বাবু লাগছে। সুজানা আর মিহি হা হয়ে ওকে দেখছে।
~ হায় ভাইয়া নাজার না লাগে কিসিকি!!!( মিহি )
~ রিক ইউ আর লুকিং হ্যান্ডসাম। ( সুজানা 👌 )
~ থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ (সূর্যের কাধে এক হাত রেখে)।
~ দেখ ভাই তোর ও না ওর মতো পাঞ্জাবি পড়া উচিত। তোকে অনেক মানাবে। ( সুজানা )
~ হ্যাঁ ভাইয়া পড়ুন না আপনাকে সুন্দর লাগবে। ( মিহি )
~ না।
~ আরে কেনো প্লিজ দেখ আজকে সবাই সালমান খান হবে তুই একা আমির খান কেনো হবি ?
~ হোয়াট!!
~ আই মিন ডিফারেন্ট কেনো হবি ? যা যা তুই ও পাঞ্জাবি পড়ে আয়। এক কাজ কর তুই আমার সাথে আয়। ( সূর্য বারণ করা সত্ত্বেও ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো রিক )
সুজানা আর মিহি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।। ওরা দরজা বন্ধ করে আরশির কাছে গেলো।। ন্যান্সি আর রোজ আরশি কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দুজনে ও আজ শাড়ি পড়েছে। কালো আর লাল রঙের। সুজানা আর মিহি আরশি কে দেখে অবাক হয়ে গেছে।
~ বাহ বাহ বাহ মাশআল্লাহ আরশি রানি তোকে তো আজকে পুরো নতুন বৌ এর মতো লাগছে। হায় মে মারজাওয়া!!
~ হ্যাঁ রে আরশি তোকে কি না লাগছে আজকে। তোকে শাড়ি পরলে এতো সুন্দর লাগবে জানলে প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে তোকে শাড়ি পড়াতাম।
~ আপু আমার না অনেক অস্বস্তি হচ্ছে । মনে হচ্ছে শাড়িটা খুলে যাবে।
~ আরে আরশি আমরা অনেক কষ্ট করে বেশ যত্ন নিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি খুলবে না। দেখো। ( ন্যান্সি )
~ হ্যাঁ আর সেফটিপিন ও তো দেয়া কিচ্ছু হবে না। আমি খালি ভাবছি ভাই এর তোকে দেখার পর রিঅ্যাকশন কি হবে!!!
~ কিচ্ছু হবে না। তোমরা এতো কিছু কেনো ভেবে নিচ্ছো বলোতো ?
~ কে বলেছে তোকে হবে না। তুই কি ভবিষ্যৎ জানিস নাকি?
~ আরে,,,,
~ চুপ থাক। রোজ, ন্যান্সি তোমাদেরকে ও অনেক সুন্দর লাগছে!!!
~ থ্যাংক ইউ আপু। তোমাকে আর মিহি কে কিন্তু কম সুন্দর লাগছে না। ( দুজনে এক সাথে বললো )
মিহি আর সুজানা মুচকি হাসলো।
~ আচ্ছা হয়েছে এবার চলো সবাই। ভাই একবার তাড়া দিয়ে গেছে।
আরশি শাড়ির কুচি ধরে কাচুমাচু করে হাঁটছে। ওরা
সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখলো সূর্য আর রিক নামছে। আরশি সিড়ির দিকে তাকাতেই সূর্য কে দেখতে পেলো। সবুজ পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট , ব্ল্যাক শু , হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি । পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো, বুকের দুইটা বোতাম খোলা। সূর্য কে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে। আরশি, ন্যান্সি, রোজ, সুজানা আর মিহি গালে হাত দিয়ে হা করে সূর্যকে দেখছে। সূর্য ঘড়ি ঠিক করতে করতে নিচের দিকে তাকাতেই ওর হাত পা জমে গেলো। সময় মনে হচ্ছে থমকে গেছে। ওর নজর আটকে গেলো ঐ সবুজ শাড়ি পরিহিতা নারীটির দিকে ।” শাড়িতেই নারী ” আজ মনে হচ্ছে কথাটা সত্যি। সুজানা সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। ও আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও ও সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সুজানা মিহি, রোজ আর ন্যান্সি কে ইশারা করলো ওদের দেখার জন্য। কিন্তু ন্যান্সি এখনো হা হয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।।
~ ওহ ওয়াও আমার বেবি কে কি সুন্দর লাগছে। ( গালে হাত দিয়ে ব্লাশিং হয়ে )
রোজ আর সুজানা কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ ন্যান্সিকে জোরে চিমটি কাটলো।
~ আহহ ( হাত ডলে ) কি করছিস? চিমটি কাটলি কেনো?
~ আপনি খোয়াবো কি দুনিয়া ছে বাহার আ তু!!! আর সূর্যর দিকে নজর দিচ্ছিস কেনো তুই?
~ নজর কই দিলাম তারিফ করলাম আমি।
~ তুমি ঐ দিকে দেখো। ন্যান্সি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো সূর্য আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আরশি ও সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। রিক কয়েক ধাপ নিচে নেমে দেখলো সূর্য নামছে না। পিছে ঘুরে দেখলো সূর্য আরশি একে অপরকে দেখে যাচ্ছে।
ও হেসে ধীর পায়ে নেমে এলো। সুজানাদের ওখানে গিয়ে দাড়িয়ে গেলো।
~ একটা পিক তোল তো কেউ। ( সুজানা )
~ আমি তুলছি ।
ন্যান্সি উল্টো পাশে গিয়ে সূর্য আরশির একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার ছবি তুলে নিলো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে গলা খাকারি দিলো। আরশি চমকে উঠলো এতক্ষণ কি ঘটেছে বুঝতে পেরে মাথা নামিয়ে ফেললো। সূর্য ভ্রূ কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে এলো। সুজানা দুষ্টুমি করে গেয়ে উঠলো,
“পড়েনা চোখের পলক
কি তোমার রূপের ঝলক”💞
সবাই জোরে জোরে হেসে উঠলো। আরশি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সূর্য বিরক্তি নিয়ে তাকালো সবার দিকে।
~ কি হয়েছে তোদের? আর আপু কি সব গাইছিস তুই?
~ কেনো বুঝতে পারলি না কেনো গাইলাম? বা,,বা তোরা যেভাবে একে ওপরের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলি !! হাউ রোম্যান্টিক ।।
~ বাজে বকিস না। ( আরশির দিকে তাকিয়ে ) তুমি শাড়ি এভাবে ধরে রেখেছো কেনো?
বাকিরা আরশির দিকে তাকালো।আরশি কোমরের দিকে বেশ শক্ত করে শাড়ি ধরে রেখেছে।
আরশি আমতা আমতা করে বললো,,
~ আসলে আমার মনে হচ্ছে খুলে যাবে।
~ উফফ আরশি এমন কিছু হবে না। তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? ( মিহি )
~ এতোই যখন আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছো তখন শাড়িটা পড়তে গেলে কেনো? ( সূর্য আরশির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো )
আরশি সূর্যের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে।
কেনো পড়বেনা ও এই শাড়িটা? এটা যে ওর পুতুল বরের ওকে দেয়া প্রথম উপহার। হাজার সমস্যা থাকলেও এটা তো পড়বেই।
~ তুই কি জানিস না ও কেনো পড়েছে? ( সুজানা )
সূর্য সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা আরশি কে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে সূর্যকে উদ্দেশ্য করে মুচকি হেসে বললো,,,
~ এই শাড়িটা তো তুই ওকে দিয়েছিস। তোর দেওয়া প্রথম গিফট এটা। আর আরশি এটা পড়বে না, তা কি করে হয়??
সূর্য শুধু আরশির দিকে শিতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই তাকানোর মানে টা ঠিক কি তা কেউ জানে না।
~ উম লেট হচ্ছে আমাদের বেরোতে হবে। চলো সবাই।
সূর্য বড়ো বড়ো পা ফেলে ওখান থেকে চলে গেলো।
ভার্সিটির বাইরে ওরা গাড়ি থামালো। সুজানা, আরশি, মিহি আর সূর্য একটা গাড়ি থেকে নামলো। আরেকটা থেকে রিক, রোজ আর ন্যান্সি নামলো। ওদের গাড়ির পাশে আরেকটা গাড়ি এসে থামলো। রেহান আর নিধি বেড়িয়ে এলো। নিধি এসেই আরশি আর মিহি কে জড়িয়ে ধরলো।
~ বাহ্! তোমাদের দুজনকে আজ বেশ মিষ্টি লাগছে দেখতে।
~ তোমাকে কতো সুন্দর লাগছে জানো?
রেহান সূর্য আর রিকের সাথে কুশল বিনিময় করছিলো। মিহির কথা শুনে বললো,,,
~ ওকে তো সাদা পেত্নি লাগছে। কেমন সাদা শাড়ি পড়ে এসছে দেখো।
নিধি চটে গেলো। মিহি ও ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বাকিরা হেসে ফেললো।
~ দেখ ভাইয়া বাজে বকবিনা। আমাকে সুন্দর লাগছে আমি জানি। তোর থেকে সুন্দর অসুন্দরের জ্ঞান আমার নিতে হবে না। তুই যে কেমন সুন্দর চিনিস তা আমি খুব ভালো করে জানি।
~ ঠিক বলেছো নিধি আপু।
~ কি ঠিক বলেছে? আর তুমি আমাদের ভাই-বোনের মাঝখানে কেনো কথা বলছো?
~ আপনি কেনো আগে বললেন? প্রশংসা তো আমি নিধি আপুর করছিলাম।
~ আমার বোন আমি বলবো না তো কে বলবে?
~ আমি যখন বলছি তখন কেনো বললেন ?
~ আরে আরে হয়েছে তোমরা চুপ করো না। ( নিধি )
~ সত্যি তোমরা সুযোগ পেলেই খালি ঝগড়া করো। ( রিক )
~ কুল ম্যান। চলো আমরা ভেতরে যাই। অভ্র কোথায়? ( সূর্য )
~ ও আর নাহিদ দুজনেই ভিতরে আছে।
~ ওও। সূর্য আবার আরশির দিকে তাকালো।
নিধি অভ্রের নাম শুনে চকিতো হয়ে তাকালো। আচ্ছা অভ্র কি ওর মনের কথা আরশি কে বলেছে? নিধি আরশির দিকে তাকালো। আরশি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি আরশির দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিক তাকালো। সূর্য আর আরশি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি কিছুটা অবাক হলো।
~ আরশি! ( নিধি )
আরশি চকিতো হয়ে নিধির দিকে তাকালো।
~ হ্যাঁ আপু বলো।
~ বলছি চলো ভিতরে যাই।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ চলো সবাই আমি ভেতরের ডেকোরেশন দেখার জন্য এক্সসাইটেড। ( মিহি )
রেহান ওকে ভেংচি দিয়ে রিক এর সাথে ভিতরে গেলো। মিহি দাত কটমট করতে করতে সুজানা, রোজ আর ন্যান্সি কে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো। নিধি সূর্যকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরশি কে ভিতরে আসতে বলে সামনে এগিয়ে গেলো।
আরশি কিছুটা সামনে গিয়ে কুচিতে বেজে পড়তে নিচ্ছিলো কিন্তু সূর্য ঠিক সময়ে ওকে ধরে ফেলে। নিধি কিছুটা সামনে গিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকালো। ওর যা বুঝার ও তা বুঝে গেছে। চুপ চাপ ভিতরে চলে গেলো। সূর্য আরশি কে সোজা করে দাড় করালো।
~ শাড়ি তো সামলাতে পারছোনা। আবার নাচবে নাকি আজকে। তো এই শাড়ি পরে কি করে নাচবে?
আরশি চুপ করে আছে। সূর্য শ্বাস ফেলে আরশির দিকে ঝুঁকে বললো,,
~আমি জানি এই শাড়িটা তোমার অনেক প্রিয়। কিন্তু তাই বলে নিজের সুবিধা টা দেখবে না? প্রিয় জিনিসটা নাহয় প্রিয় মানুষটার জন্য রেখে দিতে।
আরশি সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য আর কিছু না বলে আরশির এক হাত ধরে ওকে নিয়ে ভিতরে গেলো।
#চলবে