আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব: ৩০

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব: ৩০

অডিটোরিয়াম এর কাছে বসে গল্প করছে মিহি আর আরশি। মিহি ওর ওড়নায় আঙ্গুল পেচাতে পেচাতে বললো,,,

~ কালকে কি পড়বি রে? শাড়িই তো,,, কোন রঙের??
~ উম, না আমি শাড়ি সামলাতে পারবনা। পরে যাবো সিওর। তার চেয়ে আমি বরং লং গাউন পড়বো।
~আরে ধ্যাত! কি বলছিস এগুলা? কালকে সবাই শাড়ি পড়বে আর তুই!! তুই ও শাড়ি পড়বি কালকে।
~ তারপর উষ্টা খেয়ে পড়লে মানসম্মান কার যাবে আমার না তোর?
~ আরে ধুর বাবা কিচ্ছু হবে না। ওই দেখ নিধি আপু আসছে। আপু! হাই এদিকে এসে বসো। ( নিধিকে হাত দিয়ে ইশারা করে )
নিধি ওদের পাশে বসতে বসতে বললো,, কি খবর গার্লস? কালকে কে কোনটায় পার্টিসিপেট করছো?
~ আর বলোনা এই মিহি আর অভ্র ভাইয়া এক প্রকার জোর করে আমার নাম নাচে ও গানে লিখিয়েছে। ( আরশি )
~ ভালো করেছে তো তাহলে। তোমার অবশ্যই পারফর্ম করা উচিত। আর মিহি তুমি কি করছো? ( নিধি )
~ ( আরশি দাত কেলিয়ে বললো ) আপু শুরুতে তো মিহি কিছুই দিবেনা বলেছিলো তারপর রেহান ভাই ওকে চ্যালেঞ্জ করায় এখন ম্যাডাম কবিতা আবৃত্তি আর নাচ করবেন।

~ আমার মনে হয় মিহি ভাইয়ার কথা একটু বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলে তাই না? ( আরশির দিকে তাকিয়ে )
~ হ্যাঁ একদমই তাই। আমাদের কথায় রাজি হলোনা কিন্তু রেহান ভাই বলাতে ঠিক ই রাজি হলো। ( মিহি কে হালকা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে )

মিহি ওদের দুজনের দিকে ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে আছে।

~ এই শোনো তোমরা! আমার না বয়েই গেছে ঐ ধলা বাঁদরের কথা শুনতে। আমি তো আমার
সেল্ফ–রেসপেক্ট এর কথা ভেবে ওনার চ্যালেঞ্জে রাজি হয়েছিলাম।
~ ওহ আচ্ছা। আরশি আর নিধি এক সাথে বলে হেসে দিলো। মিহি গাল ফুলালো।

~ আমি বলিকি আরশি, রিক, রোজ, ন্যান্সি তোমরাও চলো আমাদের সাথে। আম্মু তোমাদের দেখে খুশিই হবে অনেক। ( মাহির )

~ হ্যাঁ তোমরাও চলো মজাই হবে। এই আরশি ভাই কোথায়? ( সুজানা )

~ আপ্পি আজকে তো উনি আমাদের নিয়ে আসেন নি। ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কালকে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান ঐটার ই কাজে ব্যাস্ত আছেন ।
~ আচ্ছা তাহলে তোরা সব যা রেডি হো।।।।
~ ওকে। ( সবাই এক সাথে বলে রেডি হতে চলে গেলো )

ডিং ডং , ডিং ডং ,,,,

মিহি দরজা খুলে আরশি, সুজানা, রোজ, ন্যান্সি ওদের দেখে অনেক খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো।
~ আমি কখন থেকে তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম। তোমরা মাত্র এলে।।। ওওও!! মা দেখো কারা এসেছে।(চেঁচিয়ে )

সবাই কানে আঙুল দিলো। মাহির কানে আঙুল ঢুকিয়ে বললো,,,,
~ উফফ মিহু আস্তে চেঁচা। এখানে কোনো উচ্চস্বরের প্রতিযোগিতা চলছে না যে তোকে ফার্স্ট হতে হবে । ইডিয়ট।।।।
সবাই মুখ টিপে হাসলো। মিহি মাহিরকে থাপ্পর দিলো।

মিসেস মৃধা রহমান এসে ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলেন। মৃধা রহমান তো আরশি আর সুজানা কে পেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। ওরা পুরো বিকাল আড্ডা দিলো।। মাহির সুজানার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,,,

~ আমার ঘরে চল তোকে কিছু দেখানোর আছে।
সুজানা ইশারা করে জানতে চাইলো কি? মাহির ঘরে আসতে বললো। সুজানা মাহিরের সাথে ওর ঘরে গেলো।

মাহিরের ঘর এর দেওয়াল গুলো ধূসর রঙের। ঘরের মাঝে একটা কিং সাইজড বেড। বেড এর উপরের দেওয়ালে বড়ো করে সুজানা আর মাহিরের ছোটবেলার ছবি টাঙানো। তার পাশে ওদের লাস্ট মিট যেদিন করেছিলো ঐদিনের পিক টা ও আছে। ডান পাশের দেওয়ালে ওর মাহিরের আরো অনেক ছবি আছে। কয়েকটা একার তো কয়েকটা ওদের এক সাথে তুলা পিক।। সুজানা মুচকি হেসে মাহিরের দিকে তাকালো। মাহির ও হেসে ওকে বেলকনির দিকে নিয়ে গেলো।। মাহিরের বেলকনিতে রেড রোজ এর গাছ লাগানো। মাহিরের তো রেড রোজ পছন্দ না। রেড রোজ তো সুজানার পছন্দ। তার মানে মাহির ওর জন্য,,, কথা টা ভেবেই সুজানা বড়ো করে হাসলো। মাহিরের দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরলো।।।
~ ( মাহির কে ছেড়ে ) তুই এসব আমার জন্য করেছিস?
মাহির সুজানার গলা জড়িয়ে ধরে ওর নাক টেনে দিয়ে বললো,,,,,
~ “না তো আমিতো নিজের জন্য করেছি”। সুজানা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। “দেখ আমার ঘরে এসব দেখে তোর পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে পরে গেছে। তুই অনেক খুশি হয়েছিস। তোর চেহারায় এই বড়ো সরো স্মাইল টা দেখে আমার ভালো লাগছে। আমি শান্তি পাচ্ছি। সো বেসিক্যালি আমার হ্যাপিনেস এর জন্যই আমি সবটা করেছি।”
সুজানা ওকে চিমটি কাটলো। মাহির আহহ করে উঠে সুজানার চুল টেনে দিলো। সুজানা ওর চুল ধরে টানছে। একে অপরের চুল টানাটানি করতে লাগলো ওরা। একটু পরে ওরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।

আরশি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে হঠাৎ বিছানার দিকে খেয়াল করলো। বিছানায় একটা শপিং ব্যাগ রাখা। আরশি তোয়ালে টা মেলে দিয়ে শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে।
~ আরে এইটা কার? আমার ঘরে কে রেখে গেলো?? আজ তো কেউ শপিং এ যায়নি তাহলে!!! আরশি ব্যাগটা হাতে নিয়ে সুজানার ঘরে গেলো। ওর ঘরে রিক, রোজ আর ন্যান্সি ও আছে।
~ আরে আরশি আয় আমরা তোকে নিয়েই কথা বলেছিলাম। ( সুজানা )
~ আমাকে নিয়ে কি বলছিলে গো?
~ আসলে আমরা কালকে তোমার আর মিহির পারফরম্যান্স দেখার জন্য অনেক এক্সসাইটেড। ( রোজ )
~ আচ্ছা। তোমরা তো কালকে যাচ্ছই গেস্ট হিসেবে।।
ওহ এইটা কি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার ঘরে রেখেছো???
সবাই আরশির হাতের ব্যাগের দিকে তাকালো।
~ না তো। আমরা তো কেউ মলে ও যাই নি আজ আর শপিং ও করিনি। সো আমাদের তো হবেই না। ( রিক )
~ ইয়াহ রাইট। ( রোজ )
~ এটার ভিতরে কি আছে রে ? ( সুজানা )

আমি জানিনা। আমিতো ফ্রেশ হতে গেছিলাম। বেড়িয়ে দেখি এইটা আমার বেডে পরে আছে। আমি ভাবলাম তোমাদের কারোর নাকি? তাই নিয়ে এলাম। কিন্তু তোমরা তো বলছো তোমরা ও এইটার ব্যাপারে কিছু জানো না।

~জাস্ট এ সেকেন্ড,,, এই আরশি এই ব্যাগটা তো আমি সূর্যের হাতে দেখেছিলাম। এইতো একটু আগে ও যখন এলো আমিই তো ডোর ওপেন করেছিলাম। তখন ওর হাতে এই ব্যাগটাই ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করিনি যে ব্যাগে কি আছে। কিন্তু তুমি এখন বলছো এই ব্যাগটা তুমি তোমার বেডের উপর পেয়েছো।।। (ন্যান্সি)
~ দ্যাট মিন্স,,,, (রোজ )
~ সূর্যই ব্যাগটা আরশির ঘরে রেখেছে। ( রিক )

আরশি ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কি বলছে কি ওরা সূর্য ভাইয়া আমার ঘরে এটা রেখেছেন!! কেনো? আরশি কে টেনে বেডে বসিয়ে দিলো। আরশি হকচকিয়ে গেলো।

~ আরশি রানি এইটা ওপেন করতো, দেখ কি আছে ভিতরে। ( সুজানা )

~ না না আপু এটা যদি তোমার ভাইয়ের জিনিস হয় তাহলে আমার মনে হয় না যে এটা খোলা ঠিক হবে। আমি বরং এক কাজ করি আমি এটা ওনাকে দিয়ে আসি। আরশি উঠতে মেলে ওরা ওর হাত ধরে আবার বিছানায় বসিয়ে দিলো।
~ কেন ফেরত দিতে যাবি বলতো? ন্যান্সি তো বলল যে ও ভাইয়ের হাতে এটা দেখেছে। এখন এইটা তোর ঘরে । তারমানে ভাই নিজে তোকে দিয়ে গেছে ব্যাগটা।
তো ফেরত দিবি কেনো? তুই খোল এটা। দেখ ভিতরে কি আছে। আরশি ওদের দিকে তাকিয়ে আবার ব্যাগটার দিকে তাকালো। অনেক ভেবে ব্যাগটা খুলতে শুরু করলো। সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে দেখার জন্য যে ব্যাগে কি আছে। ব্যাগটা খুলতেই দেখলো ওটার মধ্যে একটা শাড়ি!!!!!! সবাই একে অপরের দিকে তাকালো। আরশি শাড়ি টা বের করলো। সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি। অসম্ভব সুন্দর সুতার কাজ করা শাড়িটা তে। মাঝে গোল্ডেন সুতোর ডিজাইন করা। সুজানা শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো,,,

~ ওয়াও শাড়িটা কতো সুন্দর রে আরশি !! এটা নিশ্চয়ই কালকে পড়ার জন্য দিয়েছে ভাই।। রোজ, ন্যান্সি শাড়িটা সুন্দর না??

~ অনেক সুন্দর আপু। এই আরশি এদিক এসো তো। রোজ আরশির হাত ধরে ওকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো। ন্যান্সি ওর গায়ে শাড়িটা জড়িয়ে দিলো।
~ মাশআল্লাহ বোনু তোকে এখনই এতো ভালো লাগছে, তাহলে কালকে ঠিক করে পড়লে না জানি কতোটা ভালো লাগবে!! ভাইয়ের চয়েজ আছে বলতে হবে। কিন্তু ভাই যে তোর কালকে পড়ার জন্য শাড়ি নিয়ে আসবে এটা তো আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা। (আরশি কে জড়িয়ে ধরে) আই এম সো হ্যাপি।।

আরশি আয়নাতে নিজেকে দেখছে। এটা সত্যি সূর্য এনেছে? তার মানে এটা সূর্যর ওকে দেওয়া প্রথম গিফট!! আরশির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আরেকবার আয়নাতে নিজেকে দেখতে নিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলো দরজার কাছে বুকে হাত গুজে হেলান দিয়ে সূর্য দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে। আরশি ও ওর দিকে তাকালো। সূর্য ওকে তাকাতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো।

আরশি এখনো শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। এক ধ্যানের শাড়ি টার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর পুতুল বরের থেকে পাওয়া ওর প্রথম উপহার। ওর যে ঠিক কতোটা খুশি লাগছে, তা বলে বোঝাতে পারবে না।

~ তোমার লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহ! আমাকে আজ এই খুশিটা দেওয়ার জন্যে। 💞

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here