আমার পুতুল বর লেখিকা : আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ২৯

আমার পুতুল বর
লেখিকা : আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ২৯

~নিধি প্লিজ ফোন টা কাটবে না। অনেক কথা বলার আছে তোমায়। প্লিজ!!
~ কি বলতে চান আপনি? বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছেন দিয়েই যাচ্ছেন, কেনো? আর আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা থাকতেই পারে না। তাই বলছি ফোন দেওয়া বন্ধ করুন।
~ নিধি প্লিজ! তুমি হঠাৎ এমন করছো কেনো? দেখো কালকে তুমি লাস্ট যেই কথাটা বলেছিলে ঐটা আসলে,,,
~ আমি এই ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে চাই না।
~ শুনতে হবে। আমি অনেক দ্বিধায় আছি । অনেক কথা বলার আছে আমার কিন্তূ কাকে বলবো, কিভাবে বলবো বুঝতে পারতেছিনা। আমি কথাগুলো তোমায় বলতে চাই। প্লিজ শুনবে?

নিধি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
~ বলুন শুনছি।
~ তুমি যখন কালকে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে যে আমি কাওকে ভালোবাসি কি না? আমি তখন এক মুহূর্তের জন্য চিন্তায় পরে গেছিলাম। ভাবছিলাম আমি কি সত্যিই কাওকে ভালোবাসি? এর পর তুমি আরশির কথা বললে। আমি এই ব্যাপারে অনেক ভাবলাম, আরশি কে আমি ভালোবাসি কি না জানি না। কিন্তূ ওর প্রতি একটা মুগ্ধতা কাজ করে। ওর কথা, হাসি, চোখ সবকিছু আমাকে ওর দিকে টানে। আমার মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে আরশি আছে। কিন্তূ এটাকে কি ভালোবাসা বলা যায়??

নিধি চুপ করে অভ্রর কথা শুনছিলো। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য একটা মেয়ের প্রতি তার অনুভূতির কথা শুনলে ঠিক কতটা কষ্ট হয় আজ নিধি সেটা বুঝতে পারছে। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিধি বললো,,,

~ ভালোবাসায় কখনো কোনো দ্বিধা থাকে না। আপনি যদি কাওকে সত্যি ভালোবেসে থাকেন তাহলে আপনাকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনার মন আপনাকে এমনিতেই বুঝিয়ে দিবে যে আপনি ঐ মানুষটাকে ভালোবাসেন। ওকে ছাড়া থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব না। প্রতিনিয়ত আপনার মন ও মস্তিষ্কে তার বিচরণ ঘটবে। তাকে এক পলক দেখার জন্য তার কথা শুনার জন্য আপনি সর্বক্ষণ ছটফট করবেন। আপনি নিজের মনকে প্রশ্ন করুন, আরশির উপস্থিতি আপনার জীবনে ঠিক কতোটা প্রভাব ফেলে ? আই হোপ আপনার মন আপনাকে সঠিক উত্তর দিয়ে দিবে। এখন রাখছি।

নিধি কথাগুলো বলে ফোনটা কেটে দিলো। অভ্র ওর বলা কথাগুলো ভাবছে।

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
~ হেই সুজি কেমন আছিস তুই?? ( সুজানা কে জড়িয়ে ধরে )
~ অনেক ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ( বসতে বসতে বললো )
~ এইতো আছি। তুই একা যে? তুই না বললি তোর মামনির মেয়ে আসছে?
~ ওহ হ্যাঁ এসেছে তো। আমার পিছনেই তো ঢুকার কথা ছিলো। কোথায় গেলো? ( এদিক ওদিক তাকিয়ে ) ঐ তো ও আর ভাই এক সাথেই আসছে।
~ ও সূর্য!! ( সূর্যের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো ) আম সারপ্রাইজড!! তুমিও যে আসছো সুজি তো বলেনি আমাকে। কিন্তূ তোমাকে দেখে বেশ ভালো লাগছে। কেমন আছো বলো??
~ আমি ভালো আছি ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?
~ আম অল গুড। আরেহ তুমি আরশি না? আরশি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য আরশির দিকে তাকালো।
~ কি হয়েছে আরশি? এনি প্রবলেম ?? ( সূর্য )
~ ( সূর্যের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের লোকটির দিকে তাকালো ) আপনি মাহির ভাইয়া না? মিহির ভাই?
~ হ্যাঁ। আর তুমিতো আরশি। মিহির বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাইতো? কিন্তু তুমিই যে সুজির বোন জানতাম না।
~ হোল্ড অন। তোরা একে অপরকে চিনিস? ( সুজানা )
~ হ্যা মানে তোকে আমার বোন মিহিকার কথা বলেছিলাম না?
~ হ্যাঁ। যদিও বেশি কিছু বলিস নি। কিন্তূ নাম তো শুনেছি।
~ হ্যাঁ, মিহিকা ওরফে মিহি। আর মিহির বেস্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে আরশি। মিহি আমাকে ওর কথা অনেক বলেছে। ছবিও দেখেছিলাম। কিন্তূ সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি।
~ হুম আমিও আপনাকে শুধু ছবিতেই দেখেছি। আপনিই তাহলে জাদু আপ্পির বেস্ট ফ্রেন্ড?
~ হ্যাঁ রে। তোর বেস্ট ফ্রেন্ড এর ভাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। পৃথিবীটা আসলেই গোল। ( আরশি কে জড়িয়ে ধরে )
~ ইয়াহ রাইট। এসো তোমরা বসো। ( মাহির )

~ আহ্ সূর্য তুমি এখন কি করছো ?
~ আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করবো। আজই জয়েন করলাম ভার্সিটিতে।
~ গুড। আর সুজি তুই কি করবি? পড়া তো শেষ এখন কি বিয়ে করে সংসার করবি নাকি? ( মাহির ঠাট্টা করে বললো)

(সুজানা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে) সংসার আর আমি? না না ওসব আমার দ্বারা হবে না। আমিতো আগে আমার ভাই আর আরশি রানির সংসার করা দেখবো। ( আরশি আর সূর্যের দিকে তাকিয়ে )

আরশি পানি খাচ্ছিলো। সুজানার কথা শুনে বিষম খেলো। কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। সুজানা আরশির কাছে যেতে নিচ্ছিলো কিন্তূ মাহির ওকে থামিয়ে দিলো। সুজানা মাহিরের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
~ কি হলো আটকাচ্ছিস কেনো? দেখছিস না বেচারির কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেছে।
~ তুই সামনে তাকিয়ে দেখ আগে।

সুজানা সামনে তাকিয়ে দেখলো সূর্য ওর আগেই আরশির কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আস্তে আস্তে পিঠে থাপ্পর দিচ্ছে। সুজানা মুচকি হেসে মাহিরের দিকে তাকালো। মাহির ও হালকা হাসলো।

~ তোর ইচ্ছে মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই পূরণ হতে চলেছে।
~ কোন ইচ্ছে?
~ তোর ভাই আর আরশির সংসার করা দেখতে চাওয়াটা।।

সুজানা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললো,, এমনই যেনো হয়।
মাহির মাথা নাড়লো। আরশি কাশি থামিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম ও সূর্য কে এতোটা কাছ থেকে চোখ তুলে দেখছে। আজ সূর্যের চোখে নিজের জন্য চিন্তা দেখতে পারছে ও।

~ আর ইউ ওকে? (চিন্তিতো সুরে বললো সূর্য )
আরশি এখনো সূর্যের দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে।

~ কি হলো কিছু বলছো না কেনো? সূর্য আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। সূর্য আর কিছু বলতে পারলোনা। ও নিজেও আরশির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সুজানা আর মাহির একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসলো।

~ উহুম উহুম!! ( মাহির শুকনো কাশি দিলো ) সূর্য আর আরশি এক সাথে মাহিরের দিকে তাকালো।
~ বলছি ভাই আরশির কাশি থেমে গেছে। এবার তুই এদিক এসে বস।( সুজানা )
সূর্য সুজানার দিকে তাকিয়ে বললো,,

~তুই তো কোনো কথাই বলিস না !! কি এমন একটা কথা বললি সেটা শুনে ওর কাশি শুরু হয়ে গেলো। এখনো চোখ মুখ লাল হয়ে আছে এতো কাশার ফলে।( সুজানা হা হয়ে গেলো। মাহির অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।)

( আরশির দিকে তাকিয়ে ) আর তুমি? কি এমন কথাটা বলেছে আপু যে এভাবে বিষম খেলে। এতো বেশী ছটফট করো কেনো, হ্যাঁ?

~ আমি কি করলাম? ( আরশি অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললো )
~ আচ্ছা হয়েছে। এখন তো সব ঠিক আছে। সূর্য তুমি বসে পড়ো। ( মাহির )

~ আচ্ছা শোন, তোকে মা আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছে। কবে যাবি?
~ তোদের বাড়ি ?
~ হ্যাঁ। এতো অবাক হওয়ার কি আছে? ছোটবেলায় তো আসতি। এখন আবার যাবি।
~ কিন্তূ…
~ রাখ তোর কিন্তূ। কাল এসে তোকে বিয়ে যাবো।
~ কালকেই?
~ হ্যাঁ কালকেই। আর কোনো কথা না।
সুজানা মাথা নাড়ালো।

~ তুমি তখন আপুর কথায় ওভাবে রিয়েক্ট করলে কেনো ? ( পকেটে হাত ঢুকিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো সূর্য )
~ আমি ওই আসলে,,, ( আরশি আমতা আমতা করছে )
~ তুমি আসলে কি?? কিছুক্ষন থেমে বললো,, তোমার ছোটবেলার সব কথা মনে আছে?
আরশি চোখ তুলে সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্য ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আরশি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
~ যখন থেকে বুঝার বয়স হয়েছে তারপরের সবটা মনে আছে।
~ সব??
~ হ্যাঁ সব।
আরশি আর সূর্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।

~এখন আর পুতুল খেলোনা তাই না? অবশ্য এখন তো বড়ো হয়ে গেছো।
~ আমার কাছে এখনো সেই পুতুল বর টা আছে। ( আরশি )
সূর্য গভীর ভাবে আরশির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
~ তোমার দেওয়া পুতুল বৌ টা ও আমার কাছে আছে।
আরশি সূর্যের কথা টা শুনে কিছুটা কেপে উঠলো। ও ভাবতেই পারেনি আজ এতবছর পর ও সূর্য সেই পুতুলটাকে নিজের কাছে রেখে দিবে।।।
~ পুতুলটা আপনি এখনো আপনার কাছে রেখে দিয়েছেন ? ( আরশি অবাক হয়ে বললো )

~ কেউ একজন তার প্রিয় জিনিসটা খুব আশা নিয়ে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলো। কি করে ফেলে দেই বলোতো? আরশির দিকে একটু ঝুঁকে বললো,,, আর পুতুল বর এর ও তো কিছু দায়িত্ব আছে তার পুতুল বউ এর প্রতি তাইনা !!! পুতুল বৌ এর প্রিয় জিনিসের খেয়াল রাখাটাও কিন্তূ পুতুল বর এর একটা গুরু দায়িত্ব। আরশি সূর্যের দিকে অবাক আর হাজারো অনুভূতি মিশ্রিত চোখে তাকালো। সূর্য ও শান্ত চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে।

~ আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। তুমি আর আপু ও চলে এসো। কথাটা বলে সূর্য পার্কিং এরিয়ার দিকে চলে গেলো।
আরশি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ওর চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
আরশি চোখের পানি হাতে নিয়ে তা মুখের সামনে ধরে ভাবছে,,,
~ এটাকেই কি তবে সুখের কান্না বলে? কথাটা ভেবেই আরশির কন্নামাখা মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here