আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ২১+২২

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ২১+২২

এই আরশ দাড়া বলছি!! দাড়া আজ তোর একদিন কে আর আমার যতদিন লাগে। দাড়া ফাজিল।

আরশি পুরো ডাইনিং রুমে আরশের পিছনে ছুটে চলেছে। রিক, রোজ আর ন্যান্সি পপকর্ন খাচ্ছিলো আর টিভি দেখছিল আরশ দৌড়াতে দৌড়াতে স্লিপ কেটে সোফার পিছন থেকে উল্টে রিক এর উপর পড়ে গেলো।
ন্যান্সি আর রোজ মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সব পপকর্ন মাটিতে পড়ে গেছে। আরশি দৌঁড়াতে গিয়ে থেমে গিয়ে সোফার পিছনে হাত উচুঁ করে দাড়িয়ে গেলো। আর রিক ওমাগো বলে চেচিয়ে উঠলো।
~ আইইস আমার কোমরটা বোধয় শেষ ।। আহ!! এই আরশ উঠ না ভাই!
আরশ উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আরেকবার উঠার চেষ্টা করতেই রিকের উপর আবার পড়লো।
~ আহ্হঃ ওমাগো!! আরে মরে গেলাম রে! কেউ একে উঠাও রে!!

রোজ আর ন্যান্সি তাড়াতাড়ি করে আরশ কে টেনে তুললো। রিক কোমড়ে হাত দিয়ে বসে পড়লো। এতক্ষণ অহনা আর আরিয়া রান্না ঘরে ছিলো। রিক এর চিৎকারে দৌঁড়ে এলেন কি হলো দেখতে।
~ এরে কি হলো কার কি হলো দেখি! ওমা রিক বাবা তুমি কোমরে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো ? ( অহনা )
~ ঘরের এ কি হাল হলো ? ( আরিয়া )

আরশ রোজের পিছনে লুকিয়ে পড়লো। আরশি সটান হয়ে দাড়িয়ে গেছে। আরিয়া আরশ কে রোজের পিছনে লুকাতে দেখে কান টেনে নিজের সামনে আনলো।
~ তোর কাজ এসব তাইনা?
~ আহ মা লাগছে! আমার কি দোষ তোমার মেয়েই তো আমার পিছনে দৌড়াচ্ছিলো।।
আরশি রেগে আরশে সামনে এসে বললো,,,
আমি কি কারণ ছাড়া দৌড়াচ্ছিলাম বেয়াদব?

~ এই তুই চুপ কর! আগে বল কি হয়েছে ? ( আরিয়া )
~ মা আগে আমাকে ছাড়ো। আরশের কানটা ছাড়তেই ও পালাতে নিচ্ছিলো তখনই আরশি ওর হাত ধরে ফেললো।
~ মা তোমার এই বাঁদর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো, ওকে ওর ড্রইং এর ট্যালেন্ট আমার প্র্যাকটিক্যাল খাতায় কে দেখাতে বলেছে??
~ মানে? ( অহনা )

~ মামনি জানো কাল রাতে কত কষ্ট করে আমি আমার এই প্র্যাকটিক্যাল গুলা শেষ করেছিলাম। কিন্তু এই বাঁদর আমার খাতার মধ্যে কি সব আঁকিবুকি করে রেখেছে। কেমনটা লাগে বলো! আমার সব কষ্ট মাঠে মারা গেলো!!! ( কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল আরশি )
~ তাই নাকি? হ্যাঁ রে আরশ তুই এটা কেনো করলি তোর আপুর খাতা কেনো নষ্ট করলি ? ( অহনা )
~ আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি? ঐ বাজে ড্রইং দেখে আমার ইচ্ছে করলো নিজের হাতের কামাল টা দেখাতে।(বেশ ভাব নিয়ে বলল)
~ তবে রে!!! আরশি আবার আরশ এর পিছনে ছুট লাগালো। সবাই বার বার আস্তে দৌড়াতে বলছে। আরশ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো তখনই সূর্য উপর থেকে নামছিলো। আরশের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে সামলে নিলেও আরশির সাথে বেশ জোড়ে ধাক্কা খেলো। আরশি ধাক্কার দরুন পড়তেই নিচ্ছিলো কিন্তু সূর্য ওর কোমড় আকড়ে ধরলো।

সবাই মুখে হাত দিয়ে ওদের দেখছে। আরশ একবার ওদের দিকে তাকিয়ে মানে মানে কেটে পড়লো। নাহলে আজকে ওর খবর আছে।।

আরশি ভয়ে চোখ- মুখ কুঁচকে রেখেছে। সূর্য ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আরশির কুচকে রাখা ভ্রু, চোঁখ, আর মুখ দেখছে। এভাবে মুখ কুচকে রাখার কারণে ওর ঠোঁট দুটো ফুলে আছে। সূর্য সেদিকেই তাকিয়ে আছে। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আরশি চোঁখ খুললো। সূর্যকে এভাবে ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে ভরকে গেলো। ও সূর্যের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়।

~ উহুম্ উহুম !! ( রিক )

কারো কাশির আওয়াজে সূর্যের ধ্যান ভাঙ্গলো। আরশিকে সোজা করে দাড় করালো। আরশি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
রিক , রোজ আর ন্যান্সি ভ্রু উচু করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য পকেটে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
~ কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো তোরা?
~ আসলে এতক্ষন একটা রোমান্টিক মোমেন্ট দেখছিলাম তো !! তা ব্রো কি এতো দেখছিলি অপলক ভাবে আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে? পুরো তো অন্য জগতে চলে গেছিলি। ( দুষ্টুমি করে বললো রিক )

বাকিরা মুখ টিপে হাসছে। আরশির গাল লাল হয়ে গেলো।
~ ( ভ্রু কুঁচকে ) তোর মাথা দেখছিলাম বুঝেছিস! নীচে অনেক হইচই হচ্ছিলো তাই দেখতে আসছিলাম কি হয়েছে। কিন্তু মাঝে ও এসে, (হুট করে আরশির দিকে তাকালো।) এই তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেনো? তোমাকে না একদিন না করেছি এভাবে দৌড়াতে?
~ আ আম আমি তো ,, ( আমতা আমতা করে )
~ কি?
~ সূর্য ওকে এভাবে বকছিস কেনো! ( অহনা )
~ তো কি করবো? হাত পা ভেঙ্গে যখন বিছানায় পরে থাকবে তখন খুব ভাল লাগবে?
~ হ্যাঁ তাই তো আপা। ও তো ঠিক ই বলেছে। মেয়েটা বড়ো হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয় নি।
~ আন্টি একটা জিনিস খেয়াল করেছেন আমাদের সূর্যর কিন্তু আরশিকে নিয়ে বেশ চিন্তা!!( রোজ )
~কি মিন করছিস তুই?
~ ও বলতে চাইছে তুই আরশিকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ( ন্যান্সি )

~ ন্যান্সি তুই ও ইয়ার্কি মারছিস!!
~ না কেউ ইয়ার্কি মারছে না তোর সাথে। ( রিক )

সূর্য চোঁখ উল্টে সোফায় বসে পড়লো। আরশির দিকে তাকাতেই , আরশি নিজের ঘরে চলে গেলো। অহনা আর আরিয়া হেসে রান্না ঘরে চলে গেলো।
…….……………………………………………………………………..

~ হ্যালো শুনুন আমার না আপনার সাথে সিরিয়াস কিছু কথা আছে একটু লেকের পাড়ে আসুন।১৫ মিনিট এর মধ্যে। আমি অপেক্ষা করছি। ( নিধি )
অভ্রর জবাবের অপেক্ষা না করেই ফোনটা কেটে দিলো নিধি।

~ এটা কি হলো!! এই সন্ধ্যা বেলা এই মেয়ের আবার কি সিরিয়াস কথা বলার আছে কে জানে ?? যাবো!! যেতে তো হবেই। যে মেয়ে না গেলে আবার বাড়ি এসে হাজির হবে । উফফ ভাল লাগেনা। ( অভ্র )

~ এই রোজ, ন্যান্সি চলনা একটু ঘুরে আসি এই সুজানা আপু চলোনা আসে পাশে কোথাও ঘুরে আসি। বাড়ীতে আর ভাল লাগছে না। ( রিক )
~ এখন কোথায় যাবি তুই ? সময় দেখেছিস? ( সূর্য )
~ কেনো আমরা তো আগেও লেট নাইট পার্টি করেছি কতো আর এখন তো সন্ধ্যা। চল না। ( রিক )
~ হ্যাঁ আইডিয়া টা খারাপ না চল না সবাই যাই। ( রোজ )
~ আমিও যাবো এই ভাই চল প্লিজ বাড়ীতে বোর ফিল করছি আমি। ( সুজানা )
~ হ্যাঁ হ্যাঁ সূর্য প্লিজ রাজি হয়ে যা। ( ন্যান্সি )
~ ওকে ওকে চল তাহলে। ( সূর্য )

সবাই জলদি জলদি রেডি হতে চলে গেলো।

সূর্য গাড়ীর কাছে অপেক্ষা করছে। সকলে এসে গাড়ীতে উঠতে যাবে তখন সূর্য বললো,,
~ আপু !!
~ হ্যাঁ?
~( ঘাড় চুলকে ) বলছি তোর বোন কে নিলি না?
~কার কথা বলছিস তুই?
রিক আর রোজ দুজনেই কান খাড়া করে সূর্যের কথা শুনছিলো। ওদের বুঝতে সময় লাগেনি সূর্য কার কথা বলছে।
ওরা মুখ টিপে হাসছে। ন্যান্সি শোনার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই শুনতে পারছে না।
~ আরে সুজানা আপু বুঝলে না? তোমার বোন।। আচ্ছা তোমার কটা বোন এই বাড়ীতে থাকে বলোতো? ( রিক )
সুজানা প্রথমে রিক এর কথা না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরে হেসে দিলো।
~ ওওওও; তুই আরশি রানির কথা বলছিস!! সেটা ঠিক করে বললেই হতো। তাহলে অনেকক্ষণ আগেই বুঝে যেতাম। তা হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস যে ?
~ আরে আজব কথা তো! সবাই ঘুরতে যাচ্ছি ও যাচ্ছে না। এজন্যই বললাম আর তুই তো ওকে রেখে যাওয়ার মানুষ নস। তাই জিজ্ঞেস করছি ? কোনো সমস্যা ? ( বিরক্ত হয়ে )
~ না না কোনো সমস্যা না। আমি আরশি কে ডাকতে গেছিলাম। ও প্র্যাকটিক্যাল করছে। আরশ সকাল বেলা ওর প্র্যাকটিক্যাল নষ্ট করে দিয়েছিলো। তার জন্য এখন আবার করছে। কালকে সকাল ৯ টায় জমা দিতে হবে। তাই আমাদের ঘুরতে যেতে বললো। ও যেতে পারবে না। ( সুজানা )

~ হ্যাঁ ও গেলে বেশ মজাই হতো তাইনা বোলো ? ( রোজ )
~ হ্যাঁ ঠিক বলেছো । ( সুজানা )
~ আচ্ছা প্রাকটিক্যাল রাতে এসে ও তো করতে পারতো তাইনা ? ( ন্যান্সি )
~ অনেক তো আর ও রাত জাগতে পারেনা প্রবলেম হয় ওর। তাই এখন ই শেষ করছে। ( সুজানা )

সূর্য কিছু একটা ভাবছে। তারপর ওদেরকে গাড়ীতে বসতে বলে বাসার ভিতর চলে গেলো। সবাই ওর যাওয়ার দিকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে আছে।
~ এ আবার কোথায় গেলো। ( ন্যান্সি )
~ কি জানি। ( সুজানা )

#চলবে

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ২২

পার্কের বেঞ্চে বসে হলুদ লাল আভায় রাঙিয়ে থাকা আকাশটার দিকে তাঁকিয়ে আছে নিধি। আকাশের এমন রঙ তার খুব পছন্দ। তাই সে মৃদু হেসে দু চোঁখ ভরে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। কেউ যে এই লাল-হলুদ আভায় মোরনো আকাশের নিচে তার মুখে
উপচে পড়া খুশির ঝলক অবলোকন করছে সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই।

~ এই লোকটাকে কখন আসতে বলেছি এখনো এলো না!! আমাকে ইগনোর করলো নাকি?? 😒 দেখা হোক একবার বুঝাবো মজা। আমাকে সে পাত্তাই দিলো না। কতক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছি।

~ হ্যাঁ আমিও অনেক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছি। কিন্তু সেটা কারো চোখেই পড়লো না। পড়বে কি করে তিনি তো আকাশ দেখতে ব্যস্ত। জমিনে থাকা মানুষকে কি আর তার নজরে পড়বে??

নিধি চোখ বড় করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
~ আপনি!! আপনি কখন এলেন? কতক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছেন? আর এসেছেন যখন তখন ডাকলেন না কেনো? ভূতের মতো আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কি করছিলেন? আচ্ছা আমি কী বলি তা শোনার জন্য এমন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাই না? ( চোখ ছোট ছোট করে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো )
~ বা বা !! এক নাগাড়ে এতো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো আমি ?

~ সবকটার ই দিন ।

~ (নিধির পাশে বসে ) এসেছি তোমার বলা ১৫ মিনিটের মধ্যেই। আর বাকি ১৫ মিনিট তোমার এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখছিলাম। যখনই ভাবলাম আমার উপস্থিতির কথা তোমায় জানান দেবো, তুমি আমাকে মজা বুঝানোর প্ল্যান করা শুরু করে দিয়েছো। ( নিধির দিকে তাঁকিয়ে আফসোসের সুরে বললো )

~ আচ্ছা? আপনি সময় মতোই এসেছিলেন। সরি সরি। আমিতো ভেবেছি….

~ তোমাকে ইগনোর করেছি?? ( নিধির চোখের দিকে তাকিয়ে )

~ হ্যাঁ।

~ ( মুচকি হেসে ) তোমাকে চাইলেও ইগনোর করতে পারিনা। সেই ক্ষমতা আমার নেই।

~ কেনো? কেনো পারেন না ইগনোর করতে ? ( অভ্রর চোখে গভীর ভাবে তাকিয়ে )

~ কারণ!

~ কারণ?

~ কারণ তুমি আমাকে..

~ আমি কি!! ( আগ্রহ নিয়ে )

~ তোমার কথা মনে করানোর জন্য সবসময় হাজির থাকো। কানের কাছে এসে বক বক করতে থাকো। নন স্টপ প্যাচাল আর জ্বালাতন করো। যেটাকে তুমি তোমার ভাষায় মজা বুঝানো বলো। ( ফিক করে হেসে দিলো )
~ ( নিধি চোখ ছোট ছোট করে , ঠোঁট উল্টালো ) আমি আপনার কানের কাছে বক বক করি? আপনাকে জ্বালাতন করি?

~ কই শাখ??

~ ঠিক আছে আর কিছু বলবো না। এমনিতেও আমার বিয়ে ঠিক করা হয়ে গেছে। বিয়ে করে অনেক দূর চলে যাবো। আপনাকে আর জ্বালাবো না।
কথাগুলো বলে ব্যাগ কাধে নিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু হাতে টান অনুভব করায় থেমে গেলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো অভ্র গম্ভির মুখ নিয়ে ওর হাত ধরে রেখেছে। একটু আগের হাসির রেশ পর্যন্ত তার মুখে নেই।
~ বসো।
~ ( হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ) না আমি বাড়ি যাবো। আর এক্ষুনি গিয়ে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিবো। ছাড়ুন হাত।
~ নিধি!!! ( কঠোর গলায় ) বসতে বলেছি আমি।
নিধি চুপ চাপ বসে পড়লো। কবে ঠিক হলো এসব? আর রেহান আমায় কিছু বললো না কেনো?
~ আমি আর ভাইয়া সবটা আজকেই জানতে পেরেছি। ভাইয়া আমাকে এখন বিয়ে দেওয়া নিয়ে রাগারাগি করে বেড়িয়ে গেছে বাসা থেকে। এর পরেই আমি আপনাকে কল করেছিলাম।
~ রেহান কোথায় গেছে জানোনা?
~ না। কিচ্ছু বলে যায় নি। রাগ করে চলে গেছে।
~ ছেলের ব্যাপারে কিছু জানো? মানে কি করে নাম কি, কোথায় থাকে এসব !!
~ মা বলেছিলো শুনেছি। ছেলের নাম মাহির রহমান।
জার্নালিস্ট। আমাদের ভার্সিটি থেকেই পাশ করেছে ১ বছর আগে। বাবা ও জার্নালিস্ট ছিলেন বিধায় ক্যারিয়ার গড়তে সময় লাগে নি।
~ ১ মিনিট!! কি নাম বললে মাহির, মানে মাহির রহমান? আমাদের ভার্সিটি থেকেই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে??
~ হ্যাঁ তাই তো বললো মা।
~ এই মাহির , আমাদের মিহিকার ভাই নয়তো?
~ মাহির ভাই??
~ হ্যাঁ ওর ভাই এর নাম ও তো মাহির রহমান। পেশায় জার্নালিস্ট। ও বলেছিলো। আর মাহির ভাইকে আমি পার্সোনালি চিনি। বেশ ভালো একজন মানুষ।
নিধি রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। অভ্র চুপ করে গেলো।
~ আরে এভাবে দেখছো কেনো? ভাইয়া ভালো তাই বলছিলাম আরকি। কিন্তু তোমার সাথে ওনার বিয়ের কথা মাথায় এলো কি করে তোমার বাবা মায়ের। ( নিধি কট মট করে তাকাতেই ) না মানে বলেছিলাম যে পরিচয় হলো কি করে ?
~ বাবার বন্ধু আংকেল। এইটা আমরা কেউ জানতাম না আগে। আর উনি যে মিহির ভাই সেটাও তো এখনই জানলাম।
~ আচ্ছা তো তুমি রাজি না ? দেখো মাহির ভাই কিন্তু কোনো দিক দিয়ে খারাপ নন।
~ কি বলতে চাইছো বলো তো? আমাকে বিয়ে করতে বলেছো? তো শুনে রাখো আমি কাওকে বিয়ে করবোনা। তোমাকে ছাড়া।
~ কিন্তু আমি…
~ তুমিও আমাকেই করবে দেখে নিও। আমাকে ছাড়া তুমি থাকতেই পারবে না। ( ভাব নিয়ে )
~ আচ্ছা?
~ হ্যাঁ।
~তোমরা এখানে কি করছো??

কারো কথায় ওরা সামনের দিকে তাকালো। ওরাও অবাক হলো সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখে।
…………………………………………………………………………
সুজানা, ন্যান্সি, রোজ আর রিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। আর আরশি মাথা নিচু করে সূর্যের পাশে দাড়িয়ে আছে। আরশ কাওকে তোয়াক্কা না করে ডেং ডেং করে গাড়িতে বসে পড়েছে।
~ কি কি দেখছিস? বেরোতে হবে তো এখন। দেরি হচ্ছে।
~ তুই আরশি কে আনতে উপড়ে গেছিলি ? ( ন্যান্সি হা হয়ে বললো )
~ আরশ কে চোখে পড়ছে না তোদের? আর এতক্ষন তো তোরাই ওকে নিয়ে যেতে পারছিস না বলে মন খারাপ করছিলিস এখন কি হলো?

~ না আসলে…. ( রোজ )

~ না মানে আমরা আসলে অনেক খুশিই হয়েছি। কিন্তু তুই যে আমাদের খুশির চিন্তা করেছিস সেটা ভেবে অবাক লাগলো। আবার আরশি কে ও নিজে থেকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছিস তাই একটু অবাক হয়েছি এই আর কি!! ( সুজানা )

~ হ্যাঁ তাই তো ( রিক )

~ তোদের আর কাজ নেই ? এখন যাবি নাকি যাওয়া টা ক্যানসেল করে দেবো? ( সূর্য )

~ হ্যাঁ চল। আরশির কাছে গিয়ে ওর কানে কানে বলল,,, আমরা যখন এতো করে আসতে বললাম তখন তো আসলি না যেই সূর্য বললো ওমনি রাজি হয়ে গেলি !!! কি এমন বলল যে আসতে রাজি হয়ে গেলি ? ( সুজানা )

~( সুজানার কানে কানে আস্তে করে ) তোমার ভাই যেই প্রতিমা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আমার ঘরে না এসে পারা যায়? আবার মিহি….

~ কি কথা বলছিস ? জলদি কর!

কেউ আর কিছু না বলে জলদি জলদি গাড়িতে উঠে বসলো। সূর্য ড্রাইভিং সিটে আর ওর পাশে রিক বসলো। সুজানা, আরশি আর আরশ মাঝের সিটে বসেছে। ন্যান্সি আর রোজ পিছনে বসেছে। সূর্য একবার সামনের মিরর দিয়ে আরশির দিকে তাকালো তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।

ওরা লেকের কাছে এসে নামলো। সূর্যর ফোন আসাতে ও একপাশে চলে গেলো। সুজানা আরশির হাত ধরে রেখেছে। সূর্য যেতেই ওরা সবাই মিলে ওকে চেপে ধরলো।
~ এবার বলো আরশি রানি তোর পুতুল ব্ ( রিক,
ন্যান্সি আর রোজ ইশারায় মাথা নাড়ালো ) মানে সূর্য ! হ্যাঁ সূর্য তোকে কি বললো যে তুই রাজি হয়ে গেলি ?

~ আসলে তখন সবার দিকে একবার তাকিয়ে,,,

আরশি টেবিলে বসে প্রাক্টিক্যাল করছিল তখনই সূর্য ওর ঘরে আসলো।
~ আরশি ?
আরশি অবাক হয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল সূর্য দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যকে এখন এই মুহূর্তে নিজের ঘরে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছে। আজ এতো বছর পর সূর্য এ ঘরে এলো।

~ সূ.. সূর্য ভাইয়া আপনি? এখন এ ঘরে ?
~ হ্যাঁ আমরা সবাই ঘুরতে যাচ্ছি তুমি নাকি যাবেনা ?
~ আসলে আমার প্রাকটিক্যাল গুলো করতে হবে।
~ সেসব পরে করতে পারবে এখন জলদি রেডি হও। আমি আরশ কে ও বলছি।
~ আব ভাইয়া আমার এখন ই এটা শেষ করতে হবে, না হলে …
~ তোমার ফ্রেণ্ড আছে না মিহি?
~ হ..হ্যাঁ !
~ ও কে কল করে আমার কাছে দাও আর তুমি রেডি হতে যাও ।।।
~ কিন্তু ( সূর্য রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই ) আচ্ছা দিচ্ছি।
নিন রিং হচ্ছে ( ফোন টা এগিয়ে দিয়ে )

~ হেলো হ্যাঁ আরশি বল ! ( মিহি )
~ আমি সূর্য বলছি । তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।
~ সূর্য ভাইয়া আব হ্যাঁ বলুন। ( মিহি )

~ আরশির প্র্যাকটিক্যাল টা আজকে সকালে আরশ নষ্ট করে ফেলেছে। আরশি অনেকটা শেষ করে ফেলেছে অবশ্য। কিন্তু এখনো অনেকটাই বাকি আছে। আর আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাচ্ছি ও যেতে পারছে না। শুধু মাত্র এই প্র্যাকটিক্যাল টার জন্য। আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে,, তুমি কি ওকে রাতে একটু হেল্প করতে পারবে এটা শেষ করতে, যদি তোমার কোনো সমস্যা না থাকে। আর আজ না হয় আমাদের বাড়িতেই থেকে যেও রাতে।
~ না না ভাইয়া কোনো সমস্যা নেই। আমি এসে ওকে হেল্প করে দিবো।
~ তাহলে এক কাজ করো আমরা তো লেকে যাচ্ছি তুমিও লেকে চলে এসো। তারপর আমাদের সাথে আবার ফিরে এসো। আমরা আর ১০/১২ মিনিটের মধ্যে বের হচ্ছি।
~ ঠিক আছে ভাইয়া আমিও বের হচ্ছি।
~ ওকে বায়। এন্ড থ্যাংকস ফর ইউর হেলপ।
~ নো প্রব্লেম ভাইয়া। রাখছি।

মিহি বেশ অবাক হলো সূর্যের কথা গুলো শুনে।( সূর্য আরশির জন্য এতো ভাবছে। তাহলে তো খুব ভালো। আরশির জীবনটা একটু গোছালো হয়ে গেলেই হলো। আমি যাই জলদি রেডি হই। ও মা শুনো ।।।।।।)

আরশি ওয়াশরুম এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে সূর্যের কথা শুনছিলো । কি বললেন উনি আমার জন্য হেল্প চাইলেন ?

~ কি হলো রেডি হচ্ছো না যে?
~ হ্যাঁ হচ্ছি। কিন্তু এসবের কোনো দরকার ছিল না।
~ শোনো,, কোনটা দরকার আর কোনটা দরকার নয় সেটা আমি বুঝে নেব। তোমাকে যেটা করতে বলেছি তুমি সেটা করো। আরশ, আরশ !!!! ( আরশ কে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো )
আরশি এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে।

~ এই আরশি আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই এতো কিছু ভেবেছে তোর জন্য!!! আমার ভাই পাল্টাচ্ছে !! আমার তোর জন্য খুব ভালো লাগছে রে ।। ( আরশি কে জড়িয়ে ধরে )
আরশি শুধু হাসলো কিছু বললো না।
~ আচ্ছা মিহি বোধয় চলে এসছে ।। চলো যাই আমরা। ( আরশি )
~ হ্যাঁ চল। সূর্য ও , ঐতো এসে পরেছে। চল চল। ( সুজানা )

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here