আমার পুতুল বর লেখিকা : আরশি জান্নাত ( ছদ্মনাম) পর্ব :২৩+২৪

আমার পুতুল বর
লেখিকা : আরশি জান্নাত ( ছদ্মনাম)
পর্ব :২৩+২৪

~ তোমরা আমাকে এভাবে দেখছো কেনো যেনো আমি একটা ভুত!!
~ না একটু অবাক হয়েছি তোমাকে হঠাৎ এখানে এসময়ে দেখে। ( অভ্র )
~ আমিও অবাক হয়েছিলাম যখন দূর থেকে তোমাদের এক সাথে দেখেছিলাম।
~ আ,, তুমি একা এখানে কি করছো? ( নিধি )
~ আমি আরশিদের জন্য অপেক্ষা করছি। ওরা এসে যাবে এক্ষুনি। ( মিহি )
~ আরশিদের মানে ! কে কে আসছে ? ( অভ্র )
~ আরশি, সূর্য ভাইয়া, আরশ, সুজানা আপু, রিক ভাইয়া, রোজ আর ন্যান্সি আপু আসছে। একটু ঘুরতে বের হয়েছে ওরা। ( মিহি )
~ ওহ সূর্য ভাইয়া ও আসছেন তাহলে। ( অভ্র মিন মিন করে বললো )
~ কিছু বললেন ভাইয়া? ( মিহি )
~ না কিছু না। ( অভ্র )
~ তা আপনি আর নিধি আপু এক সাথে কি ঘুরতে এসেছিলেন! নাকি ডেটে ? ( দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করলো মিহি )
~ হ্যাঁ আসলে,,, ( নিধি )
~ নাহ! একদম না। আমাদের তো দেখা হয়ে গেছিলো তাই কথা বলছিলাম। ( মৃদু চিৎকার করে বললো অভ্র )
~ হ্যাঁ তাই। (নিধি চোখ বাকিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। মিহি না থাকলে নির্ঘাত ওর খবর করে ফেলতো। )
~ আচ্ছা । যাক ভালই সবার সাথেই দেখা হয়ে যাবে। হোয়াট আ কো-ইন্সিডেন্ট।। ( মিহি )
অভ্র, নিধি একে অপরের দিকে আড় চোখে তাকালো।
~ মিহি বসোনা দাড়িয়ে কেনো?( নিধি )
মিহি বসতেই অভ্র জিজ্ঞেস করলো ,,,
~ উম মিহি , মাহির ভাইয়ার কি খবর? ( আড় চোখে নিধির দিকে তাকালো )
~ ভাইয়া !! ওর আবার খবর কি হবে।( হতাশার সুরে বললো ) ও নিজেই তো সবার খবর করে বেড়াচ্ছে। জার্নালিস্ট কি না !!
অভ্র আর নিধি হেসে দিলো। মিহি ও হেসে সামনে তাকিয়ে দেখলো আরশিরা এই দিকে আসছে।
~ ঐ তো ওরা আসছে। ( উঠে ওদের সামনে গেলো )
অভ্র আর নিধি দাড়িয়ে গেলো। মিহি আরশি কে জড়িয়ে ধরলো। সুজানা, রিক, রোজ, ন্যান্সি, সূর্য আরশ সবার সাথে কথা বললো।
~ নিধি আপু আর অভ্র ভাইয়া না? ( আরশি )
~ ও হ্যাঁ ওদের সাথেও দেখা হয়ে গেলো। চলো তোমাদের নিধি আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। অভ্র ভাইয়াকে তো চেনোই। ( মিহি )
নিধির সামনে নিয়ে গিয়ে,,,
~ নিধি আপু! উনি হচ্ছেন সূর্য ভাইয়া আর তার পাশে সুজানা আপু। আরশির কাজিন ওরা। আর এরা হচ্ছে, সূর্য ভাইয়ার ফ্রেণ্ড। কানাডা থেকে এসছেন। আপুরা ভাইয়ারা এই হচ্ছে নিধি আপু। আমাদের সিনিয়র। আর ধলা বান্দর!! ( জিব কেটে মেকি হাসি দিয়ে ) না মানে রেহান ভাইয়া আছেন না !! ওনার বোন। ( মিহি )
~ হেলো আমি নিধি ।
~ আমি রোজ।
~ আমি ন্যান্সি।
~ আর আমি দা ওয়ান এন্ড অনলি রিক।
নিধি মুচকি হাসলো।
~ আর আরশ কে তো চেনই।। ( আরশের গাল টেনে )
~ হ্যাঁ খুব চিনি। ( ওর চুল এলোমেলো করে দিয়ে )
~ আপু তোমরাও কি বেড়াতে এসেছিলে নাকি? ( আরশি বেশ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো )
~ আমাদের এমনি দেখা হয়ে গেছে। ( অভ্র )
~ ওহ আচ্ছা। চলো সবাই ওদিকটায় বসি। ( আরশি )
~ হ্যাঁ চল। ( মিহি )

ন্যান্সি আর রোজ পিক তুলছে। আরশি, মিহি আর সুজানা বেশ জমিয়ে গল্প করছে। নিধি আরশ এর পাকা পাকা কথা শুনছে। রিক, সূর্য আর অভ্র এক পাশে দাড়িয়ে আছে।
~ কেমন আছো ডুড !! ( রিক )
~ অনেক ভালো ভাইয়া। আপনি ? ( অভ্র )
~ ভাই টাই বলো না তো। নাম ধরেই ডেকো। আর আমি খুব ভালো আছি। ( রিক )
~ সূর্য ভাইয়া আপনি কেমন আছেন? আপনার তো আমাদের ভার্সিটি তে মাস্টার্স কমপ্লিট করার কথা !! কবে জয়েন করছেন ? ( অভ্র )
~ হ্যাঁ ভালো আছি। আর পরশু জয়েন করবো। ( সূর্য )
~ আচ্ছা অভ্র , রেহান কোথায়, আর নাহিদ? আমরা সবাই আছি ওদের ও ডাকো। ( রিক )
অভ্র বিষম খেলো। মনে মনে বললো,, এখন রেহান আসলে নিধিকে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করলে কি বলবো ? নিধির দিকে তাকিয়ে, এই মেয়েটা আমাকে ঝামেলায় ফেলতে একদম ওস্তাদ ।।
~ এনি প্রবলেম অভ্র? ( সূর্য )
~ না। কোনো প্রবলেম নেই। আমি ওদের ফোন করছি। অভ্র একপাশে চলে গেলো। হ্যাঁ ওরা আসছে।
~ ওকে ডান। ( রিক )
মিহি গল্প করতে করতে থেমে গেলো।
~ কিরে চুপ হয়ে গেলি কেন ? ( আরশি ) মিহির সামনের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
আরশি আর সুজানা ও সামনের দিকে তাকালো।
~ ওমা রেহান ভাইয়া আর নাহিদ ভাইয়া যে !!! ( আরশি )
নিধি রেহানের নাম শুনে হুট করে পিছনে তাকালো। রেহানকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আশেপাশে তাকিয়ে অভ্রকে খুঁজলো। অভ্রকে সূর্যদের পাশে দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। অভ্র ইশারায় রিক কে দেখালো। আর মুখে বোঝালো ও ডাকতে বলেছে। নিধি মুখ ঝামটা মেরে একপাশে চেপে গেলো।
~ এই আরশি বলছি এই ধলা বান্দরকে কে ডেকেছে রে!! ( চোখমুখ কুঁচকে বললো মিহি )
~ এভাবে বলছিস কেনো ? আমরা সকলে তো এসেছি ওনারা আসাতে আরো ভালই হয়েছে। ( আরশি )
~ ছাই হয়েছে। আমাকে খোঁচানো শুরু করবে আবার। ( মিহি কপাল কুঁচকে বললো )
আরশি আর সুজানা মুখ টিপে হাসলো।
রেহান আগে রিক, সূর্য আর অভ্রর দিকে এগিয়ে গেলো।
~ হাই গাইস !!
~ আরে এইতো এসে গেছো। কেমন আছো তোমরা ? ( রিক রেহান আর নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বললো )
~ হ্যাঁ আমরা অনেক ভালো আছি। ( নাহিদ )
রেহান হেসে আশে পাশে তাকাতেই মিহির দিকে চোখ গেলো। চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে রেহান ও ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকালো। মিহি ওকে ভেংচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রেহান মুখ বাকালো। হঠাৎ চোখ গেলো সাদা জামা পড়া একটা মেয়ের দিকে। ও অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। অভ্র ওকে ঐ দিকে যেতে দেখে ঘামতে শুরু করলো।
~ তুই এখানে?
নিধি চমকে মাথা তুলে দেখলো রেহান ওর সামনে দাড়িয়ে। আমতা আমতা করে বললো,,,
~ আমিতো একটু বাইরে বেড়িয়েছিলাম। ভাল লাগছিলনা তাই। এখানে এসে ওদের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
~ আচ্ছা !! ( সন্দেহর চোখে তাঁকিয়ে )
~ তা নই তো কি ? তুই এভাবে কেন তাকিয়ে আছিস??
~ অভ্র ফোন করে বললো ওর ও নাকি কো-ইন্সিডেন্টলি সবার সাথে দেখা হয়ে গেছে। তোর সাথে ও তাই হলো। কেমন একটা আজব ব্যাপার না !!
~ কেনো আজব কেনো হবে? কো- ইনসিডেন্ট হতেই পারে।
~ হ্যাঁ সেই আজ মনে হয় কো- ইনসিডেন্ট ডে।
নিধি চোরা চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে অভ্রর দিকে তাকালো। আবার দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।
~ কে রে নিধি নাকি রে !!! ( নাহিদ )
~ না নিধির ভূত মনে হচ্ছে তোমার ? ( নিধি )
~ না তা কেনো হবে ? নিধির তো ভূত হবে না পেত্নী হবে । ( রেহানের কাধে হাত রেখে হেসে দিলো। রেহান ও হাসছে )
নিধি কোমড়ে হাত দিয়ে নাহিদের দিকে রাগী চোখে তাকালো।
~ নাহিদ ভাইয়াআআআ !!!!! ( চেঁচিয়ে )
~ উফফ বাবা কানের মাথা খাস না তো চেঁচিয়ে। ( রেহান কান ডলতে ডলতে বললো ) নাহিদ হেসে যাচ্ছে।

ন্যান্সি বাদাম দেখে বললো ,,, ওয়াও বাদাম বেচছে !!! এই সূর্য, রিক যা না একটু বাদাম এনে দে। আমরা খাবো।
~ আমরা !! নাকি তুই ? ( রোজ ঠাট্টা করে বললো )
~( মুখ বেকিয়ে ) এমন ভাব করছিস আনলে যেনো তুই খাবি না ??
~ আচ্ছা হয়েছে আমি সবার জন্যেই আনছি। রোজ আর ন্যান্সির মাথায় চাটি মেরে, বাদাম আনতে গেলো রিক। ওর সাথে নাহিদ ও গেলো।
বাদাম এনে সবাইকে দিলো। আরশি কে বাদামের প্যাকেট এগিয়ে দিলে আরশি কিছু বলবে তার আগেই ,,,,
~ ও বাদাম খায় না।
~ আরশি বাদাম খায় না।

সূর্য আর অভ্র একে অপরের দিকে তাকালো। বাকিরা ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। আরশি ভাবছে,,
(সূর্য ভাইয়ার মনে আছে যে আমার বাদাম পছন্দ নয়।।)
নিধি অভ্রকে দেখছে। আরশির প্রতি অভ্রর এক্সট্রা কেয়ার ও আগেও দেখেছে। আজ জানলো আরশির পছন্দ- অপছন্দের খেয়াল ও অভ্রর আছে। নিমিষেই চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। অজানা ব্যাথায় বুক ভারি হচ্ছে তার।

~ বাহ্ আরশি রানি তোর পছন্দ – অপছন্দ নিয়ে দু দুটো হ্যান্ডসাম ছেলে মাথা ঘামাচ্ছে । কি কপাল তোর !! ( মিহি বাদাম এর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো )
আরশি ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। সুজানা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,,
~ কি রে ভাই এর দেখি তোর অপছন্দের কথা এখনো মনে আছে !!
সূর্য কপাল কুঁচকে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে ,,,,,, ও আরশির অপছন্দের ব্যাপারে কি করে জানে ? ও তো আরশির সিনিয়র !!! কিন্তু পরিচয় তো অনেক দিনের তাই হয়তো জানে। তাও ব্যাপারটা কেমন যেনো।

অভ্র কিছু বললো না। একবার আরশির দিকে তাকালো। দেখলো ও সূর্যের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অভ্র ও একবার সূর্যের দিকে তাকালো। অভ্র ভাবছে,,,
~ ( আমার এদের দুজনকে এতোটা অস্বাভাবিক লাগে কেনো ,,, কেনো মনে হয় কিছু একটা লুকায়িত আছে এদের মধ্যে ) হঠাৎ নিধির দিকে চোখ গেলো। তখনই চোখে চোখ পড়লো। অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিধির ছল ছল চোখ জোড়ার দিকে।
~ কি হলো ওর চোখে পানি কেনো ? ( মনে মনে )
নিধি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। আর ওড়না দিয়ে চোখের কোনা মুছে নিলো।

#চলবে

আমার পুতুল বর
লেখিকা : আরশি জান্নাত ( ছদ্মনাম)
পর্ব :২৪

সূর্য বেলকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছে। বেলকনির দরজার পিছনে লুকিয়ে আছে সুজানা, রিক রোজ আর ন্যান্সি।
~ এই আপু যাও না।। যেটা করবে ভেবেছো করোনা গিয়ে !! ( রিক ফিসফিসিয়ে বললো)
~ আরে!( মৃদু চিৎকার করে ) রোজ আর ন্যান্সি সুজানার মুখ চেপে ধরলো।
~ কি করছো কি আস্তে কথা বলো। চেঁচাবে না। এই রোজ ছাড় আপুকে। ( ন্যান্সি ) রোজ, সুজানার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।
~ বলছি যে, প্ল্যান টা কি আমার একার ছিলো নাকি? তোমরা ও তো ছিলে। তোমাদের মধ্যে কেউ একজন যাও। ( সুজানা )
~ যাবে টা কে ; ( ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে বাকিদের ইশারা করলো ) ও গেলে বেটার হবে। ( রিক )
~ আমিই!! এই আমাকে কেনো পাঠাতে চাইছিস তোরা? এই রিক, রোজ তোদের মধ্যে একজন যা। ( ন্যান্সি )
~ শোন আমি বলি কি আমাদের প্ল্যান অনুসারে যেভাবে কথাটা ওর কানে ঢালতে হবে; সেটা একমাএ তুই ভালো ভাবে পারবি। তুই তো আগেও এরোকম কথা কতো আমাদের বাড়িয়ে চড়িয়ে শুনিয়েছিস বল ! ( রোজ )

রিক আর সুজানা মুখ টিপে হাসলো।

~ তুই কি আমাকে খোচা দিচ্ছিস? ( চোখ ছোট ছোট করে রোজের দিকে তাকিয়ে )
~ আরে না তোকে কেউ খোঁচাচ্ছে না। উল্টো প্রশংসা করছে তোর। তোর দ্বারাই কাজটা পসিবল হবে। এই আর কি। ( রিক )
~ হ্যাঁ ন্যান্সি তুমিই বরং যাও ভালো হবে ভাইকে ঠিকমতো ব্যাপারটা বোঝাতে পারবে। যাও যাও জলদি। ( সুজানা )

সুজানা আর রোজ মিলে ন্যান্সিকে ঠেলে বেলকনিতে পাঠিয়ে দিলো। ওরা তিনজন আবার আড়ালে লুকিয়ে পড়লো।

কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সূর্য পিছনে ফিরলো। ন্যান্সিকে দেখে আবার সামনের দিকে তাকালো।
~ তুই এখানে?
~ হ্যাঁ তোর সাথে কথা আছে।
~ বল।
ন্যান্সি আড় চোখে বাকিদের দিকে তাকালো। ওরা কথা বলতে ইশারা করছে।
~ কি ভাবছিস বল কি বলবি!
~ আ হ্যাঁ ( সূর্যের পাশে দাড়িয়ে ) আরশি আর অভ্র কে তোর কেমন লাগে?
সূর্য কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো।
~ কেমন লাগে মানে , কি বোঝাতে চাইছিস ঠিক করে বল !
~ মানে হচ্ছে, অভ্র আর আরশি কে জুটি হিসেবে তোর কাছে কেমন লাগে?
সূর্য ন্যান্সির দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ন্যান্সি একটা ছোটখাটো ঢোক গিললো। ও আবার বাকিদের দিকে তাকালো। ওরা কথা চালিয়ে যেতে বলছে। নান্সি ঢোক গিলে মাথা নাড়লো।
~ এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? মানে ওদের এক সাথে কিন্তু বেশ মানাবে। আর দেখিস নি অভ্র আরশির বেশ কেয়ার ও করে। আজ তো মিহি কে বলতে শুনলাম যে,,,,,
~ কি শুনেছিস? ( কিছুটা কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলো )
~ ও বলছিলো যে,,, একবার নাকি আরশির হাত কেটে গেছিলো। আর এইটা নিয়ে অভ্র সে কি কান্ড করলো। আরশি কে তো বকলোই সাথে নিজের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে, মিহিকে ও করতে দেয় নি। ওদেরকে দেখে অনেকেই কাপল মনে করে কারণ অভ্র আরশির অনেক কেয়ার করে। আমিও তাই ভাবতাম। কারণ অভ্র আরশির দিকে কেমন মুগ্ধ নজরে তাকিয়ে থাকে। আমি সেদিন দেখেছিলাম। আজ তো তুই ও দেখলি অভ্র কেমন করে আরশির অপছন্দের কথাটা বলে দিলো। তুই ও বলেছিস। কিন্তু তোর আর ওর বলার মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে।

হাত মুঠ করে জিজ্ঞেস করলো ,, কি পার্থক্য ?
~ তুই হচ্ছিস ওর কাজিন। ভাই ( একটু জোর দিয়ে বললো ) । কিন্তু ও তো আর ভাই নয়। যদিও ওকে আরশি ভাইয়া ডাকে, কিন্তু তাই বলে তো আর আপন ভাই হয়ে যাবে না। তাই ওর আরশির পছন্দ- অপছন্দের খোঁজ রাখা টা মোটেও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। একজন সিনিয়র হয়ে জুনিয়র এর এতো কেয়ার ব্যাপারটা ভাববার!!!! ( আড় চোখে সূর্যের দিকে তাঁকিয়ে )
~ ন্যান্সি তুই এখন এখান থেকে যা!! ( সামনের দিকে তাকিয়ে )
~ কেনো কি হলো?
~ কিচ্ছুনা যেতে বলেছি যা।
~ আচ্ছা ঠিক আছে। এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো।
ওরা চারজন সুজানার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।
~ উফফ আপু!! সূর্যকে কোনো কথা বলতে আমার আজকের মতো ভয় কোনোদিন ও লাগে নি। ( ন্যান্সি)
~ সূর্য রেগে গেছে বলে মনে হলো আমার ( রিক )
~ হ্যাঁ আমাকে যেই লুক দিচ্ছিলো বাবারে ( ন্যান্সি )
~ আচ্ছা আপু কাজ টা কি ঠিক হলো মানে সূর্য যদি আমাদের ভাবনার উল্টোটা করে তখন? ( দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে প্রশ্ন করলো রোজ )
~ নাহ ভাই কে দেখে যা বুঝলাম ট্রেন ঠিক লাইনেই যাবে মনে হচ্ছে। ( সুজানা )
ওরা তিনজন এক সাথে বললো,,,,
~ হ্যাঁ গেলেই ভালো।।।

সূর্য বেলকনির গ্রিল শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। কপালের রগ গুলো ভেসে উঠেছে।
~ অভ্র আরশি কে পছন্দ করে !!! আর আরশি?
(গ্রিলে ঘুষি দিয়ে) এমন তো হওয়ার কথা নয়।। চোখ বন্ধ করে কপাল ঘষলো তারপর নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। রিক পানি খেতে যাচ্ছিলো কিন্তু সূর্যকে আরশির ঘরের দিকে যেতে দেখে উল্টো ঘুরে সুজানার ঘরে ফিরে এলো।
~ এই এই আপু সূর্য তো আরশির ঘরে যাচ্ছে ?
~ অ্যা!! ( সুজানা )
~ আরে হ্যাঁ
~ আমরা এখানে কেনো চলো ( রোজ )
ওরা পা টিপে টিপে আরশির ঘরের সামনে এলো,,,

আরশি আর মিহি মনোযোগ দিয়ে লিখছিলো হঠাৎ কেউ ঘরে আসাতে ওদের মনোযোগ নষ্ট হলো।
ওরা সূর্যকে দাড়িয়ে থাকাতে দেখে চমকে একে অপরের দিকে তাকালো।
সূর্য দরজার কাছে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
~ তোমাদের প্র্যাকটিক্যাল শেষ?
~ না একটু বাকি আছে। ( আরশি )
~ ওকে। আরশি! আমার তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। ছাদে এসো।
~ অ্যা! আমার সাথে জরুরী কথা? ( আরশি )
~ হ্যাঁ চলো। মিহি ! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
~ ইটস ওকে ভাইয়া। আপনারা যান।
আরশি মিহির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। মিহি তো দাত কেলাচ্ছে। আরশি বুঝতে পারছে ওকে এই মেয়ে হেল্প করবে না। অগত্যা আরশি সূর্যের পিছু পিছু গেলো।

এদিকে ওদের বেরোতে দেখে সুজানা আর বাকিরা রান্না ঘরের দিকে দৌড়। সূর্য আর আরশি গেট দিয়ে বেড়িয়ে যেতেই ওরা বেড়িয়ে এলো। মিহি ও ঘর থেকে বেরিয়ে ওদেরকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো।
~ আপু কি হলো আলাদা নিয়ে গিয়ে আবার ঝাড়বে না তো ? ( মিহি )
~ তুমিও যেখানে আমিও তো সেখানে জানবো কি করে বলো?( সুজানা )
~ তাহলে চলো আমরাও যাই দেখি আমাদের প্ল্যান কতটা কাজে দিচ্ছে !! ( রিক )
~ হ্যাঁ চল। ( ন্যান্সি )

ওরা লাইন ধরে পা টিপে টিপে ছাদের দরজার কাছে এলো। রিক সামনে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছে। ওর পাশে রোজ আর সুজানা। পিছনে ন্যান্সি আর মিহি।
ওরা আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করছে ওরা কি বলছে।

সূর্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আরশি একবার সূর্য কে দেখেছে তো আবার মাথা নামিয়ে ফেলছে। ও তো ভেবেই পাচ্ছে না সূর্য ঠিক কি বলতে
পারে। অনেক্ষণ হয়ে গেছে কিন্তু সূর্য কিছু বলছে না। এদিকে বাকিদের দাঁড়িয়ে থেকে থেকে পা ব্যথা হয়ে গেছে।

~ উফফ এই ভাই কিছু বলছে না কেনো? কতক্ষন এমন শং সেজে দাঁড়িয়ে থাকবে?? ( সুজানা )
~ সূর্য বেবি প্লিজ কিছু বলো নাহলে আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে বুড়ি হয়ে যাবো। আমার নাজুক পা দুটো ব্যাথা করছে ( ন্যান্সি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো )
রিক আর রোজ ওর মাথায় চাটি মারলো।
~ আহ্হঃ মারিস কেন?
~ কে তোর বেবি? ওর যে সময়ে বিয়ে হয়েছে না ওই সময় যদি ওরা কাজের কাজ করতো তাহলে আজ তোর সমান ওর বেবি থাকতো। আর উনি আসছেন বেবি ডাকতে!! ( রিক )
~ পা তোর একার ব্যাথা করছে? আমরা কি সোফায় বসে দেখছি?? আবার বলে কি না নাজুক পা!! ( রোজ ন্যান্সিকে ভেংচি কেটে বললো )
মিহি ফিক করে হেসে দিলো।
ন্যান্সি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুজানা ওকে থামিয়ে দিলো।
~ হুসসস !! চুপ সবাই। ভাই টের পেলে খবর আছে। ( সুজানা )
সবাই চুপ মেরে গেলো। আবার ওদের দিকে মনোযোগ দিলো।

~ ভাইয়া ! কিছু বলেছেন না যে ?
সূর্য কোনো জবাব দিলো না। আরশি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আবার ডাকলো ,,,,
~ সূর্য ভাইয়া !!
~ তুমি তো আগে সূর্য ভাইয়া বলতে না। তাহলে এখন কেনো বলছো?
সূর্যের হঠাৎ এমন কথায় আরশি চমকে গেলো। অবাক হয়েই বললো ,,,,,,
~ তখন তো খুব ছোট ছিলাম।
~ হ্যাঁ এখন তো অনেক টাই বড়ো হয়ে গেছো। পুরনো অভ্যাস পরিবর্তন করতে শিখে গেছো ।
~ মানে কি বলছেন ?
~ ছেড়ে দাও বুঝবে না।
~ (আরশি মাথা নিচু করে প্রশ্ন করলো ) আপনিও তো আগে আমাকে তুই করে বলতেন তাহলে?
~ ( সূর্য বাকা হেসে বললো ) তুই থেকে তুমিতে আসার সময় হয়েছে তাই বলছি।
আরশি কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সূর্য ও আরশির দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে রোজ ওদের এভাবে তাকানো দেখে ওভার এক্সাইটেড হয়ে লাফ দিতেই রিকের সাথে ধাক্কা খেলো। আর রিক গেটের সাথে বারি খেয়ে সোজা ছাদের ভিতরে ঢুকে গেলো। বাকিরা কি করবে বুঝতে না পেরে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুজানা সবাইকে নিচে নামতে ইশারা করলো। সবাই জলদি জলদি নীচে নেমে এলো।
আরশি হঠাৎ আওয়াজে সূর্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে ওর হাত খামচে ধরলো। সূর্য আরশির ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালো। ভয় পেয়ে চোখ মুখ কুচকে রেখেছে। আর কি যেনো বির বির করছে। সূর্যর ওর ভয় পাওয়া মুখটা দেখে হাসি পাচ্ছে। এদিকে রিক কি করবে বুঝতে পারছে না। পিছনে হেল্প এর জন্য তাকাতেই দেখলো সবকয়টা হাওয়া।। নিজের চুল টেনে ও ও পালাতে যাবে তখন ই সূর্যের কথায় থেমে গেলো,,,

~ যাওয়ার সময় দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে যাস।

রিক হতভম্ব হয়ে গেলো। এমন সময় সূর্য যে এমন একটা কথা বলবে ও ভাবতেই পারেনি। আরশি চোখ খুলে তাকালো। সূর্যের দিকে তাকিয়ে রিক এর দিকে তাকাতেই বিষম খেলো। এক লাফে সূর্যের থেকে দুরে সরে গেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here