আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব:২৫+২৬

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব:২৫+২৬

পুরো ঘরময় পায়চারী করছে সুজানা। আর বাকিরা গভীর চিন্তায় মগ্ন। ওদের দেখলে মনে হবে ওরা সবাই ফিজিক্সের জটিল সূত্র সমাধান করতে বসেছে।
~ এটা ঠিক কি হলো, কেউ বুঝতে পারছো? আমার না মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সূর্য কিভাবে এমন নরমাল রিয়েক্ট করলো? ( রিক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো )
~ ব্যাপারটা তো আমিও বুঝলাম না। ( রোজ )
~ আচ্ছা ও কিছু জেনে যায় নি তো ? ( ন্যান্সি )
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকালো। সুজানা ও পায়চারী বন্ধ করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ন্যান্সির দিকে।
~ কি বলছিস কি তুই? এমন হলে তো খুব সমস্যা। ( রিক )
~ আমি বুঝতে পারছিনা ভাই বুঝবে কি করে?? ( সুজানা )
~ সেটাই তো। আচ্ছা রিক ভাইয়া ওরা তো এখনো ছাদে তাই না? ( মিহি)
~ হ্যাঁ। নিচে আসেনি। তার মানে ছাদেই আছে। ( রিক )
~ করছে টা কি ওরা ? ( ন্যান্সি )
~ রোমান্স!!( রোজ )
~ ভাই করবে রোমান্স তাও আরশির সাথে? তাহলে তো হয়ে গেলো !! ( সুজানা )
~ তাহলে কি করছে ? ( রোজ )
সবাই ঠোঁট উল্টে দু হাত তুলে ইশারা করলো তারা জানে না।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
~ ভাইয়া চলুন নিচে যাই।। অনেক্ষণ হয়ে গেছে আর রিক ভাইয়া না জানি কি ভাবছে আমাদের নিয়ে !!
~ নতুন করে আর কি ভাববে !! ও আগেই ভেবে রেখেছে তাই ওভাবে আড়ি পেতে ছিলো।
~ কি ভেবেছে?😑
~ আমাদের নিয়ে ভাবার অনেক কিছুই আছে তাইনা?
আরশি ড্যাব ড্যাব করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি বলছেন উনি???
~ মানে ভাইয়া?
~ অভ্র!
~ অ্যা! অভ্র ভাইয়া কোথা থেকে এলেন?
~ আই ওয়ান্ট টু নো , অভ্রর ব্যাপারে তোমার চিন্তা ভাবনা কি?
~ আমার চিন্তা ভাবনা! কি রকম চিন্তা ভাবনা ?
~ মানুষ হিসেবে ও কে তোমার কেমন লাগে?
~ ওওও! মানুষ হিসেবে বলবো ভাইয়া অনেক ভালো একজন মানুষ। অনেক কেয়ারিং, দায়িত্ববান, আর হাসি খুশি প্রকৃতির মানুষ।
~ আচ্ছা!! ভালো বেশ। তা তোমাদের পরিচয় কতো দিনের?
~ আমরা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে।
~ ওহ ওকে।
~ আপনি কেনো জানতে চাইলেন ভাইয়া? ( উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আরশি )
~ এমনি !
~ ওহ আচ্ছা।
~ হুম যাও নিচে যাও।
~ আচ্ছা , আপনি?
~ (হালকা হেসে) আসছি।
আরশি মাথা নাড়িয়ে আগে গেলো। সূর্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওর পিছু পিছু নামলো।

~এই এই সর সর সব!! আসছে ওরা। (রিক )
~ অ্যা আসছে? সুজানা আপু চলো আমরা তোমার ঘরে যাই, রিক সূর্যর ঘরে যা গিয়ে বুঝার চেষ্টা কর ওর মুড কেমন! আর মিহি আরশির রুমে যাও জলদি । ( রোজ )
~ হ্যা হ্যা চলো। ( মিহি )

সবাই যার যার স্থানে দৌড়।

আরশি ঘরে আসতেই মিহি ওকে জেকে ধরলো।
~ কিরে এতক্ষন কি করছিলি তোরা? ( মিহি )
~ কি করবো? তুই তো দেখেই এসেছিস কি করছিলাম। ( সূর্য )
~ কিছুনা বললেই হলো। এতক্ষণ কি আকাশের তারা গুনছিলি নাকি ? ( মিহি )
~ হ্যা হলো। তুই হাওয়া খেতে গেছিলি নাকি বাতাস খেতে, তা তো আর আমাকে বলে যাস নি !! ( সূর্য )
~ দেখ আরশি তুই আমার কথার সোজা উত্তর দে।
কি করতে গেছিলি তোরা ?
~ রেহানের আর মিহির ফাইটিং এর কারন জানতে ( সূর্য- আরশি )
~ রেহান- মিহির ফাইটিং??? ( মিহি – রিক )
~ একি আমার কেনো জানি মনে হলো আমার কথার প্রতিধ্বনি হলো ? ( আরশি )
~ আমার কথার ও প্রতিধ্বনি হলো বলে মনে হলো !! ( রিক )
ওরা চারজন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আসলে বুঝার চেষ্টা করছে ওরা ঠিক শুনলো কিনা?
~ ওসব ছাড় আর আমাকে বল রেহান- মিহির মানে আমার আর ওই ধলা বাঁদরের ফাইটিং এর ব্যাপারে জানতে তোকে নিয়ে গেছিলো ভাইয়া? ( মিহি )
~ হ্যাঁ আসলে আমি যবে থেকে এসছি খেয়াল করেছি ওরা শুধু ঝগড়াই করে। মানে একে অপরকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে। ওরা তো আবার সিনিয়র- জুনিয়র । তাই এর কারণ কি তা জানতে বেশ কৌতূহল হচ্ছিলো। এর জন্যই আরশি কে ছাদে ডেকেছিলাম। ( সূর্য )
~ মানে সিরিয়াসলি !! এই কারণে ভাইয়া তোকে জরুরী তলব করে নিয়ে গেলো?🤨 ( মিহি )
~ হ্যাঁ নাহলে আর কি কারণ হবে ! ( সূর্য )
~ ধুর !!! ( মিহি- রিক )
~ শুনলি তুই!! আবার মনে হলো প্রতিধ্বনি হলো!! ( রিক )

রিক আর মিহি দরজার কাছে গেলো। তখনি দরজাটা হাট করে খুলে গেলো।
~আহ আমার নাক! ( রিক )
~ আমার কপাল!!!!! ( মিহি )
~ ওহ সরি ( ন্যান্সি )
~সরি ( রোজ )
~ তুই এখানে? ( সূর্য )
~ হ্যাঁ আসলে তোকে খুঁজছিলাম তাই এসেছি। আব আমার সাথে আয় না। আমরা ও ঘরে গল্প করবো, আই মিন আমার বিটিএস নিয়ে ; ( সূর্যের দিকে তাকিয়ে ) আর কেউ তো তেমন ইন্টারেস্টেড নয়। তাই তুই ই চল ! ( রিক এর হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো রোজ )
~ আরে কথা বলছিলাম তো ! (রিক )
~ চুপ চাপ আমার সাথে চল ! ( রোজ ফিসফিসিয়ে বললো )
রিক চুপ মেরে গেলো।

~ ন্যান্সি আপু তুমি এখানে কি করছো? ( আরশি )
~ আমি আসলে তোমাদেরই ডাকতে এসেছিলাম। আমরা আসলে হরর মুভি দেখার প্ল্যান করছিলাম। তোমরাও এসো। (ন্যান্সি)

~ কি বললে তুমি ? ভূতের মুভি তাও আবার আরশি দেখবে !!! হাহাহাহা ( মিহি হাসতে হাসতে বললো )
~ হ্যাঁ মানে কি হয়েছে ? ( ন্যান্সি কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করলো )
~ ও ভূতে হিহিহিহি ( আরশির দিকে তাকিয়ে হেসে ) ভয় পায়।।। ( মিহি )
আরশি মিহি কে চোখ রাঙানি দিচ্ছে। মিহি ওকে পাত্তাই দিলো না। হেসেই কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে ও।
~ ওহ তাই নাকি ! তাহলে আর কি করার। মিহি তুমি চলো। আমরা দেখি। ( ন্যান্সি )
মিহি মানা করতেই যাচ্ছিলো কিন্তু ন্যান্সির ইশারায় হ্যাঁ বলতে বলছে দেখে থেমে গেলো।
~ ঠিক আছে চলো আমি দেখবো। ( মিহি )
আরশি প্র্যাকটিক্যাল খাতার দিকে তাকিয়ে দেখলো লেখা কমপ্লিট হয়নি।
~ এই মিহি লেখাটা তো শেষ করিস নি!!! আরে ধুর।।
মিহি কিছু না শুনে ন্যান্সির সাথে বেরিয়ে গেলো।

সুজানা ওরা ভিতরে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিলো।
~ এবার বলো ওরা কি বলেছে? ( সুজানা )
~ বললো নাকি মিহির আর রেহানের ফাইটিং এর কারণ জিজ্ঞেস করতে ডেকেছিলো । ( রিক )
~ কিহহ!!! এইটা আবার কেমন কথা? ( রোজ )
~ এই মিহি আরশি ও কি তাই বলেছে? ( সুজানা )
~ তাই তো বললো। ( গাল ফুলিয়ে বললো মিহি )
~ মানে এইটা কোনো টপিক হলো !! মাঝরাতে আমি এতো সিরিয়াস একটা কথা সূর্য কে বলে এলাম আর ও কিনা এমন একটা ভোগাস কথা জিজ্ঞেস করতে আরশি কে নিয়ে গেছিলো ??? ( ন্যান্সি রেগে বললো )
~ উহু! আমার মনে হয় ওরা সত্যি বলছে না। কিছু গোপন করেছে আমাদের থেকে। ( রোজ ভাবুক হয়ে বললো )
~ হ্যাঁ তো! তাই বলে আর কোনো বাহানা ছিলো না, নাকি? শেষে আমার আর ওই ধলা বাঁদরটার ফাইটিং নিয়ে নাকি সূর্য ভাইয়ার কৌতূহল ? ( মিহি চোখ মুখ কুচকে বললো )

~ ওরা আমাদের বোকা বানালো। ( রোজ ঠোঁট ফুলিয়ে বললো )

সবাই অসহায় দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালো। কি ভেবেছিলো আর কি হলো।।।।

~ কি হয়েছে নিধি আপসেট তুমি? ( চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো অভ্র )
নিধি নিরস গলায় উত্তর দিলো,,,,,
~ না তো আপসেট কেনো হবো? তুমি বলো তোমার কেনো মনে হলো এমন?
~ আজকে তোমার চোখে পানি দেখেছিলাম, তাই মনে হলো। আচ্ছা, তুমি কি বিয়েটা নিয়ে আপসেট? তাহলে বলবো টেনশন করো না, মাহির ভাইয়াকে বোঝালে উনি ঠিক বুঝবেন ।।।।
~ কি বুঝাবো ওনাকে? বিয়ে না করার কি রিজন দিবো ?
অভ্র চুপ করে গেলো। এর কোনো উত্তর ওর জানা নেই। তাও বললো,,,
~ বলবে পড়াশোনা করতে চাও। আগে নিজে সেটেল হতে চাও তারপর বিয়ে করবে।
~ আমি যতটুকু জানি ওদের ফ্যামিলি বেশ শিক্ষিত। ওরা নিজেদের বাড়ির বউকে মূর্খ রাখবে না। অবশ্যই পড়াশোনা করাবে বিয়ের পর। আর বাইরে চাকরি করতে চাইলে সেটাও করতে দেবে । এটা নিয়ে ওদের কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কি রিজন দেখাবো আমি?
অভ্র আর কিছুই বলার মতো পেলো না। সত্যিই এই রিজনের কোনো মানে হয় না।

~ অভ্র আমি যদি ওনাদের বলি আমি তোমাকে ভালোবাসি তাহলে?
~ ( চমকে ) কি বলছো নিধি? পাগল হয়ে গেছো ? তোমার ফ্যামিলিকে তুমি এটা বলবে? আর আমার দিকটা তো তুমি জানোই তাও এসব কেনো বলছো ?

নিধির ভীষণ কান্না পাচ্ছে। চোখ দুটো পানিতে ভিজে গেছে। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।

~ তুমি কি কাওকে ভালোবাসো অভ্র?
অভ্র কিছু বলছে না। ও কি সত্যিই কাওকে ভালোবাসে ?? নাকি এটা শুধুই ওর অ্যাট্রাকশন ?

অভ্রকে চুপ করে থাকতে দেখে নিধি প্রশ্ন করলো,,,
~ তুমি কি আরশিকে ভালোবাসো ?
অভ্র এক মিনিটের জন্যে থমকে গেলো। কিছু বলতে পারছে না। এটা ঠিক ওর মনের একটা বিশাল জায়গা জুড়ে আরশি আছে। মেয়েটার সবকিছুই ওকে মুগ্ধ করে। ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু এটাকে কি ভালোবাসার নাম দেয়া উচিৎ হবে?

নিধি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,,
~ বুঝতে পেরেছি তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি আর তোমাদের মাঝে আসবোনা। কখনো ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব ও করবো না। আর হ্যাঁ, আরশিকে দ্রুত তোমার মনের কথা বলে দিয়ো। দেখো আবার দেরি হয়ে না যায়। ভালো থেকো।

ফোন টা কেটে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো নিধি। অভ্র স্থির হয়ে বসে আছে। অনেক কথা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা নিশ্বাস ফেলে ফোনটা বেডে রেখে, জানলার দিকে এগিয়ে গেলো।

কারো হাতের স্পর্শ নিজের মাথায় পেতেই চমকে উঠলো নিধি। সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। কিছু শুনে ফেলে নি তো?
~ ভাইয়া! তুমি?
~ হ্যাঁ ( নিধির পাশে বসে ওর হাত ধরে ) কি হয়েছে কাদছিস কেনো?
~ ( চোখ মুছে ) কিছুনা ভাইয়া। আসলে চোখে কি যেনো……..
~ চোখে কিছু পড়লে কেউ এরোকম হাউমাউ করে কাঁদে না। সত্যি টা বল নিধি !
নিধি হকচকিয়ে গেলো। কি বলবে ভাইয়া কে ও?
~ বল!
~ ভাইয়া আমি বিয়েটা করবো!! ( জোরে শ্বাস নিয়ে বলল নিধি )
রেহান কিছু না বলে নিধিকে পর্যবেক্ষণ করছে। নিধি মাথা তুলে ভাই এর দিকে তাকালো। ভাইকে এভাবে তাকাতে দেখে আবার মাথা নামিয়ে ফেললো।

~ দেখ নিধি তুই খুব ভালো করে জানিস তুই আমাকে মিথ্যে বলতে পারিস না। তো চেষ্টা কেনো করছিস? তুই কি অভ্রকে ভালোবাসিস?

নিধি চমকে গেলো। ভাই এর দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ভাই কি করে জানলো।
~ এসব কি বলছিস ভাইয়া?
~ তুই জানিস আমি ঠিক বলছি। তুই আমার ছোট বোন আর অভ্র আমার ফ্রেণ্ড। তোদের ব্যাপারে আমার জানাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর তুই যে অভ্র কে এক পাক্ষিক ভালবাসিস আমি সেটা ও জানি।
নিধি এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। ভাই কে জরিয়ে ধরলো।
~ কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসে না ভাইয়া !!! বাসে না।।।
রেহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত হতে বলছে।

~ হ্যাঁ ও তোকে ভালোবাসে না। ওর আরশির প্রতি ফিলিংস আছে। সেটা আমি আর নাহিদ অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু ওকে কিছু বলি নি। আর তোকে আর অভ্রকে ও আমি অনেকবার কথা বলতে শুনেছি ভার্সিটিতে । ফোনে কথা বলা শুনে বুঝেছি তুই অভ্রকে ভালবাসিস। কিন্তু তোদেরকে এই ব্যাপারে কখনো প্রশ্ন করিনি। আজ বলছি। কারণ অভ্রর ভালোবাসা পাবি না জেনে যদি তুই এই বিয়েটা করতে চাস, তাহলে তুই তোর জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করবি। জীবন কখনো একটা মানুষের জন্য থেমে থাকে না। হ্যাঁ ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা থেকে যাবে। কিন্তু কতদিন? এটাও এক সময় সয়ে যাবে। তখন তোর আর এতোটা খারাপ লাগবে না , আজ যতটা লাগছে। তোকে আমি বলবোনা অভ্রকে ভূলে যেতে। তুই ওকে মনে রাখবি। ওর স্মৃতি মনে রেখেই তুই সামনে এগিয়ে যাবি। নিজেকে অসহায় ভাববি না। ভালবাসার পূর্ণতা পেলেই যে তুই জয়ী নাহলে নয় তা কিন্তু একদম না। তুই ওকে ভালোবেসেছিস, নিজের সবটা দিয়ে বেসেছিস এটা মাথায় রাখবি। দেখবি এই ভাবনা টা তোকে আনন্দ দেবে, সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তুই যদি তোর ভালবাসা নিয়ে খুশি থাকতে পারিস তাহলে অভ্র তোকে ভালোবাসলো কিনা এটা তোর কাছে ম্যাটার করবে না। আর তোর পাশে আমি আছি বাবা- মা আছে। তোর নিজেকে অসহায় ভাবার কোনো কারণ নেই।

নিধি শান্ত হয়ে ভাইয়ের বলা কথা শুনছে। ঠিকই তো। ওর তো ভেঙ্গে পরার কোনো কারণ নেই। ও তো জানতো এই ভালোবাসার পূর্ণতা ও হয়তো পাবে না। নতুন করে এ নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কিছু তো নেই। আর সব থেকে বড় কথা ও অভ্রকে ভালোবাসে। নিজের করে পাওয়ার আশায় নয়। সবসময় ভালোবেসে যাওয়ার জন্যেই বাসে। হোক না সেটা দূর থেকে।

রেহান বোনের মাথায় চুমু খেয়ে ওকে শুতে বলে চলে এলো। ওকে ভাবার, নিজেকে সামলানোর সময় দেওয়া দরকার।
রেহান জানে অভ্র ভয় পায় যদি ও কখনো নিধির ভালোবাসার কথা জানতে পারে, তাহলে হয়তো ওদের ফ্রেন্ডশিপ টা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ অভ্র তো আরশি কে পছন্দ করে, নিধিকে নয়। সেই ক্ষেত্রে নিজের বোনের চিন্তা হয়তো ও আগে করবে।

কিন্তু রেহান ওদের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই জানতো। ও জানতো ওর বোনটা শেষে কষ্ট পাবে। কিন্তু ও এটাও জানতো যে অভ্র শুধু মাত্র আরশি কে পছন্দ করে। এটা ভালোবাসা নয়। তাই এর শেষটা দেখার অপেক্ষায় ছিলো। আজ যেটা হলো এটা হওয়াটা খুব দরকার ছিলো। অভ্রকে এখন অনুভব করতে হবে। শেষ ডিসিশনটা ওর ই হবে।
রেহান এটাও বেশ বুঝতে পারছে যে এখানেই নিধির ভালোবাসার কাহিনীর সমাপ্তি নয়।।। ( কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো )

#চলবে

আমার পুতুল বর
লেখিকা : আরশি জান্নাত ( ছদ্মনাম )
পর্ব : ২৬

~আণ্টি গো !! সূর্যের মা আণ্টি!! ( রিক ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে হাক ছাড়লো )
~ কিরে চেছাচ্ছিস কেনো তুই? ( অহনা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলো )
~ ( পেটে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে ) খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও।
~ আহারে আপা দেখো বেচারার কতো খিদে পেয়েছে। কেমন করে খাবার চাইছে। দাও ওকে আগে দাও। ( আরিয়া )
রিক খুশি হয়ে প্লেট এগিয়ে দিলো। অহনা খাবার বেড়ে দিতে যাবে তার আগেই রিক এর প্লেট এর উপর দিয়ে আরেকটা প্লেট কেউ বাড়িয়ে দিলো। রিক পিছনে তাকিয়ে দেখে রোজ। রোজকে কিছু বলবে তার আগেই ওর মাথায় কেউ মারলো। পাশে তাকিয়ে দেখে ন্যান্সি। রিক মাথা ঘষতে ঘষতে বললো,,,,,
~ এই কি সমস্যা তোদের হ্যাঁ? নিজেরা খাবি ভালো কথা। আমার খাওয়ায় এমন তোদের হাত পা ঢুকিয়ে দিচ্ছিস কেনো? ননসেন্স।।।।
~ তোকে না কানের নিচে দুটো লাগাবো। ( সূর্য টেবিলে বসতে বসতে বললো )
~ এই তোরা ওর সাথে এমন করছিস কেনো ? ( অহনা )
~ তো কি করবো ? মিথ্যেবাদী একটা। আমাদের সবার চকলেট কেক ও একা খেয়ে নিয়েছে। তাও ভোর বেলা উঠে। আর এখন তোমাদের কাছে এসে বলছে ওর নাকি খিদে পেয়েছে !! ( রোজ কোমরে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে বললো )

অহনা আর আরিয়া অবাক হয়ে রিকের দিকে তাকালো। রিক মাথা নেড়ে না বোঝাচ্ছে। সূর্য আড় চোখে তাকিয়ে বললো,,,,,
~ প্রুভ আছে কিন্তূ আমার কাছে।
রোজ আর ন্যান্সি বললো,,,
~ কারেক্ট !!
রিক হকচকিয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,,
~ কিসের প্রুভ?
এর মাঝে আরশি আর মিহি ও এসে গেছে। ব্রেকফাস্ট করতে। ওরা এসে এখানে কি নিয়ে কথা হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে ।।

সূর্য ওর ফোন বের করে একটা ভিডিও চালু করলো। রিক ভিডিও টা দেখে মুখে হাত দিলো। আরশি আর মিহি উকি দিয়ে দেখলো , ভিডিও টা দেখে ফিক করে হেসে দিলো দুজনে।

ভিডিও তে দেখাচ্ছে রিক ফ্রিজ খুলে কেকের বক্স বের করে কেক খাচ্ছে। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কেক খাওয়া শেষ করে একটা বড়ো হাসি দিয়ে কেকের বক্স টা কেবিনেট এ রেখে দিলো। তারপর কেনের বোতল নিয়ে শিস দিতে দিতে নিজের ঘরে চলে গেলো।

সূর্য ভিডিও টা অহনা আর আরিয়া কে ও দেখালো। ওরা দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। অহনা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,,
~ এটা কখন করলি সূর্য ?
~ আমি সকালে জগিং এ যাচ্ছিলাম তখন দেখি মহাশয় লুকিয়ে লুকিয়ে এ কাজ করছিলেন।
~ হ্যাঁ গো রিক ভাইয়া তুমি জানতে না যে ঐ সময় সূর্য ভাইয়া জগিং এ যায় ?? ( মিহি )
রিক বোকা হেসে পালাতে যাচ্ছিলো কিন্তূ রোজ আর ন্যান্সি ওকে ধরে আবার বসিয়ে দিলো।

রিক অসহায় লুক নিয়ে সবার দিকে তাকালো।।
সবাই ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর সবাই এক সাথে উচ্চস্বরে হেসে দিলো। রিক তা দেখে ঠোঁট উল্টালো।
আরশি আর মিহি খাওয়া শেষে কলেজ এর জন্য বেরোবে তখন অহনা ওদের ডাক দিলো।
~ হ্যাঁ মামনি বলো। ( আরশি )
~ বলছি সূর্য তো আজকে ভার্সিটিতে যাচ্ছে তোরা ওর সাথেই চলে যা।
আরশি অবাক হয়ে একবার সূর্যর দিকে তো আরেকবার অহনার দিকে তাকালো।
~ উনি আজকে যাবেন !! ওনার না কাল যাওয়ার কথা ছিলো ? ( মনে মনে ভাবলো আরশি )
~ কিরে কিছু তো বল ! ( অহনা )
মিহি আরশির পিছন থেকে বেরিয়ে এসে একটা বড়ো হাসি দিয়ে বললো,,,,
~ হ্যাঁ অবশ্যই যাবো আমরা। ভাইয়ার সাথেই যাবো।
~ (অহনা মুচকি হেসে বললো ) আচ্ছা। তারপর সূর্য কে ওদের নিয়ে যেতে বলে, উপরে নিজের ঘরে চলে গেলো।

রিক, সুজানা, মিহি, রোজ আর ন্যান্সি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসলো। কারণ এটা তাদের জন্যে আরেকটা সুযোগ ওদেরকে কাছাকাছি আনার।

সূর্য খেয়ে উপরে গেছে রেডি হতে। আরশি আর মিহি ওর জন্য সোফায় বসে অপেক্ষা করছে। প্রায় ১৫ মিনিট পর সূর্য নামলো। হোয়াইট শার্ট যার হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো , ব্লু ডেনিম প্যান্ট আর হোয়াইট স্নিকার্স পরে। হাতে ব্ল্যাক বেল্ট এর ঘড়ি। আরশি আর মিহি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আরশি ভাবছে,,,,
~ ইনি ভার্সিটিতে পড়তে যাচ্ছেন নাকি বেড়াতে বুঝছিনা। এতো ভাব নিয়ে যাওয়ার কি আছে ?? শার্টের তিনটা বোতাম খুলে রেখেছেন যার ফলে তার সাদা বুকের অনেক অংশ দেখা যাচ্ছে , সানগ্লাস ও ঝুলিয়ে রেখেছে দেখছি সেখানে , হুহঃ ঢং !! সব মেয়ে পটানোর ধান্দা। ( 😒 )
মিহি আরশির কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,
~ এই আরশি ! দেখ ভাইয়াকে কি জোস লাগছে । আজকে কতো গুলো মেয়ে না জানি ওনাকে দেখে হার্টঅ্যাটাক করে !
~ 😒😒😒😒😒 ( আরশি
মিহির দিকে আড় চোখে তাঁকিয়ে আছে )
মিহি দাত বের করে হেসে দিলো। সূর্য এমন একটা ভাব নিয়ে বেড়িয়ে গেলো যেনো ও আরশি আর মিহিকে দেখতেই পায় নি।

আরশির তো এবার রাগ উঠে গেলো।
~ এই লোক ভাব কাকে দেখাচ্ছে? আমরা যে তার জন্য অপেক্ষা করছি এটা ওনার চোখে পড়ে নাই !! একবার বলবে না যে চলো ! ম্যানারলেস লোক একটা ( আরশি গাল ফুলিয়ে বললো )
~ তো তোকে কি বরণ করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ? নাকি কোলে করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কোনটা ? ( মিহি হেসে দিয়ে বললো )
~ দেখ মিহি একদম ফান করবিনা। উনি একবার তো যেতে বলতে পারতেন!! কি মনে করেন উনি নিজেকে ? আমি যাবোনা ওনার সাথে। ( দাতে দাত চেপে বললো আরশি )

মিহি কিছু বলবে তার আগেই বাইরে থেকে জোড়ে জোড়ে হর্ন বাজানোর আওয়াজ আসতে লাগলো। মিহি ফিক করে হেসে দিলো।
~ ঐ যে তোর উনি সংকেত দিচ্ছেন গাড়িতে উঠার। ( 😂)
আরশি মুখ ভেঙিয়ে না গিয়ে দাড়িয়ে আছে। হর্ন আরো জোড়ে বাজাচ্ছে সূর্য।

সুজানা, রিক, রোজ আর ন্যান্সি কানে হাত দিয়ে সোফার কাছে এলো।

~ এই আরশি কে রে এমন বেয়াদবের মতো হর্ন বাজাচ্ছে বল তো ?? কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবে মনে হচ্ছে। ( সুজানা )

মিহি পেট চেপে হাসছে। বেচারি হাসির জন্য কিচ্ছু বলতে পারছে না। আরশি চোখ উল্টে বললো,,

~ ঐ বেয়াদব টা তোমার ভাই।

~ অ্যা !! ( সুজানা অবাক হয়ে গেলো )

বাকিরাও এবারে হেসে দিলো।

~ 🙃 ও এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে কেনো ? ( সুজানা )
~ ( হাসতে হাসতে ) আমি বলছি সুজানা আপু। ( মিহি )
সুজানা শুনে বললো,,,

~ এই আরশি তোরা জলদি যা নয়তো ভাই রেগে যাবে। তুই তো জানিস ই ভাই এমন ই !!

~ হ্যাঁ আরশি তোমার যাওয়া উচিৎ। যেই বেগে হর্ন বাজাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে ওর রাগ উঠে গেছে। ( রোজ )

~ শোনো তোমাদের ঐ সূর্যকে কি আমি ভয় পাই ? ওনার ভাব নিয়ে ওনাকে গাড়িতে বসে থাকতে দাও। আমার এতো কারো ভাব দেখার টাইম নেই।

(রিক, রোজ , ন্যান্সি আরশি কে কে ইশারায় চুপ করতে বলছে। কিন্তু আরশি তো বলেই যাচ্ছে। )
কেনো চুপ করবো হ্যাঁ এমন ম্যানারলেস…. উম উম উম!!!
( সুজানা আরশির মুখ চেপে ধরে পিছনে ফেরালো ওকে )

আরশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কারণ সূর্য বুকে হাত গুজে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আর আরশির দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। সুজানা আরশির মুখ ছেড়ে দিলো। আরশি একটা ঢোক গিলে সবার দিকে তাকিয়ে আবার আড় চোখে সূর্যের দিকে তাকালো।

~ তোকে কখন থেকে চুপ করতে বলছি কিন্তু তুই তো তুই ই একবার রেডিও চালু করলে আর বন্ধ করিস না। দেখ একবার ভাইয়াকে কতোটা রেগে গেছে। পারলে তোকে এখনি গিলে খায়। ( সুজানা আরশির কানে ফিসফিসিয়ে বললো )

আরশি আড় চোখে আবার সূর্যের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।

~ না না আরশি ভয় পেলে চলবে না ভয় কে জয় করতে হবে তোর ( মনে মনে নিজেকে সাহস দিচ্ছে আরশি ) সাহস সঞ্চয় করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সূর্য রাগি গলায় দাতে দাত চেপে বললো,,,,

~ এখানে দাড়িয়ে আমার গুনগান গাওয়া শেষ হলে যেনো গাড়িতে গিয়ে বসা হয়। অলরেডি দেরি হয়ে গেছে। আরো দেরি হলে কিন্তূ এর ফল ভালো হবে না।

আরশি কিছু বলতেই নিচ্ছিলো কিন্তূ সূর্যের ঐ রাগি চোখের দিকে তাকিয়ে আর বলতে পারলোনা। শেষে ব্যাগ নিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলো। সূর্য মিহিকে আসতে ইশারা করে আরশির পিছন পিছন গেলো।

সবাই ওরা যেতেই হো হো করে হেসে দিলো। মিহি ওদেরকে বাই বলে বেড়িয়ে গেলো।

আরশি পিছনের সিটে গিয়ে বসে পরেছে। ওর ধারণা ছিলো হয়তো সূর্য কিছু বলবে ওর পিছনে বসা নিয়ে, কিন্তূ সূর্য কিছুই বললো না। মিহি এসে কোথায় বসবে ভাবছে। আরশি ওকে ইশারায় নিজের পাশে বসতে বললো। মিহি অগত্যা ওর পাশেই বসলো। এবারেও আরশি কে ভূল প্রমাণ করে দিয়ে সূর্য কিছুই বললো না। আরশি ভেবেছিলো হয়তো সবার মতো ডায়লগ দিয়ে বলবে ,,,,
” আমাকে কি তোমাদের ড্রাইভার মনে হয় ? ”
আরশি হতাশ হলো। সূর্য গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে সামনের মিরর দিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,,,

~ এতো হ্যান্ডসাম অ্যান্ড ড্যাশিং ছেলেকে আর যাই হোক কেউ ড্রাইভার ভাববে না। সো শুধু শুধু ঐসব বস্তা পঁচা ডায়লগ আমি দিবো না।

আরশি মিরর দিয়ে সূর্যের দিকে কপাল কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। তারপর বুকে হাত গুজে গাল ফুলিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। ওর কাজ দেখে সূর্য বাকা হাসি দিলো। আর মিহি ওদের দুজনকে দেখে মুখ টিপে হাসলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here