#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১১
২১.
স্কুল মাঠে ঘাসের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে তিন বান্ধবী । এখন টিফিন আওয়ার চলছে । ক্লাশে আজ তিন জনেই লেট করে এসেছে তাই আর কথা বলার সুযোগ পায়নি।
তাই এখন তিন মাথা এক করে বসে আছে মাঠের এক কোনে গাছের ছায়ায়।তাদের মূল টপিক হচ্ছে তানভি।
তানভি মানুষটা যে খুব রগচটা সেটা নিয়েই তাহু ওদের সাথে কথা বলছে।
কাল ফোনে কি কি কথা হয়েছে সেগুলো সব বলছে এক এক করে।
মেহু বলে উঠলো তানভি ভাইয়া খুব সিরিয়াস তোর বেপারে । প্রথমে তো আমিও ভাবছিলাম হয়তো ফাজলামো করছে ।
আমার তো প্রথম থেকেই মনে হইছে তাহুর উপর ভাইয়া ফিদা । মনে আছে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিলো তাদের বাগানে ভাইয়া কেমন করে তাকিয়ে ছিলো তাহুর দিকে খেল করছিস তরা।আমি কিন্তু ভাইয়ার দিকে অনেক বার খেয়াল করছি শিলা বললো।
তরা যত যাই বলিস ইয়ার আমার না ভয় লাগে কথা বলতে ওনার সাথে । মনে হয় যেন এখনই ধমক দিবে একটু এদিক সেদিক হলে।
কথা বলতে বলতে টিফিন আওয়ার শেষ হয়ে গেলে চলে গেলো ক্লাশে।
:
:
:
স্কুল শেষে তিন বান্ধবী রওনা দিলো বাসার দিকে। কিছু পথ এসে শিলা আর তাহু আলাদা হয়ে গেলো কারন মেহুর বাসা অন্য দিকে ।
যেতে যেতে রাকিবের সাথে দেখা হয়ে যায় । রাকিবকে দেখেই তাহু ভয়ে শিলার হাত আঁকড়ে ধরে ।সেই দিনের ভয় এখনো কাটেনি তাহুর । শিলা তাহুর ভয় দেখে আশ্বাস দেয় যে কিছু হবে না। তাহুকে ধরে সামনে এগিয়ে গেলে শিলা । কিন্তু কথায় আছে না কুকুর লেজ কখনো সোজা হয় না। রাকিবের ক্ষেত্রেও তাই ।ওদের রাস্তা ঠিকই আটকে দিছে ।
তাহুকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘তোমার বাবা কাজটা ঠিক করতেছে না ওনাকে বইলো বিয়েতে যেনো মত দিয়ে দেয় নাহলে ওনার মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করা কোনো বেপার না আমার কাছে ।’এখন ভালো মত প্রস্তাব দিচ্ছি পরে কিন্তু প্রস্তাব তো দূরের কথা তোমার চিহ্নও খুঁজে পাবে না।
শিলা আর তাহু কিছুই বুঝতে পারলো না রাকিবের কথা। কিন্তু শিলা তারপরও বললো ‘ বেশি বাইরেন না তাহলে কমানের মানুষও কিন্তু আছে আমাদের । রাস্তা ছাড়েন অসভ্য লোক ।’ বলেই চলে গেলো সেখান থেকে।
শিলা কি বললো এইসব ?বিয়ের কথা কি বাবার কাছে কিছু বলছে?আমার তো ভয় লাগতেছে।
আরে কিসের ভয় তুই কি কোনো অন্যায় করছিস নাকি। এই সয়তানটাই তো পিছনে পিছনে ঘোরে।
চিন্তা করি করিস না ।আমার কি মনে হয় তুই তোর বাবাকে এই কথা গুলো বলেদে তাহলে তযা করার আঙ্গেল-আন্টি করবে।
হুম ঠিক বলছিস বলে দিবো।
২২.
তাহুর রুমে বসে আছে ওর মা-বাবা। কারণ কিছুক্ষণ আগে তাহু সব বলে দিয়েছে ওর মা-বাবার কাছে ।
স্কুল থেকে এসে গোসল আর খাওয়া দাওয়া করে বাবা জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ।তারপর বাবা আসলে পরে মা আর বাবাকে কাছে রেখে সব বলে দেয় । সেদিন স্কুলের অনুষ্ঠানে কি হয়েছিল সেটাও বলে দেয়।
সব শুনে তাহুর বাবার রেগে যায় তার মেয়ের উপর কেন সে এ কথা আগে বলেনি। তাহলে চেয়ারম্যানের সাথে এতো ভালো ব্যবহার করার কোনো কারনই ছিলো না ।
তাহুও ভুল বুঝতে পারে তার বলা উচিত ছিলো শুধু শুধু ঐ লোকটার কথা শুনতে গেছে। কিন্তু ওনিও তো খারাপ বলেনি আসলেই তো মা-বাবা চিন্তায় পরে গেছে।
তারমধ্যে এই সমাজ । যদি একবার কেউ একটু কিছু শুনে তাহলে তিল থেকে তাল বানিয়ে ফেলবে। একটা ছেলে যতই খারাপ কাজ করুক না কেন তার দোষ সমাজ আর সমাজের মানুষ কমই দেখে। কিন্তু একটা মেয়ের কোনো দোষ না করে থাকলেও সে দোষী হয়ে যায়। তখন মেয়েটাকে কটু কথা শুনাতে কেউ পিছ পা হবে না।
তাহুর মা-বাবার এই সব নিয়ে চিন্তায় পরে গেছে । আল্লাহ না করুক ঐ রাকিব যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে তখন বদনামটা তার মেয়ের গায়েই লাগবে। এমনেই তাদের মেয়ের বয়স কম । তখন মেয়েটা কেমনে সব সামাল দিবে। তার উপর ছেলেটা থাকে বাহিরে । ওরে বললেও তো এত দূরে বিদেশের বাড়িতে চিন্তা করবে।
অঘটন ঘটতে সময় লাগবে না তাই তিনি মেয়েকেই সাবধান করার চিন্তা করলেন।
নাসিম উদ্দিন বললেন আজ থেকে তুমি আর একা কোথাও যাবে না ।তোমার মা-দাদি আছে তাছাড়া শিলা আছে বাড়ির কাছে । আর দূরে কোথাও যাওয়া লাগলে আমি নিয়ে যাব তোমাকে। আর এসব নিয়ে চিন্তা করো না এর একটা ব্যবস্থা করে ফেলব আমি।তুমি পড়ালেখায় মনোযোগ দেও। বলে মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
তাহুর মাও মেয়েকে আদর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। অনেক আদরের মেয়ে তাদের । কোনো বিপদ যেনো না আসে সেই দোয়াই করেন ।
চলবে……..