আমার প্রিয় তুমি পর্ব-১২

0
1284

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১২

২৩.

তানভি আজ কদিন ধরে অনেক ব্যস্থ সময় পার করতেছে। কারণ ও নিজের উদ্যোগে আলাদা বিজনেস শুরু করছে। তার উপর নিজ বাবার বিজনেসও দেখতে হয় । সব মিলিয়ে সে এখন দম ছাড়ারও সময় পায় না। বাসা থেকে বের হয় খুব ভোরে আর রাতেও দশটার পরে বাসায় আসে । মাঝে মাঝে বারোটাও বেজে যায় বাসায় আসতে।
আজও কাজ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে । সন্ধ্যার পরে গিয়ে একটু ফ্রি হয়ে নিজ কেবিনে বসে।আর একটা কফি দিতে বলে আবার চোখ বুজে রিলেক্স হয়ে বসে। আর তখনি চোখে ভেসে ওঠে পরিচিত মুখ মনে হচ্ছে যেন সে দিনের সাদা শাড়ি পরে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
চট করে চোখটা খোলে মোবাইলটা খুঁজতে থাকে দু’দিন ধরে কথা হয় না তার সাদা পরীর সাথে। ফোনটা নিয়ে সময়টা দেখে নেয় । এই সময় তাহু পড়তে বসছে ।পাশে কেউ নেই তাই নিশ্চিন্তে ফোন দিলো ।

দু’বার ফোন রিং হবার পর তাহু আস্তে করে ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে চুপ করে থাকে।
তানভি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে সালামের উত্তর নেয় আর বলে কেমন আছো।

জি ভালো । আপনি ?

এইতো আছি ভালোই । কদিন ধরে অনেক ব্যস্থ তাই তো ফোন দিতে পারি নাই। তুমি কি করতেছিলে?

পড়তে বসছি মাএই ।

সবার সবাই ভালো আছে ?

তাহরিমা কিছুক্ষণ চোপ থেকে বললো ভালো আছে।

আচ্ছা তুমি আমার সাথে একটু ফ্রি হতে পারোনা ।সবসময় এতো জড়তা নিয়ে কথা বলো কেন। আমি কি খুব ভয়ংকর । নাকি তোমাকে কখনো বকাঝকা করেছি।

তাহুর এই মুহূর্তে বলতে ইচ্ছে করলো আপনাকে দেখলে আমার ভয় লাগে । আপনি আমাকে বকাঝকা না করেন কিন্তু আমার সামনে যে ধমক দিয়েছেন তাতেই আমি বুঝে গেছি আপনি মানুষটা কতটা রগচটা মানুষ। কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলো না। শুধু নিরবতা পালন করলো।

কি কথা বলো না কেনো?

তাহুও কথা ঘুরানোর জন্য বললো আপনি কি করেন ?

তানভি একটু হেসে বললো কথা ঘুরাচ্ছো যাই হোক আমি এখন অফিসে আছি । আটটায় মিটিং আছে । এখন ফ্রি আছি তাই ভাবলাম একটু খোঁজ নেই। আচ্ছা সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো। ঐ রাকিব আর কোনো problem করে নাই তো।

তাহুর কথাটা শুনে মন চাচ্ছে হাত-পা ছরিয়ে কান্না করতে। কারণ এই রাকিব ওর জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে ফেলছে। ঐ মুড়ির টিন অপদার্থের জন্য ওর বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মত আর তিন বান্ধবী ঘুরতে পারে না। কোথাও যেতে পারে না।
কিন্তু কেন জানি তানভির কাছে কিছু বলতে মন চাইলো না । তাই বললো সব ঠিক আছে কোনো problem নাই।

ওকে কোনো সমস্যা হলে সবার আগে আমাকে জানাবে মনে থাকবে তো।

জি মনে থাকবে।

কিন্তু তাহু যদি জানতো ওর এই না বলায় যে কত বড় মাশুল দিতে হবে তাহলে কখনোই কথা গুলো লুকাতো না।

২৪.

নাসিম উদ্দিন আজকাল অকেন দুশ্চিন্তায় থাকেন কারণ রাকিব ছেলেটা তার মেয়ের পিছু ছাড়ছে না।নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে ।

এইতো সকালের কথা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যখন নিজের স্কুলের দিকে রওনা দিলেন রাস্তার মোরে রাকিবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন ।
প্রথমে ভেবেছিলেন মনে হয় কিছু বলার সাহস পাবে না। কিন্তু তার ধারনা ভুল করে দিয়ে রাকিব তার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়।

সামনে এসে কোনো ভনিতা ছাড়াই নির্লজ্জের মতো বলতে শুরু করে শশুর মশাই বিয়েতে রাজি হয়ে যান ।বছরের ভিতরেই নানা ডাক শুনাবো।

কথাটা শুনেই তাহুর বাবার রাগে শরীর কেঁপে উঠলো।
মুখ সামলে কথা বল না হলে জেলের ভাত খাইয়ে আনবো। বেয়াদব ছেলে কোথাকার।

আহ্ শশুর সাহেব এতো রেগে যান কেন ।এতো রাগ শরীরের জন্য ভালো না। কখন আবার টুক-মুক করে উপরে চলে যান। তাই বলি কি একটু ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করুন ।

নাসিম উদ্দিন বুজে গেলেন এই রাসকেলের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই । শুধু বললেন আমার মেয়ের থেকে দশ হাত দূরে থাকবি বলে দিলাম বলেই হাঁটা শুরু করলেন।
কারণ এইসব অমানুষের সাথে কথা বলা মানেই নিজের সম্মান নষ্ট করা।

এসব অমানুষদের জন্য এমন হাজারো মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। হাজারো মেয়ের মুখ এসিডে ঝলসে গেছে। হাজারো মেয়ের জীবন অকালে ঝরে গেছে।

কিন্তু নাসিম উদ্দিন চায় না তার একমাত্র মেয়ের সাথেও এমন কিছু হোক। কিন্তু তার মেয়েটাও যে ছোট আর অনেক আদরের কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here