আমার প্রিয় তুমি পর্ব-১৪

0
1305

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৪

২৭.

তাহুর মা I.C.U এর সামনে বসে আছে কারন কিছুক্ষণ আগে নাসিম উদ্দিনকে হসপিটালে আনা হয়েছে।
একে তো মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না তার উপর মানুষের এমন আজেবাজে কথা । সব মিলিয়ে ব্রেনে চাপ নিতে পারেনি । প্রতিবেশী লোকটা যখন মেয়ের নামে উল্টাপাল্টা বলে তখন অতিরিক্ত উত্তেজনায় ব্রেনস্টক করে । তাহুর মা পাগলপ্রায় এক দিকে মেয়ে অন্য দিকে স্বামী একা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিলো তার পুরো দুনিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সেই মূহূর্তে ফেরেস্তা হয়ে আসে মেহুর পরিবার । মেহু ও তার বাবা এবং ভাই আসছিলো শিলার এক্সিডেন্ট এর খবর পেয়ে শিলাকে দেখতে । কিন্তু এসে শুনে তাহুকে পাওয়া যাচ্ছে না সে নাকি ভেগে গেছে চেয়ারম্যানের ঐ বদমাশ ছেলে রাকিবের সাথে । তাই আর বাসায় না গিয়ে চলে যায় তাহরিমিদের বাসায় আর গিয়ে দেখে তাহু বাবা ব্রেনস্টক করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে মেহুর বাবা আর ভাই নাসিম উদ্দিন কে নিয়ে হসপিটালে যান এবং I.C.U তে ভর্তি করান।

সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে তাহুর মা কোন দিক সামলাবে সে। একটু আগে ডাক্তার বলেছে নাসিম উদ্দিনের অবস্থা ভালো না । যে কোনো মুহূর্তে খারাপ সংবাদ আসতে পারে‌ । আর অন্য দিকে মেয়ের সাথে কি হয়েছে কিছুই যানে না তার উপর গ্ৰামে মানুষের এমন কথা । তার মেয়ে যে এমন কিছু করেনি তার দৃঢ় বিশ্বাস আছে কিন্তু মেয়েটা কোথায় আছে কোনো বিপদ যদি হয় কলঙ্ক যদি লেগে যায় তখন কি হবে। কোনো দোষ না করেও এই সমাজ যে তার মেয়েকে ধিক্কার দিবে।এই সমাজে বসবাসরত কিছু কুৎসিত মনের মানুষ কখনো ছেলেদের দোষ চোখে দেখে না। ছেলেদের দোষ যদি বেশিও হয়ে থাকে তবুও প্রথমে আঙ্গুলটা মেয়ের দিকেই উঠবে ।উঠতে-বসতে, পথে-ঘাটে যেখানেই যাবে সেখানেই তাকে নিয়ে সমালোচনা করবে। এই সব সমালোচনা যে শুধু মেয়েটা কে আক্রমণ করে তা না মেয়েটার সাথে সাথে তার পুরো পরিবারকে এই ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মেহু দূরে দাঁড়িয়ে তাহুর মাকে দেখছিল এতোক্ষণ । কি করুন অবস্থা হয়ে গেছে একদিনের ভিতরে। এক দিকে স্বামীর শোক অন্য দিকে মেয়ের চিন্তা। সান্ত্বনা দেবার মতোও কোনো ভাষা নেই আজ । তবুও মেহু ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো তাহুর মার কাছে। গিয়ে পাশে বসে বলে আন্টি লোকে যেগুলা বলছে সব মিথ্যা তাহু কখনো এমন করেনি । আপনার দেরি দেখে আমরা এক সাথে স্কুল থেকে বের হয়েছিলাম আমি নিজেও আসতে চেয়ে ছিলাম ওদের সাথে । যদি জানতাম এমন কিছু হবে কখনো ওদের একা আসতে দিতাম না বলতে বলতে মেহু কান্না করে দিলো।
তাহুর মাও কান্না করে বললো আমি জানি আমার এমন করবে না কখনো । সেই শিক্ষা যে আমি দেই নাই । কোথায় আছে আমার মেয়েটা যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে কি করে বাঁচবো আমি।

তখনই তাহুর মার ফোন বেজে উঠে তার ছেলে ফোন করেছে । কালই দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে । যদিও আরো একমাস পরে আসার কথা ছিলো। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার পরিবারের।
তাহুর মা কথা বলা শুরু করল ছেলের সাথে।

তাহুর মার কথা বলা দেখে মেহুর হঠাৎই কিছু মনে পরে তাই তাহুর মাকে বলে ওখান থেকে উঠে এসে একটু নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে ফোন দেয় দু’বার রিং হবার পর রিসিভ হলে কথা বলা শুরু করে।

২৮.

তানভি উম্মাদের মত গাড়ি চালাচ্ছে । এতো কিছু হয়ে গেছে কিন্তু সে কিছূই জানতে পারে নাই। নিজের উপর রাগ লাগছে কেন সেদিন ঐ রাসকেলকে মেরে দিলো না। তাহলে কি আজ এই দিন আসতো ।

চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে । রাস্তাটাও যেনো ফুরাবার নাম নিচ্ছে না। কিছুক্ষন আগের কথা তানভি একটা মিটিং এ ছিলো হঠাৎই ফোন বেজে উঠলে দেখে মেহু ফোন করেছে ফোনটা দেখে চিন্তায় পরে রায় কারন মেহু কখনো ফোন দেয়নি হঠাৎ এই টাইমে ফোন দিবে ভেবে পায় না। তাহুর কাছে থেকে শুধু ওদের নাম্বার নিয়ে রেখেছিলো কিন্তু কখনো ফোন দেওয়া হয় নাই। কিন্তু মেহুর ফোন দেবার কারন টা বুঝতে পারলো না । তাই দেরি না করে সাথে সাথে কল রিসিভ করলো।

কিন্তু রিসিভ করে যে এমন কিছু শুনবে কখনো কল্পনাও করতে পারে নাই। মেহু সব কিছু খুলে বলার পর সাথে সাথে মিটিং রুম থেকে বের হয়ে যায় ।কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে গাজিপুর আসার উদ্দেশ্য।

তানভি এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছে আর অন্য হাতে ফোন দেয় দাদা হাওলাদারের কাছে ।
দাদা ফোন রিসিভ করলে বলতে শুরু করে দাদু নাসিম আঙ্কেল যে হসপিটালে আছে সেখানে তোমার বিশ্বস্ত লোক পাঠাও ওনার চিকিৎসার যেনো কোনো কমতি না হয়। আর তুমি নিজে পুলিশ স্টেশনে যাবে missing F.I.R লেখাতে তাহরিমা কোথায় আছে একমাত্র ঐ চেয়ারম্যানই বলতে পারবে তাই ঐ চেয়ারম্যানের উপর নজর রাখার ব্যবস্থা করো ।আমি এক ঘন্টার মধ্যে আসছি।
কিন্তু দাদু তুমি এতো কিছু কি করে জানলে আর……
তানভি পরে আর বলতে দিলো না শুধু বললো ‘ এখন কিছু জিজ্ঞেস করো না দাদু সব পরে বলবো শুধু যেন রাখো তাহরিমা নামের মেয়েটা তোমার এই প্রিয় নাতির প্রানভমোড়া যাকে ছাড়া তানভি চলতে পারবে না। বলে কল কেটে দিলো।

হাওলাদার সাহেব বিচক্ষণ মানুষ প্রিয় নাতির কথা ঠিকই বুঝতে পারলেন । তাই অন্যসব চিন্তা বাদ দিয়ে নাতি যা বলেছে সেগুলো করতে নেমে পরলেন। এই বিপদের সময় নাসিম উদ্দিনের পাশে দাঁড়ানোও যে তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।তার মধ্যে নাতি তার মন দেয়ার কাজ সেরে ফেলছে এখন পাশে দাঁড়ানো তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেছে ।তাই দেরি না করে দুজনকে পাঠালো হসপিটালে আর নিজে চলে গেলো পুলিশ স্টেশনে।

চলবে………
আজ পর্বটা মোটামুটি বড় করেই দেবার চেষ্টা করেছি ।আশা করি ভালো লাগবে । ভালো হোক বা খারাপ যদি কোন ভুল হয়ে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন যাতে ভুল শুধরাতে পারি।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here